শুক্রবার, ২৪ মার্চ ২০২৩, ১০ চৈত্র ১৪২৯ বঙ্গাব্দ

দক্ষিণ চীন সাগরে বেইজিংয়ের সামরিক মহড়ার মধ্যেই যুক্তরাষ্ট্রের রণতরীর শক্তি প্রদর্শন

নুরুজ্জামান লিটন:/=

দক্ষিণ চীন সাগরে বেইজিংয়ের পাঁচ দিনব্যাপী সামরিক মহড়ার মধ্যেই ওই এলাকায় যুক্তরাষ্ট্রের দুটি বিমানবাহী রণতরী মহড়া চালিয়েছে। গত শনিবার যুক্তরাষ্ট্রের নৌবাহিনী এক বিবৃতিতে জানায়, ‘মুক্ত ও স্বাধীন ইন্দো-প্যাসিফিক’-এর সমর্থনে তাদের ইউএসএস নিমিৎজ ও ইউএসএস রোনাল্ড রিগান দক্ষিণ চীন সাগরে মহড়া ও অভিযান চালিয়েছে। খবর: রয়টার্স।

যুক্তরাষ্ট্রের বিমানবাহী রণতরীগুলো শনিবার দক্ষিণ চীন সাগরের ঠিক কোন অংশে মহড়া চালিয়েছে, তা নিশ্চিত হওয়া যায়নি। যুক্তরাষ্ট্রের নৌবাহিনীর বিবৃতিতেও মহড়ার স্থান উল্লেখ করা হয়নি। যুক্তরাষ্ট্রের যুদ্ধজাহাজগুলো সাধারণত প্রশাস্ত মহাসাগরের পশ্চিম অংশেই মহড়া করে। সম্প্রতি ওই এলাকায় যুক্তরাষ্ট্রের তিনটি বিমানবাহী রণতরীকে একসঙ্গে দেখাও গেছে বলে জানিয়েছে রয়টার্স।

একই সাগরের প্যারাসেল আইল্যান্ডের কাছে গত বুধবার থেকে চীনের মহড়া শুরু হয়েছে। দ্বীপটির নিয়ন্ত্রণ নিয়ে চীন ও ভিয়েতনামের মধ্যে বিরোধ দীর্ঘদিনের। আজ রোববার বেইজিংয়ের এ মহড়াটি শেষ হওয়ার কথা।

বিশ্বজুড়ে মহামারি আকারে ছড়িয়ে পড়া নতুন করোনাভাইরাস, বাণিজ্য চুক্তি এবং হংকং নিয়ে টানাপড়েনের মধ্যে বিতর্কিত জলসীমায় ওয়াশিংটন- বেইজিংয়ের পাল্টাপাল্টি মহড়া দুই দেশের মধ্যে উত্তেজনা আরও বাড়িয়ে দেবে বলেও ধারণা করা হচ্ছে।

দক্ষিণ চীন সাগরের নিয়ন্ত্রণ নিয়ে চীনের সঙ্গে এর প্রতিবেশী দেশগুলোর বিরোধ থাকলেও বিতর্কিত এ জলসীমার প্রায় ৯০ শতাংশই মূলত বেইজিংয়ের নিয়ন্ত্রণে। চীন তাদের মহড়ার বিষয়টি আগেই জানিয়েছিল; অন্যদিকে যুক্তরাষ্ট্রের নৌবাহিনী শনিবার আচমকাই দক্ষিণ চীন সাগরে তাদের দুটি রণতরীর মহড়ার খবর দিল।

চীন প্রশান্ত মহাসাগরের দক্ষিণ চীন সাগর অংশে উত্তেজনা উসকে দিচ্ছে বলে ওয়াশিংটন দীর্ঘদিন ধরেই অভিযোগ করে আসছে। চীনের মহড়ার সমালোচনা এসেছে ভিয়েতনাম ও ফিলিপাইনের কাছ থেকেও। এ ধরনের মহড়া প্রতিবেশী দেশগুলোর সঙ্গে বেইজিংয়ের সম্পর্কে প্রভাব ফেলবে বলে সতর্কও করেছে তারা। বুধবার থেকে শুরু হওয়া চীনের পাঁচ দিনের মহড়ারও সমালোচনা করেছে তারা। এর পাল্টায় বেইজিং ওই অঞ্চলে উত্তেজনা বৃদ্ধির জন্য ওয়াশিংটনকে দোষারোপ করেছে। গত কয়েক বছরে তাইওয়ান প্রণালিতে যুক্তরাষ্ট্রের যুদ্ধজাহাজের অধিক উপস্থিতি নিয়েও ধারাবাহিকভাবে আপত্তি জানিয়েছে তারা।

মৎস্য সম্পদসহ খনিজ আহরণের গুরুত্বপূর্ণ দক্ষিণ চীন সাগর দিয়ে বছরে প্রায় পাঁচ লাখ কোটি ডলারের পণ্য পরিবহন হয়ে থাকে। পুরো সমুদ্রপথকে নিজেদের অঞ্চল বলে দাবি করে চীন। তবে আরও কয়েকটি দেশও ওই অঞ্চলের ওপর সার্বভৌমত্ব দাবি করে। দেশগুলো হচ্ছে মালয়েশিয়া, ব্রুনাই, ইন্দোনেশিয়া, তাইওয়ান, ফিলিপাইন ও ভিয়েতনাম। যুক্তরাষ্ট্র আনুষ্ঠানিকভাবে ওই অঞ্চলের দাবি না করলেও আন্তর্জাতিক সমুদ্রপথ হিসেবে ওই অঞ্চলে নিজেদের সামরিক উপস্থিতি ধরে রাখতে চায় তারা। এর অংশ হিসেবেই এ সাগরে চীনের চলমান মহড়ায় ফিলিপাইন ও ভিয়েতনামের আপত্তির প্রতি সমর্থন জানিয়েছে ওয়াশিংটন।

 

আপনার মন্তব্য লিখুন

লেখকের সম্পর্কে

Shahriar Hossain

জনপ্রিয়

দক্ষিণ চীন সাগরে বেইজিংয়ের সামরিক মহড়ার মধ্যেই যুক্তরাষ্ট্রের রণতরীর শক্তি প্রদর্শন

প্রকাশের সময় : ০২:৪৩:৪৬ অপরাহ্ন, রবিবার, ৫ জুলাই ২০২০

নুরুজ্জামান লিটন:/=

দক্ষিণ চীন সাগরে বেইজিংয়ের পাঁচ দিনব্যাপী সামরিক মহড়ার মধ্যেই ওই এলাকায় যুক্তরাষ্ট্রের দুটি বিমানবাহী রণতরী মহড়া চালিয়েছে। গত শনিবার যুক্তরাষ্ট্রের নৌবাহিনী এক বিবৃতিতে জানায়, ‘মুক্ত ও স্বাধীন ইন্দো-প্যাসিফিক’-এর সমর্থনে তাদের ইউএসএস নিমিৎজ ও ইউএসএস রোনাল্ড রিগান দক্ষিণ চীন সাগরে মহড়া ও অভিযান চালিয়েছে। খবর: রয়টার্স।

যুক্তরাষ্ট্রের বিমানবাহী রণতরীগুলো শনিবার দক্ষিণ চীন সাগরের ঠিক কোন অংশে মহড়া চালিয়েছে, তা নিশ্চিত হওয়া যায়নি। যুক্তরাষ্ট্রের নৌবাহিনীর বিবৃতিতেও মহড়ার স্থান উল্লেখ করা হয়নি। যুক্তরাষ্ট্রের যুদ্ধজাহাজগুলো সাধারণত প্রশাস্ত মহাসাগরের পশ্চিম অংশেই মহড়া করে। সম্প্রতি ওই এলাকায় যুক্তরাষ্ট্রের তিনটি বিমানবাহী রণতরীকে একসঙ্গে দেখাও গেছে বলে জানিয়েছে রয়টার্স।

একই সাগরের প্যারাসেল আইল্যান্ডের কাছে গত বুধবার থেকে চীনের মহড়া শুরু হয়েছে। দ্বীপটির নিয়ন্ত্রণ নিয়ে চীন ও ভিয়েতনামের মধ্যে বিরোধ দীর্ঘদিনের। আজ রোববার বেইজিংয়ের এ মহড়াটি শেষ হওয়ার কথা।

বিশ্বজুড়ে মহামারি আকারে ছড়িয়ে পড়া নতুন করোনাভাইরাস, বাণিজ্য চুক্তি এবং হংকং নিয়ে টানাপড়েনের মধ্যে বিতর্কিত জলসীমায় ওয়াশিংটন- বেইজিংয়ের পাল্টাপাল্টি মহড়া দুই দেশের মধ্যে উত্তেজনা আরও বাড়িয়ে দেবে বলেও ধারণা করা হচ্ছে।

দক্ষিণ চীন সাগরের নিয়ন্ত্রণ নিয়ে চীনের সঙ্গে এর প্রতিবেশী দেশগুলোর বিরোধ থাকলেও বিতর্কিত এ জলসীমার প্রায় ৯০ শতাংশই মূলত বেইজিংয়ের নিয়ন্ত্রণে। চীন তাদের মহড়ার বিষয়টি আগেই জানিয়েছিল; অন্যদিকে যুক্তরাষ্ট্রের নৌবাহিনী শনিবার আচমকাই দক্ষিণ চীন সাগরে তাদের দুটি রণতরীর মহড়ার খবর দিল।

চীন প্রশান্ত মহাসাগরের দক্ষিণ চীন সাগর অংশে উত্তেজনা উসকে দিচ্ছে বলে ওয়াশিংটন দীর্ঘদিন ধরেই অভিযোগ করে আসছে। চীনের মহড়ার সমালোচনা এসেছে ভিয়েতনাম ও ফিলিপাইনের কাছ থেকেও। এ ধরনের মহড়া প্রতিবেশী দেশগুলোর সঙ্গে বেইজিংয়ের সম্পর্কে প্রভাব ফেলবে বলে সতর্কও করেছে তারা। বুধবার থেকে শুরু হওয়া চীনের পাঁচ দিনের মহড়ারও সমালোচনা করেছে তারা। এর পাল্টায় বেইজিং ওই অঞ্চলে উত্তেজনা বৃদ্ধির জন্য ওয়াশিংটনকে দোষারোপ করেছে। গত কয়েক বছরে তাইওয়ান প্রণালিতে যুক্তরাষ্ট্রের যুদ্ধজাহাজের অধিক উপস্থিতি নিয়েও ধারাবাহিকভাবে আপত্তি জানিয়েছে তারা।

মৎস্য সম্পদসহ খনিজ আহরণের গুরুত্বপূর্ণ দক্ষিণ চীন সাগর দিয়ে বছরে প্রায় পাঁচ লাখ কোটি ডলারের পণ্য পরিবহন হয়ে থাকে। পুরো সমুদ্রপথকে নিজেদের অঞ্চল বলে দাবি করে চীন। তবে আরও কয়েকটি দেশও ওই অঞ্চলের ওপর সার্বভৌমত্ব দাবি করে। দেশগুলো হচ্ছে মালয়েশিয়া, ব্রুনাই, ইন্দোনেশিয়া, তাইওয়ান, ফিলিপাইন ও ভিয়েতনাম। যুক্তরাষ্ট্র আনুষ্ঠানিকভাবে ওই অঞ্চলের দাবি না করলেও আন্তর্জাতিক সমুদ্রপথ হিসেবে ওই অঞ্চলে নিজেদের সামরিক উপস্থিতি ধরে রাখতে চায় তারা। এর অংশ হিসেবেই এ সাগরে চীনের চলমান মহড়ায় ফিলিপাইন ও ভিয়েতনামের আপত্তির প্রতি সমর্থন জানিয়েছে ওয়াশিংটন।