আব্দুল লতিফ :=
তৃতীয় শেণির ছাত্রী শিউলী আক্তার মায়া (১০) হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় আদালতে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন মা আছমা আক্তার (৩৩)। সোমবার বিকেলে কিশোরগঞ্জের সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট তাসলিমা আক্তারের খাসকামরায় তার জবানবন্দি রেকর্ড করা হয়। জবানবন্দি রেকর্ড শেষে আছমা আক্তারকে কিশোরগঞ্জ জেলা কারাগারে পাঠানো হয়। আদালতে আছমা আক্তারের স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করেন মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা কিশোরগঞ্জ সদর মডেল থানার উপপরিদর্শক (এসআই) অজিত কুমার সরকার।
আছমা কিশোরগঞ্জ সদর উপজেলার লতিবাবাদ চরপাড়া গ্রামের সুরুজ মিয়ার মেয়ে। নিহত শিউলী আক্তার মায়া স্থানীয় একটি কিন্ডারগার্টেন স্কুলের তৃতীয় শ্রেণির ছাত্রী ছিল।এসআই অজিত কুমার জানান, প্রায় ১২ বছর আগে নাটোরের বাসিন্দা আশরাফ উদ্দিনের সঙ্গে আছমা আক্তারের বিয়ে হয়। বিয়ের বছর দুয়েক পর শিউলী আক্তার মায়ার জন্ম হয়। মায়ার জন্মের বছর তিনেক পর এক সড়ক দুর্ঘটনায় আশরাফ উদ্দিন মারা যান। এরপর আবদুল কাদের নামে একজনের সঙ্গে আছমা আক্তারের বিয়ে হলেও পরবর্তিতে ছাড়াছাড়ি হয়ে যায়। ফলে বাবার সংসারেই একমাত্র মেয়ে সন্তান শিউলীকে নিয়ে বসবাস করে আসছিলেন আছমা। তারা সাত বোন ও এক ভাই।
বাবার সংসারে থাকার কারণে একমাত্র ভাই নয়ন মিয়ার সঙ্গে নানা বিষয়ে আছমা আক্তারের বিরোধ চলে আসছিল। এর জের ধরে একাধিকবার প্রকাশ্যে একমাত্র সন্তান শিউলী আক্তার মায়াকে বিষ খাইয়ে হত্যার চেষ্টা করেন আছমা। কিন্তু আত্মীয়-স্বজনদের কারণে আছমার মেয়েকে হত্যার চেষ্টা ব্যর্থ হয়। এ রকম পরিস্থিতিতে ভাই নয়ন মিয়া বাড়ি ছেড়ে অন্যত্র বসবাস শুরু করেন। এছাড়া বাবা-মার কাছে প্রায়ই আছমা টাকা চেয়ে না পেলে বিবাদে জড়াতেন।
পারিবারিক এই কলহের জের ধরে আছমা আক্তার পুনরায় মেয়েকে হত্যার পরিকল্পনা করেন। পরিকল্পনার অংশ হিসেবে আছমা গত শনিবার সন্ধ্যায় কিশোরগঞ্জ শহরের কাচারিবাজার এলাকার একটি দোকান থেকে ৫০ টাকা দিয়ে ১০টি ইঁদুর মারার বিষের ট্যাবলেট কিনে আনেন। রোববার সকাল সাড়ে ১০টার দিকে স্কুল থেকে মায়াকে ডেকে আনেন আছমা। বাড়ির উঠানে মেয়ের হাতে একটি বিষযুক্ত ট্যাবলেট দিয়ে খেয়ে নিতে বলেন। মায়া ট্যাবলেটটি খেয়ে নেওয়ার কিছুক্ষণের মধ্যেই তার শরীরে প্রতিক্রিয়া দেখা দেয়। এ অবস্থায় আছমা মায়াকে আরেকটি ট্যাবলেট খাওয়ার কথা বললে মায়া তার শরীর খারাপ লাগছে জানিয়ে খেতে অস্বীকৃতি জানায়। মায়ার শারীরিক অবস্থার অবনতি ঘটলে বিষয়টি স্বজনদের নজরে আসে। তারা তাকে কিশোরগঞ্জ জেনারেল হাসপাতালে নিয়ে গিয়ে ভর্তি করায়। সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ওই দিনই দুপুর পৌনে ১২টার দিকে মায়ার মৃত্যু হয়। খবর পেয়ে পুলিশ হাসপাতালে গিয়ে শিশুটির লাশ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য কিশোরগঞ্জ জেনারেল হাসপাতাল মর্গে পাঠায়।
এ ঘটনায় নিহত শিশুর নানা সুরুজ মিয়া তার মেয়ে আছমা আক্তারকে আসামি করে কিশোরগঞ্জ সদর মডেল থানায় মামলা করেন। মামলার পর পুলিশ অভিযান চালিয়ে আছমাকে গ্রেপ্তার করে। গ্রেপ্তারের পর পুলিশের প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে নিজ মেয়েকে বিষ খাইয়ে হত্যার নৃশংস বর্ণনা দেন আছমা। পরে সোমবার তাকে আদালতে পাঠানো হলে তিনি সন্তান হত্যার বর্ণনা দিয়ে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেন।
কিশোরগঞ্জ সদর মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. আবুবকর সিদ্দিক বলেন, ‘পারিবারিক কলহের জের ধরে এমন অমানবিক নৃশংস ঘটনাটি ঘটেছে। ঘাতক মা আছমা আক্তারকে পুলিশ গ্রেপ্তার করার পর হত্যাকাণ্ডের বর্ণনা দিয়ে সে আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছে। জবানবন্দি দেওয়ার পর কারাগারে পাঠানো হয়েছে তাকে ।’