আব্দুল লতিফ ##
মস্কোয় গত ১০ সেপ্টেম্বর চিন ও ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রীদের বৈঠকে কিছু সমঝোতার পর লাদাখ সীমান্তে সামরিক উত্তেজনা কমবে বলে যে আশাবাদ তৈরি হয়েছিল, তার আয়ু অত্যন্ত স্বল্প হবে বলেই মনে হচ্ছে।
ওই বৈঠকের পর দু’সপ্তাহ পার হয়ে গেলেও সীমান্তে উত্তেজনা কমার কোনো লক্ষণ নেই। দু’পক্ষের কেউই সৈন্য সরায়নি। বরং রসদ এবং সমরাস্ত্র জড়ো করার মাত্রা বেড়েছে।
মস্কোয় সমঝোতার পরও সীমান্তে গুলি করার অনুমোদন দেওয়াসহ ভারতের বেশ কিছু সিদ্ধান্ত ও বক্তব্য নিয়ে চিনের ভেতর ক্ষোভ এবং সন্দেহ তৈরির ইঙ্গিত পাওয়া যাচ্ছে।
চিন সরকারের মুখ থেকে এখনও সরাসরি কিছু শোনা না গেলেও, সরকারি মুখপাত্র বা সরকারের সাথে ঘনিষ্ঠ হিসাবে পরিচিত মিডিয়াগুলোতে ভারতের উদ্দেশ্য নিয়ে প্রকাশ্যে প্রশ্ন তোলা হচ্ছে।
চিনা কমিউনিস্ট পার্টির মুখপাত্র হিসাবে পরিচিতি ইংরেজি দৈনিক গ্লোবাল টাইমসে শনিবার তিন-তিনটি উপ-সম্পাদকীয়তে যেসব মন্তব্য করা হয়েছে, তাতে পরিষ্কার বোঝা যায় যে ভারতকে নিয়ে চিনের মধ্যে অবিশ্বাস-অনাস্থা দিনদিন শক্ত হচ্ছে।
একটি উপ-সম্পাদকীয়র শিরোনাম ছিল এমন – ‘কপট ভারতের ব্যাপারে শক্ত হওয়ার সময় এসেছে’।
‘সাংহাইয়ের ইন্সটিটিউট অব ইন্টারন্যাশনাল স্টাডিজ’-এর দক্ষিণ এশিয়া বিষয়ক গবেষণা কেন্দ্রের প্রধান লিউ জং ই তার ওই বিশ্লেষণে খোলাখুলি লিখেছেন যে সীমান্ত সমস্যা সমাধানের কোনো সদিচ্ছা ভারতের নেই।
সীমান্তে উত্তেজনা প্রশমনে সোমবার সেনা কমান্ডার পর্যায়ে ষষ্ঠ দফা বৈঠকের পর ভারতের প্রভাবশালী দৈনিক ‘দ্যা হিন্দু’ উচ্চপদস্থ এক কর্মকর্তাকে উদ্ধৃত করে লিখেছে, নিরাপত্তার প্রতি হুমকি মনে করলে এখন থেকে ভারতীয় সৈন্যরা চিনা সৈন্যদের লক্ষ্য করে গুলি চালাতে দ্বিধা করবে না। চিনকে সে ব্যাপারে সতর্ক করা হয়েছে।
হিন্দুর ওই রিপোর্টকে উদ্ধৃত করে লিউ জং ই বলেছেন, ভারত প্রথম গুলি চালাতে পারে, সে সম্ভাবনা এখন আর কোনোভাবেই নাকচ করা যায় না।
চিনা এই বিশ্লেষক লেখেছেন, “ভারতীয় সেনাবাহিনীর একটি অংশ এখন কট্টর হিন্দু জাতীয়তাবাদী ভাবধারায় উদ্বুদ্ধ। সেই কট্টর অংশের কেউ কেউ এখন যুদ্ধের প্ররোচনা দিচ্ছে।”
তিনি আরও লেখেছেন, চিনকে এখনই শক্ত হতে হবে। এখনই যদি এর প্রতিকার চিন না করে, তাহলে মাঝে-মধ্যেই সীমান্তে সংঘাত নতুন একটি বাস্তবতা হয়ে দেখা দেবে।“
লিউ জং ই মনে করেন, চিনকে হটিয়ে বিশ্বে শিল্পপণ্যের প্রধান একটি সরবরাহকারী দেশ হওয়ার জন্য ভারতের ভেতর অদম্য আকাঙ্ক্ষা তৈরি হয়েছে।
ভারত অবশ্য সব সময় বলছে যে সীমান্ত পরিস্থিতির দায় একমাত্র চিনের। চিনই এখানে আগ্রাসীর ভূমিকায় এবং ভারত শুধু তাদের সার্বভৌমত্ব রক্ষার চেষ্টা করছে।