শুক্রবার, ০৪ অক্টোবর ২০২৪, ১৯ আশ্বিন ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

সীমিত পরিসরে পবিত্র হজ, খুতবা পাঠ শুরু

বার্তাকন্ঠ ডেস্ক।। ‘লাব্বাইক, আল্লাহুম্মা লাব্বাইক। লাব্বাইক, লা শারিকা লাকা লাব্বাইক। ইন্নাল হামদা, ওয়াননি’মাতা, লাকা ওয়ালমুলক, লা শারিকা লাক…।’ এমন মধুর ধ্বনি-প্রতিধ্বনিতে পবিত্র আরাফাতের পাহাড়ঘেরা ময়দান ছাপিয়ে আকাশ-বাতাস মুখর ও প্রকম্পিত আজ।

করোনা মহামারির মধ্যে দ্বিতীয়বারের মতো আজ সীমিত পরিসরে অনুষ্ঠিত হচ্ছে পবিত্র হজ। গত বছরও হজ পালনের ক্ষেত্রে সীমাবদ্ধতা ছিল। এবারও লোকজনকে পরিপূর্ণ স্বাস্থ্যবিধি মেনে মাস্ক পরে সামাজিক দূরত্ব বজায় রেখেই হজ পালন করতে হচ্ছে।

সোমবার (১৯ জুলাই) দুপুরে আরাফাতের ময়দান সংলগ্ন মসজিদে নামিরা থেকে হজের খুতবা শুরু হয়। এ বছর হজে খুতবা দিচ্ছেন সৌদি আরবের বিশিষ্ট আলেম, মসজিদুল হারামের ইমাম ও খতিব শায়খ ড. বান্দার বিন আবদুল আজিজ বালিলা। তিনি সৌদি আরবের সর্বোচ্চ ওলামা পরিষদ এবং গবেষণা-মুফতি বোর্ডের সদস্য।

খুতবার শুরুতে তিনি আল্লাহতায়ালার প্রশংসা, রাসুলুল্লাহর (সা.) ওপর দরুদ পাঠ করেন। উপস্থিত হাজীদের সুস্থতা কামনা করেন। তাদের জন্য দোয়া করেন। শায়খ শায়খ ড. বান্দার বালিলা বলেন, তাওহিদ ও খতমে নবুওয়তের সাক্ষী ইসলামের মৌলিক রোকন। এছাড়াও নামাজ ও জাকাত ইসলামের গুরুত্বপূর্ণ বিধান। জাকাতের মাধ্যমে গরিব অসহায়দের ব্যাপক কল্যাণ সাধিত হয়।চলতি বছরও পবিত্র হজের আরবি খুতবা অন্যান্য ভাষার পাশাপাশি বাংলা ভাষায়ও অনুবাদ করা হচ্ছে। বাংলাসহ অন্য যে ভাষায় সম্প্রচার হবে হজের খুতবা তা হলো- ইংরেজি, ফ্রেন্স, তুর্কি, মালাইউ, চায়নিজ, উর্দু, ফার্সি, রাশিয়ান ও হাউসা।

হিজরি ক্যালেন্ডার অনুযায়ী, প্রতি বছর আরবি জিলহজ মাসের ৯ তারিখ আরাফাত ময়দানে হজের খুতবা অনুষ্ঠিত হয়। এই আরাফাতের ময়দানেই মহানবী হযরত মুহাম্মদ (স.) বিদায় হজের ভাষণ দিয়েছিলেন।

আরব নিউজ ও আল আরাবিয়ার খবরে বলা হয়েছে, করোনা ভাইরাস সংক্রমণের কারণে এ বছরও সৌদি আরবের বাইরে থেকে কোনো হজযাত্রীকে অংশ নিতে দেওয়া হচ্ছে না। সৌদি আরবে বাস করা দেশটির নাগরিক ও বিদেশি বাসিন্দাদের মধ্য থেকে ৬০ হাজার ব্যক্তি হজ করার অনুমতি পেয়েছেন। শুধু ১৫ থেকে ৬৫ বছর বয়সি সৌদি নাগরিক এবং দেশটিতে বাস করা ১৫০ দেশের নাগরিক হজ করার সুযোগ পেয়েছেন। সবাই দুই ডোজ ভ্যাকসিন নিয়েছেন। গতবারও বিধিনিষেধের মধ্যে ১ হাজার মুসলিমকে হজ পালনের সুযোগ দেওয়া হয়েছিল।

পাপমুক্তি আর আত্মশুদ্ধির আকুল বাসনায় ধর্মপ্রাণ মুসলমানরা ইসলামের অন্যতম প্রধান স্তম্ভ এই পবিত্র হজ পালন করেন। আজ সোমবার ফজরের সালাতের পরেই মিনা থেকে দলে দলে হাজিগণ উপস্থিত হন আরাফার ময়দানে। সফেদ-শুভ্র দুই খণ্ড কাপড়ের এহরাম পরিহিত হাজিরা সেখানে সূর্যাস্ত পর্যন্ত থাকবেন। আরাফাত ময়দানের মসজিদে নামিরায় জোহরের নামাজের আগে খুতবা পাঠ করেন মসজিদুল হারামের খতিব শায়খ ড. বান্দার বিন আবদুল আজিজ বালিলা। খুতবা পাঠ শেষে জোহর ও আসরের ওয়াক্তের মাঝামাঝি সময়ে হাজিরা জামাতের সঙ্গে কছর নামাজ আদায় করবেন।

সূর্যাস্ত পর্যন্ত তারা আরাফাতের ময়দানে অবস্থান করে আল্লাহ তাআলার জিকির-আসকার ও ইবাদতে মশগুল থাকবেন। এরপর মুজদালিফার উদ্দেশে আরাফার ময়দান ত্যাগ করবেন এবং মুজদালিফায় গিয়ে মাগরিব ও এশার নামাজ এশার ওয়াক্তে একত্রে পড়বেন এবং সমস্ত রাত অবস্থান করবেন। মিনায় জামরাতে নিক্ষেপ করার জন্য ৭০টি কংকর এখান থেকে সংগ্রহ করবেন। মুজদালিফায় ফজরের নামাজ পড়ে মিনার উদ্দেশে রওনা হবেন। ১০ জিলহজ মিনায় পৌঁছার পর হাজিদের পর্যায়ক্রমে চারটি কাজ সম্পন্ন করতে হয়।

যা মানতে হবে হাজিদের :এ বছর হাজিদের যে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে তার মধ্যে রয়েছে : হজের পুরো সময় হাজিরা নিরাপদ শারীরিক দূরত্ব রক্ষা ও ফেসমাস্ক পরার নিয়ম মেনে চলবেন। হাজিদের স্বাস্থ্য সুরক্ষা নিশ্চিত করতে মসজিদে নামিরায় প্রবেশ ও বের হওয়ার জন্য পৃথক রাস্তা নির্ধারণ করা হয়েছে। আগামীকাল মঙ্গলবার ঈদুল আজহার দিন মিনায় হাজির হয়ে তিনটি জামারায় শয়তানকে প্রতীকী পাথর নিক্ষেপকালে ভিড় এড়াতে নির্ধারিত দূরত্বে জায়গা চিহ্নিত করা হয়েছে, যেখানে দাঁড়িয়ে হাজিরা পাথর নিক্ষেপ করবেন।

খুতবা বাংলায় অনুবাদ করবেন বাংলাদেশের আলেম: গত বছর থেকে আরাফার দিনের খুতবা সরাসরি বাংলাসহ ১০টি ভাষায় অনুবাদ করা হয়। এ বছর হজের খুতবার বাংলা অনুবাদক হিসেবে মনোনীত হয়েছেন বাংলাদেশের কক্সবাজার জেলার মাওলানা আ ফ ম ওয়াহীদুর রহমান। বর্তমানে তিনি মক্কা ইসলামি সেন্টারে দাঈ হিসেবে কাজ করছেন।

জনপ্রিয়

ভূরুঙ্গামারীতে প্রা.বি.সহকারী শিক্ষকদের ১০ম গ্রেড বাস্তবায়নের দাবিতে মানববন্ধন

সীমিত পরিসরে পবিত্র হজ, খুতবা পাঠ শুরু

প্রকাশের সময় : ০৯:৫৯:২৩ অপরাহ্ন, সোমবার, ১৯ জুলাই ২০২১

বার্তাকন্ঠ ডেস্ক।। ‘লাব্বাইক, আল্লাহুম্মা লাব্বাইক। লাব্বাইক, লা শারিকা লাকা লাব্বাইক। ইন্নাল হামদা, ওয়াননি’মাতা, লাকা ওয়ালমুলক, লা শারিকা লাক…।’ এমন মধুর ধ্বনি-প্রতিধ্বনিতে পবিত্র আরাফাতের পাহাড়ঘেরা ময়দান ছাপিয়ে আকাশ-বাতাস মুখর ও প্রকম্পিত আজ।

করোনা মহামারির মধ্যে দ্বিতীয়বারের মতো আজ সীমিত পরিসরে অনুষ্ঠিত হচ্ছে পবিত্র হজ। গত বছরও হজ পালনের ক্ষেত্রে সীমাবদ্ধতা ছিল। এবারও লোকজনকে পরিপূর্ণ স্বাস্থ্যবিধি মেনে মাস্ক পরে সামাজিক দূরত্ব বজায় রেখেই হজ পালন করতে হচ্ছে।

সোমবার (১৯ জুলাই) দুপুরে আরাফাতের ময়দান সংলগ্ন মসজিদে নামিরা থেকে হজের খুতবা শুরু হয়। এ বছর হজে খুতবা দিচ্ছেন সৌদি আরবের বিশিষ্ট আলেম, মসজিদুল হারামের ইমাম ও খতিব শায়খ ড. বান্দার বিন আবদুল আজিজ বালিলা। তিনি সৌদি আরবের সর্বোচ্চ ওলামা পরিষদ এবং গবেষণা-মুফতি বোর্ডের সদস্য।

খুতবার শুরুতে তিনি আল্লাহতায়ালার প্রশংসা, রাসুলুল্লাহর (সা.) ওপর দরুদ পাঠ করেন। উপস্থিত হাজীদের সুস্থতা কামনা করেন। তাদের জন্য দোয়া করেন। শায়খ শায়খ ড. বান্দার বালিলা বলেন, তাওহিদ ও খতমে নবুওয়তের সাক্ষী ইসলামের মৌলিক রোকন। এছাড়াও নামাজ ও জাকাত ইসলামের গুরুত্বপূর্ণ বিধান। জাকাতের মাধ্যমে গরিব অসহায়দের ব্যাপক কল্যাণ সাধিত হয়।চলতি বছরও পবিত্র হজের আরবি খুতবা অন্যান্য ভাষার পাশাপাশি বাংলা ভাষায়ও অনুবাদ করা হচ্ছে। বাংলাসহ অন্য যে ভাষায় সম্প্রচার হবে হজের খুতবা তা হলো- ইংরেজি, ফ্রেন্স, তুর্কি, মালাইউ, চায়নিজ, উর্দু, ফার্সি, রাশিয়ান ও হাউসা।

হিজরি ক্যালেন্ডার অনুযায়ী, প্রতি বছর আরবি জিলহজ মাসের ৯ তারিখ আরাফাত ময়দানে হজের খুতবা অনুষ্ঠিত হয়। এই আরাফাতের ময়দানেই মহানবী হযরত মুহাম্মদ (স.) বিদায় হজের ভাষণ দিয়েছিলেন।

আরব নিউজ ও আল আরাবিয়ার খবরে বলা হয়েছে, করোনা ভাইরাস সংক্রমণের কারণে এ বছরও সৌদি আরবের বাইরে থেকে কোনো হজযাত্রীকে অংশ নিতে দেওয়া হচ্ছে না। সৌদি আরবে বাস করা দেশটির নাগরিক ও বিদেশি বাসিন্দাদের মধ্য থেকে ৬০ হাজার ব্যক্তি হজ করার অনুমতি পেয়েছেন। শুধু ১৫ থেকে ৬৫ বছর বয়সি সৌদি নাগরিক এবং দেশটিতে বাস করা ১৫০ দেশের নাগরিক হজ করার সুযোগ পেয়েছেন। সবাই দুই ডোজ ভ্যাকসিন নিয়েছেন। গতবারও বিধিনিষেধের মধ্যে ১ হাজার মুসলিমকে হজ পালনের সুযোগ দেওয়া হয়েছিল।

পাপমুক্তি আর আত্মশুদ্ধির আকুল বাসনায় ধর্মপ্রাণ মুসলমানরা ইসলামের অন্যতম প্রধান স্তম্ভ এই পবিত্র হজ পালন করেন। আজ সোমবার ফজরের সালাতের পরেই মিনা থেকে দলে দলে হাজিগণ উপস্থিত হন আরাফার ময়দানে। সফেদ-শুভ্র দুই খণ্ড কাপড়ের এহরাম পরিহিত হাজিরা সেখানে সূর্যাস্ত পর্যন্ত থাকবেন। আরাফাত ময়দানের মসজিদে নামিরায় জোহরের নামাজের আগে খুতবা পাঠ করেন মসজিদুল হারামের খতিব শায়খ ড. বান্দার বিন আবদুল আজিজ বালিলা। খুতবা পাঠ শেষে জোহর ও আসরের ওয়াক্তের মাঝামাঝি সময়ে হাজিরা জামাতের সঙ্গে কছর নামাজ আদায় করবেন।

সূর্যাস্ত পর্যন্ত তারা আরাফাতের ময়দানে অবস্থান করে আল্লাহ তাআলার জিকির-আসকার ও ইবাদতে মশগুল থাকবেন। এরপর মুজদালিফার উদ্দেশে আরাফার ময়দান ত্যাগ করবেন এবং মুজদালিফায় গিয়ে মাগরিব ও এশার নামাজ এশার ওয়াক্তে একত্রে পড়বেন এবং সমস্ত রাত অবস্থান করবেন। মিনায় জামরাতে নিক্ষেপ করার জন্য ৭০টি কংকর এখান থেকে সংগ্রহ করবেন। মুজদালিফায় ফজরের নামাজ পড়ে মিনার উদ্দেশে রওনা হবেন। ১০ জিলহজ মিনায় পৌঁছার পর হাজিদের পর্যায়ক্রমে চারটি কাজ সম্পন্ন করতে হয়।

যা মানতে হবে হাজিদের :এ বছর হাজিদের যে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে তার মধ্যে রয়েছে : হজের পুরো সময় হাজিরা নিরাপদ শারীরিক দূরত্ব রক্ষা ও ফেসমাস্ক পরার নিয়ম মেনে চলবেন। হাজিদের স্বাস্থ্য সুরক্ষা নিশ্চিত করতে মসজিদে নামিরায় প্রবেশ ও বের হওয়ার জন্য পৃথক রাস্তা নির্ধারণ করা হয়েছে। আগামীকাল মঙ্গলবার ঈদুল আজহার দিন মিনায় হাজির হয়ে তিনটি জামারায় শয়তানকে প্রতীকী পাথর নিক্ষেপকালে ভিড় এড়াতে নির্ধারিত দূরত্বে জায়গা চিহ্নিত করা হয়েছে, যেখানে দাঁড়িয়ে হাজিরা পাথর নিক্ষেপ করবেন।

খুতবা বাংলায় অনুবাদ করবেন বাংলাদেশের আলেম: গত বছর থেকে আরাফার দিনের খুতবা সরাসরি বাংলাসহ ১০টি ভাষায় অনুবাদ করা হয়। এ বছর হজের খুতবার বাংলা অনুবাদক হিসেবে মনোনীত হয়েছেন বাংলাদেশের কক্সবাজার জেলার মাওলানা আ ফ ম ওয়াহীদুর রহমান। বর্তমানে তিনি মক্কা ইসলামি সেন্টারে দাঈ হিসেবে কাজ করছেন।