বুধবার, ১৯ মার্চ ২০২৫, ৫ চৈত্র ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

আজ সেই ভয়াল ২৯ এপ্রিল

নুরুজ্জামান লিটন ।।

আজ ভয়াল ২৯ এপ্রিল। ১৯৯১ সালের এদিনে প্রলয়ঙ্করী ঘূর্ণিঝড় ও জলোচ্ছ্বাসে বাংলাদেশের দক্ষিণ-পূর্ব উপকূলীয় অঞ্চলের প্রায় এক লাখ ৩৮ হাজার মানুষ নিহত এবং এক কোটি মানুষ তাদের সর্বস্ব হারায়।নিহতের সংখ্যা বিচারে স্মরণকালের ভয়াবহতম ঘূর্ণিঝড়গুলোর মধ্যে ৯১-এর এই ঘূর্ণিঝড় একটি। ৯১-এর এই ভয়াল ঘটনা এখনও দুঃস্বপ্নের মতো তাড়িয়ে বেড়ায় উপকূলবাসীকে। ঘটনার এত বছর পরও স্মৃতি থেকে মুছে ফেলতে পারছেন না সেই দুঃসহ দিনটি। গভীর রাতে ঘুম ভেঙে যায় জলোচ্ছ্বাস আর ঘূর্ণিঝড়ের কথা মনে হলে। নিহতদের লাশ, স্বজন হারানোদের আর্তচিৎকার আর বিলাপ বার বার ফিরে আসে তাদের জীবনে।১৯৯১ সালের এদিনে প্রলয়ঙ্করী ঘূর্ণিঝড়ের আঘাতে উত্তর চট্টগ্রামের উপকুলীয় অঞ্চল সন্দ্বীপও লণ্ডভণ্ড হয়ে যায়। এই দিনটির কথা আজও ভোলেনি সন্দ্বীপের মানুষ। দুঃখের বিষয় দীর্ঘ ২৯ বছর বছর পর ব্লক বেড়ীবাঁধ নির্মাণ হলেও অনিয়মের অভিযোগে সত্যতা পেয়েছেন স্বয়ং পানি সম্পদ উপমন্ত্রী এনামুল হক শামীম। এছাড়া পর্যাপ্ত সাইক্লোন সেল্টার নেই সন্দ্বীপে।সন্দ্বীপে বসবাসরত প্রায় চার লাখ মানুষের জন্য সাইক্লোন শেল্টার রয়েছে ৬৫টি। প্রতি ছয় হাজার মানুষের জন্য সাইক্লোন শেল্টার একটি। একটি সাইক্লোন শেল্টারের ধারণ ক্ষমতা তিনশরও কম মানুষ। সন্দ্বীপের বেড়িবাঁধ জীবনের ঝুঁকি নিয়ে বসবাস করছে প্রায় ৫০ হাজার মানুষ।সম্মিলিত সন্দ্বীপ অধিকার আন্দোলনের আহ্বায়ক মো. হাসানুজ্জামান সন্দ্বীপি  বলেন, ১৯৯১ সালে সন্দ্বীপে কয়েক হাজার মানুষ মারা গেছে। সেই দুঃসহ স্মৃতি এখনো বয়ে বেড়াচ্ছি আমরা। সন্দ্বীপে পর্যাপ্ত সাইক্লোন শেল্টার নেই। অনেক জায়গায় এখনও বেড়িবাঁধ নেই। আবার থাকলেও কোনো বেড়িবাঁধের উচ্চতা চার ফুটের বেশি নয়। ঘূর্ণিঝড় ও জলোচ্ছ্বাস থেকে সন্দ্বীপকে রক্ষা করতে দ্বীপের চারদিকে কমপক্ষে ১০ ফুট উঁচু বেড়িবাঁধ নির্মাণ করা জরুরি। দক্ষিণ সন্দ্বীপে ব্লক বেড়ীবাঁধ হচ্ছে তাও কাজের মান সন্তোষজনক নয়।চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় ভূগোল ও পরিবেশবিদ্যা বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ও সভাপতি ড. ইদ্রিস আলম  বলেন, উপকূল বাঁচলে বাংলাদেশ বাঁচবে। ১৯৯১ সালে ২৯ এপ্রিল প্রলয়ংকরী ঘূর্ণিঝড়ের ভয়াল রাতে সন্দ্বীপে প্রায় ২০-৩০ হাজার মানুষ প্রাণ হারিয়েছে।আজ স্বজনহারা বেদনা ও হতাশ হৃদয় নিয়ে তাদেরকে স্মরণ করতে হচ্ছে। সন্দ্বীপে মানুষের জন্য আশ্রয় কেন্দ্রের সাথে যোগাযোগের অভাব রয়েছে। চারপাশে বসবাস এবং ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা এলাকায় বাইরের অঞ্চলগুলিতে বাস করার জন্য সরকার ও এনজিওদের আরও কাজ করা উচিত। বর্তমান সরকার দুর্যোগ ব্যবস্থাপনার উন্নতির জন্য কাজ করছে। এটি দীর্ঘমেয়াদী এবং অব্যাহত থাকা উচিত।সন্দ্বীপ থেকে নির্বাচিত সংসদ সদস্য মাহফুজুর রহমান মিতা বলেন, প্রধানমন্ত্রীর প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী সন্দ্বীপে আশ্রয় কেন্দ্র নির্মাণ করা হয়েছে। তবে ঝড় জলোচ্ছ্বাস থেকে সন্দ্বীপের মানুষকে বাঁচানোর জন্য আরও আশ্রয় কেন্দ্রের প্রয়োজন।

আপনার মন্তব্য লিখুন

লেখকের সম্পর্কে

Shahriar Hossain

জনপ্রিয়

আজ সেই ভয়াল ২৯ এপ্রিল

প্রকাশের সময় : ১১:০০:৫৯ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ২৯ এপ্রিল ২০২০

নুরুজ্জামান লিটন ।।

আজ ভয়াল ২৯ এপ্রিল। ১৯৯১ সালের এদিনে প্রলয়ঙ্করী ঘূর্ণিঝড় ও জলোচ্ছ্বাসে বাংলাদেশের দক্ষিণ-পূর্ব উপকূলীয় অঞ্চলের প্রায় এক লাখ ৩৮ হাজার মানুষ নিহত এবং এক কোটি মানুষ তাদের সর্বস্ব হারায়।নিহতের সংখ্যা বিচারে স্মরণকালের ভয়াবহতম ঘূর্ণিঝড়গুলোর মধ্যে ৯১-এর এই ঘূর্ণিঝড় একটি। ৯১-এর এই ভয়াল ঘটনা এখনও দুঃস্বপ্নের মতো তাড়িয়ে বেড়ায় উপকূলবাসীকে। ঘটনার এত বছর পরও স্মৃতি থেকে মুছে ফেলতে পারছেন না সেই দুঃসহ দিনটি। গভীর রাতে ঘুম ভেঙে যায় জলোচ্ছ্বাস আর ঘূর্ণিঝড়ের কথা মনে হলে। নিহতদের লাশ, স্বজন হারানোদের আর্তচিৎকার আর বিলাপ বার বার ফিরে আসে তাদের জীবনে।১৯৯১ সালের এদিনে প্রলয়ঙ্করী ঘূর্ণিঝড়ের আঘাতে উত্তর চট্টগ্রামের উপকুলীয় অঞ্চল সন্দ্বীপও লণ্ডভণ্ড হয়ে যায়। এই দিনটির কথা আজও ভোলেনি সন্দ্বীপের মানুষ। দুঃখের বিষয় দীর্ঘ ২৯ বছর বছর পর ব্লক বেড়ীবাঁধ নির্মাণ হলেও অনিয়মের অভিযোগে সত্যতা পেয়েছেন স্বয়ং পানি সম্পদ উপমন্ত্রী এনামুল হক শামীম। এছাড়া পর্যাপ্ত সাইক্লোন সেল্টার নেই সন্দ্বীপে।সন্দ্বীপে বসবাসরত প্রায় চার লাখ মানুষের জন্য সাইক্লোন শেল্টার রয়েছে ৬৫টি। প্রতি ছয় হাজার মানুষের জন্য সাইক্লোন শেল্টার একটি। একটি সাইক্লোন শেল্টারের ধারণ ক্ষমতা তিনশরও কম মানুষ। সন্দ্বীপের বেড়িবাঁধ জীবনের ঝুঁকি নিয়ে বসবাস করছে প্রায় ৫০ হাজার মানুষ।সম্মিলিত সন্দ্বীপ অধিকার আন্দোলনের আহ্বায়ক মো. হাসানুজ্জামান সন্দ্বীপি  বলেন, ১৯৯১ সালে সন্দ্বীপে কয়েক হাজার মানুষ মারা গেছে। সেই দুঃসহ স্মৃতি এখনো বয়ে বেড়াচ্ছি আমরা। সন্দ্বীপে পর্যাপ্ত সাইক্লোন শেল্টার নেই। অনেক জায়গায় এখনও বেড়িবাঁধ নেই। আবার থাকলেও কোনো বেড়িবাঁধের উচ্চতা চার ফুটের বেশি নয়। ঘূর্ণিঝড় ও জলোচ্ছ্বাস থেকে সন্দ্বীপকে রক্ষা করতে দ্বীপের চারদিকে কমপক্ষে ১০ ফুট উঁচু বেড়িবাঁধ নির্মাণ করা জরুরি। দক্ষিণ সন্দ্বীপে ব্লক বেড়ীবাঁধ হচ্ছে তাও কাজের মান সন্তোষজনক নয়।চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় ভূগোল ও পরিবেশবিদ্যা বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ও সভাপতি ড. ইদ্রিস আলম  বলেন, উপকূল বাঁচলে বাংলাদেশ বাঁচবে। ১৯৯১ সালে ২৯ এপ্রিল প্রলয়ংকরী ঘূর্ণিঝড়ের ভয়াল রাতে সন্দ্বীপে প্রায় ২০-৩০ হাজার মানুষ প্রাণ হারিয়েছে।আজ স্বজনহারা বেদনা ও হতাশ হৃদয় নিয়ে তাদেরকে স্মরণ করতে হচ্ছে। সন্দ্বীপে মানুষের জন্য আশ্রয় কেন্দ্রের সাথে যোগাযোগের অভাব রয়েছে। চারপাশে বসবাস এবং ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা এলাকায় বাইরের অঞ্চলগুলিতে বাস করার জন্য সরকার ও এনজিওদের আরও কাজ করা উচিত। বর্তমান সরকার দুর্যোগ ব্যবস্থাপনার উন্নতির জন্য কাজ করছে। এটি দীর্ঘমেয়াদী এবং অব্যাহত থাকা উচিত।সন্দ্বীপ থেকে নির্বাচিত সংসদ সদস্য মাহফুজুর রহমান মিতা বলেন, প্রধানমন্ত্রীর প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী সন্দ্বীপে আশ্রয় কেন্দ্র নির্মাণ করা হয়েছে। তবে ঝড় জলোচ্ছ্বাস থেকে সন্দ্বীপের মানুষকে বাঁচানোর জন্য আরও আশ্রয় কেন্দ্রের প্রয়োজন।