সোমবার, ২৯ মে ২০২৩, ১৪ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩০ বঙ্গাব্দ

মুক্তিযোদ্ধাদের সুদমুক্ত গৃহঋণ: দুই মন্ত্রণালয়ে ঠেলাঠেলি ঝুলে গেছে নীতিমালা

সাজেদুর রহমান : সিনিয়র রহমান :=

দুই মন্ত্রণালয়ের ঠেলাঠেলিতে ঝুলে গেছে মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য সুদমুক্ত গৃহ নির্মাণ ঋণ কর্মসূচি। এর আওতায় প্রত্যেক মুক্তিযোদ্ধাকে ১০ লাখ টাকা ঋণ দেয়ার কথা। কিন্তু ঋণের আবেদনকারী মুক্তিযোদ্ধাদের যাচাই-বাছাইসহ পুরো প্রক্রিয়া সমন্বয়ের কাজ অর্থ মন্ত্রণালয় না মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয় করবে, তা নিয়ে সৃষ্টি হয়েছে একধরনের জটিলতা। অর্থ মন্ত্রণালয়ের মতে, যাদের ঋণ দেয়া হবে, তাদের তালিকা চূড়ান্ত করবে মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয়। আর যেহেতু ঋণ দেবে রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংক, তাই এ দায়িত্ব অবশ্যই অর্থ মন্ত্রণালয়ের আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের- এমনটি মনে করছে মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয়। বিদ্যমান পরিস্থিতিতে প্রায় দুই বছর আগে সিদ্ধান্ত নেয়ার পরও এই ঋণ বিতরণের নীতিমালা জারি করার বিষয়টি চূড়ান্ত করা যাচ্ছে না। সংশ্লিষ্ট সূত্রে পাওয়া গেছে এসব তথ্য।

এ প্রসঙ্গে আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের সিনিয়র সচিব মো. আসাদুল ইসলামের সঙ্গে বৃহস্পতিবার মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি তার অফিসে এসে কথা বলার জন্য জানান।

সূত্রমতে, ‘মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য বিশেষ ব্যবস্থায় ব্যাংক থেকে সহজ শর্তে গৃহ নির্মাণ ঋণ দেয়া’ সংক্রান্ত একটি বৈঠক অনুষ্ঠিত হয় আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগে। সেখানে ঋণ প্রকল্পের নীতিমালা চূড়ান্ত করতে অর্থ মন্ত্রণালয়ের আর্থিক প্রতিষ্ঠানের সিনিয়র সচিবের সভাপতিত্বে বৈঠক হয়। ওই বৈঠকের কার্যবিবরণী থেকে জানা যায়, সুদমুক্ত গৃহ নির্মাণ ঋণ পেতে মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয়ে সরাসরি আবেদন করবেন মুক্তিযোদ্ধারা। যেদিন থেকে এই ঋণ নীতিমালা জারি করা হবে, ওইদিন থেকে পরবর্তী ৫ বছরের মধ্যে এ সুবিধা নিতে মুক্তিযোদ্ধাদের আবেদন করতে হবে। কিন্তু নির্ধারিত সময়ের পরে কোনো আবেদন গ্রহণযোগ্য হবে না। সুপারিশ সংক্রান্ত প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, ঋণের আবেদন যাচাই-বাছাই করে যোগ্য আবেদনকারী চূড়ান্ত করবে মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয়। এরপর আবেদনকারী যে ব্যাংকের মাধ্যমে মুক্তিযোদ্ধা সম্মানী ভাতা গ্রহণ করছেন, ওই ব্যাংককে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য আবেদন প্রেরণ করবে। পাশাপাশি এ কার্যক্রম আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগকে অবহিত করবে।

ওই কার্যবিবরণীতে আরও উল্লেখ করা হয়, সম্মানী ভাতার বিপরীতে ইতঃপূর্বে অন্য ব্যাংক থেকে ঋণ গ্রহণ করলে তা পরিশোধ করার পর সংশ্লিষ্ট মুক্তিযোদ্ধা সুদমুক্ত গৃহ নির্মাণ ঋণের জন্য আবেদন করতে পারবেন। এছাড়া ঋণের বিপরীতে প্রচলিত সুদকে ভর্তুকি হিসাবে প্রদান করবে অর্থ বিভাগ। পাশাপাশি এই ঋণের অর্থ দিয়ে যেন নির্মাণকৃত ঘরবাড়ি পরিবেশবান্ধব, সাশ্রয়ী ও টেকসই হতে পারে, সেজন্য একটি দিকনির্দেশনা দেয়ার নির্দেশ দেয়া হয় বাংলাদেশ হাউজবিল্ডিং ফাইন্যান্স কর্পোরেশনকে (বিএইচবিএফসি)। একই সঙ্গে তিন থেকে চার ধরনের বাড়ির মডেল ও নকশা প্রদান করবে। ঋণের মাধ্যমে মুক্তিযোদ্ধাদের ঘরবাড়ি ওই মডেল ও নকশা অনুসারে তৈরি করা হবে।

ওই বৈঠকে মুক্তিযোদ্ধাদের সুদমুক্ত গৃহ নির্মাণ ঋণ দিতে সক্ষম কি না, তা লিখিতভাবে জানাতে নির্দেশ দেয়া হয় বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংক, রাজশাহী কৃষি ব্যাংক ও বিএইচবিএফসিকে। বিএইচবিএফসি ইতিমধ্যে মুক্তিযোদ্ধাদের বাড়ির নকশা ও মডেল তৈরি করে মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয়ে পাঠিয়েছে। জানতে চাইলে বিএইচবিএফসির ব্যবস্থাপনা পরিচালক দেবাশীষ চক্রবর্তী যুগান্তরকে বলেন, সুদমুক্ত ঋণ নিয়ে মুক্তিযোদ্ধারা কোন ধরনের ঘরবাড়ি নির্মাণ করবে, এ ব্যাপারে চার থেকে পাঁচটি মডেল ও নকশা তৈরি করে সরকারের কাছে প্রেরণ করেছে বিএইচবিএফসি। এখন এ সংক্রান্ত নীতিমালা জারির পর ঋণ দেয়া শুরু হলে নকশা অনুযায়ী গৃহ নির্মাণ বাস্তবায়নের কাজ শুরু হবে।

মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয় সূত্রমতে, বর্তমান গেজেটভুক্ত মুক্তিযোদ্ধার সংখ্যা ২ লাখ ৩০ হাজার ৩৪৯ জন। এর মধ্যে খেতাবপ্রাপ্ত সম্মানী ভাতাভোগী হচ্ছেন ৫৮৭ জন এবং সাধারণ সম্মানী ভাতাভোগী হচ্ছেন ১ লাখ ৮৪ হাজার ১৩৭ জন। ধারণা করা হচ্ছে, এর মধ্যে ৭০ শতাংশ এই ঋণ সুবিধা পাওয়া যোগ্য। ওই হিসাবে ১ লাখ ৬১ হাজার ২৪৪ জন মুক্তিযোদ্ধা এই ঋণ সুবিধা পাবেন। প্রতিজন ১০ লাখ টাকা হারে ঋণ পেলে মোট টাকার প্রয়োজন হবে ১৬ হাজার ১২৪ কোটি টাকা। আগামী ৫ বছরের মধ্যে এই ঋণ বিতরণ কার্যক্রম শেষ হবে বলে ওই বৈঠকে সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। সে হিসাবে প্রথম বছরে মুক্তিযোদ্ধাদের ঋণের দেয়ার জন্য অর্থের প্রয়োজন হবে ৪ হাজার ৮৩৭ কোটি টাকা, দ্বিতীয় বছরে ৩ হাজার ২২৫ কোটি টাকা, তৃতীয় বছরে ৩ হাজার ২২৫ কোটি টাকা, চতুর্থ বছরে ৩ হাজার ২২৫ কোটি টাকা এবং শেষ বছরের জন্য দরকার হবে ১ হাজার ৬১২ কোটি টাকা।

প্রাথমিকভাবে খসড়া নীতিমালায় এ ঋণ বিতরণ সংক্রান্ত ১৪টি শর্ত চূড়ান্ত করা হয়, যা আগামী দিনে মুক্তিযোদ্ধা গৃহ নির্মাণ ঋণের খসড়া নীতিমালায় অন্তর্ভুক্ত করা হবে। শর্তগুলো হচ্ছে- ঋণের পরিমাণ নির্ধারণ করা হয়েছে সর্বোচ্চ ১০ লাখ টাকা। এ ঋণ সুবিধা পাবেন সরকারের ভাতাভোগী মুক্তিযোদ্ধা এবং মৃত মুক্তিযোদ্ধাদের ভাতাভোগী অগ্রাধিকারপ্রাপ্ত উত্তাধিকারীরা। এই ঋণের জন্য বার্ষিক ৫ শতাংশ সরল সুদ এবং মাসিক ২ শতাংশ সার্ভিস হার নির্ধারণ করা হয়েছে। তবে সুদ মুক্তিযোদ্ধাদের দিতে হবে না। এটি সরকার বহন করবে। ঋণগ্রহীতা মুক্তিযোদ্ধাদের শুধু ২ শতাংশ হারে সার্ভিস চার্জ দিতে হবে। এই ঋণ প্রদান করে প্রথম বছরের সরকারকে সুদ বহন করতে হবে ৩১২ কোটি টাকা। এটি প্রতি বছরের বাজেটে বরাদ্দ রাখার প্রস্তাব করা হয়। এ ঋণের গ্রেস পিরিয়ড হবে ৯ মাস। ঋণের মেয়াদ হবে ১৪ বছর। ঋণ প্রকল্পের মেয়াদ হবে ১৬ থেকে ১৭ বছর। পাশাপাশি প্রথম বছরের ঋণের অর্থ মেটাতে একটি তহবিল গঠনের প্রস্তাব দেয়া হয়। এ তহবিলে অর্থ বরাদ্দ রাখা হবে। সেখান থেকে ঋণের চাহিদা পূরণ করা হবে। কোনো মুক্তিযোদ্ধাকে এ ঋণ দেয়া হলে এককালীন ১০ লাখ টাকা দেয়া হবে না। নিয়ম অনুযায়ী প্রথম ধাপে (শুরুতে) মোট ঋণের ৪০ শতাংশ, দ্বিতীয় ধাপে (পরবর্তী তিন মাস পর) ৩০ শতাংশ এবং তৃতীয় ধাপে (পরবর্তী আরও তিন মাস পর) অবশিষ্ট ৩০ শতাংশ ঋণের অর্থ দেয়া হবে। ঋণের অর্থ বিতরণে এই বিধান আরোপ করা হবে শুধু ঋণের সঠিক ব্যবহারের জন্য। শর্তে আরও বলা হয়, ঋণ নিয়ে নির্মাণ করা বাসস্থান সংশ্লিষ্ট ব্যাংকের কাছে মর্টগেজ রাখতে হবে। ঋণ দেয়ার ক্ষেত্রে অগ্রাধিকার পাবেন অসচ্ছল ও ৫ শতাংশের নিচে ভূমি রয়েছে- এমন মুক্তিযোদ্ধারা। এটি শনাক্ত করবেন উপযুক্ত কর্তৃপক্ষ। এই ঋণ পাওয়ার জন্য ন্যূনতম ২ শতাংশ জমি থাকতে হবে মুক্তিযোদ্ধার নিজ বা স্ত্রীর নামে। ওই জমি নিজস্ব দখলে থাকতে হবে। ঋণের জন্য আবেদনকারীর নাম মুক্তিযুদ্ধ মন্ত্রণালয়ের স্বীকৃতি থাকতে হবে।

আপনার মন্তব্য লিখুন

লেখকের সম্পর্কে

Shahriar Hossain

মুক্তিযোদ্ধাদের সুদমুক্ত গৃহঋণ: দুই মন্ত্রণালয়ে ঠেলাঠেলি ঝুলে গেছে নীতিমালা

প্রকাশের সময় : ০৫:৩০:০৪ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ১৭ ডিসেম্বর ২০১৯
সাজেদুর রহমান : সিনিয়র রহমান :=

দুই মন্ত্রণালয়ের ঠেলাঠেলিতে ঝুলে গেছে মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য সুদমুক্ত গৃহ নির্মাণ ঋণ কর্মসূচি। এর আওতায় প্রত্যেক মুক্তিযোদ্ধাকে ১০ লাখ টাকা ঋণ দেয়ার কথা। কিন্তু ঋণের আবেদনকারী মুক্তিযোদ্ধাদের যাচাই-বাছাইসহ পুরো প্রক্রিয়া সমন্বয়ের কাজ অর্থ মন্ত্রণালয় না মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয় করবে, তা নিয়ে সৃষ্টি হয়েছে একধরনের জটিলতা। অর্থ মন্ত্রণালয়ের মতে, যাদের ঋণ দেয়া হবে, তাদের তালিকা চূড়ান্ত করবে মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয়। আর যেহেতু ঋণ দেবে রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংক, তাই এ দায়িত্ব অবশ্যই অর্থ মন্ত্রণালয়ের আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের- এমনটি মনে করছে মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয়। বিদ্যমান পরিস্থিতিতে প্রায় দুই বছর আগে সিদ্ধান্ত নেয়ার পরও এই ঋণ বিতরণের নীতিমালা জারি করার বিষয়টি চূড়ান্ত করা যাচ্ছে না। সংশ্লিষ্ট সূত্রে পাওয়া গেছে এসব তথ্য।

এ প্রসঙ্গে আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের সিনিয়র সচিব মো. আসাদুল ইসলামের সঙ্গে বৃহস্পতিবার মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি তার অফিসে এসে কথা বলার জন্য জানান।

সূত্রমতে, ‘মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য বিশেষ ব্যবস্থায় ব্যাংক থেকে সহজ শর্তে গৃহ নির্মাণ ঋণ দেয়া’ সংক্রান্ত একটি বৈঠক অনুষ্ঠিত হয় আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগে। সেখানে ঋণ প্রকল্পের নীতিমালা চূড়ান্ত করতে অর্থ মন্ত্রণালয়ের আর্থিক প্রতিষ্ঠানের সিনিয়র সচিবের সভাপতিত্বে বৈঠক হয়। ওই বৈঠকের কার্যবিবরণী থেকে জানা যায়, সুদমুক্ত গৃহ নির্মাণ ঋণ পেতে মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয়ে সরাসরি আবেদন করবেন মুক্তিযোদ্ধারা। যেদিন থেকে এই ঋণ নীতিমালা জারি করা হবে, ওইদিন থেকে পরবর্তী ৫ বছরের মধ্যে এ সুবিধা নিতে মুক্তিযোদ্ধাদের আবেদন করতে হবে। কিন্তু নির্ধারিত সময়ের পরে কোনো আবেদন গ্রহণযোগ্য হবে না। সুপারিশ সংক্রান্ত প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, ঋণের আবেদন যাচাই-বাছাই করে যোগ্য আবেদনকারী চূড়ান্ত করবে মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয়। এরপর আবেদনকারী যে ব্যাংকের মাধ্যমে মুক্তিযোদ্ধা সম্মানী ভাতা গ্রহণ করছেন, ওই ব্যাংককে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য আবেদন প্রেরণ করবে। পাশাপাশি এ কার্যক্রম আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগকে অবহিত করবে।

ওই কার্যবিবরণীতে আরও উল্লেখ করা হয়, সম্মানী ভাতার বিপরীতে ইতঃপূর্বে অন্য ব্যাংক থেকে ঋণ গ্রহণ করলে তা পরিশোধ করার পর সংশ্লিষ্ট মুক্তিযোদ্ধা সুদমুক্ত গৃহ নির্মাণ ঋণের জন্য আবেদন করতে পারবেন। এছাড়া ঋণের বিপরীতে প্রচলিত সুদকে ভর্তুকি হিসাবে প্রদান করবে অর্থ বিভাগ। পাশাপাশি এই ঋণের অর্থ দিয়ে যেন নির্মাণকৃত ঘরবাড়ি পরিবেশবান্ধব, সাশ্রয়ী ও টেকসই হতে পারে, সেজন্য একটি দিকনির্দেশনা দেয়ার নির্দেশ দেয়া হয় বাংলাদেশ হাউজবিল্ডিং ফাইন্যান্স কর্পোরেশনকে (বিএইচবিএফসি)। একই সঙ্গে তিন থেকে চার ধরনের বাড়ির মডেল ও নকশা প্রদান করবে। ঋণের মাধ্যমে মুক্তিযোদ্ধাদের ঘরবাড়ি ওই মডেল ও নকশা অনুসারে তৈরি করা হবে।

ওই বৈঠকে মুক্তিযোদ্ধাদের সুদমুক্ত গৃহ নির্মাণ ঋণ দিতে সক্ষম কি না, তা লিখিতভাবে জানাতে নির্দেশ দেয়া হয় বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংক, রাজশাহী কৃষি ব্যাংক ও বিএইচবিএফসিকে। বিএইচবিএফসি ইতিমধ্যে মুক্তিযোদ্ধাদের বাড়ির নকশা ও মডেল তৈরি করে মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয়ে পাঠিয়েছে। জানতে চাইলে বিএইচবিএফসির ব্যবস্থাপনা পরিচালক দেবাশীষ চক্রবর্তী যুগান্তরকে বলেন, সুদমুক্ত ঋণ নিয়ে মুক্তিযোদ্ধারা কোন ধরনের ঘরবাড়ি নির্মাণ করবে, এ ব্যাপারে চার থেকে পাঁচটি মডেল ও নকশা তৈরি করে সরকারের কাছে প্রেরণ করেছে বিএইচবিএফসি। এখন এ সংক্রান্ত নীতিমালা জারির পর ঋণ দেয়া শুরু হলে নকশা অনুযায়ী গৃহ নির্মাণ বাস্তবায়নের কাজ শুরু হবে।

মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয় সূত্রমতে, বর্তমান গেজেটভুক্ত মুক্তিযোদ্ধার সংখ্যা ২ লাখ ৩০ হাজার ৩৪৯ জন। এর মধ্যে খেতাবপ্রাপ্ত সম্মানী ভাতাভোগী হচ্ছেন ৫৮৭ জন এবং সাধারণ সম্মানী ভাতাভোগী হচ্ছেন ১ লাখ ৮৪ হাজার ১৩৭ জন। ধারণা করা হচ্ছে, এর মধ্যে ৭০ শতাংশ এই ঋণ সুবিধা পাওয়া যোগ্য। ওই হিসাবে ১ লাখ ৬১ হাজার ২৪৪ জন মুক্তিযোদ্ধা এই ঋণ সুবিধা পাবেন। প্রতিজন ১০ লাখ টাকা হারে ঋণ পেলে মোট টাকার প্রয়োজন হবে ১৬ হাজার ১২৪ কোটি টাকা। আগামী ৫ বছরের মধ্যে এই ঋণ বিতরণ কার্যক্রম শেষ হবে বলে ওই বৈঠকে সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। সে হিসাবে প্রথম বছরে মুক্তিযোদ্ধাদের ঋণের দেয়ার জন্য অর্থের প্রয়োজন হবে ৪ হাজার ৮৩৭ কোটি টাকা, দ্বিতীয় বছরে ৩ হাজার ২২৫ কোটি টাকা, তৃতীয় বছরে ৩ হাজার ২২৫ কোটি টাকা, চতুর্থ বছরে ৩ হাজার ২২৫ কোটি টাকা এবং শেষ বছরের জন্য দরকার হবে ১ হাজার ৬১২ কোটি টাকা।

প্রাথমিকভাবে খসড়া নীতিমালায় এ ঋণ বিতরণ সংক্রান্ত ১৪টি শর্ত চূড়ান্ত করা হয়, যা আগামী দিনে মুক্তিযোদ্ধা গৃহ নির্মাণ ঋণের খসড়া নীতিমালায় অন্তর্ভুক্ত করা হবে। শর্তগুলো হচ্ছে- ঋণের পরিমাণ নির্ধারণ করা হয়েছে সর্বোচ্চ ১০ লাখ টাকা। এ ঋণ সুবিধা পাবেন সরকারের ভাতাভোগী মুক্তিযোদ্ধা এবং মৃত মুক্তিযোদ্ধাদের ভাতাভোগী অগ্রাধিকারপ্রাপ্ত উত্তাধিকারীরা। এই ঋণের জন্য বার্ষিক ৫ শতাংশ সরল সুদ এবং মাসিক ২ শতাংশ সার্ভিস হার নির্ধারণ করা হয়েছে। তবে সুদ মুক্তিযোদ্ধাদের দিতে হবে না। এটি সরকার বহন করবে। ঋণগ্রহীতা মুক্তিযোদ্ধাদের শুধু ২ শতাংশ হারে সার্ভিস চার্জ দিতে হবে। এই ঋণ প্রদান করে প্রথম বছরের সরকারকে সুদ বহন করতে হবে ৩১২ কোটি টাকা। এটি প্রতি বছরের বাজেটে বরাদ্দ রাখার প্রস্তাব করা হয়। এ ঋণের গ্রেস পিরিয়ড হবে ৯ মাস। ঋণের মেয়াদ হবে ১৪ বছর। ঋণ প্রকল্পের মেয়াদ হবে ১৬ থেকে ১৭ বছর। পাশাপাশি প্রথম বছরের ঋণের অর্থ মেটাতে একটি তহবিল গঠনের প্রস্তাব দেয়া হয়। এ তহবিলে অর্থ বরাদ্দ রাখা হবে। সেখান থেকে ঋণের চাহিদা পূরণ করা হবে। কোনো মুক্তিযোদ্ধাকে এ ঋণ দেয়া হলে এককালীন ১০ লাখ টাকা দেয়া হবে না। নিয়ম অনুযায়ী প্রথম ধাপে (শুরুতে) মোট ঋণের ৪০ শতাংশ, দ্বিতীয় ধাপে (পরবর্তী তিন মাস পর) ৩০ শতাংশ এবং তৃতীয় ধাপে (পরবর্তী আরও তিন মাস পর) অবশিষ্ট ৩০ শতাংশ ঋণের অর্থ দেয়া হবে। ঋণের অর্থ বিতরণে এই বিধান আরোপ করা হবে শুধু ঋণের সঠিক ব্যবহারের জন্য। শর্তে আরও বলা হয়, ঋণ নিয়ে নির্মাণ করা বাসস্থান সংশ্লিষ্ট ব্যাংকের কাছে মর্টগেজ রাখতে হবে। ঋণ দেয়ার ক্ষেত্রে অগ্রাধিকার পাবেন অসচ্ছল ও ৫ শতাংশের নিচে ভূমি রয়েছে- এমন মুক্তিযোদ্ধারা। এটি শনাক্ত করবেন উপযুক্ত কর্তৃপক্ষ। এই ঋণ পাওয়ার জন্য ন্যূনতম ২ শতাংশ জমি থাকতে হবে মুক্তিযোদ্ধার নিজ বা স্ত্রীর নামে। ওই জমি নিজস্ব দখলে থাকতে হবে। ঋণের জন্য আবেদনকারীর নাম মুক্তিযুদ্ধ মন্ত্রণালয়ের স্বীকৃতি থাকতে হবে।