শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০ বঙ্গাব্দ

আলোর দূষণে কমছে পোকামাকড়, বিপর্যয়ের শঙ্কা

ছবি: সংগৃহীত

বার্তাকণ্ঠ ডেস্ক ।।

আজকাল বিশ্বের খুব কম জায়গায় রাতের আকাশের নির্মল রূপ দেখা যায়। আলোর দূষণের কারণে সেই সুযোগ কমেই চলেছে। অথচ আরও ভেবেচিন্তে আলোর ব্যবহার করলেই সেই দূষণের মাত্রা কমানো সম্ভব।

আইফেল জাতীয় পার্কের রাতের আকাশ সত্যি খুব স্পষ্ট। হারাল্ড বার্ডেনহাগেন সেখানে একটি অবজারভেটরি বা মানমন্দির গড়ে তুলেছেন।

মানমন্দির (অবজারভেটরি) পৃথিবী ও মহাশূন্য পর্যবেক্ষণ এবং পরিমাপ গ্রহণের জন্য বিশেষভাবে তৈরি অত্যাধুনিক যন্ত্রপাতিসমৃদ্ধ গবেষণাগার। জ্যোতির্বিজ্ঞান, জ্যোতিষশাস্ত্র, জলবায়ুবিজ্ঞান, ভূতত্ত্ব ইত্যাদি বিষয়ের গবেষণার জন্যই সাধারণত মানমন্দির স্থাপন করা হয়ে থাকে।
কোলোন শহরের জ্যোতির্বিজ্ঞানী হারাল্ড বার্ডেনহাগেন লক্ষ্য করছেন যে, রাতের আকাশ ক্রমশ উজ্জ্বল হয়ে উঠছে। তিনি বলেন, আমাদের একেবারেই কোনো আলোর দূষণ না থাকলে অর্থাৎ একেবারে স্বাভাবিক রাতের আকাশ থাকলে আমরা সম্ভবত তিন থেকে সাড়ে চার হাজার নক্ষত্র দেখতে পেতাম। ইউরোপে কোথাও সেটা আর সম্ভব নয়। এখানে রাতে বড় জোর এক হাজার ৮০০ থেকে আড়াই হাজার নক্ষত্র দেখা যায়।
এদিকে বায়ুদূষণ, শব্দদূষণ ও পানিদূষণ নিয়ে মানুষের মাথাব্যথার শেষ নেই। পদক্ষেপেরও বালাই নেই কিন্তু আলোরও যে দূষণ হয় সেটা কারো মাথাতেই নেই। অথচ বিজ্ঞানীরা আবিষ্কার করেছেন এ আলোর দূষণের কারণে আমরা রাতের আকাশের কিছুই দেখতে পাই না। আলোর দূষণ না থাকলে মিল্কিওয়ে গ্যালাক্সি বা আকাশগঙ্গা ছায়াপথ দেখতে মহাকাশে যেতে হতো না, পৃথিবীতে বসেই সেটা সম্ভব ছিল।

ব্রিটিশ বিজ্ঞানীদের গবেষণা উঠে এসেছে, রাস্তার আলোর কারণে মথ আর ক্যাটারপিলারের সংখ্যা অর্ধেকে নেমে এসেছে। আধুনিক এলইডি লাইট অনেক বড় প্রভাব ফেলেছে পোকামাকড়ের স্বাভাবিক জীবনযাপনে।
পোকামাকড় যে দিন দিনই কমছে সেটার প্রমাণও মিলেছে। জলবায়ু পরিবর্তন, স্বাভাবিক পরিবেশ ব্যাহ, গাছপালা কমে যাওয়া ও কীটনাশকের প্রয়োগ বাড়ায় পরিবেশের জন্য উপকারী পোকামাকড় অনেক কমে গেছে। পোকামাকড় কমে যাওয়ার পেছনে অন্য কারণ বন উজাড় হওয়া, রাসায়নিক কীটনাশকের অতিরিক্ত ব্যবহার, নদী আর জলাশয়ের দূষণ, তৃণভূমি আর জলাভূমি উজাড়। রাতে কৃত্রিম আলোর কারণে আরো কমছে পোকামাকড়ের চলাচল।
গবেষকরা বলছেন, আলোর কারণে যেভাবে পোকামাকড় কমছে ভবিষ্যতে তা পাখি আর অন্য বন্যপ্রাণী যারা খাবারের ওপর ক্যাটারপিলারের ওপর নির্ভরশীল তাদের জীবনে বিরূপ প্রভাব ফেলবে। যদিও এটা পরিষ্কার না, আলোর দূষণ কতটুকু প্রভাব ফেলছে, তবে আলোর দূষণ যে পোকামাকড় কমাচ্ছে এটা প্রমাণিত হয়েছে।
বিজ্ঞানীরা বলছেন, পোকামাকড় সমস্যায় আছে মানে পৃথিবীর বাস্তুসংস্থানে সম্যসা তৈরি হচ্ছে, স্বাভাবিকতা ব্যাহত হচ্ছে।
বিজ্ঞানীরা বলছেন, রাস্তার এলইডি লাইটগুলোর কারণে ডিম পাড়ে না, কিংবা এমন জায়গায় পাড়ে যেখান থেকে বাদুড় কিংবা অন্য কোনো পাখি খেয়ে ফেলে। তবে ক্যাটারপিলার আবার এলইডি লাইটের নিচেই জন্মায়। স্বাভাবিক ডিম পাড়ার জায়গা পরিবর্তন হলে ক্যাটারপিলারের ডিম পাড়ার ক্ষমতা কমে যায়।
কয়েকটি প্রজাতির পোকামাকড় কমে যাওয়ায় বিজ্ঞানীদের কপালে চিন্তার ভাঁজ ফেলেছে।
জ্যোতির্বিজ্ঞানী হারাল্ড বার্ডেনহাগেন বলেন, অনেক ক্ষেত্রে রাতের আলোর নানারকম নেতিবাচক প্রভাব রয়েছে। একদিকে মানুষের স্বাস্থ্য, অন্যদিকে জীববৈচিত্র্যের ক্ষতি হয়। তা ছাড়া রাতের কৃত্রিম আলোর ছটা আকাশের গ্রহ-তারাকেও ম্লান করে দেয়।
অনেক প্রাণীর ওপর এর প্রভাব মারাত্মক। পাখিরা দিকনির্ণয় করতে না পেরে আলোকিত বাড়ি-ঘরের সঙ্গে ধাক্কা খেয়ে মরে যাচ্ছে। কচ্ছপরা চাঁদের আলো দেখে সমুদ্রের দিকে এগিয়ে যায়। কিন্তু শহরের আলো তাদের মনে বিভ্রান্তি আনে। তাই তারা অনেক সময় সমুদ্রের বদলে উল্টো দিকে চলতে থাকে। ত্বক শুকিয়ে যায়, তাদের মৃত্যু ঘটে। তবে এসব কৃত্রিম আলোতে শুধু জন্তু-জানোয়ার নয়, মানুষেরও ক্ষতি হয়।
হারাল্ড বার্ডেনহাগেন বলেন, মানুষের স্বাস্থ্যের ওপরেও এর প্রভাব পড়ে, কারণ বডি-ক্লক ওলটপালট হয়ে যায়। রাতে কৃত্রিম আলোর কারণে স্তন ও প্রস্ট্রেট ক্যানসারের আশঙ্কা অনেক বেড়ে যায়।
একটি গবেষণা বলছে, ২০১৯ সালে পোকামাকড়ের ওপর করা একটি গবেষণা বলছে, ৪০ শতাংশ প্রজাতি বিলুপ্ত হওয়ার পথে আছে। সারাবিশ্বে আশঙ্কাজনকহারে কমে গেছে এসব পোকামাকড়ের সংখ্যা। মৌমাছি, পিপড়া আর গুবরে পোকা গায়েব হয়ে যাচ্ছে স্তন্যপায়ী প্রাণি, পাখি আর সরীসৃপ প্রাণীর চেয়ে ৮ গুণ দ্রুতগতিতে।

অন্যদিকে, পরিবেশের জন্য ক্ষতিকর তেলাপোকা, মাছি, পঙ্গপালতো ভয়াবহভাবে বাড়ছে। পুরো পৃথিবীর বাস্তুসংস্থানকে ভেঙে দিতে পারে এই পোকামাকড়ের সংকট। পোকামাকড় পাখি, সরীসৃপ প্রাণী, বাদুড়ের মতো পরিবেশের উপকারী প্রাণীর জন্য খাবার সরবরাহ করে। আবার গাছও পরাগায়ণের জন্য পোকামাকড়ের ওপরই নির্ভরশীল। সূত্র: সময় নিউজ

আলোর দূষণে কমছে পোকামাকড়, বিপর্যয়ের শঙ্কা

প্রকাশের সময় : ০১:৩৮:০৩ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২৬ অগাস্ট ২০২১

বার্তাকণ্ঠ ডেস্ক ।।

আজকাল বিশ্বের খুব কম জায়গায় রাতের আকাশের নির্মল রূপ দেখা যায়। আলোর দূষণের কারণে সেই সুযোগ কমেই চলেছে। অথচ আরও ভেবেচিন্তে আলোর ব্যবহার করলেই সেই দূষণের মাত্রা কমানো সম্ভব।

আইফেল জাতীয় পার্কের রাতের আকাশ সত্যি খুব স্পষ্ট। হারাল্ড বার্ডেনহাগেন সেখানে একটি অবজারভেটরি বা মানমন্দির গড়ে তুলেছেন।

মানমন্দির (অবজারভেটরি) পৃথিবী ও মহাশূন্য পর্যবেক্ষণ এবং পরিমাপ গ্রহণের জন্য বিশেষভাবে তৈরি অত্যাধুনিক যন্ত্রপাতিসমৃদ্ধ গবেষণাগার। জ্যোতির্বিজ্ঞান, জ্যোতিষশাস্ত্র, জলবায়ুবিজ্ঞান, ভূতত্ত্ব ইত্যাদি বিষয়ের গবেষণার জন্যই সাধারণত মানমন্দির স্থাপন করা হয়ে থাকে।
কোলোন শহরের জ্যোতির্বিজ্ঞানী হারাল্ড বার্ডেনহাগেন লক্ষ্য করছেন যে, রাতের আকাশ ক্রমশ উজ্জ্বল হয়ে উঠছে। তিনি বলেন, আমাদের একেবারেই কোনো আলোর দূষণ না থাকলে অর্থাৎ একেবারে স্বাভাবিক রাতের আকাশ থাকলে আমরা সম্ভবত তিন থেকে সাড়ে চার হাজার নক্ষত্র দেখতে পেতাম। ইউরোপে কোথাও সেটা আর সম্ভব নয়। এখানে রাতে বড় জোর এক হাজার ৮০০ থেকে আড়াই হাজার নক্ষত্র দেখা যায়।
এদিকে বায়ুদূষণ, শব্দদূষণ ও পানিদূষণ নিয়ে মানুষের মাথাব্যথার শেষ নেই। পদক্ষেপেরও বালাই নেই কিন্তু আলোরও যে দূষণ হয় সেটা কারো মাথাতেই নেই। অথচ বিজ্ঞানীরা আবিষ্কার করেছেন এ আলোর দূষণের কারণে আমরা রাতের আকাশের কিছুই দেখতে পাই না। আলোর দূষণ না থাকলে মিল্কিওয়ে গ্যালাক্সি বা আকাশগঙ্গা ছায়াপথ দেখতে মহাকাশে যেতে হতো না, পৃথিবীতে বসেই সেটা সম্ভব ছিল।

ব্রিটিশ বিজ্ঞানীদের গবেষণা উঠে এসেছে, রাস্তার আলোর কারণে মথ আর ক্যাটারপিলারের সংখ্যা অর্ধেকে নেমে এসেছে। আধুনিক এলইডি লাইট অনেক বড় প্রভাব ফেলেছে পোকামাকড়ের স্বাভাবিক জীবনযাপনে।
পোকামাকড় যে দিন দিনই কমছে সেটার প্রমাণও মিলেছে। জলবায়ু পরিবর্তন, স্বাভাবিক পরিবেশ ব্যাহ, গাছপালা কমে যাওয়া ও কীটনাশকের প্রয়োগ বাড়ায় পরিবেশের জন্য উপকারী পোকামাকড় অনেক কমে গেছে। পোকামাকড় কমে যাওয়ার পেছনে অন্য কারণ বন উজাড় হওয়া, রাসায়নিক কীটনাশকের অতিরিক্ত ব্যবহার, নদী আর জলাশয়ের দূষণ, তৃণভূমি আর জলাভূমি উজাড়। রাতে কৃত্রিম আলোর কারণে আরো কমছে পোকামাকড়ের চলাচল।
গবেষকরা বলছেন, আলোর কারণে যেভাবে পোকামাকড় কমছে ভবিষ্যতে তা পাখি আর অন্য বন্যপ্রাণী যারা খাবারের ওপর ক্যাটারপিলারের ওপর নির্ভরশীল তাদের জীবনে বিরূপ প্রভাব ফেলবে। যদিও এটা পরিষ্কার না, আলোর দূষণ কতটুকু প্রভাব ফেলছে, তবে আলোর দূষণ যে পোকামাকড় কমাচ্ছে এটা প্রমাণিত হয়েছে।
বিজ্ঞানীরা বলছেন, পোকামাকড় সমস্যায় আছে মানে পৃথিবীর বাস্তুসংস্থানে সম্যসা তৈরি হচ্ছে, স্বাভাবিকতা ব্যাহত হচ্ছে।
বিজ্ঞানীরা বলছেন, রাস্তার এলইডি লাইটগুলোর কারণে ডিম পাড়ে না, কিংবা এমন জায়গায় পাড়ে যেখান থেকে বাদুড় কিংবা অন্য কোনো পাখি খেয়ে ফেলে। তবে ক্যাটারপিলার আবার এলইডি লাইটের নিচেই জন্মায়। স্বাভাবিক ডিম পাড়ার জায়গা পরিবর্তন হলে ক্যাটারপিলারের ডিম পাড়ার ক্ষমতা কমে যায়।
কয়েকটি প্রজাতির পোকামাকড় কমে যাওয়ায় বিজ্ঞানীদের কপালে চিন্তার ভাঁজ ফেলেছে।
জ্যোতির্বিজ্ঞানী হারাল্ড বার্ডেনহাগেন বলেন, অনেক ক্ষেত্রে রাতের আলোর নানারকম নেতিবাচক প্রভাব রয়েছে। একদিকে মানুষের স্বাস্থ্য, অন্যদিকে জীববৈচিত্র্যের ক্ষতি হয়। তা ছাড়া রাতের কৃত্রিম আলোর ছটা আকাশের গ্রহ-তারাকেও ম্লান করে দেয়।
অনেক প্রাণীর ওপর এর প্রভাব মারাত্মক। পাখিরা দিকনির্ণয় করতে না পেরে আলোকিত বাড়ি-ঘরের সঙ্গে ধাক্কা খেয়ে মরে যাচ্ছে। কচ্ছপরা চাঁদের আলো দেখে সমুদ্রের দিকে এগিয়ে যায়। কিন্তু শহরের আলো তাদের মনে বিভ্রান্তি আনে। তাই তারা অনেক সময় সমুদ্রের বদলে উল্টো দিকে চলতে থাকে। ত্বক শুকিয়ে যায়, তাদের মৃত্যু ঘটে। তবে এসব কৃত্রিম আলোতে শুধু জন্তু-জানোয়ার নয়, মানুষেরও ক্ষতি হয়।
হারাল্ড বার্ডেনহাগেন বলেন, মানুষের স্বাস্থ্যের ওপরেও এর প্রভাব পড়ে, কারণ বডি-ক্লক ওলটপালট হয়ে যায়। রাতে কৃত্রিম আলোর কারণে স্তন ও প্রস্ট্রেট ক্যানসারের আশঙ্কা অনেক বেড়ে যায়।
একটি গবেষণা বলছে, ২০১৯ সালে পোকামাকড়ের ওপর করা একটি গবেষণা বলছে, ৪০ শতাংশ প্রজাতি বিলুপ্ত হওয়ার পথে আছে। সারাবিশ্বে আশঙ্কাজনকহারে কমে গেছে এসব পোকামাকড়ের সংখ্যা। মৌমাছি, পিপড়া আর গুবরে পোকা গায়েব হয়ে যাচ্ছে স্তন্যপায়ী প্রাণি, পাখি আর সরীসৃপ প্রাণীর চেয়ে ৮ গুণ দ্রুতগতিতে।

অন্যদিকে, পরিবেশের জন্য ক্ষতিকর তেলাপোকা, মাছি, পঙ্গপালতো ভয়াবহভাবে বাড়ছে। পুরো পৃথিবীর বাস্তুসংস্থানকে ভেঙে দিতে পারে এই পোকামাকড়ের সংকট। পোকামাকড় পাখি, সরীসৃপ প্রাণী, বাদুড়ের মতো পরিবেশের উপকারী প্রাণীর জন্য খাবার সরবরাহ করে। আবার গাছও পরাগায়ণের জন্য পোকামাকড়ের ওপরই নির্ভরশীল। সূত্র: সময় নিউজ