বুধবার, ২২ জানুয়ারী ২০২৫, ৮ মাঘ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

পদোন্নতি প্রত্যাখ্যান করলেন বিমানের সিবিএ সভাপতি

কবির হোসেন ## বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের জুনিয়র গ্রাউন্ড সার্ভিস অফিসার হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন মো. মশিকুর রহমান। একইসঙ্গে তিনি বিমান শ্রমিক লীগের এবং বিমানের নির্বাচিত সিবিএ (কালেকটিভ বার্গেনিং এজেন্ট) সভাপতি। ৩১ মার্চ বিমান কর্তৃপক্ষ তাকে জুনিয়র গ্রাউন্ড সার্ভিস অফিসার থেকে সহকারী ব্যবস্থাপক ( গ্রাহকসেবা) হিসেবে পদোন্নতি দেয়। কিন্তু এই পদোন্নতি প্রত্যাখ্যান কেরেছেন মশিকুর।  বিমানের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও সিইও’র কাছে পদোন্নতি প্রত্যাখ্যান করে চিঠিও দিয়েছেন তিনি।

কেন পদোন্নতি প্রত্যাখ্যান করলেন জানতে চাইলে  মশিকুর বলেন, ‘বিমানে অনেকেই পদোন্নতি বঞ্চিত হয়েছেন। কর্তৃপক্ষের এ অন্যায় সিদ্ধান্তের প্রতিবাদে আমাকে প্রদত্ত পদোন্নতি আমি প্রত্যাখ্যান করেছি।’

বিমানের সিবিএ সভাপতি বলেন, ‘করোনা মহামারিতে বহু বিমানকর্মী করোনা আক্রান্ত হয়েছেন। ১৩ জন বিমানকর্মী করোনায় মৃত্যুবরণ করেছেন। এরা সবাই  গ্রাহকসেবা, কার্গো ও প্রকৌশল বিভাগের কর্মী ছিলেন। জীবনের ঝুঁকি নিয়ে যারা করোনার সময়ে বিমানের গ্রাউন্ড হ্যান্ডলিং কার্যক্রম ও নিরবচ্ছিন্ন সেবা রেখেছেন পর্যাপ্ত শূন্য পদ থাকা সত্ত্বেও তাদের পদোন্নতি দেওয়া হয়নি। দীর্ঘ ২৫ বছরের  স্বপ্ন ভেঙেছে তাদের।’

তিনি  বলেন, ‘যারা পদোন্নতি বঞ্চিত হয়েছেন, তাদের প্রায় সবাই করোনায় আক্রান্ত হয়েছিলেন। ফ্রন্টফাইটার এসব বিমান কর্মীর জন্য বিমান কর্তৃপক্ষের পাষাণ হৃদয়ে মানবিকতার কোনও ছোঁয়া লাগেনি।  পদোন্নতি না দিয়ে তাদেরকে অপমানিত ও অধিকার বঞ্চিত করা হয়েছে। পদোন্নতি বঞ্চিত ২৬ জনের মধ্যে সাংগঠনিক সম্পাদক, মহিলা সম্পাদকসহ ২৪ জনই বিমান শ্রমিক লীগ ও সিবিএ’র নেতাকর্মী। নজিরবিহীন বঞ্চনার এ ঘটনাটি আমায় মারাত্মকভাবে পীড়িত করেছে। বঙ্গবন্ধুর নীতি আদর্শ বুকে লালন করে কর্তৃপক্ষের এ অন্যায় সিদ্ধান্তের প্রতিবাদে আমি পদোন্নতি প্রত্যাখ্যান করেছি।’

৪ এপ্রিল পদোন্নতি প্রত্যাখ্যান করে বিমানের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও সিইও’র কাছে চিঠি দিয়েছেন মশিকুর। চিঠিতে তিনি লিখেছেন, ‘সাংগঠনিক কাঠামো তৈরির অজুহাতে ২০০৭ থেকে ২০১৭ সাল পর্যন্ত প্রায় ১০ বছর সকল রকম পদোন্নতি স্থগিত থাকে। বিগত ১৪ বছরের ক্ষতি পুষিয়ে স্থবির হয়ে থাকা সকল শূন্য পদে পদোন্নতির প্রক্রিয়া পুনরায় শুরু হয়। গত ১৬ থেকে ৩১ মার্চ পর্যন্ত বিক্রয় ও বিপণন বিভাগে সহকারী ব্যবস্থাপক পদে ৮২টি শূন্য পদের বিপরীতে ২৮ জন জুনিয়র কমার্শিয়াল অফিসার এবং গ্রাহকসেবা বিভাগে সহকারী ব্যবস্থাপকের ১১৮টি শূন্য পদের বিপরীতে ৫৩ জন জুনিয়র গ্রাউন্ড সার্ভিস অফিসারকে পদোন্নতির জন্য সরাসরি ও ভার্চুয়াল সাক্ষাৎকার গ্রহণ করা হয়।’

‘৩১ মার্চ অপরাহ্নে বহুল প্রতীক্ষিত পদোন্নতির ফলাফল প্রকাশিত হলে দেখা যায় যে, কর্তৃপক্ষ আমাকে পদোন্নতি প্রদান করেছেন।  ২২ বছর চাকরি জীবন অতিবাহিত করার পর ব্যবস্থাপনা টিমে নিজেকে সংযুক্ত করতে পারা বড় আনন্দের ও সম্মানের বিষয়। কিন্তু দুঃখের বিষয় বিক্রয় ও বিপণন বিভাগে এখনও ৫৮টি শূন্য পদ থাকা সত্ত্বেও চার জনকে এবং গ্রাহক সেবা বিভাগে ৮৭টি শূন্যপদ থাকা সত্ত্বেও ২২ জনকে পদোন্নতি প্রদান করা হয়নি, যা মোট প্রার্থীর প্রায় ৪২ শতাংশ। এটা  বাংলাদেশ বিমানে একটি বিরল ঘটনা।’

চিঠিতে আরও  বলা হয়, ‘২৫ বছরের অভিজ্ঞতা সম্পন্ন একজন বিমানকর্মীকে মাত্র ৫ মিনিটের একটি পদোন্নতি সাক্ষাৎকারের মাধ্যমে মূল্যায়ন শেষে ফেল করিয়ে কর্তৃপক্ষ বড় দাগের একটি প্রশ্ন সৃষ্টি করেছেন। পদোন্নতির সাক্ষাৎকার বোর্ডে গ্রাহকসেবা বিভাগের অভিজ্ঞতা সম্পন্ন কোনও পেশাদার কর্মকর্তা উপস্থিত ছিলেন না। এর ফলে প্রার্থীদের শুধুমাত্র বাহ্যিক অবয়ব, বাচনভঙ্গি এবং ফাইল নির্ভর তথ্য মূল্যায়ন করা হয়েছে।  অতিমারি করোনা প্রাদুর্ভাবের শুরু থেকে অদ্যাবধি বহু বিমানকর্মী করোনা আক্রান্ত হলেও যে ১৩ জন  বিমানকর্মী করোনাক্রান্ত হয়ে মৃত্যুবরণ করেছেন। এরা সকলেই এই গ্রাহকসেবা, কার্গো ও প্রকৌশল বিভাগের কর্মী। এতে স্পষ্ট প্রতীয়মান হয় যে, এ বিভাগগুলো সবচেয়ে করোনা ঝুঁকিপূর্ণ। কিন্তু পরিতাপের বিষয় জীবনের ঝুঁকি নিয়ে যারা করোনার সময়ে বিমানের গ্রাউন্ড হ্যান্ডলিং কার্যক্রম ও নিরবচ্ছিন্ন সেবা অক্ষুণ্ন রেখেছেন,  শূন্য পদ থাকা সত্ত্বেও  পদোন্নতি প্রদান না করে তাদের দীর্ঘ ২৫ বছরের লালিত স্বপ্ন ভেঙে দেওয়া হয়েছে।  ২০২০ সালের শুধুমাত্র মার্চ-এপ্রিল মাসে যখন সারা বাংলাদেশে লকডাউন চলছে, তখনও এসব নি বিমানকর্মীরাই জীবনের ঝুঁকি নিয়ে যাত্রীবাহী চার্টার ও করোনা প্রতিরোধক জীবনরক্ষা সামগ্রী বহনকারী ১২০৮টি ফ্লাইট হ্যান্ডলিং করেছেন। যাদেরকে পদোন্নতি বঞ্চিত করা হয়েছে, তাদের প্রায় সবাই করোনা আক্রান্ত  হয়েছিলেন। বঙ্গবন্ধুর নীতি আদর্শ বুকে লালন করে কর্তৃপক্ষের এ অন্যায় সিদ্ধান্তের প্রতিবাদে আমাকে প্রদত্ত পদোন্নতি আমি  প্রত্যাখ্যান করলাম।’

এ বিষয়ে জানার জন্য যোগাযোগ করা হলেও বিমান কর্তৃপক্ষের কেউ মন্তব্য করতে রাজি হননি।

আপনার মন্তব্য লিখুন

লেখকের সম্পর্কে

Shahriar Hossain

পদোন্নতি প্রত্যাখ্যান করলেন বিমানের সিবিএ সভাপতি

প্রকাশের সময় : ১০:৪৪:৩৯ পূর্বাহ্ন, সোমবার, ৫ এপ্রিল ২০২১

কবির হোসেন ## বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের জুনিয়র গ্রাউন্ড সার্ভিস অফিসার হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন মো. মশিকুর রহমান। একইসঙ্গে তিনি বিমান শ্রমিক লীগের এবং বিমানের নির্বাচিত সিবিএ (কালেকটিভ বার্গেনিং এজেন্ট) সভাপতি। ৩১ মার্চ বিমান কর্তৃপক্ষ তাকে জুনিয়র গ্রাউন্ড সার্ভিস অফিসার থেকে সহকারী ব্যবস্থাপক ( গ্রাহকসেবা) হিসেবে পদোন্নতি দেয়। কিন্তু এই পদোন্নতি প্রত্যাখ্যান কেরেছেন মশিকুর।  বিমানের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও সিইও’র কাছে পদোন্নতি প্রত্যাখ্যান করে চিঠিও দিয়েছেন তিনি।

কেন পদোন্নতি প্রত্যাখ্যান করলেন জানতে চাইলে  মশিকুর বলেন, ‘বিমানে অনেকেই পদোন্নতি বঞ্চিত হয়েছেন। কর্তৃপক্ষের এ অন্যায় সিদ্ধান্তের প্রতিবাদে আমাকে প্রদত্ত পদোন্নতি আমি প্রত্যাখ্যান করেছি।’

বিমানের সিবিএ সভাপতি বলেন, ‘করোনা মহামারিতে বহু বিমানকর্মী করোনা আক্রান্ত হয়েছেন। ১৩ জন বিমানকর্মী করোনায় মৃত্যুবরণ করেছেন। এরা সবাই  গ্রাহকসেবা, কার্গো ও প্রকৌশল বিভাগের কর্মী ছিলেন। জীবনের ঝুঁকি নিয়ে যারা করোনার সময়ে বিমানের গ্রাউন্ড হ্যান্ডলিং কার্যক্রম ও নিরবচ্ছিন্ন সেবা রেখেছেন পর্যাপ্ত শূন্য পদ থাকা সত্ত্বেও তাদের পদোন্নতি দেওয়া হয়নি। দীর্ঘ ২৫ বছরের  স্বপ্ন ভেঙেছে তাদের।’

তিনি  বলেন, ‘যারা পদোন্নতি বঞ্চিত হয়েছেন, তাদের প্রায় সবাই করোনায় আক্রান্ত হয়েছিলেন। ফ্রন্টফাইটার এসব বিমান কর্মীর জন্য বিমান কর্তৃপক্ষের পাষাণ হৃদয়ে মানবিকতার কোনও ছোঁয়া লাগেনি।  পদোন্নতি না দিয়ে তাদেরকে অপমানিত ও অধিকার বঞ্চিত করা হয়েছে। পদোন্নতি বঞ্চিত ২৬ জনের মধ্যে সাংগঠনিক সম্পাদক, মহিলা সম্পাদকসহ ২৪ জনই বিমান শ্রমিক লীগ ও সিবিএ’র নেতাকর্মী। নজিরবিহীন বঞ্চনার এ ঘটনাটি আমায় মারাত্মকভাবে পীড়িত করেছে। বঙ্গবন্ধুর নীতি আদর্শ বুকে লালন করে কর্তৃপক্ষের এ অন্যায় সিদ্ধান্তের প্রতিবাদে আমি পদোন্নতি প্রত্যাখ্যান করেছি।’

৪ এপ্রিল পদোন্নতি প্রত্যাখ্যান করে বিমানের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও সিইও’র কাছে চিঠি দিয়েছেন মশিকুর। চিঠিতে তিনি লিখেছেন, ‘সাংগঠনিক কাঠামো তৈরির অজুহাতে ২০০৭ থেকে ২০১৭ সাল পর্যন্ত প্রায় ১০ বছর সকল রকম পদোন্নতি স্থগিত থাকে। বিগত ১৪ বছরের ক্ষতি পুষিয়ে স্থবির হয়ে থাকা সকল শূন্য পদে পদোন্নতির প্রক্রিয়া পুনরায় শুরু হয়। গত ১৬ থেকে ৩১ মার্চ পর্যন্ত বিক্রয় ও বিপণন বিভাগে সহকারী ব্যবস্থাপক পদে ৮২টি শূন্য পদের বিপরীতে ২৮ জন জুনিয়র কমার্শিয়াল অফিসার এবং গ্রাহকসেবা বিভাগে সহকারী ব্যবস্থাপকের ১১৮টি শূন্য পদের বিপরীতে ৫৩ জন জুনিয়র গ্রাউন্ড সার্ভিস অফিসারকে পদোন্নতির জন্য সরাসরি ও ভার্চুয়াল সাক্ষাৎকার গ্রহণ করা হয়।’

‘৩১ মার্চ অপরাহ্নে বহুল প্রতীক্ষিত পদোন্নতির ফলাফল প্রকাশিত হলে দেখা যায় যে, কর্তৃপক্ষ আমাকে পদোন্নতি প্রদান করেছেন।  ২২ বছর চাকরি জীবন অতিবাহিত করার পর ব্যবস্থাপনা টিমে নিজেকে সংযুক্ত করতে পারা বড় আনন্দের ও সম্মানের বিষয়। কিন্তু দুঃখের বিষয় বিক্রয় ও বিপণন বিভাগে এখনও ৫৮টি শূন্য পদ থাকা সত্ত্বেও চার জনকে এবং গ্রাহক সেবা বিভাগে ৮৭টি শূন্যপদ থাকা সত্ত্বেও ২২ জনকে পদোন্নতি প্রদান করা হয়নি, যা মোট প্রার্থীর প্রায় ৪২ শতাংশ। এটা  বাংলাদেশ বিমানে একটি বিরল ঘটনা।’

চিঠিতে আরও  বলা হয়, ‘২৫ বছরের অভিজ্ঞতা সম্পন্ন একজন বিমানকর্মীকে মাত্র ৫ মিনিটের একটি পদোন্নতি সাক্ষাৎকারের মাধ্যমে মূল্যায়ন শেষে ফেল করিয়ে কর্তৃপক্ষ বড় দাগের একটি প্রশ্ন সৃষ্টি করেছেন। পদোন্নতির সাক্ষাৎকার বোর্ডে গ্রাহকসেবা বিভাগের অভিজ্ঞতা সম্পন্ন কোনও পেশাদার কর্মকর্তা উপস্থিত ছিলেন না। এর ফলে প্রার্থীদের শুধুমাত্র বাহ্যিক অবয়ব, বাচনভঙ্গি এবং ফাইল নির্ভর তথ্য মূল্যায়ন করা হয়েছে।  অতিমারি করোনা প্রাদুর্ভাবের শুরু থেকে অদ্যাবধি বহু বিমানকর্মী করোনা আক্রান্ত হলেও যে ১৩ জন  বিমানকর্মী করোনাক্রান্ত হয়ে মৃত্যুবরণ করেছেন। এরা সকলেই এই গ্রাহকসেবা, কার্গো ও প্রকৌশল বিভাগের কর্মী। এতে স্পষ্ট প্রতীয়মান হয় যে, এ বিভাগগুলো সবচেয়ে করোনা ঝুঁকিপূর্ণ। কিন্তু পরিতাপের বিষয় জীবনের ঝুঁকি নিয়ে যারা করোনার সময়ে বিমানের গ্রাউন্ড হ্যান্ডলিং কার্যক্রম ও নিরবচ্ছিন্ন সেবা অক্ষুণ্ন রেখেছেন,  শূন্য পদ থাকা সত্ত্বেও  পদোন্নতি প্রদান না করে তাদের দীর্ঘ ২৫ বছরের লালিত স্বপ্ন ভেঙে দেওয়া হয়েছে।  ২০২০ সালের শুধুমাত্র মার্চ-এপ্রিল মাসে যখন সারা বাংলাদেশে লকডাউন চলছে, তখনও এসব নি বিমানকর্মীরাই জীবনের ঝুঁকি নিয়ে যাত্রীবাহী চার্টার ও করোনা প্রতিরোধক জীবনরক্ষা সামগ্রী বহনকারী ১২০৮টি ফ্লাইট হ্যান্ডলিং করেছেন। যাদেরকে পদোন্নতি বঞ্চিত করা হয়েছে, তাদের প্রায় সবাই করোনা আক্রান্ত  হয়েছিলেন। বঙ্গবন্ধুর নীতি আদর্শ বুকে লালন করে কর্তৃপক্ষের এ অন্যায় সিদ্ধান্তের প্রতিবাদে আমাকে প্রদত্ত পদোন্নতি আমি  প্রত্যাখ্যান করলাম।’

এ বিষয়ে জানার জন্য যোগাযোগ করা হলেও বিমান কর্তৃপক্ষের কেউ মন্তব্য করতে রাজি হননি।