শনিবার, ১৪ জুন ২০২৫, ৩১ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

কেমন ছিল রাসূল সল্লাল্লহু আ’লাইহি ওয়া সাল্লাম এর আখলাক

হাফেজ মাওঃ মেহেদী হাসান।।

হযরত আ’য়েশাহ রদিয়াল্লহু আ’নহা এর বর্ণনা

সা’দ ইবনে হিশাম রহমাতুল্লহ আ’লাইহি বলেন, আমি উম্মুল মুমিনীন আ’য়েশাহ রাদিয়াল্লহু আ’নহা এর নিকট বলিলাম, আমাকে রাসুলুল্লাহ সল্লাল্লহু আ’লাইহি ওয়া সাল্লাম এর আখলাক সম্পর্কে বলুন। তিনি বলিলেন তুমি কি কুরআন পড় না? আমি বলিলাম নিশ্চয়ই! তিনি বলিলেন, তাঁহার চরিত্র ছিল কুরআন। (অর্থাৎ কুরআনে বর্ণিত চরিত্রের ন্যায় তাঁহার চরিত্র ছিল।) অপর রেওয়ায়েতে অতিরিক্ত ইহাও বর্ণিত হইয়াছে যে, হযরত কাতাদাহ রাদিয়াল্লাহু আ’নহু বলিয়াছেন, আর কুরআন সর্বোত্তম মানব চরিত্র বর্ণনা করিয়াছে। (মুসলিম, ইবনে সা’দ)

হযরত আবু দারদা রাদিয়াল্লাহু আ’নহু বলেন, আমি হযরত আ’য়েশাহ রাদিয়াল্লাহু আ’নহা কে রাসূলুল্লাহ সল্লাল্লহু আ’লাইহি ওয়া সাল্লাম এর আখলাক সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করিলাম। তিনি বলিলেন তাঁহার আখলাক ছিল কুরআন। কুরআন যাহাতে সন্তুষ্ট তিনি তাহাতে সন্তুষ্ট হইতেন, কুরআন যাহাতে অসন্তুষ্ট তিনি তাহাতে অসন্তুষ্ট হইতেন।

যায়েদ ইবনে বাবনুস রহমাতুল্লাহি আ’লাইহি বলেন, আমরা হযরত আ’য়েশাহ রদিয়াল্লহু আ’নহা কে জিজ্ঞাসা করিলাম, হে উম্মুল মুমিনীন, রাসূলুল্লাহ সল্লাল্লহু আ’লাইহি ওয়া সাল্লাম এর আখলাক কেমন ছিল। তিনি উপরোক্ত জবাব দিলেন। অতঃপর বলিলেন, তুমি কি সূরা মুমিনীন পড়তে পার? قدْ افْلح الْمؤمنوْن হইতে দশ আয়াত পড়। রাসূলুল্লাহ সল্লাল্লহু আ’লাইহি ওয়া সাল্লাম এর আখলাক এরূপ ছিল। (বাইহাকী)

হযরত উরিইয়াহ রাদিয়াল্লাহু আ’নহু হইতে বর্ণিত আছে যে, হযরত আ’য়েশাহ রাদিয়াল্লাহু আ’নহা বলিয়াছেন, রাসূলুল্লাহ সল্লাল্লহু আ’লাইহি ওয়া সাল্লাম অপেক্ষা উত্তম চরিত্রের অধিকারী আর কেহ ছিল না। তাঁহার সাহাবা বা তাঁহার পরিবারের যে কেহ তাঁহাকে ডাকতেন, তিনি উত্তরে বলিতেন, লাব্বাইক। এই জন্যই আল্লাহ তায়া’লা (তাঁহার প্রশংসায় এই আয়াত) নাযিল করিয়াছেন– وانّك لعلى خلقٍ عظيْمٍ আপনি অবশ্যই মহান চরিত্রের অধিকারী। (আবু নুআঈম)

বানু সারাতের এক ব্যক্তি বলেন, আমি হযরত আ’য়েশাহ রাদিয়াল্লাহু আ’নহা কে বলিলাম, আমাকে রাসূলুল্লাহ সল্লাল্লহু আ’লাইহি ওয়া সাল্লাম এর আখলাক সম্পর্কে বলুন। তিনি বলিলেন তুমি কি কুরআন পড় না? আল্লহ তায়া’লা তাঁহার সম্পর্কে বলিয়াছেন, নিঃসন্দেহে আপনি মহান চরিত্রের উপর আছেন। তারপর বলিলেন, একবার রসুলুল্লহ সল্লাল্লহু আ’লাইহি ওয়া সাল্লাম তাঁহার সাহাবাহ রদিয়াল্লহু আ’নহুম দের সহিত ছিলেন। আমি তাঁহার জন্য কিছু খানা তৈয়ার করিলাম, হযরত হাফসা রাদিয়াল্লাহু আ’নহাও কিছু খানা তৈয়ার করিলেন। কিন্তু তিনি আমার পূর্বেই তাহা পাঠাইয়া দিলেন। আমি বাঁদীকে বলিলাম, যাও, তাঁহার পেয়ালাটি উল্টাইয়া দাও। সে পেয়ালাটি রাসূলুল্লাহ সল্লাল্লহু আ’লাইহি ওয়া সাল্লাম এর সামনে রাখিতে যাইয়া উল্টাইয়া দিল। সুতরাং পেয়ালা উল্টাইয়া খানাগুলি মাটিতে ছড়াইয়া গেল। নবী করীম সল্লাল্লহু আ’লাইহি ওয়া সাল্লাম খানাগুলি একত্রিত করিলেন এবং তাঁহারা সকলে উহা খাইলেন। তারপর আমি আমার পেয়ালা পাঠাইলাম। নবী করীম সল্লাল্লহু আ’লাইহি ওয়া সাল্লাম উহা হযরত হাফসা রদিয়াল্লহু আ’নহা কে দিয়া বলিলেন, তোমাদের পাত্রের পরিবর্তে এই পাত্র লও এবং ইহাতে যাহা আছে তাহা খাও। হযরত আ’য়েশাহ রদিয়াল্লহু আ’নহা বলিলেন, কিন্তু ইহাতে রাসূলুল্লাহ সল্লাল্লহু আ’লাইহি ওয়া সাল্লাম এর চেহারা মুবারকে আমি কোন প্রকার ভাব পরিবর্তন হইতে দেখি নাই।

হায়াতুস সাহাবাহ ৪র্থ খন্ড (দারুল কিতাব, মে ২০০৩) পৃষ্ঠা ২-৩

জনপ্রিয়

ভাড়া গাড়ীতে প্রেসের স্টিকার, ১৫ হাজার টাকা জরিমানা

কেমন ছিল রাসূল সল্লাল্লহু আ’লাইহি ওয়া সাল্লাম এর আখলাক

প্রকাশের সময় : ০৫:০৭:৩৬ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ২৪ অগাস্ট ২০২১

হাফেজ মাওঃ মেহেদী হাসান।।

হযরত আ’য়েশাহ রদিয়াল্লহু আ’নহা এর বর্ণনা

সা’দ ইবনে হিশাম রহমাতুল্লহ আ’লাইহি বলেন, আমি উম্মুল মুমিনীন আ’য়েশাহ রাদিয়াল্লহু আ’নহা এর নিকট বলিলাম, আমাকে রাসুলুল্লাহ সল্লাল্লহু আ’লাইহি ওয়া সাল্লাম এর আখলাক সম্পর্কে বলুন। তিনি বলিলেন তুমি কি কুরআন পড় না? আমি বলিলাম নিশ্চয়ই! তিনি বলিলেন, তাঁহার চরিত্র ছিল কুরআন। (অর্থাৎ কুরআনে বর্ণিত চরিত্রের ন্যায় তাঁহার চরিত্র ছিল।) অপর রেওয়ায়েতে অতিরিক্ত ইহাও বর্ণিত হইয়াছে যে, হযরত কাতাদাহ রাদিয়াল্লাহু আ’নহু বলিয়াছেন, আর কুরআন সর্বোত্তম মানব চরিত্র বর্ণনা করিয়াছে। (মুসলিম, ইবনে সা’দ)

হযরত আবু দারদা রাদিয়াল্লাহু আ’নহু বলেন, আমি হযরত আ’য়েশাহ রাদিয়াল্লাহু আ’নহা কে রাসূলুল্লাহ সল্লাল্লহু আ’লাইহি ওয়া সাল্লাম এর আখলাক সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করিলাম। তিনি বলিলেন তাঁহার আখলাক ছিল কুরআন। কুরআন যাহাতে সন্তুষ্ট তিনি তাহাতে সন্তুষ্ট হইতেন, কুরআন যাহাতে অসন্তুষ্ট তিনি তাহাতে অসন্তুষ্ট হইতেন।

যায়েদ ইবনে বাবনুস রহমাতুল্লাহি আ’লাইহি বলেন, আমরা হযরত আ’য়েশাহ রদিয়াল্লহু আ’নহা কে জিজ্ঞাসা করিলাম, হে উম্মুল মুমিনীন, রাসূলুল্লাহ সল্লাল্লহু আ’লাইহি ওয়া সাল্লাম এর আখলাক কেমন ছিল। তিনি উপরোক্ত জবাব দিলেন। অতঃপর বলিলেন, তুমি কি সূরা মুমিনীন পড়তে পার? قدْ افْلح الْمؤمنوْن হইতে দশ আয়াত পড়। রাসূলুল্লাহ সল্লাল্লহু আ’লাইহি ওয়া সাল্লাম এর আখলাক এরূপ ছিল। (বাইহাকী)

হযরত উরিইয়াহ রাদিয়াল্লাহু আ’নহু হইতে বর্ণিত আছে যে, হযরত আ’য়েশাহ রাদিয়াল্লাহু আ’নহা বলিয়াছেন, রাসূলুল্লাহ সল্লাল্লহু আ’লাইহি ওয়া সাল্লাম অপেক্ষা উত্তম চরিত্রের অধিকারী আর কেহ ছিল না। তাঁহার সাহাবা বা তাঁহার পরিবারের যে কেহ তাঁহাকে ডাকতেন, তিনি উত্তরে বলিতেন, লাব্বাইক। এই জন্যই আল্লাহ তায়া’লা (তাঁহার প্রশংসায় এই আয়াত) নাযিল করিয়াছেন– وانّك لعلى خلقٍ عظيْمٍ আপনি অবশ্যই মহান চরিত্রের অধিকারী। (আবু নুআঈম)

বানু সারাতের এক ব্যক্তি বলেন, আমি হযরত আ’য়েশাহ রাদিয়াল্লাহু আ’নহা কে বলিলাম, আমাকে রাসূলুল্লাহ সল্লাল্লহু আ’লাইহি ওয়া সাল্লাম এর আখলাক সম্পর্কে বলুন। তিনি বলিলেন তুমি কি কুরআন পড় না? আল্লহ তায়া’লা তাঁহার সম্পর্কে বলিয়াছেন, নিঃসন্দেহে আপনি মহান চরিত্রের উপর আছেন। তারপর বলিলেন, একবার রসুলুল্লহ সল্লাল্লহু আ’লাইহি ওয়া সাল্লাম তাঁহার সাহাবাহ রদিয়াল্লহু আ’নহুম দের সহিত ছিলেন। আমি তাঁহার জন্য কিছু খানা তৈয়ার করিলাম, হযরত হাফসা রাদিয়াল্লাহু আ’নহাও কিছু খানা তৈয়ার করিলেন। কিন্তু তিনি আমার পূর্বেই তাহা পাঠাইয়া দিলেন। আমি বাঁদীকে বলিলাম, যাও, তাঁহার পেয়ালাটি উল্টাইয়া দাও। সে পেয়ালাটি রাসূলুল্লাহ সল্লাল্লহু আ’লাইহি ওয়া সাল্লাম এর সামনে রাখিতে যাইয়া উল্টাইয়া দিল। সুতরাং পেয়ালা উল্টাইয়া খানাগুলি মাটিতে ছড়াইয়া গেল। নবী করীম সল্লাল্লহু আ’লাইহি ওয়া সাল্লাম খানাগুলি একত্রিত করিলেন এবং তাঁহারা সকলে উহা খাইলেন। তারপর আমি আমার পেয়ালা পাঠাইলাম। নবী করীম সল্লাল্লহু আ’লাইহি ওয়া সাল্লাম উহা হযরত হাফসা রদিয়াল্লহু আ’নহা কে দিয়া বলিলেন, তোমাদের পাত্রের পরিবর্তে এই পাত্র লও এবং ইহাতে যাহা আছে তাহা খাও। হযরত আ’য়েশাহ রদিয়াল্লহু আ’নহা বলিলেন, কিন্তু ইহাতে রাসূলুল্লাহ সল্লাল্লহু আ’লাইহি ওয়া সাল্লাম এর চেহারা মুবারকে আমি কোন প্রকার ভাব পরিবর্তন হইতে দেখি নাই।

হায়াতুস সাহাবাহ ৪র্থ খন্ড (দারুল কিতাব, মে ২০০৩) পৃষ্ঠা ২-৩