প্রিন্ট এর তারিখঃ ডিসেম্বর ২৫, ২০২৫, ১২:৫০ এ.এম || প্রকাশের তারিখঃ জুন ১২, ২০২১, ৮:৫০ পি.এম
বর্ষার শুরুতেই তীব্র ভাঙনের কবলে লালমনিরহাটের তিস্তা ও ধরলা পাড়ের মানুষ

মোস্তাফিজুর রহমান, লালমনিরহাট ##
তিস্তা ও ধরলার পানি হঠাৎ বৃদ্ধি পাওয়ায় গত তিন দিনে প্রবল ভাঙনে প্রায় শতাধিক পরিবারের বসতভিটা, আবাদিজমি, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানসহ বিভিন্ন স্থাপনা বিলীন হয়ে গেছে। হুমকির মুখে রয়েছে বাঁধসহ নানান স্থাপনা। বর্ষা মৌসুম শুরু হতে না হতেই তীব্র ভাঙনে দিশেহারা লালমনিরহাটের তিস্তা ও ধরলা পাড়ের মানুষ।
শনিবার (১২ জুন) দেশের বৃহত্তম সেচপ্রকল্প লালমনিরহাটের হাতীবান্ধা উপজেলার তিস্তা ব্যারাজে ডালিয়া পয়েন্টে পানিপ্রবাহ রেকর্ড করা হয় ৫২ দশমিক ২০ সেন্টিমিটার। যা বিপৎসীমার ৪০ সেন্টিমিটার নিচে (স্বাভাবিক ৫২ দশমিক ৬০ সেন্টিমিটার) দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।তিস্তা ব্যারেজের ডালিয়া পয়েন্টের নির্বাহী প্রকৌশলী রবিউল ইসলাম বলেন, উজানের ভারী বৃষ্টিপাতের কারণে তিস্তার পানি বৃদ্ধি পেয়ে বিকেল থেকে পানি কমতে শুরু করেছে।স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, লালমনিরহাট সদর উপজেলায় মোগলহাটের ফলিমারী এলাকায় ধরলা নদীর ডান তীরে গত তিন দিনে ভাঙন তীব্র আকার ধারণ করেছে। নদীগর্ভে চলে গেছে বসতভিটা ও ভুট্টাসহ অর্ধশত বিঘা আবাদিজমি। গৃহহারা হয়েছেন অনেক পরিবার। অসহায় পরিবারগুলো স্থানীয় বাঁধের রাস্তায় আশ্রয় নিয়ে আছেন।তিস্তার ভায়াবহ ভাঙনে আদিতমারী উপজেলার মহিষখোঁচা ইউনিয়নের কুটিরপাড়, বালাপাড়া, বাদিয়ারটারী ও চৌরাহা গ্রামে বিলীন হয়েছে ২০টি পরিবারের বসতভিটা। এছাড়া অর্ধশত বসতভিটা ও শতাধিক একর আবাদিজমি ভাঙনের ঝুঁকিতে রয়েছে। কুটিরপাড় এলাকার এক কিলোমিটার দৈর্ঘ্যের একটি বালুর বাঁধ হুমকি মুখে পড়েছে। এই বাঁধটি স্থানীয়রা নিজস্ব অর্থে প্রায় ১৫ লাখ ব্যয়ে নির্মাণ করেন। এই বাঁধ রক্ষায় তিস্তাপাড়ের হাজারও পরিবার আশায় বুক বাঁধে আছেন।
সরেজমিনে দেখা গেছে, গত তিন দিনে তিস্তার প্রবল ভাঙনে আদিতমারী উপজেলার মহিষখোঁচা ইউনিয়নের কুটিরপাড় এলাকায় শতাধিক ঘরবাড়ি নদীগর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। এছাড়াও ঝুঁকিতে থাকা অর্ধশত বাড়িঘর অন্যত্র সরিয়ে নেয়া হয়েছে।মহিষখোঁচা ইউনিয়নের কুটিরপাড় গ্রামে তিস্তার তীরে বসে কূলভাঙার দৃশ্য অপলক দৃষ্টিতে দেখছিলেন কৃষক দুলাল মিয়া (৫৫)। তার চোখে-মুখে পৈতৃক একখণ্ড জমি হারানোর শঙ্কা। নদীর পানিও বাড়ছে ভাঙনও বাড়ছে। বালাপাড়া গ্রামের ষাটোর্ধ্ব কৃষক মোহাম্মদ আলী বলেন, গত দুই দিনে ভিটেমাটি গিলেছে তিস্তা। সব হারিয়ে পরিবার নিয়ে আজ নিঃস্ব আমি।
লালমনিরহাট সদর উপজেলার মোগলহাট ইউনিয়নের ফলিমারী গ্রামের বাসিন্দা জহুরুল হক (৫০) মাছ ধরে জীবিকা নির্বাহ করেন। গত কয়েক দিন আগে চোখের সামনেই বসতভিটা ধরলা নদীর গর্ভে বিলীন হয়ে যায়। এখন আশ্রায় নিয়ে আছেন অন্য জায়গায়।
মোগলহাট ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান হাবিবুর রহমান বলেন, এ বছর বর্ষা আসার আগেই ধরলার ভাঙন দেখা দিয়েছে। বর্ষাকালে ভাঙন আরও তীব্র হতে পারে। ঝুঁকিতে থাকা অনেকে ঘরবাড়ি সরিয়ে নিরাপদ স্থানে আশ্রয় নিয়েছেন।হঠাৎ তিস্তায় পানিপ্রবাহ বৃদ্ধি পাওয়ায় সৃষ্ট বন্যায় চরাঞ্চলের সবজি, বাদাম ও ভুট্টাসহ ফসলের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। সবকিছু পানিতে ডুবে গেছে। আর শুরু হয়েছে ভাঙন। এ কারণে চিন্তিত তিস্তাপাড়ের মানুষ। পানিবন্দি পরিবারগুলো শিশু, বৃদ্ধ ও গবাদি পশুপাখি নিয়ে পড়েছে বিপাকে। তারা তাদের বাড়িঘর নিয়ে অনেকে ঠাঁই নিচ্ছেন অন্যের বাড়িতে।
তিস্তা নদীর ভাঙন এলাকা পরিদর্শনে এসে আদিতমারী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মুহাম্মদ মনসুর উদ্দিন বলেন, বালুর বাঁধটির অর্ধেকের বেশি বিলীন হয়েছে। বাকিটুকু রক্ষা করতে জিও ব্যাগ প্রয়োজন। যার চাহিদা পাঠাতে পানি উন্নয়ন বোর্ডের কর্মকর্তাদের বলা হয়েছে।
লালমনিরহাট পানি উন্নয়ন বোর্ডের প্রধান প্রকৌশলী মো. মিজানুর রহমান বলেন, ‘আমরা বাঁধ নির্মাণের জন্য বাজেটের আবেদন করেছি, কিন্তু এখন পর্যান্ত বাজেট পাইনি। ভাঙন এলাকায় কিছু বস্তা ফেলা হয়েছে যাতে করে ভাঙন রোধ করা যায়।’
লালমনিরহাট জেলা প্রশাসক মো. আবু জাফর বলেন, তিস্তার ভাঙন এলাকা আদিতমারী ইউএনও পরিদর্শ করেছেন। ক্ষতিগ্রস্তদের জন্য পর্যাপ্ত খাবার মজুত আছে, ভাঙনকবলিত এলাকায় দ্রুত বিতরণ করা হবে।
সম্পাদক ও প্রকাশক: মহসিন মিলন
সম্পাদকীয় পরিষদ
সম্পাদক মন্ডলীর সভাপতি: নুরুজ্জামান লিটন, ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক: রোকনুজ্জামান রিপন, নির্বাহী সম্পাদক: আব্দুল লতিফ, যুগ্ন নির্বাহী সম্পাদক: আলহাজ্ব মতিয়ার রহমান, সহকারী সম্পাদক: সাজ্জাদুল ইসলাম সৌরভ, মামুন বাবু, বার্তা সম্পাদক: নজরুল ইসলাম
সম্পাদকীয় কার্যালয়
বার্তা ও বানিজ্যক কার্যালয়: গাজীপুর আবাসিক এলাকা, বেনাপোল, যশোর। ইমেইল: mohsin.milon@gmail.com, bartakontho@gmail.com ফোন: ৭৫২৮৯, ৭৫৬৯৫ মোবা: ০১৭১১৮২০৩৯৪
All Rights Reserved © Barta Kontho