
প্রফেসর মামুনুর রশিদ ।।
করোনা ভাইরাসের সংক্রমণ ঠেকাতে সাধারণ ছুটির মধ্যে সীমিত আকারে ব্যাংকিং সেবা চালু রাখার ক্ষেত্রে ব্যাংকারদের সতর্ক থাকার নির্দেশ দিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক।একই সঙ্গে ব্যাংকারদের জন্য করোনাভাইরাসের সংক্রমণ প্রতিরোধী সব ধরনের উপকরণ সরবরাহ নিশ্চিত করতে বলা হয়েছে।
এ বিষয়ে কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোর প্রধান নির্বাহীদের নির্দেশ দেয়া হয়েছে। ব্যাংকের মাধ্যমে করোনাভাইরাসের বিস্তার ঠেকাতে এসব পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে।ব্যাংকাররা জানান, সরকারি সাধারণ ছুটির এ সময়ে সীমিত আকারে ব্যাংকিং কার্যক্রম চলছে। এ সময়ে ব্যাংকগুলোতে বেশ ভিড় হচ্ছে। ফলে ব্যাংকে আগত সবার মধ্যে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার নীতিমালা অনুযায়ী নির্দিষ্ট দূরত্ব (৩ ফুট) বজায় রাখা সম্ভব হচ্ছে না। এতে ব্যাংকের মাধ্যমে করোনাভাইরাস সংক্রমণের ঝুঁকি ব্যাপকভাবে বেড়ে গেছে। ইতোমধ্যে কয়েকজন ব্যাংকার করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন।
এতে দুটি ব্যাংকের দুটি শাখা সাময়িকভাবে বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। এখনই ব্যাংকিং খাতে ভাইরাসের সংক্রমণ ঠেকাতে না পারলে ব্যাংক লেনদেনে বিরূপ প্রভাব পড়বে। যাতে সাধারণ ছুটির মধ্যে সাধারণ মানুষের ভোগান্তি আরও বেড়ে যাবে।এসব বিবেচনায় নিয়ে ব্যাংকিং খাতকে করোনাভাইরাসের সংক্রমণমুক্ত রাখতে সর্বোচ্চ সতর্কতামূলক ব্যবস্থা নেয়ার পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে। এখন থেকে ব্যাংকিং কার্যক্রম চলার সময়ে ব্যাংকে গ্রাহক ছাড়া অন্যদের প্রবেশ নিরুৎসাহিত করতে বলা হয়েছে।
বিশেষ করে দর্শনার্থী বা সাক্ষাৎ প্রার্থীদের ব্যাংকে প্রবেশ থেকে বিরত রাখতে হবে। ব্যাংকে আগত গ্রাহক, বিভিন্ন ভাতা গ্রহণকারী, ব্যাংক কর্মকর্তা-কর্মচারীদের প্রবেশের সময় হ্যান্ড স্যানিটাইজার দিয়ে হাত জীবাণুমুক্ত করতে হবে। সবার মধ্যে নির্দিষ্ট দূরত্ব বজায় রাখতে হবে। এক্ষেত্রে প্রয়োজনে স্থানীয় প্রশাসনের সহায়তা নিতে বলা হয়েছে।
১০ থেকে সাড়ে ১২টা পর্যন্ত লেনদেন : আজ থেকে ব্যাংকগুলোতে সকাল ১০টা থেকে দুপুর সাড়ে ১২টা পর্যন্ত লেনদেন হবে। এরপর অভ্যন্তরীণ কাজ সমন্বয়ের জন্য ২টা পর্যন্ত ব্যাংক খোলা রাখা যাবে। জরুরি প্রয়োজনে বৈদেশিক মুদ্রা লেনদেনের জন্য বৈদেশিক বাণিজ্য শাখাগুলোতে এক ঘণ্টা বেশি অর্থাৎ দেড়টা পর্যন্ত লেনদেন করা যাবে।
এ সময়ে কোনো সাধারণ ব্যাংকিং কার্যক্রম করা যাবে না। তবে ২টার মধ্যে ব্যাংক বন্ধ করতে হবে। প্রবাসে আটকে পড়া ব্যক্তিদের ক্রেডিট কার্ড বা ব্যাংক হিসাবে বৈদেশিক মুদ্রা পাঠানো, জরুরি এলসি খোলার কাজে বৈদেশিক মুদ্রা লেনদেনকারী শাখাগুলো কাজ করতে পারবে।লকডাউন এলাকার ব্যাংকিং কার্যক্রম পাশের শাখায় : করোনাভাইরাসের বিস্তার রোধে যেসব এলাকা লকডাউন করা হচ্ছে বা যেসব ব্যাংকের শাখার কর্মকর্তারা করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হওয়ার কারণে সাময়িকভাবে বন্ধ রয়েছে ওইসব শাখার ব্যাংকিং কার্যক্রম পাশের শাখায় স্থানান্তর করা হচ্ছে।
একইভাবে মার্কেন্টাইল ব্যাংকের একটি শাখার একজন কর্মকর্তা আক্রান্ত হওয়ায় শাখাটি সাময়িকভাবে বন্ধ করা হয়েছে। ফলে ওই শাখার কার্যক্রম পার্শ্ববর্তী একটি শাখায় স্থানান্তর করা হয়েছে।এরই মধ্যে কেন্দ্রীয় ব্যাংক সিদ্ধান্ত নিয়েছে যেসব এলাকা লকডাউন করা হবে ওইসব এলাকায় ব্যাংক বন্ধ থাকবে। করোনাভাইরাসের বিস্তার ঠেকাতে বর্তমানে অনেক এলাকার পাশাপাশি জেলা-উপজেলা লকডাউন করা হচ্ছে। ফলে ওইসব এলাকার সব ব্যাংক বন্ধ থাকছে। এর মধ্যে নরসিংদী, কুমিল্লা, নোয়াখালী, নারায়ণগঞ্জ জেলা লকডাইন করা হযেছে।
ফলে ওইসব এলাকায় ব্যাংক বন্ধ রয়েছে। এসব এলাকার গ্রাহকরা পার্শ্ববর্তী এলাকার যে কোনো শাখায় গিয়ে জরুরি ব্যাংকিং কার্যক্রম সম্পন্ন করতে পারবেন। এর মধ্যে নগদ টাকা জমা দেয়া, তোলা, রেমিটেন্সের টাকা তোলা ইত্যাদি। ব্যাংক কর্মকর্তারা জানান, প্রায় সব ব্যাংকের শাখাই এখন অনলাইন হয়ে গেছে। ফলে যে কোনো শাখার গ্রাহক অন্য যে কোনো শাখায় গিয়ে জরুরি ব্যাংকিং কার্যক্রম সম্পন্ন করতে পারবেন।
এদিকে সোনালী ব্যাংকের একজন কর্মকর্তা জানান, লকডাউনের কারণে সরকারি ব্যাংক বন্ধ থাকায় সংশ্লিষ্ট এলাকায় সরকারের ট্রেজারি কার্যক্রম বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। ট্রেজারি কার্যক্রম সীমিত আকারে চালু রাখার জন্য বিকল্প ব্যবস্থা নেয়ার জন্য বাংলাদেশ ব্যাংকের কাছে পরামর্শ চেয়েছে ব্যাংকটি।নিরাপত্তা জোরদার : সাধারণ ছুটির সময়ে লোকজনের চলাচল কম থাকার ফলে ব্যাংকের নিরাপত্তা যাতে ব্যাহত না হয় সেদিকে নজর রাখার জন্য ব্যাংকগুলোকে নির্দেশ দিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। এজন্য স্থানীয় প্রশাসনের সঙ্গে যোগাযোগ রক্ষা করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে ব্যাংকগুলোকে বলা হয়েছে।