বৃহস্পতিবার, ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০ বঙ্গাব্দ

মানবাধিকার সুরক্ষায় কার্যকর পদক্ষেপ চাই

কাজী আবু মোহাম্মদ খালেদ নিজাম
মানবাধিকার প্রতিটি মানুষের এক ধরনের
অধিকার যেটা তার জন্মগত ও অবিচ্ছেদ্য। মানুষ এ অধিকার ভোগ করবে এবং চর্চা করবে- এটাই স্বাভাবিক। মানবাধিকার সব জায়গায় এবং সবার জন্য সমানভাবে প্রযোজ্য। এ অধিকার একই সাথে সহজাত ও আইনগত অধিকার। স্থানীয়, জাতীয়, আঞ্চলিক ও আন্তর্জাতিক আইনের অন্যতম দায়িত্ব হল এসব অধিকার রক্ষণাবেক্ষণ করা। কিন্তু আমরা কী দেখছি? নিরীহ মানুষের উপর চলছে শক্তিমানদের বলপ্রয়োগ। প্রতিনিয়ত মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনা ঘটার পরও তার বিচার এবং অধিকার রক্ষার ব্যাপারে মুখের বুলি ছাড়া আমরা কার্যকর তেমন কিছুই করছিনা। দেশে দেশে অধিকার আদায়ে সোচ্চার ব্যক্তি ও মানবাধিকার সংঘঠনগুলো নানা বাধার মুখে পড়ে। আবার কেউ কেউ তাল মিলিয়ে চলার চেষ্টা করেন।
১৯৪৮ সালের ১০ ডিসেম্বর প্যারিসে অনুষ্ঠিত জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদে প্রত্যেক মানুষের মানবাধিকার নিশ্চিত করার লক্ষ্য নিয়ে একটি ‘মানবাধিকারের সার্বজনীন ঘোষণাপত্র’ অনুমোদন করা হয়। যেখানে মানুষের মানবাধিকারের বিভিন্ন দিক ও তার সুরক্ষার কথা বলা হয়েছে। অথচ দেশে কিংবা বিদেশে সর্বত্র মানবাধিকারের চরম লঙ্ঘন হচ্ছে প্রতিনিয়ত। মানুষকে তার মানবাধিকার ঠিকমত আদায়ে প্রচূর বেগ পেতে হচ্ছে।
এর কারণ নানা ধরনের চাপ ও প্রভাবের
কাছে নতিস্বীকার। কিন্তু সহজে এবং
স্বাভাবিকভাবে মানুষের এ অধিকার পাওয়ার
কথা। দুর্বল ও অসহায় মানুষ প্রভাবশালীদের
কাছে সর্বদা পরাস্ত! নিজেদের সম্মান কিংবা বেঁচে থাকার তাগিদে এসব মুখ বুজে সহ্য করা ছাড়া কোন উপায় থাকে না। নানা নির্যাতন, আতংক আর অন্যায়ের কাছে হার মানতে বাধ্য হয়।
সমতা ও বৈষম্যহীনতার ভিত্তিতে প্রত্যেক নাগরিকের অধিকারগুলোকে শ্রদ্ধা করা, রক্ষা করা এবং পরিপূর্ণ করার বাধ্যবাধকতা রয়েছে প্রত্যেকটি রাষ্ট্রের।
আমাদের দেশের সংবিধানেও মানুষের মৌলিক মানবাধিকারগুলোর গ্যারান্টি দেওয়া
হয়েছে যার কোন একটি লঙ্ঘিত হলে সংক্ষুদ্ধ ব্যক্তি আদালতে রিট করার মাধ্যমে তার অধিকার নিশ্চিত করতে পারবে। এরপরও মানবাধিকার পরিপূর্ণভাবে সুনিশ্চিতে সমস্যা থেকেই যাচ্ছে। রাষ্ট্রকে দেশের জনগণের মানবাধিকার পাওয়ার ক্ষেত্রে সহযোগীর ভূমিকা পালন করতে হবে। এক্ষেত্রে রাষ্ট্রের দায়িত্ব সব থেকে বেশি। অনিয়ম, সন্ত্রাস, দুর্নীতি, স্বজনপ্রীতি সহ সব ধরনের অনৈতিক পন্থা থেকে আমাদের সরে আসতে হবে। সুন্দর একটি সমাজ,রাষ্ট্র ও বিশ্বব্যবস্থার জন্য মানবাধিকার বাস্তবায়ন করার কোনই বিকল্প নেই। পাশাপাশি
মানবাধিকার পরিপন্থি সব ধরনের কর্মকাণ্ড
পরিহার করতে হবে। মানবাধিকার
লঙ্ঘনের বিরুদ্ধে জনমত গড়ে তুলতে হবে। মানুষকে তার মৌলিক মানবাধিকার আদায়ে সোচ্চার হতে হবে। নিজে এবং অপরকে
মানবাধিকারের বিষয়গুলো সম্পর্কে
সচেতন করে তুলতে হবে।
বিশ্বব্যাপী মানবাধিকার চরম লঙ্ঘন হচ্ছে নিয়ত। বিভিন্ন দেশ যেমন সিরিয়া, ইয়েমেন, ইরাক, আফগানিস্তান, ফিলিস্তিন,কাশ্মীর, বার্মা সহ অন্য অনেক দেশে মানবাধিকারের চরম লঙ্ঘন হচ্ছে।
চলছে যুদ্ধ, গৃহযুদ্ধ। যেখানে মারা যাচ্ছে অনেক নিরীহ মানুষ। আহত হচ্ছে আরো অনেক। যেখানে নারী ও শিশুর সংখ্যাই বেশি। কিন্তু বিশ্বের সব পরাশক্তি এসব দেশে
মানবাধিকার লঙ্ঘনের ব্যাপারে কার্যকর
কোন ভূমিকা রাখছে না। পারলে উস্কে দেয়!
কিছুদিন পূর্বে মিয়ানমারে চলা নৃশংস
গণহত্যা ও বাংলাদেশে আশ্রয় নেওয়া
নির্যাতিত রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর ব্যাপারে বিশ্বশক্তিগুলোর চরম অবহেলাই পরিলক্ষিত হচ্ছে। কানে তুলছে না বিশ্বের মানবাধিকার
সংগঠনগুলোর কড়া ও জোরালো প্রতিবাদকে।
মায়ানমারের মানবাধিকার লঙ্ঘনের বিরুদ্ধে কঠোর কোন ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। খোদ জাতিসংঘ কার্যকর কোন ভূমিকা রাখতে পারছে না। সিরিয়ায় নিরীহ শিশু,নারী সহ মানুষ হত্যা,কাশ্মীরের জনগণের অধিকার হরণ করা ইত্যাদি ঘটনাগুলো থেকে ধারণা লাভ করা যায় মানবাধিকার পরিস্থিতি কোথায় এসে দাঁড়িয়েছে। মানবাধিকার সুরক্ষা কেবল কাগজে- কলমেই সীমাবদ্ধ! যথাযথ মানবাধিকার সুনিশ্চিত হলে সমাজ, রাষ্ট্র তথা
বিশ্বব্যাপী স্থিতিশীল পরিবেশ বিরাজ করবে।
জাতীয় ও আন্তর্জাতিকভাবে মানবাধিকার
রক্ষায় সকলকে সচেতন হতে হবে। সচেতন করতে হবে জনগণকে। সুনিশ্চিত করতে হবে মানবাধিকার। মানবাধিকার সুরক্ষায় আমাদের সবাইকে এগিয়ে আসতে হবে।
লেখক : শিক্ষক ও প্রাবন্ধিক

আপনার মন্তব্য লিখুন

লেখকের সম্পর্কে

Shahriar Hossain

মানবাধিকার সুরক্ষায় কার্যকর পদক্ষেপ চাই

প্রকাশের সময় : ০৯:৪৮:৫১ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ১৯ ফেব্রুয়ারী ২০২০
কাজী আবু মোহাম্মদ খালেদ নিজাম
মানবাধিকার প্রতিটি মানুষের এক ধরনের
অধিকার যেটা তার জন্মগত ও অবিচ্ছেদ্য। মানুষ এ অধিকার ভোগ করবে এবং চর্চা করবে- এটাই স্বাভাবিক। মানবাধিকার সব জায়গায় এবং সবার জন্য সমানভাবে প্রযোজ্য। এ অধিকার একই সাথে সহজাত ও আইনগত অধিকার। স্থানীয়, জাতীয়, আঞ্চলিক ও আন্তর্জাতিক আইনের অন্যতম দায়িত্ব হল এসব অধিকার রক্ষণাবেক্ষণ করা। কিন্তু আমরা কী দেখছি? নিরীহ মানুষের উপর চলছে শক্তিমানদের বলপ্রয়োগ। প্রতিনিয়ত মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনা ঘটার পরও তার বিচার এবং অধিকার রক্ষার ব্যাপারে মুখের বুলি ছাড়া আমরা কার্যকর তেমন কিছুই করছিনা। দেশে দেশে অধিকার আদায়ে সোচ্চার ব্যক্তি ও মানবাধিকার সংঘঠনগুলো নানা বাধার মুখে পড়ে। আবার কেউ কেউ তাল মিলিয়ে চলার চেষ্টা করেন।
১৯৪৮ সালের ১০ ডিসেম্বর প্যারিসে অনুষ্ঠিত জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদে প্রত্যেক মানুষের মানবাধিকার নিশ্চিত করার লক্ষ্য নিয়ে একটি ‘মানবাধিকারের সার্বজনীন ঘোষণাপত্র’ অনুমোদন করা হয়। যেখানে মানুষের মানবাধিকারের বিভিন্ন দিক ও তার সুরক্ষার কথা বলা হয়েছে। অথচ দেশে কিংবা বিদেশে সর্বত্র মানবাধিকারের চরম লঙ্ঘন হচ্ছে প্রতিনিয়ত। মানুষকে তার মানবাধিকার ঠিকমত আদায়ে প্রচূর বেগ পেতে হচ্ছে।
এর কারণ নানা ধরনের চাপ ও প্রভাবের
কাছে নতিস্বীকার। কিন্তু সহজে এবং
স্বাভাবিকভাবে মানুষের এ অধিকার পাওয়ার
কথা। দুর্বল ও অসহায় মানুষ প্রভাবশালীদের
কাছে সর্বদা পরাস্ত! নিজেদের সম্মান কিংবা বেঁচে থাকার তাগিদে এসব মুখ বুজে সহ্য করা ছাড়া কোন উপায় থাকে না। নানা নির্যাতন, আতংক আর অন্যায়ের কাছে হার মানতে বাধ্য হয়।
সমতা ও বৈষম্যহীনতার ভিত্তিতে প্রত্যেক নাগরিকের অধিকারগুলোকে শ্রদ্ধা করা, রক্ষা করা এবং পরিপূর্ণ করার বাধ্যবাধকতা রয়েছে প্রত্যেকটি রাষ্ট্রের।
আমাদের দেশের সংবিধানেও মানুষের মৌলিক মানবাধিকারগুলোর গ্যারান্টি দেওয়া
হয়েছে যার কোন একটি লঙ্ঘিত হলে সংক্ষুদ্ধ ব্যক্তি আদালতে রিট করার মাধ্যমে তার অধিকার নিশ্চিত করতে পারবে। এরপরও মানবাধিকার পরিপূর্ণভাবে সুনিশ্চিতে সমস্যা থেকেই যাচ্ছে। রাষ্ট্রকে দেশের জনগণের মানবাধিকার পাওয়ার ক্ষেত্রে সহযোগীর ভূমিকা পালন করতে হবে। এক্ষেত্রে রাষ্ট্রের দায়িত্ব সব থেকে বেশি। অনিয়ম, সন্ত্রাস, দুর্নীতি, স্বজনপ্রীতি সহ সব ধরনের অনৈতিক পন্থা থেকে আমাদের সরে আসতে হবে। সুন্দর একটি সমাজ,রাষ্ট্র ও বিশ্বব্যবস্থার জন্য মানবাধিকার বাস্তবায়ন করার কোনই বিকল্প নেই। পাশাপাশি
মানবাধিকার পরিপন্থি সব ধরনের কর্মকাণ্ড
পরিহার করতে হবে। মানবাধিকার
লঙ্ঘনের বিরুদ্ধে জনমত গড়ে তুলতে হবে। মানুষকে তার মৌলিক মানবাধিকার আদায়ে সোচ্চার হতে হবে। নিজে এবং অপরকে
মানবাধিকারের বিষয়গুলো সম্পর্কে
সচেতন করে তুলতে হবে।
বিশ্বব্যাপী মানবাধিকার চরম লঙ্ঘন হচ্ছে নিয়ত। বিভিন্ন দেশ যেমন সিরিয়া, ইয়েমেন, ইরাক, আফগানিস্তান, ফিলিস্তিন,কাশ্মীর, বার্মা সহ অন্য অনেক দেশে মানবাধিকারের চরম লঙ্ঘন হচ্ছে।
চলছে যুদ্ধ, গৃহযুদ্ধ। যেখানে মারা যাচ্ছে অনেক নিরীহ মানুষ। আহত হচ্ছে আরো অনেক। যেখানে নারী ও শিশুর সংখ্যাই বেশি। কিন্তু বিশ্বের সব পরাশক্তি এসব দেশে
মানবাধিকার লঙ্ঘনের ব্যাপারে কার্যকর
কোন ভূমিকা রাখছে না। পারলে উস্কে দেয়!
কিছুদিন পূর্বে মিয়ানমারে চলা নৃশংস
গণহত্যা ও বাংলাদেশে আশ্রয় নেওয়া
নির্যাতিত রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর ব্যাপারে বিশ্বশক্তিগুলোর চরম অবহেলাই পরিলক্ষিত হচ্ছে। কানে তুলছে না বিশ্বের মানবাধিকার
সংগঠনগুলোর কড়া ও জোরালো প্রতিবাদকে।
মায়ানমারের মানবাধিকার লঙ্ঘনের বিরুদ্ধে কঠোর কোন ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। খোদ জাতিসংঘ কার্যকর কোন ভূমিকা রাখতে পারছে না। সিরিয়ায় নিরীহ শিশু,নারী সহ মানুষ হত্যা,কাশ্মীরের জনগণের অধিকার হরণ করা ইত্যাদি ঘটনাগুলো থেকে ধারণা লাভ করা যায় মানবাধিকার পরিস্থিতি কোথায় এসে দাঁড়িয়েছে। মানবাধিকার সুরক্ষা কেবল কাগজে- কলমেই সীমাবদ্ধ! যথাযথ মানবাধিকার সুনিশ্চিত হলে সমাজ, রাষ্ট্র তথা
বিশ্বব্যাপী স্থিতিশীল পরিবেশ বিরাজ করবে।
জাতীয় ও আন্তর্জাতিকভাবে মানবাধিকার
রক্ষায় সকলকে সচেতন হতে হবে। সচেতন করতে হবে জনগণকে। সুনিশ্চিত করতে হবে মানবাধিকার। মানবাধিকার সুরক্ষায় আমাদের সবাইকে এগিয়ে আসতে হবে।
লেখক : শিক্ষক ও প্রাবন্ধিক