শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

পাপিয়ার সুবিধাভোগীদের সন্ধানে মাঠে র‌্যাব

রোকনুজ্জামান রিপন :=

মাদক-অস্ত্র চোরাচালান, জমি দখল করিয়ে দেয়া, হোটেলে নারীদের দিয়ে যৌন-বাণিজ্য থেকে মোটা অঙ্কের অর্থ উপার্জনের অভিযোগে গ্রেপ্তার বহিষ্কৃত যুব মহিলা লীগ নেত্রী শামীমা নূর পাপিয়ার কাছ থেকে সুবিধাভোগীদের সন্ধানে নেমেছে র‌্যাব। তার দুষ্টুচক্রে যারাই জড়িত, তাদেরও শনাক্ত করতে কাজ করছে এই এলিট ফোর্স।দেশ ছেড়ে পালানোর সময় গত শনিবার ঢাকার বিমানবন্দর থেকে স্বামী ও দুই সহযোগীসহ নরসিংদী জেলা যুব মহিলা লীগের সাধারণ সম্পাদক শামীমা নূর পাপিয়াকে গ্রেপ্তার করা হয়। র‌্যাবের হাতে গ্রেপ্তারের পর তার বিরুদ্ধে রাজধানীর দুটি থানায় তিনটি মামলা হয়েছে। পাপিয়া এখন ১৫ দিনের হেফাজতে রয়েছে।

র‌্যাব বলছে, পুলিশের পাশাপাশি তারাও রিমান্ডের জন্য আবেদন করেছে। পাপিয়ার দুষ্টুচক্রে যারা জড়িত, তাদের শনাক্ত করার চেষ্টা চলছে। তার অবৈধ কাজে কারও ব্যাপারে তথ্য পাওয়া গেলে আইনের আওতায় আনা হবে।এদিকে দুর্নীতি দমন কমিশন দুদক বলছে, পাপিয়ার সম্পদের বিষয়ে অনুসন্ধান করবে কমিশন। অনুসন্ধানকালে কারও নাম এলে তাদের বিরুদ্ধেও ব্যবস্থা নেবে কমিশন।এদিকে রিমান্ডে বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ তথ্য দিয়েছে যুব মহিলালীগের এই সদ্য বহিষ্কৃত নেত্রী। তার দেওয়া তথ্য যাচাইবাছাই করে পরবর্তী ব্যবস্থা নেয়া হবে বলে জানিয়েছে তদন্ত সংশ্লিষ্টতরা।

পাপিয়াকে গ্রেপ্তারের পর তার বাসায় অভিযান চালিয়ে উদ্ধার করা হয় সাতটি পাসপোর্ট, নগদ দুই লাখ ১২ হাজার ২৭০ টাকা, ২৫ হাজার ৬০০ টাকার জাল মুদ্রা, ১১ হাজার ৯১ ইউএস ডলারসহ বিভিন্ন দেশের মুদ্রা। ফার্মগেটের বাড়িতে অভিযান চালিয়ে একটি বিদেশি পিস্তল, দুটি পিস্তলের ম্যাগজিন, ২০ রাউন্ড পিস্তলের গুলি, পাঁচ বোতল বিদেশি মদ, নগদ ৫৮ লাখ ৪১ হাজার টাকা, পাঁচটি পাসপোর্ট, তিনটি চেক, বিদেশি মুদ্রা, বিভিন্ন ব্যাংকের ১০টি ভিসা ও এটিএম কার্ড।

র‌্যাব জানায়, পাপিয়া মাসে শুধুমাত্র হোটেল ওয়েস্টিনে এক কোটি ৩০ লাখ টাকার বিল পরিশোধ করেছেন। অথচ তার বছরে আয় দেখানো আছে ১৯ লাখ টাকা। ওয়েস্টিন হোটেলে প্রতিদিন শুধুমাত্র বারের খরচ বাবদ প্রায় আড়াই লাখ টাকা পরিশোধ করতেন পাপিয়া। ওয়েস্টিনে তার নিয়ন্ত্রণে সাতজন নারী কাজ করতেন। তাদেরকে প্রতি মাসে ৩০ হাজার করে মোট দুই লাখ ১০ হাজার টাকা পরিশোধ করতেন। হোটেল ওয়েস্টিনে প্রেসিডেন্ট স্যুট পাপিয়ার নামে সবসময় বুকড থাকতো বলে দাবি করে এলিট ফোর্সটি জানায়, পাপিয়া জোর করে নারীদের অনৈতিক কাজে বাধ্য করতেন।

বুধবার রাজধানীর সেগুনবাগিচায় দুদকের প্রধান কার্যালয়ে কমিশনার সচিব দিলওয়ার বখত সাংবাদিকদের বলেন, ‘বড় দুর্নীতিবাজদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিচ্ছে দুদক। পাপিয়ার ঘটনারও অনুসন্ধান করা হবে। এর সূত্রে কারও নাম এলে তাদের বিরুদ্ধেও ব্যবস্থা নেয়া হবে।’ বিমানবন্দর থানার ওসি বিএম ফরমান আলী বলেন, ‘পাপিয়াকে তার অভিযোগের ব্যাপারে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। অনেক ব্যাপারে সে তথ্য দিয়েছে।’ র‌্যাবের আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক সারওয়ার বিন কাশেম ঢাকা টাইমসকে বলেন, ‘পাপিয়ার অনৈতিক কর্মকাণ্ডের সঙ্গে আর কারা জড়িত আছে সেটা খতিয়ে দেখা হবে। পাপিয়া এখন পুলিশের কাছে রিমান্ডে রয়েছে, আমরাও রিমান্ডের জন্য আবেদন করেছি। তাকে জিজ্ঞাসাবাদের পরই আমরা নিশ্চিত হতে পারব এর সঙ্গে আর কারা কারা জড়িত আছে।’

ভিডিওতে বেশ কয়েকজনের সঙ্গে অনৈতিক দৃশ্য দেখা গেছে তাদের বিরুদ্ধে কী ব্যবস্থা নেওয়া হবে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘খারাপ কাজের সঙ্গে যেই জড়িত থাকবে আমরা তাকেই আইনের আওতায় আনবো।’ পাপিয়ার কাছ থেকে যারা অনৈতিক সুবিধা নিয়েছে তাদের বিরুদ্ধেও খোঁজখবর নেওয়া হচ্ছে জানিয়ে র‌্যাবের এই কর্মকর্তা বলেন, ‘আমরা সব বিষয় মাথায় রেখে কাজ করছি। অনুসন্ধানের স্বার্থে অনেক কিছু বলা সম্ভব হচ্ছে না। তবে যাই হোক সেটা সবই জানতে পারবেন।’

আপনার মন্তব্য লিখুন

লেখকের সম্পর্কে

Shahriar Hossain

পাপিয়ার সুবিধাভোগীদের সন্ধানে মাঠে র‌্যাব

প্রকাশের সময় : ১০:২২:২৬ অপরাহ্ন, বুধবার, ২৬ ফেব্রুয়ারী ২০২০
রোকনুজ্জামান রিপন :=

মাদক-অস্ত্র চোরাচালান, জমি দখল করিয়ে দেয়া, হোটেলে নারীদের দিয়ে যৌন-বাণিজ্য থেকে মোটা অঙ্কের অর্থ উপার্জনের অভিযোগে গ্রেপ্তার বহিষ্কৃত যুব মহিলা লীগ নেত্রী শামীমা নূর পাপিয়ার কাছ থেকে সুবিধাভোগীদের সন্ধানে নেমেছে র‌্যাব। তার দুষ্টুচক্রে যারাই জড়িত, তাদেরও শনাক্ত করতে কাজ করছে এই এলিট ফোর্স।দেশ ছেড়ে পালানোর সময় গত শনিবার ঢাকার বিমানবন্দর থেকে স্বামী ও দুই সহযোগীসহ নরসিংদী জেলা যুব মহিলা লীগের সাধারণ সম্পাদক শামীমা নূর পাপিয়াকে গ্রেপ্তার করা হয়। র‌্যাবের হাতে গ্রেপ্তারের পর তার বিরুদ্ধে রাজধানীর দুটি থানায় তিনটি মামলা হয়েছে। পাপিয়া এখন ১৫ দিনের হেফাজতে রয়েছে।

র‌্যাব বলছে, পুলিশের পাশাপাশি তারাও রিমান্ডের জন্য আবেদন করেছে। পাপিয়ার দুষ্টুচক্রে যারা জড়িত, তাদের শনাক্ত করার চেষ্টা চলছে। তার অবৈধ কাজে কারও ব্যাপারে তথ্য পাওয়া গেলে আইনের আওতায় আনা হবে।এদিকে দুর্নীতি দমন কমিশন দুদক বলছে, পাপিয়ার সম্পদের বিষয়ে অনুসন্ধান করবে কমিশন। অনুসন্ধানকালে কারও নাম এলে তাদের বিরুদ্ধেও ব্যবস্থা নেবে কমিশন।এদিকে রিমান্ডে বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ তথ্য দিয়েছে যুব মহিলালীগের এই সদ্য বহিষ্কৃত নেত্রী। তার দেওয়া তথ্য যাচাইবাছাই করে পরবর্তী ব্যবস্থা নেয়া হবে বলে জানিয়েছে তদন্ত সংশ্লিষ্টতরা।

পাপিয়াকে গ্রেপ্তারের পর তার বাসায় অভিযান চালিয়ে উদ্ধার করা হয় সাতটি পাসপোর্ট, নগদ দুই লাখ ১২ হাজার ২৭০ টাকা, ২৫ হাজার ৬০০ টাকার জাল মুদ্রা, ১১ হাজার ৯১ ইউএস ডলারসহ বিভিন্ন দেশের মুদ্রা। ফার্মগেটের বাড়িতে অভিযান চালিয়ে একটি বিদেশি পিস্তল, দুটি পিস্তলের ম্যাগজিন, ২০ রাউন্ড পিস্তলের গুলি, পাঁচ বোতল বিদেশি মদ, নগদ ৫৮ লাখ ৪১ হাজার টাকা, পাঁচটি পাসপোর্ট, তিনটি চেক, বিদেশি মুদ্রা, বিভিন্ন ব্যাংকের ১০টি ভিসা ও এটিএম কার্ড।

র‌্যাব জানায়, পাপিয়া মাসে শুধুমাত্র হোটেল ওয়েস্টিনে এক কোটি ৩০ লাখ টাকার বিল পরিশোধ করেছেন। অথচ তার বছরে আয় দেখানো আছে ১৯ লাখ টাকা। ওয়েস্টিন হোটেলে প্রতিদিন শুধুমাত্র বারের খরচ বাবদ প্রায় আড়াই লাখ টাকা পরিশোধ করতেন পাপিয়া। ওয়েস্টিনে তার নিয়ন্ত্রণে সাতজন নারী কাজ করতেন। তাদেরকে প্রতি মাসে ৩০ হাজার করে মোট দুই লাখ ১০ হাজার টাকা পরিশোধ করতেন। হোটেল ওয়েস্টিনে প্রেসিডেন্ট স্যুট পাপিয়ার নামে সবসময় বুকড থাকতো বলে দাবি করে এলিট ফোর্সটি জানায়, পাপিয়া জোর করে নারীদের অনৈতিক কাজে বাধ্য করতেন।

বুধবার রাজধানীর সেগুনবাগিচায় দুদকের প্রধান কার্যালয়ে কমিশনার সচিব দিলওয়ার বখত সাংবাদিকদের বলেন, ‘বড় দুর্নীতিবাজদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিচ্ছে দুদক। পাপিয়ার ঘটনারও অনুসন্ধান করা হবে। এর সূত্রে কারও নাম এলে তাদের বিরুদ্ধেও ব্যবস্থা নেয়া হবে।’ বিমানবন্দর থানার ওসি বিএম ফরমান আলী বলেন, ‘পাপিয়াকে তার অভিযোগের ব্যাপারে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। অনেক ব্যাপারে সে তথ্য দিয়েছে।’ র‌্যাবের আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক সারওয়ার বিন কাশেম ঢাকা টাইমসকে বলেন, ‘পাপিয়ার অনৈতিক কর্মকাণ্ডের সঙ্গে আর কারা জড়িত আছে সেটা খতিয়ে দেখা হবে। পাপিয়া এখন পুলিশের কাছে রিমান্ডে রয়েছে, আমরাও রিমান্ডের জন্য আবেদন করেছি। তাকে জিজ্ঞাসাবাদের পরই আমরা নিশ্চিত হতে পারব এর সঙ্গে আর কারা কারা জড়িত আছে।’

ভিডিওতে বেশ কয়েকজনের সঙ্গে অনৈতিক দৃশ্য দেখা গেছে তাদের বিরুদ্ধে কী ব্যবস্থা নেওয়া হবে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘খারাপ কাজের সঙ্গে যেই জড়িত থাকবে আমরা তাকেই আইনের আওতায় আনবো।’ পাপিয়ার কাছ থেকে যারা অনৈতিক সুবিধা নিয়েছে তাদের বিরুদ্ধেও খোঁজখবর নেওয়া হচ্ছে জানিয়ে র‌্যাবের এই কর্মকর্তা বলেন, ‘আমরা সব বিষয় মাথায় রেখে কাজ করছি। অনুসন্ধানের স্বার্থে অনেক কিছু বলা সম্ভব হচ্ছে না। তবে যাই হোক সেটা সবই জানতে পারবেন।’