
সুনামগঞ্জ প্রতিনিধি
সুনামগঞ্জের তাহিরপুর উপজেলায় এলাকাবাসীর কাছে আটক হওয়ার মহাবিপন্ন লজ্জাবতী বানরটিকে উদ্ধার করে নিয়ে গেল বনবিভাগ। মঙ্গলবার রাত ১০টায় উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা বিজেন ব্যানার্জি বন বিভাগের এক কর্মীর কাছে হস্তান্তর করেন।
তাহিরপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকতা বিজেন ব্যানার্জি জানান,মঙ্গলবার(৩১ মার্চ)দুপুরে সুনামগঞ্জের তাহিরপুরে উপজেলার বাদাঘাট ইউনিয়নের কামড়াবন্ধ গ্রাম বিলুপ্ত প্রজাতির ও মহাবিপন্ন এ প্রাণিটিকে অবসরপ্রাপ্ত সেনা সদস্য মনজুরুল আলমের পরিত্যক্ত বাড়ির বেল গাছে এ লজ্জাবতী বানরটিকে দেখতে পায়। তবে তারা এই প্রাণিটির সাথে পরিচিত না বলে অনেকের মনে ভয়ও কাজ করতে থাকে। পরে গ্রামবাসীর কয়েকজন মিলে কৌশলে বানরটিকে আটক করে খাঁচায় আটকে রাখে।
লজ্জাবতী বানরটি আটককের সংবাদ পেয়ে ঘটনা স্থলে পুলিশ পাঠিয়ে উদ্ধার করে বণবিভাগের কাছে মঙ্গলবার রাত ১০টায় হস্তান্তর করা হয়েছে।
সুনামগঞ্জের বিশ্বম্ভরপুরের বন বিভাগের বিট কর্মকর্তা বিরেন্দ্র কিশোর রায় বলেন,আমি সন্ধ্যায় দিকে এ ব্যাপারে অবগত হয়ে সেখানে আমাদের লোক পাঠিয়ে উদ্ধার করে আনা হয়েছে। আমি সুনামগঞ্জ রেঞ্জ অফিসারের কাছে দিব। পরে এবিষয়ে সিদ্ধান্ত হবে।
স্থানীয় শফিক মিয়া জানান,এমন প্রাণী এর আগে কেউ দেখেননি। এই বণ্যপ্রানী আটকের সংবাদ পেয়ে উৎসুক জনতা প্রাানীটিকে এক নজর দেখার জন্য ভিড় করে।
সিলেট বন বিভাগের রেঞ্জার হাসমত আলী জানান,লজ্জাবতী বানর ইবহমধষ ঝষড়ি খড়ৎরং নামে পরিচিত। লজ্জাবতী বানর ছোট নিশাচর ও চুপচাপ প্রজাতির একটি প্রাণী। তাদের এই লাজুক স্বভাবের কারণেই এদের নাম লজ্জাবতী বানর। আমাদের দেশে এদের অবস্থা খুব খারাপ। তাই আইইউসিএন এদের মহাবিপন্ন প্রাণিদের তালিকায় রেখেছে। লজ্জাবতী বানর বা বাংলা লজ্জাবতী বানর অন্যান্য লজ্জাবতী বানর প্রজাতিদের থেকে অনেক বেশি বিস্তৃত হওয়া সত্ত্বেও এরা বিশ্বে সংকটাপন্ন অবস্থায় রয়েছে।জানা যায়, দেশে লজ্জাবতী প্রজাতির যে বানর আছে তা ‘বেঙ্গল স্লো লরিস’ নামে পরিচিত।অন্যান্য লজ্জাবতী বানর প্রজাতি থেকে বাংলা লজ্জাবতী বানর আকারে সব থেকে বড় হয়ে থাকে। দৈর্ঘ্যে ২৬-৩৮ সেমি পর্যন্ত হয়। ওজনে ১-২ কেজি হয়। লজ্জাবতী বানরদের মাথা গোলাকার, মুখ চ্যাপ্টা, মায়াবী চোখগুলো তুলনামূলক বড়। কান ছোট ,লেজ ও ছোট। শরীর ঘন ময়লা সাদাটে-বাদামি লোমে ঢাকা। মাথার উপর একটা গাঢ় রঙের দাগ রয়েছে যা পিঠের উপর দিয়ে শরীরের পিছন পর্যন্ত গিয়েছে। শরীরের উপরের অংশ বাদামী বর্ণের। ঋতু ভেদে এদের গায়ের রং কিছুটা পরিবর্তন হয়।
একাকী নীরবে বাস করতে পছন্দ করা এই নিশাচর বানররা সাধারণত রাতেই সক্রিয় হয়। সারাদিন গাছের কোটরে বা গাছের পাতায় ভরা ঘন ডালে ঘুমিয়ে কাটায় যেখানে সূর্যের আলো পৌছায় না। আঁধার ঘনিয়ে এলে একা বা জোড়ায় খাবারের সন্ধানে বেড় হয়। লজ্জাবতী বানর গাছের উঁচু শাখায় থাকতে পছন্দ করে। চিরসবুজ ও বৃষ্টিপাতপূর্ণ ঘন বন এদের পছন্দের আবাসস্থল তবে আর্দ্র পত্রঝরা বন, বাঁশবনেও এরা থাকে।এরা বছরে একবার একটি বাচ্চা প্রসব করে। লজ্জাবতী বানর প্রায় ২০ বছর পর্যন্ত বাঁচে। লজ্জাবতী বানর বনাঞ্চল বৃদ্ধিতে সাহায্য করে। পরাগায়নেও এদের ভূমিকা আছে। গাছের পাতা ও ছোট ছোট ফলমূল এদের প্রধান খাদ্য।
আমাদের দেশে গত দুই দশকে লজ্জাবতী বানরের সংখ্যা প্রায় ৫০ % কমে গেছে শুধুমাত্র আবাসস্থল ধ্বংস ও শিকারের কারণে। আন্তর্জাতিক চোরা বাজারে লজ্জাবতী বানরের অনেক চাহিদা রয়েছে। এই কারণে সারা বিশ্বতেই এরা হুমকির মধ্যে পরেছে। আমাদের দেশের উত্তর-পূর্ব ও দণিপূর্বের বনাঞ্চলে এরা খুব কম সংখ্যায় টিকে আছে। এছাড়া ভারত, মিয়ানমার, চীন, কম্বোডিয়া, লাওস, থাইল্যান্ড ও ভিয়েতনামে এরা রয়েছে।