প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের উপপরিচালক দেলোয়ার হোসেন বৃহস্পতিবার বলেন, ‘শিশুদের বহিষ্কার করার নিয়ম বাতিল ঘোষণা করা হয়েছে। তবে শিশুদের বহিষ্কার না করে অন্য কি উপায়ে পরীক্ষাটি সুষ্ঠুভাবে নেওয়া যায় সে বিষয়ে পরবর্তীতে জানানো হবে।‘
১৭ নভেম্বর থেকে দেশব্যাপী পিইসি পরীক্ষা শুরু হয়। পরীক্ষার প্রথম দিনই ১৫ কোমলমতি শিশুকে বহিষ্কার করা হয়। এরপর শিক্ষার্থীদের বহিষ্কার নিয়ে গত ১৯ নভেম্বর দেশ রূপান্তর পত্রিকায় ‘পিইসি পরীক্ষায় শিশু বহিষ্কার কেন’ শীর্ষক প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়।
প্রতিবেদনে বলা হয়, কোমলমতি শিশুদের এ ধরনের বহিষ্কার তাদের ওপর এক ধরনের মানসিক নির্যাতন। যারা পরীক্ষা কিংবা নকল করার বিষয়টিই এখনো ঠিকমতো বুঝে উঠতে পারেনি। এ ব্যাপারে কর্তব্যরত শিক্ষকরা আরও সচেতন হলে এ ধরনের বহিষ্কার এড়ানো যেত। শিশুদের বহিষ্কারের বিষয়টি নির্দেশনায় রাখা কতটা যৌক্তিক তা ভাববার বিষয় রয়েছে। এ নিয়ে উদ্বিগ্ন অভিভাবকরাও।
২১ নভেম্বর বহিষ্কারের বিষয়টি আদালতের নজরে আনেন সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী এএম জামিউল হক ফয়সাল। ওই দিন বিচারপতি এম ইনায়েতুর রহিম ও বিচারপতি মো. মোস্তাফিজুর রহমানের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ স্বতঃপ্রণোদিত হয়ে এ রুল দেন। রুলে ১১ নম্বর অনুচ্ছেদে বহিষ্কারের নির্দেশনা কেন অবৈধ হবে না- তা জানতে চাওয়া হয়।
একই সঙ্গে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সচিব, প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক, প্রাথমিক শিক্ষা একাডেমির মহাপরিচালক, মাদ্রাসা শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যানকে দুই সপ্তাহের মধ্যে এ রুলের জবাব দিতে বলা হয়। আদালত ১০ ডিসেম্বর পরবর্তী আদেশের তারিখ ধার্য করে। তবে রুলের পরও সারা দেশে সর্বমোট ১২৭ শিশু শিক্ষার্থীকে বহিষ্কার করা হয়।
এরপর গত ১৮ ডিসেম্বর আদালত শুনানি শেষে বহিষ্কার হওয়া শিক্ষার্থীদের পুনরায় পরীক্ষা নিয়ে ৩১ ডিসেম্বরের মধ্যে ফল প্রকাশের আদেশ দেয়। এরপর অধিদপ্তর বহিষ্কার হওয়া ১২৭ শিশু শিক্ষার্থীর পরীক্ষা নেওয়ার জন্য ২৪, ২৬ এবং ২৮ ডিসেম্বর তারিখ ঠিক করে রুটিন প্রকাশ করে।
গত বছর অধিদপ্তরের পরীক্ষা সংক্রান্ত নির্দেশাবলি ১১ নম্বর অনুচ্ছেদ তুলে দেওয়া বিষয়ে জানতে চাইলে দেলোয়ার হোসেন দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘এই অনুচ্ছেদের আওতায় পরীক্ষার কেন্দ্রে কোনো শিক্ষার্থী একে অন্যের সঙ্গে কথা বললে, অননুমোদিত কাগজপত্র বা বস্তু সঙ্গে রাখলে, অন্যকে দেখানোর কাজে সহযোগিতা করলে, উত্তরপত্র ছাড়া অন্য কিছুতে লিখে আনলে তাকে ওই বিষয়সহ অন্যান্য বিষয়ের পরীক্ষা থেকে বহিষ্কার অথবা পরীক্ষা বাতিল করা হতো’।
তিনি বলেন, ‘আসলে শিশু শিক্ষার্থীরা নকল করে না বা এসব বোঝেও না। অনেক সময় অভিভাবকরা সন্তানদের বেশি নম্বর পাইয়ে দিতে অবৈধ পন্থা অবলম্বন করেন, অনেক সময় শিক্ষকরাও এসবের সঙ্গে জড়িয়ে পড়েন’।তিনি বলেন, ‘এই অনুচ্ছেদটি তুলে দিলেও শিশুদের বহিষ্কার না করে অন্য কি উপায়ে পরীক্ষাটি সুষ্ঠুভাবে নেওয়া যায় বা ওই নির্দেশনায় কি রাখা হবে সে বিষয়ে কমিটি সিদ্ধান্ত নেবে’।