শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

কালো তালিকায় আ.লীগের দেড় হাজার নেতাকর্মী

ঢাকা ব্যুরো :=

মুজিববর্ষের আনুষ্ঠানিকতার পরেই আওয়ামী লীগের শুদ্ধি অভিযান শুরু হচ্ছে। আওয়ামী লীগের একাধিক নীতি-নির্ধারকদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে যে আওয়ামী লীগ সভাপতি এবং প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দলের ভেতরের আগাছা আবর্জনা পরিস্কার করার নির্দেশ দিয়েছেন। এই শুদ্ধি অভিযানের অংশ হিসেবে যারা দলের পরিচয় ব্যবহার করে নানারকম অবৈধ তৎপরতা চালাচ্ছে, টেন্ডারবাজি চাদাবাজি করছে, যারা দলে অনুপ্রবেশকারী, যারা দলের মধ্যে প্লান্টেড- তাদেরকে চিহ্নিত করে দল থেকে বহিস্কার করা হবে।

আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা বলেছেন, যে দুষ্টু গরুর চেয়ে শূন্য গোয়াল অনেক ভালো। তার এই নির্দেশের ওপর ভিত্তি করে দলের সাংগঠনিক সম্পাদকরা কাজ শুরু করেছেন। আওয়ামী লীগের একটি সূত্র বলেছে যে, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে আওয়ামী লীগের নাম ভাঙিয়ে বিভিন্ন অপকর্মের সঙ্গে জড়িত স্থানীয় পর্যায়ের দেড়হাজার নেতাকর্মীর তালিকা দেয়া হয়েছে। বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থা এই তালিকা প্রণয়ন করেছে বলে আওয়ামী লীগের একাধিক দায়িত্বশীল সূত্র নিশ্চিত করেছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তার নিজস্ব টিমের মাধ্যমেও এই তালিকা যাচাই-বাছাই করেছেন। কারা কোন ধরনের অপকর্মের সঙ্গে জড়িত সে ব্যাপারে তার নিজস্ব টিম খোঁজখবর নিয়েছে। এই তালিকা অনুযায়ী যারা দলের পরিচয় ব্যবহার করে সরকারের বদনাম করছে, দলের ভাবমূর্তি নষ্ট করছে- তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

উল্লেখ্য যে, গত সেপ্টেম্বর মাস থেকে আওয়ামী লীগ সভাপতি এবং প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দলের নাম ব্যবহার করে যারা বিভিন্ন অপকর্ম করে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করা শুরু করেছিলেন। এই শুদ্ধি ছিল আইন প্রয়োগকারী সংস্থার দ্বারা পরিচালিত শুদ্ধি অভিযান। যারা অপরাধ করেছে, তাদের বিরুদ্ধে যথাযথ আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে। তবে মুজিববর্ষের পরপরই আগামী এপ্রিল থেকে শুদ্ধি অভিযানের ধরন পাল্টে যাচ্ছে বলে আওয়ামী লীগের একাধিক দায়িত্বশীল সূত্র নিশ্চিত করেছে।

যোগাযোগ করা হলে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেছেন, আওয়ামী লীগে অপকর্মকারী, দোষী, সুবিধাবাদীদের জায়গা হবে না। এ ব্যাপারে শেখ হাসিনার কঠোর নির্দেশনা রয়েছে। আইন প্রয়োগকারী সংস্থা এই অভিযান চালাচ্ছে যারা অপরাধ করছে তাদের বিরুদ্ধে। আমরা দলের পক্ষ থেকেও যারা দলের নাম ভাঙিয়ে বিভিন্ন রকম অপকর্ম করছে তাদের চিহ্নিত করার কাজ করছি এবং তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

তিনি আরো বলেন যে, জাতির পিতার আদর্শের এই দলকে আমরা কখনো সুবিধাবাদী এবং মতলববাজদের হাতে জিম্মি হতে দেবো না।

জানা গেছে, আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পদকদেরকে তাদের স্ব স্ব বিভাগ থেকে তথ্য সংগ্রহের জন্য বলা হয়েছে। স্থানীয় পর্যায়ে কারা টেন্ডারবাজি, মাদক ব্যবসা, চাদাবাজিসহ বিভিন্ন অপকর্মে জড়িত- তাদের তালিকা তৈরি করতে বলা হয়েছে।

আরো জানা গেছে, শেখ হাসিনা তার কাছে যে তালিকা রয়েছে এবং সাংগঠনিক সম্পাদকদের তালিকা মিলিয়ে দেখবেন। মেলানোর পর যাদের বিরুদ্ধে দলের শৃঙ্খলাভঙ্গ এবং যারা দলীয় পরিচয় ব্যবহার করে অপকর্ম করেছে, যারা শুধুমাত্র আওয়ামী লীগকে কলুষিত করার জন্য দলে ভিড়েছে- তাদেরকে চিহ্নিত করে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

আওয়ামী লীগের শীর্ষস্থানীয় নেতা বলেছেন, আওয়ামী লীগ একটি গণতান্ত্রিক রাজনৈতিক দল। কাজেই গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় গঠনতান্ত্রিক রীতি-নীতি মেনেই তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। প্রথম পর্যায়ে যাদের বিরুদ্ধে প্রাথমিক অভিযোগ পাওয়া যাবে, তাদের বিরুদ্ধে কারণ দর্শানোর নোটিশ দেয়া হবে। কারণ দর্শানোর নোটিশের জবাব দেয়ার পর দলের কেন্দ্রীয় কমিটিতে সেগুলো নিয়ে আলোচনা হবে। অবস্থা বুঝে তাদের দল থেকে সাময়িকভাবে বহিস্কার করা হবে। তারপর যদি দেখা যায় যে তাদের জবাবগুলো যথাযথ হয়নি, সেক্ষেত্রে তাদেরকে স্থায়ী বহিস্কারের উদ্যোগ গ্রহণ করা হবে।

তবে আওয়ামী লীগের একজন নেতা বলেছেন যে, শুদ্ধি অভিযান মানে এই নয় যে আইন প্রয়োগকারী সংস্থা অপরাধীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করতে পারবে না। তিনি বলেছেন যে এই দুই প্রক্রিয়াই পাশাপাশি চলবে। যারা আইনের বরখেলাপ করেছে তাদের বিরুদ্ধে যেমন অভিযান চলবে, তেমনি যারা দলের শৃঙ্খলা, দলীয় রীতি-নীতি ভঙ্গ করেছে- তাদের বিরুদ্ধে দল ব্যবস্থা গ্রহণ করবে।

আপনার মন্তব্য লিখুন

লেখকের সম্পর্কে

Shahriar Hossain

ইসরায়েল ক্ষুদ্রাতিক্ষুদ্র আক্রমণ’ও চালায়,তার জবাব হবে কঠোর-ইরানের প্রেসিডেন্ট

কালো তালিকায় আ.লীগের দেড় হাজার নেতাকর্মী

প্রকাশের সময় : ০৮:৫০:৫৩ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ৬ মার্চ ২০২০
ঢাকা ব্যুরো :=

মুজিববর্ষের আনুষ্ঠানিকতার পরেই আওয়ামী লীগের শুদ্ধি অভিযান শুরু হচ্ছে। আওয়ামী লীগের একাধিক নীতি-নির্ধারকদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে যে আওয়ামী লীগ সভাপতি এবং প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দলের ভেতরের আগাছা আবর্জনা পরিস্কার করার নির্দেশ দিয়েছেন। এই শুদ্ধি অভিযানের অংশ হিসেবে যারা দলের পরিচয় ব্যবহার করে নানারকম অবৈধ তৎপরতা চালাচ্ছে, টেন্ডারবাজি চাদাবাজি করছে, যারা দলে অনুপ্রবেশকারী, যারা দলের মধ্যে প্লান্টেড- তাদেরকে চিহ্নিত করে দল থেকে বহিস্কার করা হবে।

আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা বলেছেন, যে দুষ্টু গরুর চেয়ে শূন্য গোয়াল অনেক ভালো। তার এই নির্দেশের ওপর ভিত্তি করে দলের সাংগঠনিক সম্পাদকরা কাজ শুরু করেছেন। আওয়ামী লীগের একটি সূত্র বলেছে যে, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে আওয়ামী লীগের নাম ভাঙিয়ে বিভিন্ন অপকর্মের সঙ্গে জড়িত স্থানীয় পর্যায়ের দেড়হাজার নেতাকর্মীর তালিকা দেয়া হয়েছে। বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থা এই তালিকা প্রণয়ন করেছে বলে আওয়ামী লীগের একাধিক দায়িত্বশীল সূত্র নিশ্চিত করেছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তার নিজস্ব টিমের মাধ্যমেও এই তালিকা যাচাই-বাছাই করেছেন। কারা কোন ধরনের অপকর্মের সঙ্গে জড়িত সে ব্যাপারে তার নিজস্ব টিম খোঁজখবর নিয়েছে। এই তালিকা অনুযায়ী যারা দলের পরিচয় ব্যবহার করে সরকারের বদনাম করছে, দলের ভাবমূর্তি নষ্ট করছে- তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

উল্লেখ্য যে, গত সেপ্টেম্বর মাস থেকে আওয়ামী লীগ সভাপতি এবং প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দলের নাম ব্যবহার করে যারা বিভিন্ন অপকর্ম করে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করা শুরু করেছিলেন। এই শুদ্ধি ছিল আইন প্রয়োগকারী সংস্থার দ্বারা পরিচালিত শুদ্ধি অভিযান। যারা অপরাধ করেছে, তাদের বিরুদ্ধে যথাযথ আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে। তবে মুজিববর্ষের পরপরই আগামী এপ্রিল থেকে শুদ্ধি অভিযানের ধরন পাল্টে যাচ্ছে বলে আওয়ামী লীগের একাধিক দায়িত্বশীল সূত্র নিশ্চিত করেছে।

যোগাযোগ করা হলে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেছেন, আওয়ামী লীগে অপকর্মকারী, দোষী, সুবিধাবাদীদের জায়গা হবে না। এ ব্যাপারে শেখ হাসিনার কঠোর নির্দেশনা রয়েছে। আইন প্রয়োগকারী সংস্থা এই অভিযান চালাচ্ছে যারা অপরাধ করছে তাদের বিরুদ্ধে। আমরা দলের পক্ষ থেকেও যারা দলের নাম ভাঙিয়ে বিভিন্ন রকম অপকর্ম করছে তাদের চিহ্নিত করার কাজ করছি এবং তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

তিনি আরো বলেন যে, জাতির পিতার আদর্শের এই দলকে আমরা কখনো সুবিধাবাদী এবং মতলববাজদের হাতে জিম্মি হতে দেবো না।

জানা গেছে, আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পদকদেরকে তাদের স্ব স্ব বিভাগ থেকে তথ্য সংগ্রহের জন্য বলা হয়েছে। স্থানীয় পর্যায়ে কারা টেন্ডারবাজি, মাদক ব্যবসা, চাদাবাজিসহ বিভিন্ন অপকর্মে জড়িত- তাদের তালিকা তৈরি করতে বলা হয়েছে।

আরো জানা গেছে, শেখ হাসিনা তার কাছে যে তালিকা রয়েছে এবং সাংগঠনিক সম্পাদকদের তালিকা মিলিয়ে দেখবেন। মেলানোর পর যাদের বিরুদ্ধে দলের শৃঙ্খলাভঙ্গ এবং যারা দলীয় পরিচয় ব্যবহার করে অপকর্ম করেছে, যারা শুধুমাত্র আওয়ামী লীগকে কলুষিত করার জন্য দলে ভিড়েছে- তাদেরকে চিহ্নিত করে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

আওয়ামী লীগের শীর্ষস্থানীয় নেতা বলেছেন, আওয়ামী লীগ একটি গণতান্ত্রিক রাজনৈতিক দল। কাজেই গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় গঠনতান্ত্রিক রীতি-নীতি মেনেই তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। প্রথম পর্যায়ে যাদের বিরুদ্ধে প্রাথমিক অভিযোগ পাওয়া যাবে, তাদের বিরুদ্ধে কারণ দর্শানোর নোটিশ দেয়া হবে। কারণ দর্শানোর নোটিশের জবাব দেয়ার পর দলের কেন্দ্রীয় কমিটিতে সেগুলো নিয়ে আলোচনা হবে। অবস্থা বুঝে তাদের দল থেকে সাময়িকভাবে বহিস্কার করা হবে। তারপর যদি দেখা যায় যে তাদের জবাবগুলো যথাযথ হয়নি, সেক্ষেত্রে তাদেরকে স্থায়ী বহিস্কারের উদ্যোগ গ্রহণ করা হবে।

তবে আওয়ামী লীগের একজন নেতা বলেছেন যে, শুদ্ধি অভিযান মানে এই নয় যে আইন প্রয়োগকারী সংস্থা অপরাধীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করতে পারবে না। তিনি বলেছেন যে এই দুই প্রক্রিয়াই পাশাপাশি চলবে। যারা আইনের বরখেলাপ করেছে তাদের বিরুদ্ধে যেমন অভিযান চলবে, তেমনি যারা দলের শৃঙ্খলা, দলীয় রীতি-নীতি ভঙ্গ করেছে- তাদের বিরুদ্ধে দল ব্যবস্থা গ্রহণ করবে।