বুধবার, ১৭ এপ্রিল ২০২৪, ৩ বৈশাখ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

রাজশাহী মেডিকেলের করোনা ইউনিটে ১২ জনের মৃত্যু

রাজশাহী ব্যুরো ##

রাজশাহী মেডিকেল কলেজ (রামেক) হাসপাতালের করোনা ইউনিটে গত ২৪ ঘণ্টায় আরও ১২ জনের মৃত্যু হয়েছে। এর মধ্যে আটজন করোনা পজিটিভ ছিলেন। এ ছাড়া অপর চারজনের মধ্যে তিনজন নমুনা পরীক্ষার আগেই মারা যান। বাকি একজনের করোনা পরীক্ষার ফলাফল নেগেটিভ আসে।

এদিকে, ২৪ ঘণ্টায় মৃত ১২ জনের মধ্যে সাতজন চাঁপাইনবাবগঞ্জের, তিনজন রাজশাহীর, একজন নাটোর ও একজন নওগাঁর বাসিন্দা।

রামেক হাসপাতাল থেকে পাঠানো প্রতিবেদনে জানানো হয়েছে, ২৪ ঘণ্টায় নতুন করে ৫৮ জন করোনা ইউনিটে ভর্তি হয়েছে। এর মধ্যে রাজশাহীর ৩৯ জন, চাঁপাইনবাবগঞ্জের আটজন, নাটোরের চারজন, নওগাঁর পাঁচজন ও কুষ্টিয়ার দুজন রয়েছেন। একই সময়ে করোনা ইউনিট থেকে সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরেছে ৪৩ জন। বর্তমানে হাসপাতালের নয়টি করোনা ওয়ার্ডের ২৭১ শয্যার বিপরীতে ৩২৫ জন রোগী ভর্তি আছে। তাদের মধ্যে রাজশাহীর ১৮৯ জন, চাঁপাইনবাবগঞ্জের ৮২ জন, নাটোরের ১৭ জন, নওগাঁর ২৬ জন, পাবনার চারজন, কুষ্টিয়ার ছয়জন ও চুয়াডাঙ্গার একজন রয়েছে।

এদিকে গতকাল সোমবার সন্ধ্যায় রামেক হাসপাতালের দুটি পিসিআর ল্যাবে রাজশাহী অঞ্চলের চার জেলার ৩৭১ জনের নমুনা পরীক্ষা করে পজিটিভ হয়েছে ১৩৭ জন। এর মধ্যে রাজশাহীর ১৮১ জনের মধ্যে পজিটিভ হয়েছে ৭১ জন। শনাক্তের হার ৩৯ দশমিক ২২ শতাংশ। এর মধ্যে নাটোরের তিনটি নমুনা পরীক্ষায় একজনের পজিটিভ রিপোর্ট আসে। শনাক্তের হার ৩৩ দশমিক ৩৩ শতাংশ। নওগাঁর ৮৮টি নমুনা পরীক্ষায় ৪৩ জনের পজিটিভ আসে। শনাক্তের হার ৪৭ দশমিক ২৫ শতাংশ এবং চাঁপাইনবাবগঞ্জের ৯৯টি নমুনার মধ্যে ২২ জনের করোনা পজিটিভ আসে। শনাক্তের হার ২১ দশমিক ৩৬ শতাংশ।

এদিকে, রাজশাহী নগরীতে এক সপ্তাহের সর্বাত্মক লকডাউনের পঞ্চম দিন চলছে আজ মঙ্গলবার। লকডাউনের কারণে নগরীতে ওষুধের দোকান ও কাঁচাবাজার ছাড়া সব ধরনের দোকানপাট বন্ধ রয়েছে। তবে নগরীতে অন্যদিনের তুলনায় রিকশা চলাচল বেড়েছে।

এ ছাড়া রাজশাহী নগরীর সঙ্গে সারা দেশের সরাসরি বাস ও ট্রেন যোগাযোগ বন্ধ রয়েছে। তবে নগরীর বাইরে পুঠিয়া উপজেলার বানেশ্বর থেকে ঢাকাসহ বিভিন্ন রুটে বাস চলাচল করছে। ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন এলাকা থেকে রাজশাহী নগরীর উদ্দেশে যেসব লোকজন আসছে, তারা বানেশ্বরে নেমে রিকশাসহ বিভিন্ন ছোট যানবাহনে করে নগরীতে প্রবেশ করছে।

এদিকে, গত শুক্রবার থেকে শুরু হওয়া লকডাউনের সুফল রাজশাহী নগরবাসী পাচ্ছে বলে জানিয়েছেন জেলা প্রশাসক (ডিসি) আব্দুল জলিল। তিনি বলেন, ‘আমরা এর মধ্যেই সুফল পেতে শুরু করেছি। রাজশাহী নগরীতে করোনায় মৃত্যু ও সংক্রমণ কমতে শুরু করেছে।’

ডিসি আরও বলেন, রাজশাহী মেডিকেলের করোনা ইউনিটে আজ মঙ্গলবার সকাল পর্যন্ত গত ২৪ ঘণ্টায় যে ১২ জন রোগী মারা গেছে, তাঁদের মধ্যে তিনজন রাজশাহীর, বাকিরা অন্যান্য জেলার। একই সময়ে শনাক্তের হার ৫০ শতাংশের অনেক নিচে নেমেছে।

ডিসি বলেন, ‘আমি আশা করছি, আগামী ১৭ জুন সাতদিনের লকডাউন শেষে সংক্রমণের হার অনেক কমে যাবে। যদি কাঙ্ক্ষিত ফলাফল না আসে, তখন হয়তো আমাদের কৌশল পরিবর্তন করতে হবে।’ তিনি নগরবাসীর সহযোগিতা কামনা করে বলেন, ‘এই শহরের সব মানুষকে আমি বিনয়ের সঙ্গে অনুরোধ করছি যে, এটা (লকডাউন) আপনাদের জন্য। আপনাদের জানমালের নিরাপত্তার জন্য সরকার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। সরকারের সিদ্ধান্তকে শ্রদ্ধা করুন, সহযোগিতা করুন এবং এই কয়েকটা দিন বাড়িতে থাকুন।’

মে মাসের মধ্যভাগে চাঁপাইনবাবগঞ্জে করোনাভাইরাসের ভারতীয় ধরনের সংক্রমণ শুরু হয়। তখন এই জেলায় লকডাউন আরোপ করা হলেও রাজশাহী, নওগাঁ ও নাটোর জেলায় লকডাউন ছিল না। সেই সুযোগে চাঁপাইনবাবগঞ্জের বাইরে সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়ে। এই পরিস্থিতিতে গত শুক্রবার বিকেল ৫টা থেকে রাজশাহী নগরীতে লকডাউন আরোপ করে প্রশাসন। যা চলবে আগামী ১৭ জুন মধ্যরাত পর্যন্ত।

জনপ্রিয়

রাজশাহী মেডিকেলের করোনা ইউনিটে ১২ জনের মৃত্যু

প্রকাশের সময় : ১২:৪৯:২৩ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ১৫ জুন ২০২১

রাজশাহী ব্যুরো ##

রাজশাহী মেডিকেল কলেজ (রামেক) হাসপাতালের করোনা ইউনিটে গত ২৪ ঘণ্টায় আরও ১২ জনের মৃত্যু হয়েছে। এর মধ্যে আটজন করোনা পজিটিভ ছিলেন। এ ছাড়া অপর চারজনের মধ্যে তিনজন নমুনা পরীক্ষার আগেই মারা যান। বাকি একজনের করোনা পরীক্ষার ফলাফল নেগেটিভ আসে।

এদিকে, ২৪ ঘণ্টায় মৃত ১২ জনের মধ্যে সাতজন চাঁপাইনবাবগঞ্জের, তিনজন রাজশাহীর, একজন নাটোর ও একজন নওগাঁর বাসিন্দা।

রামেক হাসপাতাল থেকে পাঠানো প্রতিবেদনে জানানো হয়েছে, ২৪ ঘণ্টায় নতুন করে ৫৮ জন করোনা ইউনিটে ভর্তি হয়েছে। এর মধ্যে রাজশাহীর ৩৯ জন, চাঁপাইনবাবগঞ্জের আটজন, নাটোরের চারজন, নওগাঁর পাঁচজন ও কুষ্টিয়ার দুজন রয়েছেন। একই সময়ে করোনা ইউনিট থেকে সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরেছে ৪৩ জন। বর্তমানে হাসপাতালের নয়টি করোনা ওয়ার্ডের ২৭১ শয্যার বিপরীতে ৩২৫ জন রোগী ভর্তি আছে। তাদের মধ্যে রাজশাহীর ১৮৯ জন, চাঁপাইনবাবগঞ্জের ৮২ জন, নাটোরের ১৭ জন, নওগাঁর ২৬ জন, পাবনার চারজন, কুষ্টিয়ার ছয়জন ও চুয়াডাঙ্গার একজন রয়েছে।

এদিকে গতকাল সোমবার সন্ধ্যায় রামেক হাসপাতালের দুটি পিসিআর ল্যাবে রাজশাহী অঞ্চলের চার জেলার ৩৭১ জনের নমুনা পরীক্ষা করে পজিটিভ হয়েছে ১৩৭ জন। এর মধ্যে রাজশাহীর ১৮১ জনের মধ্যে পজিটিভ হয়েছে ৭১ জন। শনাক্তের হার ৩৯ দশমিক ২২ শতাংশ। এর মধ্যে নাটোরের তিনটি নমুনা পরীক্ষায় একজনের পজিটিভ রিপোর্ট আসে। শনাক্তের হার ৩৩ দশমিক ৩৩ শতাংশ। নওগাঁর ৮৮টি নমুনা পরীক্ষায় ৪৩ জনের পজিটিভ আসে। শনাক্তের হার ৪৭ দশমিক ২৫ শতাংশ এবং চাঁপাইনবাবগঞ্জের ৯৯টি নমুনার মধ্যে ২২ জনের করোনা পজিটিভ আসে। শনাক্তের হার ২১ দশমিক ৩৬ শতাংশ।

এদিকে, রাজশাহী নগরীতে এক সপ্তাহের সর্বাত্মক লকডাউনের পঞ্চম দিন চলছে আজ মঙ্গলবার। লকডাউনের কারণে নগরীতে ওষুধের দোকান ও কাঁচাবাজার ছাড়া সব ধরনের দোকানপাট বন্ধ রয়েছে। তবে নগরীতে অন্যদিনের তুলনায় রিকশা চলাচল বেড়েছে।

এ ছাড়া রাজশাহী নগরীর সঙ্গে সারা দেশের সরাসরি বাস ও ট্রেন যোগাযোগ বন্ধ রয়েছে। তবে নগরীর বাইরে পুঠিয়া উপজেলার বানেশ্বর থেকে ঢাকাসহ বিভিন্ন রুটে বাস চলাচল করছে। ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন এলাকা থেকে রাজশাহী নগরীর উদ্দেশে যেসব লোকজন আসছে, তারা বানেশ্বরে নেমে রিকশাসহ বিভিন্ন ছোট যানবাহনে করে নগরীতে প্রবেশ করছে।

এদিকে, গত শুক্রবার থেকে শুরু হওয়া লকডাউনের সুফল রাজশাহী নগরবাসী পাচ্ছে বলে জানিয়েছেন জেলা প্রশাসক (ডিসি) আব্দুল জলিল। তিনি বলেন, ‘আমরা এর মধ্যেই সুফল পেতে শুরু করেছি। রাজশাহী নগরীতে করোনায় মৃত্যু ও সংক্রমণ কমতে শুরু করেছে।’

ডিসি আরও বলেন, রাজশাহী মেডিকেলের করোনা ইউনিটে আজ মঙ্গলবার সকাল পর্যন্ত গত ২৪ ঘণ্টায় যে ১২ জন রোগী মারা গেছে, তাঁদের মধ্যে তিনজন রাজশাহীর, বাকিরা অন্যান্য জেলার। একই সময়ে শনাক্তের হার ৫০ শতাংশের অনেক নিচে নেমেছে।

ডিসি বলেন, ‘আমি আশা করছি, আগামী ১৭ জুন সাতদিনের লকডাউন শেষে সংক্রমণের হার অনেক কমে যাবে। যদি কাঙ্ক্ষিত ফলাফল না আসে, তখন হয়তো আমাদের কৌশল পরিবর্তন করতে হবে।’ তিনি নগরবাসীর সহযোগিতা কামনা করে বলেন, ‘এই শহরের সব মানুষকে আমি বিনয়ের সঙ্গে অনুরোধ করছি যে, এটা (লকডাউন) আপনাদের জন্য। আপনাদের জানমালের নিরাপত্তার জন্য সরকার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। সরকারের সিদ্ধান্তকে শ্রদ্ধা করুন, সহযোগিতা করুন এবং এই কয়েকটা দিন বাড়িতে থাকুন।’

মে মাসের মধ্যভাগে চাঁপাইনবাবগঞ্জে করোনাভাইরাসের ভারতীয় ধরনের সংক্রমণ শুরু হয়। তখন এই জেলায় লকডাউন আরোপ করা হলেও রাজশাহী, নওগাঁ ও নাটোর জেলায় লকডাউন ছিল না। সেই সুযোগে চাঁপাইনবাবগঞ্জের বাইরে সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়ে। এই পরিস্থিতিতে গত শুক্রবার বিকেল ৫টা থেকে রাজশাহী নগরীতে লকডাউন আরোপ করে প্রশাসন। যা চলবে আগামী ১৭ জুন মধ্যরাত পর্যন্ত।