বৃহস্পতিবার, ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০ বঙ্গাব্দ

করোনার বিরুদ্ধে লড়তে টিকার বিকল্প কোনো পথ নেই

ছবি: সংগৃহিত

আন্তর্জাতিক ডেস্ক ।।

করোনাভাইরাসের টিকা দুই ডোজ নেয়া থাকলেও ডেল্টা ভ্যারিয়েন্ট থেকে সুরক্ষিত নয়; এই ধরন আক্রমণ করতে পারে শরীরে। আবার ল্যানসেট পত্রিকায় প্রকাশিত একটি রিপোর্টে জানা গেছে, ফাইজার বা অ্যাস্ট্রাজেনেকার তির টিকার দুই ডোজ নেয়ার ছয় সপ্তাহের পর থেকেই শরীরে অ্যান্টিবডি কমতে শুরু করে। মাত্র ১০ সপ্তাহের মধ্যে তা ৫০ শতাংশের নিচে নেমে আসতে পারে।

এই রিপোর্টের ভিত্তিতে ব্রিটেনের ইউনিভার্সিটি কলেজ লন্ডনের একদল গবেষক জানিয়েছেন, এতে টিকার কার্যকারিতা প্রশ্নের মুখে পড়তে পারে। এত তাড়াতাড়ি শরীরে অ্যান্টিবডি কমে গেলে নতুন নতুন ভ্যারিয়েন্টের বিরুদ্ধে কিভাবে লড়াই করব আমরা।

যুক্তরাষ্ট্রের বিশেষজ্ঞরা বলছেন, করোনার বিরুদ্ধে লড়তে এখনো পর্যন্ত টিকার বিকল্প কোনো পথ নেই।

এদিকে বিশ্বের ইতিহাসে গত বছর সবচেয়ে বেশি সংখ্যক টিকা বিতরণ করা হয়েছে ও ইতিমধ্যেই কোভিড-১৯ এর ৩২০ কোটি ডোজ টিকা দেয়া হয়েছে। কিন্তু টিকার এই বিতরণ ভারসাম্যপূর্ণ নয়। কিছু দেশ যেখানে ইতিমধ্যেই তাদের ৭০ থেকে ৮০ শতাংশ জনগণকে টিকা দিয়ে দিয়েছে, সেখানে স্বল্প আয়ের বহু দেশ এখনো তাদেরকে দুই শতাংশ জনগণকেও টিকা দিতে পারেনি। করোনা মোকাবেলায় এখনো পর্যন্ত বিশ্বের মাত্র ৯% লোককে টিকা দেয়া হয়েছে। (বিবিসি, ৯ জুলাই)

এ বছরের গোড়ায় যুক্তরাষ্ট্রে জোর কদমে টিকাদান শুরু হলেও এই মুহূর্তে সেই গতিতে ভাঁটা পড়েছে। এখনো পর্যন্ত মোট জনসংখ্যার ৪৯.১ শতাংশের টিকা দেযা সম্পূর্ণ হয়েছে। আগামী চার থেকে ছয় সপ্তাহের মধ্যে তৃতীয় ঢেউ আছড়ে পড়ার আশঙ্কা রয়েছে দেশটিতে।

এরই মধ্যে দেশটিতে ডেল্টা ধরনের সংক্রমণ বৃদ্ধি পাওয়ায় স্বাস্থ্য সতর্কতা নির্দেশনায় পরিবর্তন আনা হয়েছে। গতকাল মঙ্গলবার (২৭ জুলাই) দেশটির সেন্টারস ফর ডিজিজ কন্ট্রোল অ্যান্ড প্রিভেনশন (সিডিসি) এক নির্দেশনায় আবার মাস্ক ব্যবহার করতে বলেছে। ইনডোরে, বিশেষ করে জনসমাগম হলে মাস্ক পরতে তারা আবার নির্দেশনা দিয়েছে। যেসব এলাকায় ডেল্টার সংক্রমণ বেশি, সেসব এলাকায় টিকা গ্রহণ করেছেন বা টিকা গ্রহণ করেননি- এমন সব লোককেই মাস্ক পরার পরামর্শ দেয়া হয়েছে।

করোনা সংক্রমণের হার কিছুটা কমতেই ইউরোপের একাধিক দেশ তড়িঘড়ি করে  বিধিনিষেধ শিথিল করার উদ্যোগ নিয়েছিল। বিশেষ করে আরো ছোঁয়াচে ডেল্টা ভ্যারিয়েন্টের হুমকি সত্ত্বেও সেই বিপদ দূরে রাখতে যথেষ্ট পদক্ষেপ নেয়া হয়নি। ফলে সংক্রমণের হার আবার দ্রুত বেড়ে চলেছে। পরিস্থিতি সামলাতে আবার কিছু বিধিনিষেধ চালু করতে বাধ্য হচ্ছে সরকার ও প্রশাসন। গ্রীষ্মের ছুটির মরসুমে এমন বিপদ দুশ্চিন্তা বাড়িয়ে তুলছে। পর্তুগাল, স্পেন ও সাইপ্রাসের মতো দেশে পর্যটনের সুযোগ আবার খুলে যাবার পর সংক্রমণের হার দ্রুত বেড়ে গেছে।

এমন পরিস্থিতিতে অনেকেই এখনো করোনার টিকা নিতে ইচ্ছুক না। যা করোনার বিস্তার বন্ধ করার প্রয়াসকে হুমকিতে ফেলেছে।

বিশেষজ্ঞদের মতে, বর্তমান সময়ের চেয়ে চার গুণ বাড়তে পারে সংক্রমণ। অথচ বারবার বলা সত্ত্বেও মার্কিন নাগরিকদের একটা বড় অংশ টিকা নিতে চাইছেন না। তাদের কারণেই তৃতীয় ঢেউয়ে ডেল্টা সংক্রমণ হুহু করে বাড়বে বলে উদ্বেগ জানান সিডিসির সাবকে ডিরেক্টর টম ফ্রেডেন।

পেনসিলভানিয়ার বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক পল অফিট বলেন, অন্তত ২৫ থেকে ৩০ শতাংশ মার্কিন নাগরিক টিকা নিতে আগ্রহী নন। তাদের কারণেই সংক্রমণ বাড়ছে। তাদের কারণেই নতুন নতুন ভ্যারিয়েন্ট তৈরি হচ্ছে যেগুলো ভ্যাকসিনের ক্ষমতা কমিয়ে দিচ্ছে।

আরেক বিশেষজ্ঞ লেনা ওয়েন বলেন, যারা টিকা নিতে অনিচ্ছুক তাদের জন্যেই ভ্যাকসিন নিয়েও মূল্য চোকাচ্ছেন বাকিরা। অজান্তেই তারা আশপাশের টিকা না নেয়া লোকেদের থেকে সংক্রমিত হয়ে পড়ছেন।

তার মতে, যারা টিকা নিতে চাইছেন না, তারা নিজেদের পাশাপাশি অন্যের জীবনেরও বিপদ ডেকে আনছেন। মহামারিকে ত্বরান্বিত করছেন।

টিকা নেয়ার বিষয়ে প্রথম থেকেই জোরাজুরির বিপক্ষে ছিল মার্কিন সরকার। কিন্তু পরিস্থিতির বিচার করে, স্বাস্থ্যকর্মী ও চিকিৎসকদের ক্ষেত্রে টিকা বাধ্যতামূলক করার কথা ভাবছে তারা।

করোনার সংক্রমণে সবচেয়ে বেশি আক্রান্ত ও মৃত্যুর দেশ যুক্তরাষ্ট্র। গত মে মাসে সংক্রমণের নিম্নহার বিবেচনায় দেশটিতে মাস্ক পরার ক্ষেত্রে বাধ্যবাধকতা শিথিল করা হয়েছিল। সিডিসি তখন বলেছিল, টিকা গ্রহণ করা হয়ে গেছে, এমন লোকজনের ঘরে মাস্ক পরার প্রয়োজন নেই। ডেল্টা ধরনের সংক্রমণের পরিপ্রেক্ষিতে যুক্তরাষ্ট্রের স্বাস্থ্য সতর্কতায় এখন পরিবর্তন আনা হলো।

সিডিসি স্থানীয় কর্তৃপক্ষকে স্কুলগুলোয় স্বাস্থ্য নির্দেশনা কড়াকড়ি করার পরামর্শ দিয়েছে। স্কুলের অভ্যন্তরে শিক্ষক, শিক্ষার্থী ও পরিদর্শনে যাওয়া লোকজনকে মাস্ক পরা বাধ্যতামূলক করার পরামর্শ দেয়া হয়েছে। টিকা গ্রহণ করা, না করা- নির্বিশেষে সবাইকে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে মাস্ক পরার জন্য বলা হয়েছে।

যুক্তরাষ্ট্রের দক্ষিণ ও পশ্চিমাঞ্চলের অঙ্গরাজ্যগুলোয় ব্যাপকভাবে ডেল্টা ধরনের সংক্রমণ হচ্ছে। অ্যারিজোনা ও ওয়াইওমিংয়ে নতুন সংক্রমণের হারকে উচ্চমাত্রার বলে চিহ্নিত করেছে সিডিসি।

লুইজিয়ানা, অ্যালাবামা ও মিসৌরির হাসপাতালগুলোর অবস্থা খুবই নাজুক। এসব অঙ্গরাজ্যে নিউইয়র্কের মতো হাসপাতাল ও পর্যাপ্ত স্বাস্থ্যকর্মী নেই। মার্কিন জনস্বাস্থ্য বিভাগ জানিয়েছে, এখন হাসপাতালে ভর্তি হওয়া লোকজনের অধিকাংশই ৩০ থেকে ৬০ বছর বয়সী। তাদের মধ্যে ৯৫ শতাংশ টিকা নেননি।

টিকা দয়োর দৌড়ে প্রথম দিকে যুক্তরাষ্ট্র, ব্রিটেন, ইসরায়েলের তুলনায় পিছিয়ে ছিল ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) দেশগুলো। তবে  ইইউ প্রধান উরসুলা ফন ডের লেয়েন গতকাল জানিয়েছেন, ইইউ গোষ্ঠীর দেশগুলোতে প্রায় ৭০ শতাংশ প্রাপ্তবয়স্ক অন্তত এক ডোজ টিকা পেয়েছেন। ১৮ বছরের উর্ধ্বে ৫৭ শতাংশের টিকাকরণ সম্পূর্ণ হয়েছে।

ডেল্টা স্ট্রেনকে রুখতে আগামী দিনেও টিকাকরণের এই গতি ধরে রাখায় প্রয়োজন বলে মন্তব্য করেছেন তিনি।

কিন্তু এখনো ইউরোপের জনসংখ্যার একটা উল্লেখযোগ্য অংশ নানা কারণে করোনা টিকা পায়নি। উল্লেখ্য এখনো পর্যন্ত ইউরোপের একমাত্র দেশ হিসেবে শুধু ইতালি স্বাস্থ্যকর্মীদের জন্য করোনা টিকা বাধ্যতামূলক করেছিল।  ফ্রান্স ও গ্রিসও এখন সেই পথে এগোচ্ছে।

এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে এখন সংক্রমণের হার সবচেয়ে বেশি ইন্দোনেশিয়ায়। দেশটিতে সংক্রমণ বেড়ে যাওয়ায় সেখানকার হাসপাতালগুলোতে অক্সিজেনের সংকট প্রকট হয়েছে।

এশিয়ায় যেমন সংক্রমণ বাড়ছে, সেই তুলনায় করোনার টিকা দেয়ার হার কম। ফলে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংস্থা।

করোনার বিরুদ্ধে লড়তে টিকার বিকল্প কোনো পথ নেই

প্রকাশের সময় : ০২:৪০:১৪ অপরাহ্ন, বুধবার, ২৮ জুলাই ২০২১

আন্তর্জাতিক ডেস্ক ।।

করোনাভাইরাসের টিকা দুই ডোজ নেয়া থাকলেও ডেল্টা ভ্যারিয়েন্ট থেকে সুরক্ষিত নয়; এই ধরন আক্রমণ করতে পারে শরীরে। আবার ল্যানসেট পত্রিকায় প্রকাশিত একটি রিপোর্টে জানা গেছে, ফাইজার বা অ্যাস্ট্রাজেনেকার তির টিকার দুই ডোজ নেয়ার ছয় সপ্তাহের পর থেকেই শরীরে অ্যান্টিবডি কমতে শুরু করে। মাত্র ১০ সপ্তাহের মধ্যে তা ৫০ শতাংশের নিচে নেমে আসতে পারে।

এই রিপোর্টের ভিত্তিতে ব্রিটেনের ইউনিভার্সিটি কলেজ লন্ডনের একদল গবেষক জানিয়েছেন, এতে টিকার কার্যকারিতা প্রশ্নের মুখে পড়তে পারে। এত তাড়াতাড়ি শরীরে অ্যান্টিবডি কমে গেলে নতুন নতুন ভ্যারিয়েন্টের বিরুদ্ধে কিভাবে লড়াই করব আমরা।

যুক্তরাষ্ট্রের বিশেষজ্ঞরা বলছেন, করোনার বিরুদ্ধে লড়তে এখনো পর্যন্ত টিকার বিকল্প কোনো পথ নেই।

এদিকে বিশ্বের ইতিহাসে গত বছর সবচেয়ে বেশি সংখ্যক টিকা বিতরণ করা হয়েছে ও ইতিমধ্যেই কোভিড-১৯ এর ৩২০ কোটি ডোজ টিকা দেয়া হয়েছে। কিন্তু টিকার এই বিতরণ ভারসাম্যপূর্ণ নয়। কিছু দেশ যেখানে ইতিমধ্যেই তাদের ৭০ থেকে ৮০ শতাংশ জনগণকে টিকা দিয়ে দিয়েছে, সেখানে স্বল্প আয়ের বহু দেশ এখনো তাদেরকে দুই শতাংশ জনগণকেও টিকা দিতে পারেনি। করোনা মোকাবেলায় এখনো পর্যন্ত বিশ্বের মাত্র ৯% লোককে টিকা দেয়া হয়েছে। (বিবিসি, ৯ জুলাই)

এ বছরের গোড়ায় যুক্তরাষ্ট্রে জোর কদমে টিকাদান শুরু হলেও এই মুহূর্তে সেই গতিতে ভাঁটা পড়েছে। এখনো পর্যন্ত মোট জনসংখ্যার ৪৯.১ শতাংশের টিকা দেযা সম্পূর্ণ হয়েছে। আগামী চার থেকে ছয় সপ্তাহের মধ্যে তৃতীয় ঢেউ আছড়ে পড়ার আশঙ্কা রয়েছে দেশটিতে।

এরই মধ্যে দেশটিতে ডেল্টা ধরনের সংক্রমণ বৃদ্ধি পাওয়ায় স্বাস্থ্য সতর্কতা নির্দেশনায় পরিবর্তন আনা হয়েছে। গতকাল মঙ্গলবার (২৭ জুলাই) দেশটির সেন্টারস ফর ডিজিজ কন্ট্রোল অ্যান্ড প্রিভেনশন (সিডিসি) এক নির্দেশনায় আবার মাস্ক ব্যবহার করতে বলেছে। ইনডোরে, বিশেষ করে জনসমাগম হলে মাস্ক পরতে তারা আবার নির্দেশনা দিয়েছে। যেসব এলাকায় ডেল্টার সংক্রমণ বেশি, সেসব এলাকায় টিকা গ্রহণ করেছেন বা টিকা গ্রহণ করেননি- এমন সব লোককেই মাস্ক পরার পরামর্শ দেয়া হয়েছে।

করোনা সংক্রমণের হার কিছুটা কমতেই ইউরোপের একাধিক দেশ তড়িঘড়ি করে  বিধিনিষেধ শিথিল করার উদ্যোগ নিয়েছিল। বিশেষ করে আরো ছোঁয়াচে ডেল্টা ভ্যারিয়েন্টের হুমকি সত্ত্বেও সেই বিপদ দূরে রাখতে যথেষ্ট পদক্ষেপ নেয়া হয়নি। ফলে সংক্রমণের হার আবার দ্রুত বেড়ে চলেছে। পরিস্থিতি সামলাতে আবার কিছু বিধিনিষেধ চালু করতে বাধ্য হচ্ছে সরকার ও প্রশাসন। গ্রীষ্মের ছুটির মরসুমে এমন বিপদ দুশ্চিন্তা বাড়িয়ে তুলছে। পর্তুগাল, স্পেন ও সাইপ্রাসের মতো দেশে পর্যটনের সুযোগ আবার খুলে যাবার পর সংক্রমণের হার দ্রুত বেড়ে গেছে।

এমন পরিস্থিতিতে অনেকেই এখনো করোনার টিকা নিতে ইচ্ছুক না। যা করোনার বিস্তার বন্ধ করার প্রয়াসকে হুমকিতে ফেলেছে।

বিশেষজ্ঞদের মতে, বর্তমান সময়ের চেয়ে চার গুণ বাড়তে পারে সংক্রমণ। অথচ বারবার বলা সত্ত্বেও মার্কিন নাগরিকদের একটা বড় অংশ টিকা নিতে চাইছেন না। তাদের কারণেই তৃতীয় ঢেউয়ে ডেল্টা সংক্রমণ হুহু করে বাড়বে বলে উদ্বেগ জানান সিডিসির সাবকে ডিরেক্টর টম ফ্রেডেন।

পেনসিলভানিয়ার বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক পল অফিট বলেন, অন্তত ২৫ থেকে ৩০ শতাংশ মার্কিন নাগরিক টিকা নিতে আগ্রহী নন। তাদের কারণেই সংক্রমণ বাড়ছে। তাদের কারণেই নতুন নতুন ভ্যারিয়েন্ট তৈরি হচ্ছে যেগুলো ভ্যাকসিনের ক্ষমতা কমিয়ে দিচ্ছে।

আরেক বিশেষজ্ঞ লেনা ওয়েন বলেন, যারা টিকা নিতে অনিচ্ছুক তাদের জন্যেই ভ্যাকসিন নিয়েও মূল্য চোকাচ্ছেন বাকিরা। অজান্তেই তারা আশপাশের টিকা না নেয়া লোকেদের থেকে সংক্রমিত হয়ে পড়ছেন।

তার মতে, যারা টিকা নিতে চাইছেন না, তারা নিজেদের পাশাপাশি অন্যের জীবনেরও বিপদ ডেকে আনছেন। মহামারিকে ত্বরান্বিত করছেন।

টিকা নেয়ার বিষয়ে প্রথম থেকেই জোরাজুরির বিপক্ষে ছিল মার্কিন সরকার। কিন্তু পরিস্থিতির বিচার করে, স্বাস্থ্যকর্মী ও চিকিৎসকদের ক্ষেত্রে টিকা বাধ্যতামূলক করার কথা ভাবছে তারা।

করোনার সংক্রমণে সবচেয়ে বেশি আক্রান্ত ও মৃত্যুর দেশ যুক্তরাষ্ট্র। গত মে মাসে সংক্রমণের নিম্নহার বিবেচনায় দেশটিতে মাস্ক পরার ক্ষেত্রে বাধ্যবাধকতা শিথিল করা হয়েছিল। সিডিসি তখন বলেছিল, টিকা গ্রহণ করা হয়ে গেছে, এমন লোকজনের ঘরে মাস্ক পরার প্রয়োজন নেই। ডেল্টা ধরনের সংক্রমণের পরিপ্রেক্ষিতে যুক্তরাষ্ট্রের স্বাস্থ্য সতর্কতায় এখন পরিবর্তন আনা হলো।

সিডিসি স্থানীয় কর্তৃপক্ষকে স্কুলগুলোয় স্বাস্থ্য নির্দেশনা কড়াকড়ি করার পরামর্শ দিয়েছে। স্কুলের অভ্যন্তরে শিক্ষক, শিক্ষার্থী ও পরিদর্শনে যাওয়া লোকজনকে মাস্ক পরা বাধ্যতামূলক করার পরামর্শ দেয়া হয়েছে। টিকা গ্রহণ করা, না করা- নির্বিশেষে সবাইকে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে মাস্ক পরার জন্য বলা হয়েছে।

যুক্তরাষ্ট্রের দক্ষিণ ও পশ্চিমাঞ্চলের অঙ্গরাজ্যগুলোয় ব্যাপকভাবে ডেল্টা ধরনের সংক্রমণ হচ্ছে। অ্যারিজোনা ও ওয়াইওমিংয়ে নতুন সংক্রমণের হারকে উচ্চমাত্রার বলে চিহ্নিত করেছে সিডিসি।

লুইজিয়ানা, অ্যালাবামা ও মিসৌরির হাসপাতালগুলোর অবস্থা খুবই নাজুক। এসব অঙ্গরাজ্যে নিউইয়র্কের মতো হাসপাতাল ও পর্যাপ্ত স্বাস্থ্যকর্মী নেই। মার্কিন জনস্বাস্থ্য বিভাগ জানিয়েছে, এখন হাসপাতালে ভর্তি হওয়া লোকজনের অধিকাংশই ৩০ থেকে ৬০ বছর বয়সী। তাদের মধ্যে ৯৫ শতাংশ টিকা নেননি।

টিকা দয়োর দৌড়ে প্রথম দিকে যুক্তরাষ্ট্র, ব্রিটেন, ইসরায়েলের তুলনায় পিছিয়ে ছিল ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) দেশগুলো। তবে  ইইউ প্রধান উরসুলা ফন ডের লেয়েন গতকাল জানিয়েছেন, ইইউ গোষ্ঠীর দেশগুলোতে প্রায় ৭০ শতাংশ প্রাপ্তবয়স্ক অন্তত এক ডোজ টিকা পেয়েছেন। ১৮ বছরের উর্ধ্বে ৫৭ শতাংশের টিকাকরণ সম্পূর্ণ হয়েছে।

ডেল্টা স্ট্রেনকে রুখতে আগামী দিনেও টিকাকরণের এই গতি ধরে রাখায় প্রয়োজন বলে মন্তব্য করেছেন তিনি।

কিন্তু এখনো ইউরোপের জনসংখ্যার একটা উল্লেখযোগ্য অংশ নানা কারণে করোনা টিকা পায়নি। উল্লেখ্য এখনো পর্যন্ত ইউরোপের একমাত্র দেশ হিসেবে শুধু ইতালি স্বাস্থ্যকর্মীদের জন্য করোনা টিকা বাধ্যতামূলক করেছিল।  ফ্রান্স ও গ্রিসও এখন সেই পথে এগোচ্ছে।

এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে এখন সংক্রমণের হার সবচেয়ে বেশি ইন্দোনেশিয়ায়। দেশটিতে সংক্রমণ বেড়ে যাওয়ায় সেখানকার হাসপাতালগুলোতে অক্সিজেনের সংকট প্রকট হয়েছে।

এশিয়ায় যেমন সংক্রমণ বাড়ছে, সেই তুলনায় করোনার টিকা দেয়ার হার কম। ফলে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংস্থা।