রাশেদুর রহমান রাশু : বিশেষ প্রতিনিধি :=
রাজধানীর দুই সিটি নির্বাচনে মেয়র পদে বর্তমানে দায়িত্ব পালনকারীর একজনকে বাদ দিয়েছে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ। ঢাকা উত্তরে ক্ষমতাসীনরা আস্থা রেখেছে ব্যবসায়ী আতিকুল ইসলামের ওপর। দলীয় নেতৃত্বের আস্থা হারিয়েছেন দক্ষিণের বর্তমান মেয়র ও সাবেক মেয়র মোহাম্মদ হানিফের ছেলে সাঈদ খোকন। দলের নেতাকর্মীদের কাছে অজনপ্রিয় হয়ে ওঠার কারণেই ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন নির্বাচনে মেয়র হিসেবে আরও খবর আওয়ামী লীগের মনোনয়নবঞ্চিত হয়েছেন তিনি। মেয়র হিসেবে দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে দলের নেতাকর্মীদের ‘পাত্তা না দেওয়ার’ ঘোরতর অভিযোগও উঠেছে তার বিরুদ্ধে। সব মিলে রাজনৈতিক পরিবার থেকে উঠে আসা খোকন কেন দলীয় নেতাকর্মীর পাশাপাশি থাকবেন না সেটাই বড় করে দেখেছেন আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নেতারা।
আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কয়েকজন নেতা দেশ রূপান্তরকে আরও জানান, নানা অনিয়মে জড়িয়ে সাঈদ খোকন ভাবমূর্তিও শূন্যের কোঠায় নামিয়ে এনেছেন। পাশাপাশি নগরবাসী যখনই কোনো না কোনো দুর্যোগের মুখোমুখি হয়েছেন তখন মেয়র হিসেবে সাঈদ খোকন দায়িত্ব পালনে ব্যর্থ হয়েছেন বলেও মনে করে আওয়ামী লীগ। এসব কারণে ঢাকার প্রথম মেয়র প্রয়াত মোহাম্মদ হানিফপুত্র খোকনের ভাবমূর্তি সংকটে পড়েছে এমন সুনির্দিষ্ট খবরে এবার নৌকা প্রতীক দেওয়া হয়নি তাকে।
এ প্রসঙ্গে প্রতিক্রিয়া জানতে মেয়র সাঈদ খোকনকে ফোন করলে দেশ রূপান্তরকে তিনি বলেন, ‘এ ব্যাপারে আমার কোনো বক্তব্য নাই।’ কী কারণে মনোনয়ন পাননি এই প্রশ্নে তিনি বলেন, নো কমেন্টস।
সাঈদ খোকনের পরিবর্তে গতকাল দক্ষিণ সিটির মেয়র পদে আওয়ামী লীগ মনোনয়ন দিয়েছে বঙ্গবন্ধু পরিবারের ঘনিষ্ঠ স্বজন শেখ ফজলে নূর তাপসকে। সাধারণ জনগণের কাছে শুধু ভাবমূর্তি আছে তা মনে করেই নৌকার প্রার্থী হিসেবে এবার তাকে বেছে নিয়েছে ক্ষমতাসীনরা। গতকাল আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের এক সংবাদ সম্মেলনে দুই মেয়র প্রার্থীর নাম ঘোষণা করেন। আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় এক নেতা বলেন, তাপসের পক্ষে পারিবারিক সদস্যরাও সমর্থন জানিয়েছেন। এ দুটি বিষয়কে বিশেষ বিবেচনায় রেখে তাপসের প্রতি সমর্থন জানিয়েছেন আওয়ামী লীগের স্থানীয় সরকার মনোনয়ন বোর্ডের অধিকাংশ সদস্যও। এরপরই ঢাকা দক্ষিণের মেয়র প্রার্থী হিসেবে তাপসকে চূড়ান্ত করেন আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা।
আওয়ামী লীগের সভাপতিমন্ডলীর দুই সদস্য ও সম্পাদকম-লীর দুই সদস্য দেশ রূপান্তরকে বলেন, বঙ্গবন্ধুর ভাগ্নে শেখ মনির ছোট ছেলে শেখ ফজলে নূর তাপস বহু আগেই প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে দক্ষিণের সিটি মেয়র হিসেবে নির্বাচন করার ইচ্ছা পোষণ করেছেন। এসব নানাবিধ কারণে শেষ পর্যন্ত ঢাকা দক্ষিণ সিটিতে মেয়র হিসেবে লড়তে আওয়ামী লীগ তার হাতে নৌকা তুলে দিয়েছে। অন্যদিকে উত্তরে ৯ মাস দায়িত্ব পালনে তেমন কোনো আলোচনা সমালোচনা তৈরি না হওয়ায় পুরনো প্রার্থী মেয়র আতিকুল ইসলামকেই দলীয় মনোনয়ন দিয়েছে আওয়ামী লীগ।
দলের সভাপতিমন্ডলীর অন্য এক সদস্য দেশ রূপান্তরকে বলেন, মেয়র সাঈদ খোকন দলের নেতাকর্মীদের কাছে ভীষণভাবে অজনপ্রিয় হয়ে ওঠেন। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম থেকে শুরু করে বিভিন্ন মাধ্যমে তাকে নিয়ে নানা আলোচনা রয়েছে। আওয়ামী লীগের স্থানীয় সরকার মনোনয়ন বোর্ড মনে করেছে, সাঈদ খোকন এবার বিজয়ী প্রার্থী নয়। তার ওপর আস্থা, বিশ্বাস রাখা মানে অনিশ্চয়তার মুখে পড়ে যাওয়া। তিনি বলেন, মাঠের হিসাবে দেখা গেছে, তাকে আবারও মনোনয়ন দেওয়া হলে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মী, সমর্থকদের মাঠে নামানো কঠিন কাজ হবে। সভাপতিমন্ডলীর ওই সদস্য বলেন, দলের প্রধানের কাছে তথ্য ছিল এবার সাঈদ খোকনকে মনোনয়ন দেওয়া হলে দলীয় মানুষরাই ভোট দিতে কেন্দ্র যাবেন না। তাই ভোটের লড়াইয়ে নামতে দেওয়া হয়নি তাকে। কেন দলীয় মনোনয়ন পেলেন এ প্রশ্নে আওয়ামী লীগের মেয়র প্রার্থী শেখ ফজলে নূর তাপস দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘আমাকে উইনেবল প্রার্থী মনে করা হয়েছে। তাই আমার ওপর আস্থা রেখেছে আওয়ামী লীগ।’
আওয়ামী লীগের সভাপতিমন্ডলীর আরেক সদস্য দেশ রূপান্তরকে বলেন, কাকে মনোনয়ন দেওয়া হলে বিজয় নিশ্চিত হবে সেটা অগ্রাধিকার দিয়ে দুই সিটিতে মেয়র প্রার্থী চূড়ান্ত করেছে আওয়ামী লীগ। সে পর্যবেক্ষণে দক্ষিণে তাপসকে মনোনয়ন দেওয়া হয়েছে আর উত্তরে আতিককে।
এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে আওয়ামী লীগের সভাপতিমন্ডলীর সদস্য ফারুক খান দেশ রূপান্তরকে বলেন, সিটি নির্বাচনে মনোনয়ন দেওয়ার ক্ষেত্রে আওয়ামী লীগের বিবেচনায় ছিল কাকে প্রার্থী করা হলে বিজয় নিশ্চিত হবে। একমাত্র এই মানদন্ডে মেয়র পদে প্রার্থী করা হয়েছে আতিকুল ও তাপসকে। তিনি বলেন, ঢাকাবাসীর কাছে তাপসের স্বচ্ছ ইমেজ রয়েছে। আতিকুলও সমালোচিত নয়।
আওয়ামী লীগের সভাপতিমন্ডলীর আরেক সদস্য আবদুর রহমান দেশ রূপান্তরকে বলেন, ঢাকাবাসীর কাছে দুই প্রার্থীর ভাবমূর্তি কী ধরনের সেটা আমলে নিয়েই একজনকে বাদ দেওয়া হয়েছে এবং আরেকজনকে মনোনয়ন দেওয়া হয়েছে। এখানে বিজয়টাই মুখ্য হিসেবে দেখা হয়েছে।