শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

সাধারণ সম্পাদক পদে কাদের না অন্য কেউ?

মো: ইদ্রিস  আলী :=

আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কমিটিতে রদবদল আসছে। হতে পারে বড় পরিবর্তনও। একঝাঁক নতুন মুখ কেন্দ্রীয় কমিটিতে যুক্ত হতে যাচ্ছেন। আগামীকাল দলটির ২১তম জাতীয় কাউন্সিলের মধ্য দিয়ে এই পরিবর্তন আসবে। যুগোপযোগী ও আরো গতিশীল আওয়ামী লীগ গড়তে এবারের জাতীয় সম্মেলনে নবীন ও প্রবীণের সমন্বয়ে নতুন নেতৃত্বের দেখা মিলবে। তবে বাদ পড়তে পারেন দীর্ঘদিন দায়িত্বে থাকা বেশ কয়েকজন তুলনামূলক ‘অযোগ্য’ নেতা। পরিবর্তন আসবে সভাপতিমন্ডলী, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক, সাংগঠনিক সম্পাদক, সম্পাদক পদেও।

সাধারণ সম্পাদক প্রশ্নে পরিবর্তনের কথা শোনা গেলেও বিশ্বস্ত কোনো সূত্র এই তথ্য নিশ্চিত করতে পারেনি। তবে সভাপতি পদে কোনো পরিবর্তন আসছে না বলে নিশ্চিত করছেন দলের নেতারা। দলীয় তথ্য অনুযায়ী, সাধারণ সম্পাদকসহ এরও কয়েকটি পদের জন্য দলের ভেতরে একাধিক মত আছে। দলের সাধারণ সম্পাদক পদে পরিবর্তন আসতে পারে বলে বেশ কয়েক দিন ধরে গুঞ্জন শোনা গেছে। তবে সম্প্রতি দলের একটি সূত্র জানিয়েছে, আগের তুলনায় দলের কর্মপরিধি এখন অনেক বেশি বিস্তৃত হওয়ায় সাধারণ সম্পাদকের পক্ষে সরকারের দায়িত্বশীল পদে থাকা সম্ভব নয়। তাই ভবিষ্যতে সাধারণ সম্পাদককে সরকারে অন্তর্ভুক্ত না রেখে শুধু দলীয় কার্যক্রম পরিচালনার দায়িত্ব দেওয়া হতে পারে। সে বিবেচনায় ওই পদের জন্য এখনো বিবেচনায় এগিয়ে রয়েছেন বর্তমান সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরই। এই পদে কে আসছেন, তা নিয়ে নেতাকর্মীদের পাশাপাশি জনসাধারণেরও জিজ্ঞাসা-কৌতূহল বাড়ছে।

এসব বিষয়ে গতকাল বুধবার সন্ধ্যায় গণভবনে দলের বর্তমান কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সংসদের শেষ বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়েছে। দলীয় এক সূত্র জানায়, সাধারণ সম্পাদক পদে কে মনোনয়ন পাচ্ছেন; সে বিষয়ে উপস্থিত নেতাদের আভাস দেওয়া হয়েছে। গত তিন বছর দলের কেন্দ্রীয় কমিটির কর্মকান্ডের চুলচেরা বিশ্লেষণ হয়েছে। বৈঠকে কেন্দ্রের সঙ্গে তৃণমূলের নৈকট্য-দূরত্ব, কয়েকটি জেলা ও উপজেলায় গ্রুপিং-লবিং নিয়ে আলোচনা হয়েছে। এ ছাড়া আগামী বছর দেশব্যাপী মুজিববর্ষ উদ্যাপন নিয়ে আলোচনা হয়েছে। উল্লেখ্য, এর আগে গত ৪ ডিসেম্বর তিন বছর পর দলের জাতীয় কমিটির সভা হয়।

দলীয় সূত্র জানিয়েছে, ২০ ও ২১ ডিসেম্বরের এই কাউন্সিলের মাধ্যমে ঝরে পড়তে পারেন কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সংসদের অর্ধেকেরও বেশি নেতা। দলকে সরকার থেকে পৃথক করতে বর্তমান মন্ত্রিসভার অনেকে হারাতে পারেন কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব। আওয়ামী লীগের একাধিক নীতিনির্ধারক ও গণভবন সূত্র এ তথ্য জানিয়েছে।

দলীয় সূত্রে জানা গেছে, দলের নবীন-প্রবীণ নেতাদের সব শেষ তথ্যসংবলিত আমলনামা এখন আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনার হাতে। তিনি দলের নেতাকর্মীদের বিগত দিনের প্রাপ্তি-অপ্রাপ্তি মিলিয়ে দেখছেন। সরকারের বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থা ও ব্যক্তিগত অনুসন্ধানে নেতাদের আমলনামা তৈরি করা হয়েছে। রদবদলে এবারও আওয়ামী লীগের সভাপতিমন্ডলী থেকে কাউকে কাউকে উপদেষ্টা পরিষদে চলে যেতে হতে পারে। আবার উপদেষ্টা পরিষদ থেকে সভাপতিমন্ডলী, সদস্য থেকে সভাপতিমন্ডলী এবং সম্পাদকমন্ডলী ও সাংগঠনিক সম্পাদকদের মধ্য থেকে যুগ্ম সম্পাদক হতে পারেন কোনো কোনো নেতা। এবার বেশ কিছু নতুন মুখ দেখা যেতে পারে সম্পাদকমন্ডলীতে।

দলের কয়েকজন কেন্দ্রীয় নেতা জানিয়েছেন, দীর্ঘদিন আওয়ামী লীগের রাজনীতির সঙ্গে সক্রিয়ভাবে যুক্ত থেকে ‘ক্লিন ইমেজ’ নিয়ে দল ও আদর্শের জন্য কাজ করে যাচ্ছেন—এমন কাউকেই এবার সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব দেওয়া হতে পারে।

দলীয় সূত্রে জানা গেছে, রাজধানীর ঢাকা বিভিন্ন হোটেল ছাড়াও ধানমন্ডি, বেইলি রোডসহ বিভিন্ন এলাকায় আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক পদকে ঘিরে (পক্ষে ও বিপক্ষে) আলাদা আলাদা বৈঠক করেছেন দলের কেন্দ্রীয় নেতারা। সম্পাদকমন্ডলীর অনেক নেতাই মনে করেন, গত তিন বছরে সাংগঠনিক কাজে গতি ছিল না। এ কারণেই গত তিন বছরে মাত্র এক জেলায় সম্মেলন হয়েছে। আর গত এক মাসে মাত্র ২৮ জেলায় দলের সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়েছে; তাও আবার দলীয় প্রধানের তোড়জোড়ের পর। ওই নেতারা বলেন, সামনে মুজিববর্ষ। সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিতে হবে মুজিববর্ষ উদ্যাপনে। এখানে দলের দায়িত্ব পালনে কোনো কমতি রাখা যাবে না। এজন্য দলীয় সাধারণ সম্পাদক এমন একজনকে প্রয়োজু যিনি কাজে গতিশীল হবেন। তবে এ ধরনের মতের প্রচন্ড বিরোধিতাও রয়েছে। এই মতের বিরোধিতাকারীরা দাবি করে বলেছেন, গত তিন বছরে মাঠে দলকে চাঙা রাখতে ওবায়দুল কাদের নেতাকর্মীদের যথেষ্ট উদ্দীপ্ত করেছেন। আর বিরোধী দলের মোকাবিলায় মাঠ আগলে রাখতে কাদেরের ভূমিকা রয়েছে।

আওয়ামী লীগের সম্পাদকমন্ডলীর এক সদস্য বলেন, ‘দলের মধ্যে প্রতিযোগিতা আছে। তবে আমরা প্রত্যাশা করি, সেটি যেন প্রতিহিংসায় রূপ না নেয়।’

 

আপনার মন্তব্য লিখুন

লেখকের সম্পর্কে

Shahriar Hossain

সাধারণ সম্পাদক পদে কাদের না অন্য কেউ?

প্রকাশের সময় : ০৮:১৬:১৭ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ১৯ ডিসেম্বর ২০১৯
মো: ইদ্রিস  আলী :=

আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কমিটিতে রদবদল আসছে। হতে পারে বড় পরিবর্তনও। একঝাঁক নতুন মুখ কেন্দ্রীয় কমিটিতে যুক্ত হতে যাচ্ছেন। আগামীকাল দলটির ২১তম জাতীয় কাউন্সিলের মধ্য দিয়ে এই পরিবর্তন আসবে। যুগোপযোগী ও আরো গতিশীল আওয়ামী লীগ গড়তে এবারের জাতীয় সম্মেলনে নবীন ও প্রবীণের সমন্বয়ে নতুন নেতৃত্বের দেখা মিলবে। তবে বাদ পড়তে পারেন দীর্ঘদিন দায়িত্বে থাকা বেশ কয়েকজন তুলনামূলক ‘অযোগ্য’ নেতা। পরিবর্তন আসবে সভাপতিমন্ডলী, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক, সাংগঠনিক সম্পাদক, সম্পাদক পদেও।

সাধারণ সম্পাদক প্রশ্নে পরিবর্তনের কথা শোনা গেলেও বিশ্বস্ত কোনো সূত্র এই তথ্য নিশ্চিত করতে পারেনি। তবে সভাপতি পদে কোনো পরিবর্তন আসছে না বলে নিশ্চিত করছেন দলের নেতারা। দলীয় তথ্য অনুযায়ী, সাধারণ সম্পাদকসহ এরও কয়েকটি পদের জন্য দলের ভেতরে একাধিক মত আছে। দলের সাধারণ সম্পাদক পদে পরিবর্তন আসতে পারে বলে বেশ কয়েক দিন ধরে গুঞ্জন শোনা গেছে। তবে সম্প্রতি দলের একটি সূত্র জানিয়েছে, আগের তুলনায় দলের কর্মপরিধি এখন অনেক বেশি বিস্তৃত হওয়ায় সাধারণ সম্পাদকের পক্ষে সরকারের দায়িত্বশীল পদে থাকা সম্ভব নয়। তাই ভবিষ্যতে সাধারণ সম্পাদককে সরকারে অন্তর্ভুক্ত না রেখে শুধু দলীয় কার্যক্রম পরিচালনার দায়িত্ব দেওয়া হতে পারে। সে বিবেচনায় ওই পদের জন্য এখনো বিবেচনায় এগিয়ে রয়েছেন বর্তমান সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরই। এই পদে কে আসছেন, তা নিয়ে নেতাকর্মীদের পাশাপাশি জনসাধারণেরও জিজ্ঞাসা-কৌতূহল বাড়ছে।

এসব বিষয়ে গতকাল বুধবার সন্ধ্যায় গণভবনে দলের বর্তমান কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সংসদের শেষ বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়েছে। দলীয় এক সূত্র জানায়, সাধারণ সম্পাদক পদে কে মনোনয়ন পাচ্ছেন; সে বিষয়ে উপস্থিত নেতাদের আভাস দেওয়া হয়েছে। গত তিন বছর দলের কেন্দ্রীয় কমিটির কর্মকান্ডের চুলচেরা বিশ্লেষণ হয়েছে। বৈঠকে কেন্দ্রের সঙ্গে তৃণমূলের নৈকট্য-দূরত্ব, কয়েকটি জেলা ও উপজেলায় গ্রুপিং-লবিং নিয়ে আলোচনা হয়েছে। এ ছাড়া আগামী বছর দেশব্যাপী মুজিববর্ষ উদ্যাপন নিয়ে আলোচনা হয়েছে। উল্লেখ্য, এর আগে গত ৪ ডিসেম্বর তিন বছর পর দলের জাতীয় কমিটির সভা হয়।

দলীয় সূত্র জানিয়েছে, ২০ ও ২১ ডিসেম্বরের এই কাউন্সিলের মাধ্যমে ঝরে পড়তে পারেন কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সংসদের অর্ধেকেরও বেশি নেতা। দলকে সরকার থেকে পৃথক করতে বর্তমান মন্ত্রিসভার অনেকে হারাতে পারেন কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব। আওয়ামী লীগের একাধিক নীতিনির্ধারক ও গণভবন সূত্র এ তথ্য জানিয়েছে।

দলীয় সূত্রে জানা গেছে, দলের নবীন-প্রবীণ নেতাদের সব শেষ তথ্যসংবলিত আমলনামা এখন আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনার হাতে। তিনি দলের নেতাকর্মীদের বিগত দিনের প্রাপ্তি-অপ্রাপ্তি মিলিয়ে দেখছেন। সরকারের বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থা ও ব্যক্তিগত অনুসন্ধানে নেতাদের আমলনামা তৈরি করা হয়েছে। রদবদলে এবারও আওয়ামী লীগের সভাপতিমন্ডলী থেকে কাউকে কাউকে উপদেষ্টা পরিষদে চলে যেতে হতে পারে। আবার উপদেষ্টা পরিষদ থেকে সভাপতিমন্ডলী, সদস্য থেকে সভাপতিমন্ডলী এবং সম্পাদকমন্ডলী ও সাংগঠনিক সম্পাদকদের মধ্য থেকে যুগ্ম সম্পাদক হতে পারেন কোনো কোনো নেতা। এবার বেশ কিছু নতুন মুখ দেখা যেতে পারে সম্পাদকমন্ডলীতে।

দলের কয়েকজন কেন্দ্রীয় নেতা জানিয়েছেন, দীর্ঘদিন আওয়ামী লীগের রাজনীতির সঙ্গে সক্রিয়ভাবে যুক্ত থেকে ‘ক্লিন ইমেজ’ নিয়ে দল ও আদর্শের জন্য কাজ করে যাচ্ছেন—এমন কাউকেই এবার সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব দেওয়া হতে পারে।

দলীয় সূত্রে জানা গেছে, রাজধানীর ঢাকা বিভিন্ন হোটেল ছাড়াও ধানমন্ডি, বেইলি রোডসহ বিভিন্ন এলাকায় আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক পদকে ঘিরে (পক্ষে ও বিপক্ষে) আলাদা আলাদা বৈঠক করেছেন দলের কেন্দ্রীয় নেতারা। সম্পাদকমন্ডলীর অনেক নেতাই মনে করেন, গত তিন বছরে সাংগঠনিক কাজে গতি ছিল না। এ কারণেই গত তিন বছরে মাত্র এক জেলায় সম্মেলন হয়েছে। আর গত এক মাসে মাত্র ২৮ জেলায় দলের সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়েছে; তাও আবার দলীয় প্রধানের তোড়জোড়ের পর। ওই নেতারা বলেন, সামনে মুজিববর্ষ। সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিতে হবে মুজিববর্ষ উদ্যাপনে। এখানে দলের দায়িত্ব পালনে কোনো কমতি রাখা যাবে না। এজন্য দলীয় সাধারণ সম্পাদক এমন একজনকে প্রয়োজু যিনি কাজে গতিশীল হবেন। তবে এ ধরনের মতের প্রচন্ড বিরোধিতাও রয়েছে। এই মতের বিরোধিতাকারীরা দাবি করে বলেছেন, গত তিন বছরে মাঠে দলকে চাঙা রাখতে ওবায়দুল কাদের নেতাকর্মীদের যথেষ্ট উদ্দীপ্ত করেছেন। আর বিরোধী দলের মোকাবিলায় মাঠ আগলে রাখতে কাদেরের ভূমিকা রয়েছে।

আওয়ামী লীগের সম্পাদকমন্ডলীর এক সদস্য বলেন, ‘দলের মধ্যে প্রতিযোগিতা আছে। তবে আমরা প্রত্যাশা করি, সেটি যেন প্রতিহিংসায় রূপ না নেয়।’