রোকনুজ্জামান রিপন ##
শুক্রবার দ্য প্রিন্টে প্রকাশিত ওই প্রতিবেদনটি ভাষান্তরিত করে প্রকাশ করা হলো।
ভারতে কোভিড-১৯ মহামারিকালীন ত্রাণ সামগ্রী পাঠানো থেকে শুরু করে শ্রীলংকার অর্থনৈতিক সংকটের সময় ঋণ সহায়তা দিয়ে বাংলাদেশে নিজেদের অর্থনৈতিক উত্থানের জানান দেয়ার পাশাপাশি প্রতিবেশীদের সঙ্গে গভীর সম্পর্ক গড়ে তুলছে।
সম্প্রতি বাংলাদেশ শ্রীলংকার সঙ্গে ২০ কোটি ডলার মুদ্রা বিনিময়ের বিষয়ে সম্মত হয়। এই অর্থ শ্রীলংকার অর্থনীতিকে শক্তিশালী করতে সাহায্য করবে। কলম্বো যে বড় অঙ্কের ঋণ সংকটে রয়েছে তাও কাটিয়ে উঠতে সহায়তা করবে এই মুদ্রা বিনিময় প্রক্রিয়া।
শ্রীলংকার বৈদেশিক ঋণ পরিস্থিতি দেশটিকে বিশাল আকারের অর্থ পরিশোধ ও ভারসাম্য রক্ষার কঠিন অবস্থার দিকে নিয়ে যাচ্ছে। চলতি বছরে ৩৭০ কোটি মার্কিন ডলারের ঋণ পরিশোধ করতে হবে কলম্বোকে। বাংলাদেশের এই সহযোগিতা দেশটির জন্য একটি লাইফলাইন হিসেবে কাজ করবে।
জানা গেছে, চলতি বছরের মার্চে শ্রীলংকার প্রধানমন্ত্রী মাহিন্দা রাজাপাকসের বাংলাদেশ সফরকালে এ চুক্তি চূড়ান্ত হয়েছিল। অর্থনীতিতে মুদ্রা বিনিময় হলো এমন একটি লেনদেন যেখানে দু’টি পক্ষ একে ওপরের সঙ্গে সমপরিমাণ অর্থ বিনিময় করে, কিন্তু ভিন্ন ভিন্ন মুদ্রায়। এতে বিদেশি মুদ্রায় ঋণ গ্রহণের খরচ কমে যায়।
বিজ্ঞাপন
মূলত শ্রীলংকায় ২০১৯ সালে ইস্টারে বোমা হামলার পর থেকেই গভীর অর্থনৈতিক সংকট শুরু হয়েছে। করোনাভাইরাস মহামারিতে এই সংকট আরো প্রকট রূপ ধারণ করেছে। মহামারি ও ইস্টারে বোমা হামলার কারণে দেশটির পর্যটন শিল্প ও অন্যান্য খাতে ধস নেমেছে।
এছাড়া, ভারতে করোনাভাইরাসের দ্বিতীয় ঢেউয়ে দুইবার ত্রাণ সহায়তা পাঠানো ৪০টি দেশের একটি বাংলাদেশ। গত ১৮ মে, ভারতে ২ হাজার ৬৭২ বক্স অ্যান্টিভাইরাল ওষুধ এবং কোভিড সুরক্ষা সামগ্রী পাঠায় বাংলাদেশ। এর আগে ৬ মে ১০ হাজার ভায়াল রেমডেসিভির ভারতে পাঠিয়েছে দেশটি।
চলতি অর্থবছরে বাংলাদেশের জিডিপি প্রবৃদ্ধি ৫ দশমিক ৮ শতাংশ অর্জিত হতে পারে বলে আশা করা হচ্ছে। ইন্দো-প্যাসিফিক অঞ্চলে গুরুত্বপূর্ণ কৌশলগত ভৌগলিক অবস্থানের কারণে বাংলাদেশের দিকে নজর রয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের।
চলতি বছরের এপ্রিলে যুক্তরাষ্ট্রের চেম্বার অব কমার্স বাংলাদেশে ইউএস-বাংলাদেশ বিজনেস কাউন্সিল শুরু করেছে- যার লক্ষ্য হচ্ছে, বাংলাদেশে আমেরিকান বিনিয়োগের সম্ভাবনাগুলোর সন্ধান ও দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্য বাড়ানো।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন বাংলাদেশ সরকার ক্রমবর্ধমান অর্থনৈতিক দক্ষতার কারণে চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী পাকিস্তানেরও প্রশংসা অর্জন করেছে।
বিশ্বব্যাংকের পাকিস্তান কর্মসূচির সাবেক উপদেষ্টা আবিদ হাসান পাকিস্তানের শীর্ষস্থানীয় একটি দৈনিক পত্রিকায় এক নিবন্ধে বাংলাদেশের অর্থনৈতিক উত্থানের সঙ্গে পাকিস্তান পরিস্থিতির তুলনা করেছেন। এতে তিনি বলেন, বর্তমান সরকারসহ পাকিস্তানের প্রতিটি সরকারই ভিক্ষার থালা নিয়ে বিশ্ব দরবারে হাজির হয়। ২০ বছর আগেও এটি অকল্পনীয় ছিল যে, ২০২০ সাল নাগাদ বাংলাদেশের মাথাপিছু জিডিপি পাকিস্তানের চেয়েও বেশি হবে। পাকিস্তান যদি নিজের হতাশাজনক পারফরম্যান্স বজায় রাখে, তাহলে ২০৩০ সাল নাগাদ বাংলাদেশের কাছ থেকে সহযোগিতা চাইতে হতে পারে।
এশিয়ার নতুন রয়েল বেঙ্গল টাইগার
রিসার্চ অ্যান্ড ইনফরমেশন সিস্টেম ফর ডেভেলপিং কান্ট্রিজ (আরআইএস)-এর অধ্যাপক প্রবীর দে’র মতে, বাংলাদেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির পেছনের মূল কারণ হলো দেশটি ইউরোপীয় ইউনিয়নের জেনারেলাইজড স্কিম অফ প্রিফারেন্সেস (জিএসপি) কর্মসূচির সুবিধাসহ অন্যান্য সুবিধাদি লাভ করছে।
তিনি বলেন, ইইউর জিএসপি স্কিমের মাধ্যমে পাওয়া সহায়তায় বাংলাদেশ কৌশলগত রফতানি বাড়িয়ে উল্লেখযোগ্য পরিমাণ রাজস্ব আয় করতে সক্ষম হচ্ছে। এর পাশাপাশি বাংলাদেশে প্রতিবছর বড় অঙ্কের রেমিটেন্সও আসে।
বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের কমিশনার মিজানুর রহমান বলেন, বাংলাদেশে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ চলতি বছরে ৪৫ বিলিয়ন ডলার ছাড়িয়েছে, যা ২০১০ সালে ছিল মাত্র ৯ বিলিয়ন ডলার। এছাড়া দেশে রেমিটেন্সের পরিমাণ ২০০ বিলিয়ন ডলার স্পর্শ করেছে।
তিনি বলেন, বাংলাদেশ তার প্রতিবেশীদের সঙ্গে দায়িত্বশীল আচরণ ও যাদের সাহায্যের প্রয়োজন তাদের পাশে দাঁড়ানোতে বিশ্বাসী। ঢাকা এখন প্রতিবেশীদের সঙ্গে সম্পর্ক গভীর ও সুসংহত করার দিকে এগিয়ে যাচ্ছে। কিন্তু এমনটা করতে বাংলাদেশ অন্যদের অবদমন বা অবহেলা করছে না।
বাংলাদেশের অর্থনৈতিক উত্থানের আরেকটি কারণ উল্লেখ করে প্রবীর দে বলেন, বাংলাদেশ আসিয়ান জোটের বড় দেশগুলোর সঙ্গেও বাণিজ্য করছে। দেশটি একইসঙ্গে কয়েকটি আসিয়ান দেশের সঙ্গে বাণিজ্যচুক্তি ও কানেক্টিভিটি প্রকল্প চালু করতে চাইছে।
সম্পাদক ও প্রকাশক: মহসিন মিলন
সম্পাদকীয় পরিষদ
সম্পাদক মন্ডলীর সভাপতি: নুরুজ্জামান লিটন, ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক: রোকনুজ্জামান রিপন, নির্বাহী সম্পাদক: আব্দুল লতিফ, যুগ্ন নির্বাহী সম্পাদক: আলহাজ্ব মতিয়ার রহমান, সহকারী সম্পাদক: সাজ্জাদুল ইসলাম সৌরভ, মামুন বাবু, বার্তা সম্পাদক: নজরুল ইসলাম
সম্পাদকীয় কার্যালয়
বার্তা ও বানিজ্যক কার্যালয়: গাজীপুর আবাসিক এলাকা, বেনাপোল, যশোর। ইমেইল: mohsin.milon@gmail.com, bartakontho@gmail.com ফোন: ৭৫২৮৯, ৭৫৬৯৫ মোবা: ০১৭১১৮২০৩৯৪
All Rights Reserved © Barta Kontho