বৃহস্পতিবার, ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০ বঙ্গাব্দ

উগ্রবাদ-মাদক-সন্ত্রাসমুক্ত সমাজ গঠনে আলেম সমাজকে কাজে লাগাতে হবে — এ এম এম বাহাউদ্দীন

ঢাকা ব্যুরো :=

উগ্রবাদ, জঙ্গীবাদ, সন্ত্রাস ও মাদকমুক্ত সমাজ নির্মাণ এবং দেশে শান্তি প্রতিষ্ঠা করতে আলেম সমাজকে কাজে লাগানোর প্রতি গুরুত্বারোপ করছেন দৈনিক ইনকিলাব সম্পাদক ও মাদরাসা শিক্ষকদের একক সংগঠন বাংলাদেশ জমিয়াতুল মোদার্রেছীনের সভাপতি আলহাজ্ব এ এম এম বাহাউদ্দীন। তিনি বলেছেন, বাংলাদেশের আলেম সমাজ সমগ্র জনগোষ্ঠির ২০ ভাগকে বিনা পয়সায়, সরকারের সহযোগিতা ছাড়াই শিক্ষা-দীক্ষা দিয়ে মাদকবিরোধী, জঙ্গীবাদ বিরোধী মনোভাব তৈরি করছে। সমাজকে স্থিতিশীল রাখতে স্বতঃপ্রণোদিত হয়ে কাজ করছে। বাংলাদেশের আলেম সমাজ যদি এসব কাজের ব্যাপারে হতাশ হয়ে যায়, তাহলে সমাজের ভয়াবহ পরিণতি হবে। তখন আড়াই’শ কোটি কেন? আড়াই হাজার কোটি টাকাসহ রাষ্ট্রের সমস্ত সম্পদই চলে যাবে মাদকাসক্তদের পেছনে। শুধু র‌্যাব-পুলিশের সংখ্যা বাড়িয়ে দেশে শান্তি প্রতিষ্ঠা সম্ভব হবে না, তাদের সাথে আলেম সমাজকেও কাজে লাগাতে হবে।  গতকাল শনিবার সন্ধ্যায় রাজধানীর মহানগর নাট্যমঞ্চের কাজী বশির মিলনায়তনে মুনিরীয়া যুব তবলীগের ঐতিহাসিক এশায়াত সম্মেলনে তিনি এসব কথা বলেন।
এ এম এম বাহাউদ্দীন বলেন, কয়েকদিন আগে র‌্যাবের ডিজি (মহাপরিচালক) বলেছেন, প্রতিদিন মাদকের পেছনে কমপক্ষে ব্যয় হয় আড়াই’শ কোটি টাকা। কমপক্ষে দেশের ৮০ লাখ লোক মাদকাসক্ত। মাদকাসক্তদের মধ্যে রয়েছে- সামরিক বাহিনীর লোক, পুলিশ, আইন-শৃঙ্খলার সব ধরণের বাহিনীর লোক, বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক, সরকারি কর্মকর্তা, তরুণ প্রজন্ম, অসংখ্য নারী। যারা মাদকের পেছনে টাকা ব্যয় করছেন, তারা পরিবারের শান্তি নষ্ট করছেন, সমাজে সংঘাত সৃষ্টি করছেন, ভাই-ভাইকে মারছে, পিতা-মাতার সাথে সংঘর্ষে যাচ্ছে। এ থেকে রাষ্ট্র ও সমাজকে রক্ষা করতে পারে মূল ধারা ও ত্বরিকতপন্থী আলেম-ওলামাগণ। তা না হলে মাদকাসক্তের সংখ্যা বাড়বে, দেশের নিরাপত্তা সঙ্কট হবে, দেশের অর্থনীতির অবনতি হবে।
মুসলমানরাই মুসলমানদের বিরুদ্ধে লড়াই করছে মন্তব্য করে দৈনিক ইনকিলাব সম্পাদক বলেন, সউদী আরব, ইয়েমেন, তুরস্কের সাথে সিরিয়া কিংবা দেশের ভেতরেই বলি, সবখানেই মুসলমানরা মুসলমানদের সাথে লড়াই করছেন। লন্ডনে মসজিদের ৭০বছর বয়স্ক ইমামকে ছুরিকাঘাত করেছে আরেকজন মুসল্লি। আফ্রিকার দেশে দেশে- মিশর, সোমালিয়া, সুদান, আলজেরিয়া, মরক্কো, তিউনিশিয়া, লিবিয়া প্রত্যেকটা দেশে অভ্যন্তরীণ সঙ্ঘাত চলছে। সেখানে এসব সঙ্ঘাত নিয়ন্ত্রণের জন্য রাষ্ট্র আলেম সমাজের সাথে প্রকৃত সম্পর্ক গড়তে ব্যর্থ হয়েছে। এজন্য সেখানে উগ্র জঙ্গীবাদের উত্থান ঘটছে। সেটা সেনাবাহিনী দিয়ে থামাতে পারছে না। তাদের কর্মকান্ডের কারণে বিশ্বের খ্রিস্টান, ইহুদিসহ অন্য ধর্মের নেতৃবৃন্দ সুযোগ নিচ্ছে স্লাভোকিয়ার প্রধানমন্ত্রীসহ পশ্চিমা দেশের নেতারা বলছেন, সমস্ত জঙ্গীবাদের সাথে ইসলামের সম্পর্ক আছে। কথাটা বলতে পারছে কারণ যারা ইসলাম থেকে বিচ্ছিন্ন মুসলমান নামধারী, এমন বিচ্ছিন্ন চিন্তাধারা ও কতিপয় উগ্রবাদী লোকের কর্মকান্ডের কারণে মুসলমানরা ভোগান্তির শিকার হচ্ছে।
তিনি বলেছেন, বাংলাদেশের এ ধরণের উগ্রবাদী চেতনার প্রসার ঘটানোর প্রয়াস ছিল এবং এখনো আছে। প্রধানমন্ত্রী অত্যন্ত বিচক্ষণতার সাথে, আন্তরিকতার সাথে এদেশের আলেম সমাজকে সাথে নিয়ে কাজ করেছেন। যার ফলে উগ্রবাদ মাথা চাড়া দিয়ে উঠতে পারেনি। পাকিস্তানেও উগ্রবাদ মাথা চাড়া দিয়ে উঠেছিল, সেখানে ইমরান খান ধর্মীয় নেতৃত্বের সাথে সম্পর্ক স্থাপন করে সামরিক কৌশল, ধর্মীয় কৌশল ও আলেম ওলামাদের সাথে নিয়ে নিয়ন্ত্রণ করেছেন। একইভাবে তুরস্কে রিসেফ তায়েফ এরদোগান, মালয়েশিয়ায় ড. মাহথির মুহাম্মদ সকলে আলেম সমাজের সাথে ঘনিষ্ট সম্পর্ক রাখছেন, নিজেরা ব্যক্তিগতভাবেও ধর্ম পরায়ণ ও ধর্ম চিন্তাবিদ।
উগ্রবাদী চেতনা সম্পন্ন ইসলামী সমাজ যাতে না হয়, সেজন্য সকলকে সতর্ক থাকার আহবান জানিয়ে জমিয়াত সভাপতি বলেন, এখন অনেকের মধ্যে একধরণের ট্রেন্ড তৈরি হয়েছে, ইউটিউবে জনপ্রিয়তা অর্জনের। কার কত ভিউ, কার কতো ফলোয়ার এই প্রতিযোগিতা চলছে। এটি অত্যন্ত জঘন্য কাজ। রাষ্ট্রের চিন্তাবিদের এসব বিষয়ে সতর্ক থাকতে হবে। যারা ভালো বলবে তারা ভালো।
তিনি বলেছেন, উগ্রবাদী ধ্যান-ধারনা কমাতে হলে মূল ধারার আলেম সমাজ-ত্বরিকতপন্থী আলেম সমাজের সাথে রাষ্ট্র পরিচালনাকারীদের সম্পর্ক আরো গভীর করতে হবে। গভীর থেকে চিন্তাভাবনা জানতে হবে। কি হচ্ছে তা জানতে হবে। মূল ধারার আলেম সমাজ যদি সমাজ গঠনের চিন্তা বাদ দেন তাহলে সমাজ যে ধরণের ইসলামী চেতনার হবে, রাষ্ট্র যে ইসলামী ধারার লোকদের হাতে যাবে সেই ইসলামী ধারার লোক হবে উগ্রবাদী, ঐ ধ্যান-ধারণার হলে রাষ্ট্র ভয়াবহ দুর্যোগের মধ্যে পড়বে, অর্থনৈতিক বিপর্যয় ও সমাজ সঙ্ঘাতের মধ্যে পরবে।
মুনিরীয়া যুব তবলীগের কমিটির উদ্দেশ্যে এ এম এম বাহাউদ্দীন বলেন, মুনিরীয়া যুব তবলীগ ত্বরিকতপন্থী, সুফীবাদে বিশ্বাসী একটি সংগঠন। এরা সন্ত্রাস, মাদকের বিরুদ্ধে যুব সমাজকে ভালো কাজে উদ্বুদ্ধ করছে। ভালো কাজে জড়িত রাখছেন। ভালো কাজ করে যান, রাষ্ট্র যারা পরিচালনা করছেন তারা সকলেই আপনাদের কাছে, আলেম সমাজের কাছে আসবে।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে অধ্যক্ষ ছৈয়্যদ মুনির উল্লাহ বলেন, আল্লাহ পাক রাব্বুল আলামীন সৃষ্টির হেদায়তের জন্য যে পথ রেখেছেন সেই পথই সিরাতুল মোস্তাকীম। যে পথের কর্ণদ্বার নবীগণ, সিদ্দিকগণ, শহীদগণ এবং সালেহীন বান্দারা। আল্লাহর উপর ঈমান, নবীর উপর পূর্ণ ঈমান ও অনুসরণের মাধ্যমে যাঁরা পূর্ণতার স্তরে পৌঁছান তারাই সালেহীন। কালের পরিক্রমায় আমরা পেয়েছি এমন একজন রাহবার যিনি সলফে সালেহীনের ইতিহাসে একজন কালজয়ী নক্ষত্র। শরীয়তের পূর্ণ বাস্তবায়ন, নবীর সুন্নতের অনুসরণ ও অনুকরণের মাধ্যমে নিজেকে এমনভাবে রাঙিয়েছেন যে নবী (দঃ) উনাকে আপন হাতে বায়াত করিয়ে খলিফায়ে রাসুলের মর্যাদা দিয়েছেন। নবীর বাতেনী নূর বিতরণের মাধ্যমে ইমাম হুসাইন (রাঃ) যেমন নবীর প্রেমে সর্বস্ব উজাড় করেছেন তেমনি প্রিয় রাসুলের প্রেমে হযরত গাউছুল আজমও সেই পদাঙ্ক অনুসরণ করে নিজেকে বিলিয়ে দিয়েছেন।
তিনি বলেন, যে পথে নিয়ামত আছে সে পথে বাধা আছে, শয়তানি প্ররোচনা আছে, নফসের প্রলোভন আছে। এখানে এখলাসের মাধ্যমে গাউছুল আজম যে পথ দেখিয়েছেন সে পথ ধরে গেলে ইনশাআল্লাহ দুজাহানে বিজয় সুনিশ্চিত। কারণ উনার তরিক্বত প্রতিষ্ঠিত নবীর প্রেমের উপর, এখলাসের দৃঢ় ভিত্তির উপর সর্বোপরি শতশত রজনীতে নিরবে বিসর্জনকৃত অশ্রুর উপর। এই তরিক্বতের মূল বিষয় হচ্ছে অভ্যন্তরীণ পরিশুদ্ধি। আত্মশুদ্ধির শপথে আধ্যাত্মিকতার সোপানসমূহ অতিক্রমের মধ্য দিয়ে মঞ্জিলে মকছুদ হাসিলই একমাত্র উদ্দেশ্য। তাই বাধার পাহাড়, দ্বিধার দেয়ালে মোখলেছরা ভেঙ্গে পড়েনা, হতাশায় মছকে যায়না। এশায়াতের ঐশী মিশনের ভিশন হলো নবীকে রাজি করানো তাই নবীর ফুয়ুজাত এবং বরকত সবসময় এই তরিক্বতে জারি। এই তরিক্বতের অগ্রযাত্রার লক্ষ্যমাত্রা হলো লা মকানের রবের সাথে সাক্ষাত। হযরত গাউছুল আজমের হিকমত ও হিম্মতের অনন্য নজির এশায়াত সম্মেলন।
পবিত্র জশ্নে জলুছে ঈদে মিলাদুন্নবী (দঃ) উদ্যাপন ও কাগতিয়া দরবারের প্রতিষ্ঠাতা খলিলুল্লাহ আওলাদে মোস্তফা খলিফায়ে রাসূল হযরত শায়খ ছৈয়্যদ গাউছুল আজম (রাঃ) স্মরণে কাগতিয়া আলীয়া গাউছুল আজম দরবার শরীফ তরিক্বতের এ সম্মেলনের আয়োজন করে মুনিরীয়া যুব তবলীগ কমিটি বাংলাদেশ। চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের সিনেট সদস্য ও মাইক্রো বায়োলজি বিভাগের প্রফেসর ড. মোহাম্মদ আবুল মনছুরের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য রাখেন- বাংলাদেশ জমিয়াতুল মোদার্রেছীন মহাসচিব অধ্যক্ষ মাওলানা শাব্বীর আহমদ মোমতাজী, চট্টগ্রাম নানুপুর মাজহারুল উলুম গাউছিয়া ফাযিল মাদরাসার অধ্যক্ষ মুছলেহ উদ্দিন আহমদ মাদানী, ব্যারিস্টার এস এম কফিল উদ্দীন, পরশুরাম উপজেলা চেয়ারম্যান মোহাম্মদ কামাল উদ্দিন মজুমদার, ড. ছৈয়দ এমদাদ উদ্দীন, হাফেজ মাওলানা মুহাম্মদ আবু বকর, মাওলানা মুহাম্মদ রাকিব উদ্দীন, মাওলানা মুহাম্মদ জসিম উদ্দীন নূরী, মাওলানা মুহাম্মদ এরশাদুল হক ও মুহাম্মদ সালাউদ্দীন। মিলাদ-কিয়াম শেষে প্রধান অতিথি দেশ, জাতি ও বিশ্ব মুসলিম উম্মাহর সুখ, শান্তি ও সমৃদ্ধি এবং দরবারের প্রতিষ্ঠাতা গাউছুল আজম (রাঃ)’র ফুয়ুজাত কামনা করে বিশেষ মুনাজাত করেন।

আপনার মন্তব্য লিখুন

লেখকের সম্পর্কে

Shahriar Hossain

কমান্ডার মোসলেম উদ্দীন ছিলেন মুক্ত চিন্তার মানুষ, স্মরণ সভায় বক্তারা… 

উগ্রবাদ-মাদক-সন্ত্রাসমুক্ত সমাজ গঠনে আলেম সমাজকে কাজে লাগাতে হবে — এ এম এম বাহাউদ্দীন

প্রকাশের সময় : ১০:৫৩:৫০ অপরাহ্ন, শনিবার, ২২ ফেব্রুয়ারী ২০২০
ঢাকা ব্যুরো :=

উগ্রবাদ, জঙ্গীবাদ, সন্ত্রাস ও মাদকমুক্ত সমাজ নির্মাণ এবং দেশে শান্তি প্রতিষ্ঠা করতে আলেম সমাজকে কাজে লাগানোর প্রতি গুরুত্বারোপ করছেন দৈনিক ইনকিলাব সম্পাদক ও মাদরাসা শিক্ষকদের একক সংগঠন বাংলাদেশ জমিয়াতুল মোদার্রেছীনের সভাপতি আলহাজ্ব এ এম এম বাহাউদ্দীন। তিনি বলেছেন, বাংলাদেশের আলেম সমাজ সমগ্র জনগোষ্ঠির ২০ ভাগকে বিনা পয়সায়, সরকারের সহযোগিতা ছাড়াই শিক্ষা-দীক্ষা দিয়ে মাদকবিরোধী, জঙ্গীবাদ বিরোধী মনোভাব তৈরি করছে। সমাজকে স্থিতিশীল রাখতে স্বতঃপ্রণোদিত হয়ে কাজ করছে। বাংলাদেশের আলেম সমাজ যদি এসব কাজের ব্যাপারে হতাশ হয়ে যায়, তাহলে সমাজের ভয়াবহ পরিণতি হবে। তখন আড়াই’শ কোটি কেন? আড়াই হাজার কোটি টাকাসহ রাষ্ট্রের সমস্ত সম্পদই চলে যাবে মাদকাসক্তদের পেছনে। শুধু র‌্যাব-পুলিশের সংখ্যা বাড়িয়ে দেশে শান্তি প্রতিষ্ঠা সম্ভব হবে না, তাদের সাথে আলেম সমাজকেও কাজে লাগাতে হবে।  গতকাল শনিবার সন্ধ্যায় রাজধানীর মহানগর নাট্যমঞ্চের কাজী বশির মিলনায়তনে মুনিরীয়া যুব তবলীগের ঐতিহাসিক এশায়াত সম্মেলনে তিনি এসব কথা বলেন।
এ এম এম বাহাউদ্দীন বলেন, কয়েকদিন আগে র‌্যাবের ডিজি (মহাপরিচালক) বলেছেন, প্রতিদিন মাদকের পেছনে কমপক্ষে ব্যয় হয় আড়াই’শ কোটি টাকা। কমপক্ষে দেশের ৮০ লাখ লোক মাদকাসক্ত। মাদকাসক্তদের মধ্যে রয়েছে- সামরিক বাহিনীর লোক, পুলিশ, আইন-শৃঙ্খলার সব ধরণের বাহিনীর লোক, বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক, সরকারি কর্মকর্তা, তরুণ প্রজন্ম, অসংখ্য নারী। যারা মাদকের পেছনে টাকা ব্যয় করছেন, তারা পরিবারের শান্তি নষ্ট করছেন, সমাজে সংঘাত সৃষ্টি করছেন, ভাই-ভাইকে মারছে, পিতা-মাতার সাথে সংঘর্ষে যাচ্ছে। এ থেকে রাষ্ট্র ও সমাজকে রক্ষা করতে পারে মূল ধারা ও ত্বরিকতপন্থী আলেম-ওলামাগণ। তা না হলে মাদকাসক্তের সংখ্যা বাড়বে, দেশের নিরাপত্তা সঙ্কট হবে, দেশের অর্থনীতির অবনতি হবে।
মুসলমানরাই মুসলমানদের বিরুদ্ধে লড়াই করছে মন্তব্য করে দৈনিক ইনকিলাব সম্পাদক বলেন, সউদী আরব, ইয়েমেন, তুরস্কের সাথে সিরিয়া কিংবা দেশের ভেতরেই বলি, সবখানেই মুসলমানরা মুসলমানদের সাথে লড়াই করছেন। লন্ডনে মসজিদের ৭০বছর বয়স্ক ইমামকে ছুরিকাঘাত করেছে আরেকজন মুসল্লি। আফ্রিকার দেশে দেশে- মিশর, সোমালিয়া, সুদান, আলজেরিয়া, মরক্কো, তিউনিশিয়া, লিবিয়া প্রত্যেকটা দেশে অভ্যন্তরীণ সঙ্ঘাত চলছে। সেখানে এসব সঙ্ঘাত নিয়ন্ত্রণের জন্য রাষ্ট্র আলেম সমাজের সাথে প্রকৃত সম্পর্ক গড়তে ব্যর্থ হয়েছে। এজন্য সেখানে উগ্র জঙ্গীবাদের উত্থান ঘটছে। সেটা সেনাবাহিনী দিয়ে থামাতে পারছে না। তাদের কর্মকান্ডের কারণে বিশ্বের খ্রিস্টান, ইহুদিসহ অন্য ধর্মের নেতৃবৃন্দ সুযোগ নিচ্ছে স্লাভোকিয়ার প্রধানমন্ত্রীসহ পশ্চিমা দেশের নেতারা বলছেন, সমস্ত জঙ্গীবাদের সাথে ইসলামের সম্পর্ক আছে। কথাটা বলতে পারছে কারণ যারা ইসলাম থেকে বিচ্ছিন্ন মুসলমান নামধারী, এমন বিচ্ছিন্ন চিন্তাধারা ও কতিপয় উগ্রবাদী লোকের কর্মকান্ডের কারণে মুসলমানরা ভোগান্তির শিকার হচ্ছে।
তিনি বলেছেন, বাংলাদেশের এ ধরণের উগ্রবাদী চেতনার প্রসার ঘটানোর প্রয়াস ছিল এবং এখনো আছে। প্রধানমন্ত্রী অত্যন্ত বিচক্ষণতার সাথে, আন্তরিকতার সাথে এদেশের আলেম সমাজকে সাথে নিয়ে কাজ করেছেন। যার ফলে উগ্রবাদ মাথা চাড়া দিয়ে উঠতে পারেনি। পাকিস্তানেও উগ্রবাদ মাথা চাড়া দিয়ে উঠেছিল, সেখানে ইমরান খান ধর্মীয় নেতৃত্বের সাথে সম্পর্ক স্থাপন করে সামরিক কৌশল, ধর্মীয় কৌশল ও আলেম ওলামাদের সাথে নিয়ে নিয়ন্ত্রণ করেছেন। একইভাবে তুরস্কে রিসেফ তায়েফ এরদোগান, মালয়েশিয়ায় ড. মাহথির মুহাম্মদ সকলে আলেম সমাজের সাথে ঘনিষ্ট সম্পর্ক রাখছেন, নিজেরা ব্যক্তিগতভাবেও ধর্ম পরায়ণ ও ধর্ম চিন্তাবিদ।
উগ্রবাদী চেতনা সম্পন্ন ইসলামী সমাজ যাতে না হয়, সেজন্য সকলকে সতর্ক থাকার আহবান জানিয়ে জমিয়াত সভাপতি বলেন, এখন অনেকের মধ্যে একধরণের ট্রেন্ড তৈরি হয়েছে, ইউটিউবে জনপ্রিয়তা অর্জনের। কার কত ভিউ, কার কতো ফলোয়ার এই প্রতিযোগিতা চলছে। এটি অত্যন্ত জঘন্য কাজ। রাষ্ট্রের চিন্তাবিদের এসব বিষয়ে সতর্ক থাকতে হবে। যারা ভালো বলবে তারা ভালো।
তিনি বলেছেন, উগ্রবাদী ধ্যান-ধারনা কমাতে হলে মূল ধারার আলেম সমাজ-ত্বরিকতপন্থী আলেম সমাজের সাথে রাষ্ট্র পরিচালনাকারীদের সম্পর্ক আরো গভীর করতে হবে। গভীর থেকে চিন্তাভাবনা জানতে হবে। কি হচ্ছে তা জানতে হবে। মূল ধারার আলেম সমাজ যদি সমাজ গঠনের চিন্তা বাদ দেন তাহলে সমাজ যে ধরণের ইসলামী চেতনার হবে, রাষ্ট্র যে ইসলামী ধারার লোকদের হাতে যাবে সেই ইসলামী ধারার লোক হবে উগ্রবাদী, ঐ ধ্যান-ধারণার হলে রাষ্ট্র ভয়াবহ দুর্যোগের মধ্যে পড়বে, অর্থনৈতিক বিপর্যয় ও সমাজ সঙ্ঘাতের মধ্যে পরবে।
মুনিরীয়া যুব তবলীগের কমিটির উদ্দেশ্যে এ এম এম বাহাউদ্দীন বলেন, মুনিরীয়া যুব তবলীগ ত্বরিকতপন্থী, সুফীবাদে বিশ্বাসী একটি সংগঠন। এরা সন্ত্রাস, মাদকের বিরুদ্ধে যুব সমাজকে ভালো কাজে উদ্বুদ্ধ করছে। ভালো কাজে জড়িত রাখছেন। ভালো কাজ করে যান, রাষ্ট্র যারা পরিচালনা করছেন তারা সকলেই আপনাদের কাছে, আলেম সমাজের কাছে আসবে।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে অধ্যক্ষ ছৈয়্যদ মুনির উল্লাহ বলেন, আল্লাহ পাক রাব্বুল আলামীন সৃষ্টির হেদায়তের জন্য যে পথ রেখেছেন সেই পথই সিরাতুল মোস্তাকীম। যে পথের কর্ণদ্বার নবীগণ, সিদ্দিকগণ, শহীদগণ এবং সালেহীন বান্দারা। আল্লাহর উপর ঈমান, নবীর উপর পূর্ণ ঈমান ও অনুসরণের মাধ্যমে যাঁরা পূর্ণতার স্তরে পৌঁছান তারাই সালেহীন। কালের পরিক্রমায় আমরা পেয়েছি এমন একজন রাহবার যিনি সলফে সালেহীনের ইতিহাসে একজন কালজয়ী নক্ষত্র। শরীয়তের পূর্ণ বাস্তবায়ন, নবীর সুন্নতের অনুসরণ ও অনুকরণের মাধ্যমে নিজেকে এমনভাবে রাঙিয়েছেন যে নবী (দঃ) উনাকে আপন হাতে বায়াত করিয়ে খলিফায়ে রাসুলের মর্যাদা দিয়েছেন। নবীর বাতেনী নূর বিতরণের মাধ্যমে ইমাম হুসাইন (রাঃ) যেমন নবীর প্রেমে সর্বস্ব উজাড় করেছেন তেমনি প্রিয় রাসুলের প্রেমে হযরত গাউছুল আজমও সেই পদাঙ্ক অনুসরণ করে নিজেকে বিলিয়ে দিয়েছেন।
তিনি বলেন, যে পথে নিয়ামত আছে সে পথে বাধা আছে, শয়তানি প্ররোচনা আছে, নফসের প্রলোভন আছে। এখানে এখলাসের মাধ্যমে গাউছুল আজম যে পথ দেখিয়েছেন সে পথ ধরে গেলে ইনশাআল্লাহ দুজাহানে বিজয় সুনিশ্চিত। কারণ উনার তরিক্বত প্রতিষ্ঠিত নবীর প্রেমের উপর, এখলাসের দৃঢ় ভিত্তির উপর সর্বোপরি শতশত রজনীতে নিরবে বিসর্জনকৃত অশ্রুর উপর। এই তরিক্বতের মূল বিষয় হচ্ছে অভ্যন্তরীণ পরিশুদ্ধি। আত্মশুদ্ধির শপথে আধ্যাত্মিকতার সোপানসমূহ অতিক্রমের মধ্য দিয়ে মঞ্জিলে মকছুদ হাসিলই একমাত্র উদ্দেশ্য। তাই বাধার পাহাড়, দ্বিধার দেয়ালে মোখলেছরা ভেঙ্গে পড়েনা, হতাশায় মছকে যায়না। এশায়াতের ঐশী মিশনের ভিশন হলো নবীকে রাজি করানো তাই নবীর ফুয়ুজাত এবং বরকত সবসময় এই তরিক্বতে জারি। এই তরিক্বতের অগ্রযাত্রার লক্ষ্যমাত্রা হলো লা মকানের রবের সাথে সাক্ষাত। হযরত গাউছুল আজমের হিকমত ও হিম্মতের অনন্য নজির এশায়াত সম্মেলন।
পবিত্র জশ্নে জলুছে ঈদে মিলাদুন্নবী (দঃ) উদ্যাপন ও কাগতিয়া দরবারের প্রতিষ্ঠাতা খলিলুল্লাহ আওলাদে মোস্তফা খলিফায়ে রাসূল হযরত শায়খ ছৈয়্যদ গাউছুল আজম (রাঃ) স্মরণে কাগতিয়া আলীয়া গাউছুল আজম দরবার শরীফ তরিক্বতের এ সম্মেলনের আয়োজন করে মুনিরীয়া যুব তবলীগ কমিটি বাংলাদেশ। চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের সিনেট সদস্য ও মাইক্রো বায়োলজি বিভাগের প্রফেসর ড. মোহাম্মদ আবুল মনছুরের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য রাখেন- বাংলাদেশ জমিয়াতুল মোদার্রেছীন মহাসচিব অধ্যক্ষ মাওলানা শাব্বীর আহমদ মোমতাজী, চট্টগ্রাম নানুপুর মাজহারুল উলুম গাউছিয়া ফাযিল মাদরাসার অধ্যক্ষ মুছলেহ উদ্দিন আহমদ মাদানী, ব্যারিস্টার এস এম কফিল উদ্দীন, পরশুরাম উপজেলা চেয়ারম্যান মোহাম্মদ কামাল উদ্দিন মজুমদার, ড. ছৈয়দ এমদাদ উদ্দীন, হাফেজ মাওলানা মুহাম্মদ আবু বকর, মাওলানা মুহাম্মদ রাকিব উদ্দীন, মাওলানা মুহাম্মদ জসিম উদ্দীন নূরী, মাওলানা মুহাম্মদ এরশাদুল হক ও মুহাম্মদ সালাউদ্দীন। মিলাদ-কিয়াম শেষে প্রধান অতিথি দেশ, জাতি ও বিশ্ব মুসলিম উম্মাহর সুখ, শান্তি ও সমৃদ্ধি এবং দরবারের প্রতিষ্ঠাতা গাউছুল আজম (রাঃ)’র ফুয়ুজাত কামনা করে বিশেষ মুনাজাত করেন।