
সজীব আকবর, ঢাকা ব্যুরো ## জননন্দিত ও অসংখ্য কালজয়ী গানের স্রষ্টা জানে আলম আর নেই। ‘স্কুল খুইলাছে রে মাওলা স্কুল খুইলাছে,’ একটি গন্ধমের লাগিয়া, আল্লাহ বানাইলো দুনিয়া,’ ‘দয়াল বাবা কেবলা কাবা, আয়নার কারিগর,’ ইত্যাদি গান শোনেননি এমন বাঙালি পৃথিবীতে বিরল। গতকাল মঙ্গলবার রাত পৌনে ১০টার দিকে রাজধানীর বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিনি মারা যান (ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন)।
আজ বুধবার সকাল ১০টায় মগবাজারে জানে আলমের বাসভবন এলাকায় জানাজা অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা রয়েছে। জানাজা শেষে মরদেহ নিয়ে যাওয়া হবে তাঁর জন্মস্থান মানিকগঞ্জের হরিরামপুরে। সেখানে পারিবারিক কবরস্থানে চিরশায়িত হবেন নন্দিত এই শিল্পী।
জানা গেছে, ১ মাস আগে জানে আলম করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছিলেন। এরপর করোনা নেগেটিভ হলেও নিউমোনিয়াসহ নানা জটিল রোগে আক্রান্ত হন। এর জন্য গত এক মাস বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় (বিএসএমএমইউ) হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ছিলেন। অবস্থার অবনতি হলে গতকাল জানে আলমকে লাইফ সাপোর্ট নেওয়া হয়। কিন্তু শেষরক্ষা হলো না।
জানে আলম শুধু কণ্ঠশিল্পীই নন, তিনি একজন সুরকার, গীতিকার, প্রযোজকও ছিলেন। তাঁর প্রযোজনা প্রতিষ্ঠানের নাম দোয়েল প্রোডাক্টস।
সত্তরের দশকে পপ ও ফোকের মিশ্রণে গান তৈরি করে জানে আলম তুমুল জনপ্রিয়তা পান। ঢাকা রেকর্ডস থেকে প্রকাশিত প্রথম অ্যালবাম ‘বনমালী’ দিয়ে তৈরি হয় ভালো পরিচিতি। সেই লং প্লে টি সে সময় দারুণ জনপ্রিয়তা পেয়েছিল। তাঁর গাওয়া বিখ্যাত গানের মধ্যে রয়েছে ‘একটি গন্ধমের লাগিয়া’, ‘স্কুল খুইলাছে রে মাওলা’, ‘কালি ছাড়া কলমের মূল্য যে নাই, ফুল ছাড়া ফাগুনের নামটাই বৃথা’, ‘তুমি পিরিতি শিখাইয়া’, ‘দয়াল বাবা কেবলা কাবা’ প্রভৃতি। বাংলা গান নিয়ে তিনি পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে গিয়েছেন। পপসংগীতের মধ্যে লোকধাঁচ ও অধ্যাত্মবাদ যুক্ত করে গান করা তাঁর বৈশিষ্ট্য।
৭০’র দশকে স্বাধীন বাংলাদেশে পপগানের চর্চা করে যে কয়জন শিল্পী জনপ্রিয়তা পেয়েছেন, তাঁদের মধ্যে ফিরোজ সাঁই, আজম খান, ফেরদৌস ওয়াহিদ ও জানে আলমের নাম বেশি উচ্চারিত হয়।
জানে আলমের গাওয়া, লেখা ও সুর করা গানের সংখ্যা ৪ হাজারের মতো। ৮০টির বেশি একক গানের অ্যালবাম প্রকাশ পেয়েছে তাঁর। জানে আলমের সুরারোপিত গান গেয়েছেন ফরিদা পারভীন, সামিনা চৌধুরী, মমতাজ, মনির খান, এসডি রুবেল প্রমুখ শিল্পী। সামিনা চৌধুরীর প্রথম একক অ্যালবামের প্রকাশক তিনি।
এই গুণীজনের মৃত্যুতে বাংলাদেশে সংস্কৃতি অঙ্গনে আরো একটি অধ্যয়ের পরিসমাপ্তি হলো।