শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০ বঙ্গাব্দ

শুভ বড়দিন, আজ উৎসবের দিন

আব্দুল লতিফ :=  বড়দিন হলো যিশুখ্রিস্টের জন্মদিন। বেথলে হেম শহরে জন্মগ্রহণ করেন তিনি। খ্রিস্টান ধর্মের প্রাণপুরুষের জন্মদিনটি সারা পৃথিবীতে খ্রিস্টান ধর্মাবলম্বীদের প্রধান উৎসব হিসেবে উদযাপিত হয়। গির্জায় গির্জায় বিশেষ প্রার্থনা অনুষ্ঠিত হবে, পারস্পরিক শুভেচ্ছা আর উপহার বিনিময় এ দিনটিকে সত্যিকার অর্থেই উৎসবমুখর করে তোলে। দেশের শিশুরা মেতে ওঠে সান্তাক্লজকে নিয়ে।
খ্রিস্টান সম্প্রদায়ের এ উৎসবে শরিক হন অন্য ধর্মের মানুষও, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান উপভোগ করেন, শুভেচ্ছা বিনিময় করেন। বাংলাদেশ ধর্মীয় সম্প্রীতির দেশ। সব ধর্মের মানুষ মিলেমিশে বাস করছে। বাংলাদেশের খ্রিস্টান সম্প্রদায়ের মধ্যে এমন একজন ব্যক্তিত্ব আছেন যিনি সারা বিশ্বে বাংলাদেশের নাম ছড়িয়ে দিচ্ছেন।

খ্রিস্ট সম্প্রদায়ের শীর্ষ নীতি-নির্ধারক হওয়ায় তিনি বিশ্বের বিভিন্নস্থানে যাচ্ছেন এবং সেসব দেশে গর্বের সঙ্গে উচ্চারিত হয় বাংলাদেশের নাম। তিনি হচ্ছেন প্যাট্রিক ডি রোজারিও। তিনি বাংলাদেশ থেকে মনোনীত প্রথম কার্ডিনাল। কার্ডিনাল হচ্ছেন খ্রিস্টান সম্প্রদায়ের দ্বিতীয় গুরুত্বপূর্ণ পদ, যাদের অবস্থান পোপের পরই, তাদের ভোটেই পোপ নির্বাচিত হন। বিশ্বে কার্ডিনালের সংখ্যা ২১৪ জন।

২০১৬ সালের অক্টোবরে কার্ডিনাল মনোনীত হন প্যাট্রিক। প্যাট্রিক ডি রোজারিওর জন্ম ১৯৪৩ সালে; বরিশালের পাদ্রি শিবপুরে। ১৯৭২ সালে তিনি ‘ফাদার’ বা যাজক হন। ১৯৯০ সালে তিনি বিশপ নির্বাচিত হন। দায়িত্ব নেন রাজশাহীতে ধর্মপ্রদেশের। ১৯৯৫ সালে চট্টগ্রাম ধর্মপ্রদেশের দায়িত্বগ্রহণ করেন তিনি। ২০১১ সালে প্যাট্রিক ডি রোজারিও ঢাকা আর্চবিশপ হিসেবে দায়িত্ব পান। আর্চবিশপ হচ্ছেন বাংলাদেশের খ্রিস্টধর্মাবলম্বীদের প্রধান ধর্মগুরু।

বাংলাদেশ থেকে প্রথম কার্ডিনাল নির্বাচিত হওয়ার পর প্যাট্রিক ডি রোজারিও বলেছিলেন, বিশ্বের ক্যাথলিক খ্রিস্টানদের ধর্মীয় সর্বোচ্চ সভায় আসন পাওয়াটা দেশের জন্য একটি অর্জন। তিনি বলেছিলেন, এটি তার ব্যক্তিগত অর্জন নয়, বাংলাদেশের অর্জন আর এদেশের প্রতি পোপের ভালোবাসা ও স্বীকৃতির উদাহরণ। এই স্বীকৃতি পুরো বাংলাদেশের।

বাংলাদেশের বিভিন্ন জেলায় খ্রিস্টানদের বহু মিশন রয়েছে, ঢাকার কাকরাইলের গির্জা দেশের খ্রিস্টান সম্প্রদায়ের প্রধানকেন্দ্র হিসেবে বিবেচিত। এ ছাড়াও রাজধানীর রমনা ক্যাথেড্রাল, তেজগাঁও হলি রোজারি চার্চ, কল্যাণপুর, মিরপুর, ইস্কাটন, বরিশাল জেলার পাদ্রি শিবপুর, বরিশাল শহরের ব্যাপ্টিস্ট চার্চ, গৌরনদীর দক্ষিণ বিজয়পুর, আগৈলঝড়ার জোবারপাড়, মানিকগঞ্জের উথলি, মুন্সীগঞ্জের সিরাজদীখান, গাজীপুরের কালীগঞ্জের সেন্ট নিকোলাস গির্জা, গোপালগঞ্জের নারিকেলবাড়ি, চট্টগ্রামের পাহাড়তলী, রংপুরের সুলতান নগর, দিনাজপুরের ফুলবাড়ী, নীলফামারী, যশোরের গির্জা ওই অঞ্চলগুলোর খ্রিস্টান সম্প্রদায়ের ধর্ম-কর্ম পালনের কেন্দ্র একইসঙ্গে তাদের পারস্পরিক দেখা-সাক্ষাৎ ও মতবিনিময়ের কেন্দ্রেও পরিণত হয়েছে। বড়দিন আমাদের রাষ্ট্রীয় পর্যায়েও যথেষ্ট গুরুত্ব পায়। এটি সরকারি ছুটির দিন।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সোমবার খ্রিস্টান সম্প্রদায়ের সঙ্গে শুভেচ্ছা বিনিময় করেছেন। গণভবনে এক অনুষ্ঠানে আয়োজিত শুভেচ্ছা বিনিময় অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, বাংলাদেশ এমন একটি দেশ যেখানে সব ধর্মের মানুষ সমান অধিকার ভোগ করছে। ধর্ম-বর্ণ-নির্বিশেষে সবার কল্যাণে কাজ করছে সরকার। দেশের খ্রিস্টান সম্প্রদায়ের এই উৎসবের দিনে সবার প্রার্থনা হোক নিরাপদ পৃথিবীর জন্য, সবার প্রত্যাশা হোক সুখী-সমৃদ্ধ সোনার বাংলা। সবাইকে বড়দিনের শুভেচ্ছা।

আপনার মন্তব্য লিখুন

লেখকের সম্পর্কে

Shahriar Hossain

রাজনীতিতে নাম লেখাতে যাচ্ছেন সানিয়া মির্জা

শুভ বড়দিন, আজ উৎসবের দিন

প্রকাশের সময় : ০৯:৫২:১২ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ২৪ ডিসেম্বর ২০১৯
আব্দুল লতিফ :=  বড়দিন হলো যিশুখ্রিস্টের জন্মদিন। বেথলে হেম শহরে জন্মগ্রহণ করেন তিনি। খ্রিস্টান ধর্মের প্রাণপুরুষের জন্মদিনটি সারা পৃথিবীতে খ্রিস্টান ধর্মাবলম্বীদের প্রধান উৎসব হিসেবে উদযাপিত হয়। গির্জায় গির্জায় বিশেষ প্রার্থনা অনুষ্ঠিত হবে, পারস্পরিক শুভেচ্ছা আর উপহার বিনিময় এ দিনটিকে সত্যিকার অর্থেই উৎসবমুখর করে তোলে। দেশের শিশুরা মেতে ওঠে সান্তাক্লজকে নিয়ে।
খ্রিস্টান সম্প্রদায়ের এ উৎসবে শরিক হন অন্য ধর্মের মানুষও, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান উপভোগ করেন, শুভেচ্ছা বিনিময় করেন। বাংলাদেশ ধর্মীয় সম্প্রীতির দেশ। সব ধর্মের মানুষ মিলেমিশে বাস করছে। বাংলাদেশের খ্রিস্টান সম্প্রদায়ের মধ্যে এমন একজন ব্যক্তিত্ব আছেন যিনি সারা বিশ্বে বাংলাদেশের নাম ছড়িয়ে দিচ্ছেন।

খ্রিস্ট সম্প্রদায়ের শীর্ষ নীতি-নির্ধারক হওয়ায় তিনি বিশ্বের বিভিন্নস্থানে যাচ্ছেন এবং সেসব দেশে গর্বের সঙ্গে উচ্চারিত হয় বাংলাদেশের নাম। তিনি হচ্ছেন প্যাট্রিক ডি রোজারিও। তিনি বাংলাদেশ থেকে মনোনীত প্রথম কার্ডিনাল। কার্ডিনাল হচ্ছেন খ্রিস্টান সম্প্রদায়ের দ্বিতীয় গুরুত্বপূর্ণ পদ, যাদের অবস্থান পোপের পরই, তাদের ভোটেই পোপ নির্বাচিত হন। বিশ্বে কার্ডিনালের সংখ্যা ২১৪ জন।

২০১৬ সালের অক্টোবরে কার্ডিনাল মনোনীত হন প্যাট্রিক। প্যাট্রিক ডি রোজারিওর জন্ম ১৯৪৩ সালে; বরিশালের পাদ্রি শিবপুরে। ১৯৭২ সালে তিনি ‘ফাদার’ বা যাজক হন। ১৯৯০ সালে তিনি বিশপ নির্বাচিত হন। দায়িত্ব নেন রাজশাহীতে ধর্মপ্রদেশের। ১৯৯৫ সালে চট্টগ্রাম ধর্মপ্রদেশের দায়িত্বগ্রহণ করেন তিনি। ২০১১ সালে প্যাট্রিক ডি রোজারিও ঢাকা আর্চবিশপ হিসেবে দায়িত্ব পান। আর্চবিশপ হচ্ছেন বাংলাদেশের খ্রিস্টধর্মাবলম্বীদের প্রধান ধর্মগুরু।

বাংলাদেশ থেকে প্রথম কার্ডিনাল নির্বাচিত হওয়ার পর প্যাট্রিক ডি রোজারিও বলেছিলেন, বিশ্বের ক্যাথলিক খ্রিস্টানদের ধর্মীয় সর্বোচ্চ সভায় আসন পাওয়াটা দেশের জন্য একটি অর্জন। তিনি বলেছিলেন, এটি তার ব্যক্তিগত অর্জন নয়, বাংলাদেশের অর্জন আর এদেশের প্রতি পোপের ভালোবাসা ও স্বীকৃতির উদাহরণ। এই স্বীকৃতি পুরো বাংলাদেশের।

বাংলাদেশের বিভিন্ন জেলায় খ্রিস্টানদের বহু মিশন রয়েছে, ঢাকার কাকরাইলের গির্জা দেশের খ্রিস্টান সম্প্রদায়ের প্রধানকেন্দ্র হিসেবে বিবেচিত। এ ছাড়াও রাজধানীর রমনা ক্যাথেড্রাল, তেজগাঁও হলি রোজারি চার্চ, কল্যাণপুর, মিরপুর, ইস্কাটন, বরিশাল জেলার পাদ্রি শিবপুর, বরিশাল শহরের ব্যাপ্টিস্ট চার্চ, গৌরনদীর দক্ষিণ বিজয়পুর, আগৈলঝড়ার জোবারপাড়, মানিকগঞ্জের উথলি, মুন্সীগঞ্জের সিরাজদীখান, গাজীপুরের কালীগঞ্জের সেন্ট নিকোলাস গির্জা, গোপালগঞ্জের নারিকেলবাড়ি, চট্টগ্রামের পাহাড়তলী, রংপুরের সুলতান নগর, দিনাজপুরের ফুলবাড়ী, নীলফামারী, যশোরের গির্জা ওই অঞ্চলগুলোর খ্রিস্টান সম্প্রদায়ের ধর্ম-কর্ম পালনের কেন্দ্র একইসঙ্গে তাদের পারস্পরিক দেখা-সাক্ষাৎ ও মতবিনিময়ের কেন্দ্রেও পরিণত হয়েছে। বড়দিন আমাদের রাষ্ট্রীয় পর্যায়েও যথেষ্ট গুরুত্ব পায়। এটি সরকারি ছুটির দিন।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সোমবার খ্রিস্টান সম্প্রদায়ের সঙ্গে শুভেচ্ছা বিনিময় করেছেন। গণভবনে এক অনুষ্ঠানে আয়োজিত শুভেচ্ছা বিনিময় অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, বাংলাদেশ এমন একটি দেশ যেখানে সব ধর্মের মানুষ সমান অধিকার ভোগ করছে। ধর্ম-বর্ণ-নির্বিশেষে সবার কল্যাণে কাজ করছে সরকার। দেশের খ্রিস্টান সম্প্রদায়ের এই উৎসবের দিনে সবার প্রার্থনা হোক নিরাপদ পৃথিবীর জন্য, সবার প্রত্যাশা হোক সুখী-সমৃদ্ধ সোনার বাংলা। সবাইকে বড়দিনের শুভেচ্ছা।