শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

অর্থ সংকটে ফুল চাষিরা ঘুরে দাড়াতে সরকারি সহায়তা চান

মসিয়ার রহমান কাজল,বেনাপোল।
করোনা ঘূর্ণিঝড় আম্পানে ফুলের রাজধানী যশোরের গদখালী-পানিসারার ফুল চাষিদের অর্থ সংকট ও ফুলের চারার সংকট দেখা দিয়েছে।করোনার মধ্যে ফুল বিক্রি করতে না পারায় অর্থের অভাবে আম্পানে ক্ষতিগ্রস্ত ফুলের শেড পড়ে আছে পরিত্যক্ত অবস্থায়।

মৌসুমে চাষাবাদ করতে না পারায় ফুল উৎপাদন ব্যাহত হওয়ার আশঙ্কা করছেন চাষিরাসরকারের সহায়তা চেয়ে দুই বছরের স্বল্প সুদে ঋিণ চেয়েছেন এ খাতের সংশ্লিষ্ট ফুলচাষি-ব্যবসায়ীরা।

বাংলাদেশ ফ্লাওয়ার সোসাইটি সূত্র মতে,যশোরের ঝিকরগাছা ও শার্শা উপজেলার ৭৫টি গ্রামের প্রায় সাড়ে ৬ হাজার হেক্টর জমিতে চাষ করা হয় হরেক রকমের ফুল।ঝিকরগাছার পানিসারা-গদখালী গ্রামগুলোর রাস্তার দুইপাশে দিগন্ত বিস্তৃত জমিতে সারা বছরই লাল, নীল, হলুদ, বেগুনি আর সাদা রঙের ফুলের সমাহার হয়ে থাকে।

শত শত হেক্টর জমি নিয়ে গাঁদা, গোলাপ, গ্লাডিওলাস, রজনীগন্ধা, জারবেরা, কসমস, ডেইজ জিপসি,ডালিয়স, চন্দ্রমল্লিকা সহ বিভিন্ন প্রজাতির ফুলের চাষ হয়েছে এখানে।করোনার কারণে এই কার্যক্রমে ছেদ পড়েছে গদখালী-ব্যবসায়ী সহ এই সেক্টরের সংশ্লিষ্ট কার্যক্রমে।

সরেজমিন ঘুরে ও কৃষকদের সাথে কথাবলে জানা গেছে,করোনা ও ঘূর্ণিঝড় আম্পানে থমকে গেছে ফুলের রাজধানী গদখালী এলাকা।গত ৫ মাসে ফুল চাষেও ব্যবসায়ীদের ৩০০ কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে। এতে হতাশায় ভেঙে পড়েছে ফুল চাষের ওপর নির্ভর এলাকার হাজারো মানুষ।

করোনায় ফুল বিক্রি করতে না পারায় নষ্ট হয়ে থাকা জমি ফেলে রেখেছে। কেউ বা অর্থের অভাবে আম্পানে ক্ষতিগ্রস্ত শেড মেরামত করছেন না।ফুলের চাষ করতে না পারলে ব্যাহত হবে এ বছরে ফুল উৎপাদন বলে চাষীরা জানিয়েছেন।

এমন অবস্থায় নতুনভাবে শুরু করার স্বপ্ন দেখতে শুরু করেছেন গদখালী-হাড়িয়া এলাকার ক্ষতিগ্রস্ত ফুল চাষি সাজেদা বেগম।
তবে অর্থের অভাবে তিনি ফুল চাষ করতে পারছেন না।তিনি আরো জানান আম্পানে আমার জারবেরার ৪টি শেডই নষ্ট হয়ে গেছে।এগুলো যে মেরামত করবো টাকা নেই।ঘূর্ণিঝড় আম্পানে তার দেড় বিঘা জমির দুটি জারবেরা শেডেল উড়ে যায়।

ব্যাংকে ১৩ লাখ টাকা এবং দুটি এনজিওতে সাত লাখ টাকার ঋণ রয়েছে।গত চার মাসে এক টাকাও ঋণের কিস্তি দিতে পারিনি।
ঋণের কিস্তি পরিশোধের জন্য ব্যাংক ও এনজিও থেকে চাপ দিচ্ছে।কী করব বুঝতে পারছি না।

সাাজেদার  পঙ্গু স্বামী ইমামুল হোসেন বলেন, আমার ২৫ বছরের জীবনে ফুল চাষে এমন ক্ষতির মুখোমুখি হয়নি কখনো।আমার২টি টিনের শেড ছিল।প্রতিটি টিন ১ হাজার ৫০ টাকা কর কিনে শেডটি তৈরি করেছিলাম। ঝড়ে শেডটি ভেঙে গেছে।

এখন প্রতিটি টিন ২০০ টাকা করে বিক্রি করেছি।টিন বিক্রির টাকা দিয়ে সংসার চালাচ্ছি।এখন ৭ লক্ষ টাকার মূলধন পেলে নতুনভাবে এই ফুল চাষ শুরু করতে পারবেন বলে তিনি জানান।সরকারি সহায়তা না পেলে ফুল চাষ থেকে সরে দাঁড়াবেন অনেকেই।

বাংলাদেশ ফ্লাওয়ার সোসাইটির সভাপতি আবদুর রহিম বলেন, দেশে ফুলের বাজার বছরে প্রায় দেড় হাজার কোটি টাকার।দেশের চাহিদার ৮০ ভাগ ফুল বৃহত্ত যশোর থেকে সরবরাহ করা হয়ে থাকে।করোনায় গত ৫ মাস ফুল বিক্রির সুযোগ না থাকায় এবার ৪৫০ কোটি টাকার ফুল নষ্ট হয়েছে।এর মধ্যে শুধু যশোর অঞ্চলে অন্তত ৩০০ কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে।আগামি মৌসুমের বাজার ধরতে বর্তমান সময় চাষিরা ফুলচাষ বীজ বপন, পরিচর্যা শুরু করে।কিন্তু মূলধনের অভাবে তারা শুরু করতে পারছে না।

করোনা ও আম্পানে এখাতে অপূরণীয় ক্ষতি হয়েছে,পুষিয়ে নিতে সরকার প্রদত্ত বিষেশ কৃষি প্রনোদনার যে ঋন তা পাওয়ার জন্য বাংলাদেশ ফ্লাওয়ার সোসাইটির থেকে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ে বার বার মৌখিক বা লিখিত ভাবে অবগত করানোর পরও ফুলচাষি ও ব্যবসায়ীরা কোনই সহযোগীতা পায় নাই।

ফুল সোক্টর সেই ক্ষতির মধ্যে থেকে গলে।পূর্বের অবস্থায় ফুল সেক্টর ফিরিয়ে আনতে হলে স্বাস্থ্য বিধি মেনে সারা দেশে সামাজিক অনুষ্টান সীমিত আকারে ঘোষনা সরকারী ভাবে দিতে হবে।

আপনার মন্তব্য লিখুন

লেখকের সম্পর্কে

Shahriar Hossain

অর্থ সংকটে ফুল চাষিরা ঘুরে দাড়াতে সরকারি সহায়তা চান

প্রকাশের সময় : ০৯:১৯:৪৩ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ১১ সেপ্টেম্বর ২০২০

মসিয়ার রহমান কাজল,বেনাপোল।
করোনা ঘূর্ণিঝড় আম্পানে ফুলের রাজধানী যশোরের গদখালী-পানিসারার ফুল চাষিদের অর্থ সংকট ও ফুলের চারার সংকট দেখা দিয়েছে।করোনার মধ্যে ফুল বিক্রি করতে না পারায় অর্থের অভাবে আম্পানে ক্ষতিগ্রস্ত ফুলের শেড পড়ে আছে পরিত্যক্ত অবস্থায়।

মৌসুমে চাষাবাদ করতে না পারায় ফুল উৎপাদন ব্যাহত হওয়ার আশঙ্কা করছেন চাষিরাসরকারের সহায়তা চেয়ে দুই বছরের স্বল্প সুদে ঋিণ চেয়েছেন এ খাতের সংশ্লিষ্ট ফুলচাষি-ব্যবসায়ীরা।

বাংলাদেশ ফ্লাওয়ার সোসাইটি সূত্র মতে,যশোরের ঝিকরগাছা ও শার্শা উপজেলার ৭৫টি গ্রামের প্রায় সাড়ে ৬ হাজার হেক্টর জমিতে চাষ করা হয় হরেক রকমের ফুল।ঝিকরগাছার পানিসারা-গদখালী গ্রামগুলোর রাস্তার দুইপাশে দিগন্ত বিস্তৃত জমিতে সারা বছরই লাল, নীল, হলুদ, বেগুনি আর সাদা রঙের ফুলের সমাহার হয়ে থাকে।

শত শত হেক্টর জমি নিয়ে গাঁদা, গোলাপ, গ্লাডিওলাস, রজনীগন্ধা, জারবেরা, কসমস, ডেইজ জিপসি,ডালিয়স, চন্দ্রমল্লিকা সহ বিভিন্ন প্রজাতির ফুলের চাষ হয়েছে এখানে।করোনার কারণে এই কার্যক্রমে ছেদ পড়েছে গদখালী-ব্যবসায়ী সহ এই সেক্টরের সংশ্লিষ্ট কার্যক্রমে।

সরেজমিন ঘুরে ও কৃষকদের সাথে কথাবলে জানা গেছে,করোনা ও ঘূর্ণিঝড় আম্পানে থমকে গেছে ফুলের রাজধানী গদখালী এলাকা।গত ৫ মাসে ফুল চাষেও ব্যবসায়ীদের ৩০০ কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে। এতে হতাশায় ভেঙে পড়েছে ফুল চাষের ওপর নির্ভর এলাকার হাজারো মানুষ।

করোনায় ফুল বিক্রি করতে না পারায় নষ্ট হয়ে থাকা জমি ফেলে রেখেছে। কেউ বা অর্থের অভাবে আম্পানে ক্ষতিগ্রস্ত শেড মেরামত করছেন না।ফুলের চাষ করতে না পারলে ব্যাহত হবে এ বছরে ফুল উৎপাদন বলে চাষীরা জানিয়েছেন।

এমন অবস্থায় নতুনভাবে শুরু করার স্বপ্ন দেখতে শুরু করেছেন গদখালী-হাড়িয়া এলাকার ক্ষতিগ্রস্ত ফুল চাষি সাজেদা বেগম।
তবে অর্থের অভাবে তিনি ফুল চাষ করতে পারছেন না।তিনি আরো জানান আম্পানে আমার জারবেরার ৪টি শেডই নষ্ট হয়ে গেছে।এগুলো যে মেরামত করবো টাকা নেই।ঘূর্ণিঝড় আম্পানে তার দেড় বিঘা জমির দুটি জারবেরা শেডেল উড়ে যায়।

ব্যাংকে ১৩ লাখ টাকা এবং দুটি এনজিওতে সাত লাখ টাকার ঋণ রয়েছে।গত চার মাসে এক টাকাও ঋণের কিস্তি দিতে পারিনি।
ঋণের কিস্তি পরিশোধের জন্য ব্যাংক ও এনজিও থেকে চাপ দিচ্ছে।কী করব বুঝতে পারছি না।

সাাজেদার  পঙ্গু স্বামী ইমামুল হোসেন বলেন, আমার ২৫ বছরের জীবনে ফুল চাষে এমন ক্ষতির মুখোমুখি হয়নি কখনো।আমার২টি টিনের শেড ছিল।প্রতিটি টিন ১ হাজার ৫০ টাকা কর কিনে শেডটি তৈরি করেছিলাম। ঝড়ে শেডটি ভেঙে গেছে।

এখন প্রতিটি টিন ২০০ টাকা করে বিক্রি করেছি।টিন বিক্রির টাকা দিয়ে সংসার চালাচ্ছি।এখন ৭ লক্ষ টাকার মূলধন পেলে নতুনভাবে এই ফুল চাষ শুরু করতে পারবেন বলে তিনি জানান।সরকারি সহায়তা না পেলে ফুল চাষ থেকে সরে দাঁড়াবেন অনেকেই।

বাংলাদেশ ফ্লাওয়ার সোসাইটির সভাপতি আবদুর রহিম বলেন, দেশে ফুলের বাজার বছরে প্রায় দেড় হাজার কোটি টাকার।দেশের চাহিদার ৮০ ভাগ ফুল বৃহত্ত যশোর থেকে সরবরাহ করা হয়ে থাকে।করোনায় গত ৫ মাস ফুল বিক্রির সুযোগ না থাকায় এবার ৪৫০ কোটি টাকার ফুল নষ্ট হয়েছে।এর মধ্যে শুধু যশোর অঞ্চলে অন্তত ৩০০ কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে।আগামি মৌসুমের বাজার ধরতে বর্তমান সময় চাষিরা ফুলচাষ বীজ বপন, পরিচর্যা শুরু করে।কিন্তু মূলধনের অভাবে তারা শুরু করতে পারছে না।

করোনা ও আম্পানে এখাতে অপূরণীয় ক্ষতি হয়েছে,পুষিয়ে নিতে সরকার প্রদত্ত বিষেশ কৃষি প্রনোদনার যে ঋন তা পাওয়ার জন্য বাংলাদেশ ফ্লাওয়ার সোসাইটির থেকে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ে বার বার মৌখিক বা লিখিত ভাবে অবগত করানোর পরও ফুলচাষি ও ব্যবসায়ীরা কোনই সহযোগীতা পায় নাই।

ফুল সোক্টর সেই ক্ষতির মধ্যে থেকে গলে।পূর্বের অবস্থায় ফুল সেক্টর ফিরিয়ে আনতে হলে স্বাস্থ্য বিধি মেনে সারা দেশে সামাজিক অনুষ্টান সীমিত আকারে ঘোষনা সরকারী ভাবে দিতে হবে।