রবিবার, ২৬ মার্চ ২০২৩, ১২ চৈত্র ১৪২৯ বঙ্গাব্দ

গুজরাট দাঙ্গা ও মোদির ভূমিকা, মার্কিন গণমাধ্যমের কটাক্ষ

সাজ্জাদুল ইসলাম সৌরভ:=

সম্প্রতি মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ভারতে এসেছিলেন বলেই মার্কিন সংবাদ মাধ্যমের বাড়তি নজর ছিল দিল্লির দিকে। বর্তমানে ভারতে অরাজকতা, সংঘর্ষের ঘটনা উঠে এসেছে যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিটি বড় দৈনিক এবং টেলিভিশন চ্যানেলে।

সেসব পড়ে, দেখে নিন্দায় সরব হয়েছেন মার্কিন রাজনীবিদরা। তারা মনে করিয়ে দিয়েছেন, সারা বিশ্ব কিন্তু নজর রাখছে। ভারতের বিষয়গুলো নিয়ে তীব্র কটাক্ষ করেছে ‘‌নিউ ইয়র্ক টাইমস’। ট্রাম্পের সফর চলা অবস্থায় প্রকাশিত প্রথম প্রতিবেদনে লেখা হয়েছে- প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প এবং প্রধানমন্ত্রী মোদি দিল্লির একদিকে বিভিন্ন দর্শনীয় স্থান ভ্রমণ এবং বৈঠকে ব্যস্ত ছিলেন। মোদির ‘‌হিন্দু-ফার্স্ট’‌ নীতি যে দিল্লির আরেক অংশে দাঙ্গা এবং গোষ্ঠী সংঘর্ষ হয়ে ফেটে পড়েছে, তার কোনো প্রভাব তাদের কর্মসূচিতে পড়েনি।

এই প্রতিবেদনের শিরোনাম ছিল- দিল্লির রাজপথ, হিন্দু-মুসলমানের যুদ্ধক্ষেত্র। সঙ্গে এক মুসলিমকে ঘিরে ধরে দলবেঁধে লাঠিপেটা করার ছবি দেওয়া হয়। নিউ ইয়র্ক টাইমসের পরের লেখা আরো আক্রমণাত্মক।

ট্রাম্প এবং মোদির হাসিমুখে হাত মেলানোর ছবি দিয়ে বলা হয়- হায়দরাবাদ হাউসের সাজানো বাগানে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প এবং প্রধানমন্ত্রী মোদি তাদের বন্ধুত্বের উদযাপন করলেন। এক আধুনিক, বৈচিত্র সত্ত্বেও ঐক্যবদ্ধ ভারতের কথা আলোচনা করলেন। যখন শহরের আরেক অংশে মোদির সাম্প্রদায়িক নীতি নিয়ে গণবিক্ষোভ পুরো এলাকার জনজীবন বিপন্ন করে তুলেছে। বাড়িয়ে তুলেছে ধর্মীয় বিভাজন, রেখে গেছে এক সারি লাশ।

আরো বলা হয়েছে, দিল্লিতে মঙ্গলবার যা ঘটেছে, তা আরেকবার প্রমাণ করল- সুরক্ষার দুর্গের ভেতরে বসে বিশ্বনেতারা যা বলেন, বা ভাবেন, তার সঙ্গে বাস্তব পরিস্থিতির কত পার্থক্য। প্রেসিডেন্টের সফরের জাঁকজমকের থেকে সামান্য দূরেই একদল হিন্দু লোহার রড হাতে তাদের মুসলিম পড়শিদের তাড়া করছে। রাস্তায় ছড়িয়ে আছে ভাঙা ইটের টুকরো।

‘‌ওয়াশিংটন পোস্ট’‌ ডোনাল্ড ট্রাম্পকে উদদ্দ্যে করে লিখেছে- ধর্মীয় স্বাধীনতার সুরক্ষায় মোদির প্রচুর পরিশ্রমের প্রশংসা করেছেন ট্রাম্প, কিন্তু সিএএ নিয়ে মন্তব্য করতে চাননি। ট্রাম্প প্রায়ই বলেন, মোদি তার ‘‌ভালো বন্ধু’‌। সেই বন্ধুকৃত্য করতে গিয়ে মোদি, বা তার সরকারের সমালোচনা হতে পারে, এমন কোনো ব্যাপারে ট্রাম্প মন্তব্য করতে চাননি। অথচ গত কয়েক মাসে মোদি অনেক পদক্ষেপ গ্রহণ করেছেন, যা তার হিন্দু আধিপত্য প্রতিষ্ঠার কর্মসূচিকে সফল করবে।

আরেক গণমাধ্যমের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, আহমেদাবাদের ‘‌নমস্তে ট্রাম্প’‌ অনুষ্ঠানে মার্কিন প্রেসিডেন্ট যখন শান্তির বাণী শোনাচ্ছেন, তখন সম্পূর্ণ উল্টো ঘটনা ঘটছে দিল্লির রাজপথে। লেখাটিতে সিএএ নিয়ে সরাসরি বলা হয়েছে, মুসলিমদের ভারতে ঢোকা বন্ধ করা এবং ভারতের মুসলিম নাগরিকদের আরও বেশি কোণঠাসা করাই এই আইনি সংশোধনীর উদ্দেশ্য।

গুজরাট দাঙ্গার প্রসঙ্গ তুলে এনেছে মার্কিন টেলিভিশন চ্যানেল এমএসএনবিসি। ২০০২ সালে গুজরাট দাঙ্গার কথা বলেচে তারা। ওই সময় মুখ্যমন্ত্রী মোদির ভূমিকা নিয়েও কথা রয়েছে। যার জেরে অনেক বছর মোদির যুক্তরাষ্ট্রে যাওয়া নিষিদ্ধ ছিল।

মোদি প্রধানমন্ত্রী হওয়ার পর যে বহুধর্মীয় সংস্কৃতি ভারতের ভিত্তি, তার ওপর ভয়ঙ্কর আঘাত করে যাচ্ছেন। এনবিসি এই খবর দেওয়ার সময় দেখিয়েছে, দিল্লির চলতি সংঘর্ষ, সন্ত্রাসের ভিডিও ফুটেজ। পাশাপাশি দেখানো হয়েছে ট্রাম্পের সম্মানে সরকারি অনুষ্ঠানের জাকজমক, দুই নেতার সহাস্য ঘোরাফেরা। শেষে প্রশ্ন রেখেছে, এর পরেও ট্রাম্প কী করে ধর্মীয় স্বাধীনতার প্রশ্নে মোদির প্রশংসা করে এলেন?‌

আপনার মন্তব্য লিখুন

লেখকের সম্পর্কে

Shahriar Hossain

জনপ্রিয়

গুজরাট দাঙ্গা ও মোদির ভূমিকা, মার্কিন গণমাধ্যমের কটাক্ষ

প্রকাশের সময় : ০৭:৩৪:৩২ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২৭ ফেব্রুয়ারী ২০২০
সাজ্জাদুল ইসলাম সৌরভ:=

সম্প্রতি মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ভারতে এসেছিলেন বলেই মার্কিন সংবাদ মাধ্যমের বাড়তি নজর ছিল দিল্লির দিকে। বর্তমানে ভারতে অরাজকতা, সংঘর্ষের ঘটনা উঠে এসেছে যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিটি বড় দৈনিক এবং টেলিভিশন চ্যানেলে।

সেসব পড়ে, দেখে নিন্দায় সরব হয়েছেন মার্কিন রাজনীবিদরা। তারা মনে করিয়ে দিয়েছেন, সারা বিশ্ব কিন্তু নজর রাখছে। ভারতের বিষয়গুলো নিয়ে তীব্র কটাক্ষ করেছে ‘‌নিউ ইয়র্ক টাইমস’। ট্রাম্পের সফর চলা অবস্থায় প্রকাশিত প্রথম প্রতিবেদনে লেখা হয়েছে- প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প এবং প্রধানমন্ত্রী মোদি দিল্লির একদিকে বিভিন্ন দর্শনীয় স্থান ভ্রমণ এবং বৈঠকে ব্যস্ত ছিলেন। মোদির ‘‌হিন্দু-ফার্স্ট’‌ নীতি যে দিল্লির আরেক অংশে দাঙ্গা এবং গোষ্ঠী সংঘর্ষ হয়ে ফেটে পড়েছে, তার কোনো প্রভাব তাদের কর্মসূচিতে পড়েনি।

এই প্রতিবেদনের শিরোনাম ছিল- দিল্লির রাজপথ, হিন্দু-মুসলমানের যুদ্ধক্ষেত্র। সঙ্গে এক মুসলিমকে ঘিরে ধরে দলবেঁধে লাঠিপেটা করার ছবি দেওয়া হয়। নিউ ইয়র্ক টাইমসের পরের লেখা আরো আক্রমণাত্মক।

ট্রাম্প এবং মোদির হাসিমুখে হাত মেলানোর ছবি দিয়ে বলা হয়- হায়দরাবাদ হাউসের সাজানো বাগানে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প এবং প্রধানমন্ত্রী মোদি তাদের বন্ধুত্বের উদযাপন করলেন। এক আধুনিক, বৈচিত্র সত্ত্বেও ঐক্যবদ্ধ ভারতের কথা আলোচনা করলেন। যখন শহরের আরেক অংশে মোদির সাম্প্রদায়িক নীতি নিয়ে গণবিক্ষোভ পুরো এলাকার জনজীবন বিপন্ন করে তুলেছে। বাড়িয়ে তুলেছে ধর্মীয় বিভাজন, রেখে গেছে এক সারি লাশ।

আরো বলা হয়েছে, দিল্লিতে মঙ্গলবার যা ঘটেছে, তা আরেকবার প্রমাণ করল- সুরক্ষার দুর্গের ভেতরে বসে বিশ্বনেতারা যা বলেন, বা ভাবেন, তার সঙ্গে বাস্তব পরিস্থিতির কত পার্থক্য। প্রেসিডেন্টের সফরের জাঁকজমকের থেকে সামান্য দূরেই একদল হিন্দু লোহার রড হাতে তাদের মুসলিম পড়শিদের তাড়া করছে। রাস্তায় ছড়িয়ে আছে ভাঙা ইটের টুকরো।

‘‌ওয়াশিংটন পোস্ট’‌ ডোনাল্ড ট্রাম্পকে উদদ্দ্যে করে লিখেছে- ধর্মীয় স্বাধীনতার সুরক্ষায় মোদির প্রচুর পরিশ্রমের প্রশংসা করেছেন ট্রাম্প, কিন্তু সিএএ নিয়ে মন্তব্য করতে চাননি। ট্রাম্প প্রায়ই বলেন, মোদি তার ‘‌ভালো বন্ধু’‌। সেই বন্ধুকৃত্য করতে গিয়ে মোদি, বা তার সরকারের সমালোচনা হতে পারে, এমন কোনো ব্যাপারে ট্রাম্প মন্তব্য করতে চাননি। অথচ গত কয়েক মাসে মোদি অনেক পদক্ষেপ গ্রহণ করেছেন, যা তার হিন্দু আধিপত্য প্রতিষ্ঠার কর্মসূচিকে সফল করবে।

আরেক গণমাধ্যমের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, আহমেদাবাদের ‘‌নমস্তে ট্রাম্প’‌ অনুষ্ঠানে মার্কিন প্রেসিডেন্ট যখন শান্তির বাণী শোনাচ্ছেন, তখন সম্পূর্ণ উল্টো ঘটনা ঘটছে দিল্লির রাজপথে। লেখাটিতে সিএএ নিয়ে সরাসরি বলা হয়েছে, মুসলিমদের ভারতে ঢোকা বন্ধ করা এবং ভারতের মুসলিম নাগরিকদের আরও বেশি কোণঠাসা করাই এই আইনি সংশোধনীর উদ্দেশ্য।

গুজরাট দাঙ্গার প্রসঙ্গ তুলে এনেছে মার্কিন টেলিভিশন চ্যানেল এমএসএনবিসি। ২০০২ সালে গুজরাট দাঙ্গার কথা বলেচে তারা। ওই সময় মুখ্যমন্ত্রী মোদির ভূমিকা নিয়েও কথা রয়েছে। যার জেরে অনেক বছর মোদির যুক্তরাষ্ট্রে যাওয়া নিষিদ্ধ ছিল।

মোদি প্রধানমন্ত্রী হওয়ার পর যে বহুধর্মীয় সংস্কৃতি ভারতের ভিত্তি, তার ওপর ভয়ঙ্কর আঘাত করে যাচ্ছেন। এনবিসি এই খবর দেওয়ার সময় দেখিয়েছে, দিল্লির চলতি সংঘর্ষ, সন্ত্রাসের ভিডিও ফুটেজ। পাশাপাশি দেখানো হয়েছে ট্রাম্পের সম্মানে সরকারি অনুষ্ঠানের জাকজমক, দুই নেতার সহাস্য ঘোরাফেরা। শেষে প্রশ্ন রেখেছে, এর পরেও ট্রাম্প কী করে ধর্মীয় স্বাধীনতার প্রশ্নে মোদির প্রশংসা করে এলেন?‌