শনিবার, ১৪ জুন ২০২৫, ৩১ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

ইউরোপে আফগান শরণার্থীদের কোনো স্হান নেই

আন্তর্জাতিক ডেস্ক।। 

চেক প্রধানমন্ত্রী আন্দরেজ বাবিস বলেন, ইউরোপে সত্যিকার অর্থে আফগান শরণার্থীদের জন্য কোনো স্থান নেই। ইউরোপের উচিত এসব শরণার্থীদের নিজ দেশেই থাকার ব্যবস্থা করা।

অস্ট্রিয়ান ও স্লোভাক সমকক্ষের সঙ্গে বৈঠকের পর মঙ্গলবার (৭ সেপ্টেম্বর) তিনি এমন মন্তব্য করেন। তালেবানের হাতে আফগানিস্তানের ক্ষমতার নিয়ন্ত্রণ যাওয়ার পর দেশটির শরণার্থীর সংখ্যা বেড়ে যাওয়া নিয়ে তারা আলোচনা করেন।

এই তিন নেতা বলেন, ২০১৫ সালের মতো শরণার্থী সংকট এড়াতে ইউরোপের সর্বাত্মক চেষ্টা করা উচিত। তখন আফ্রিকা ও মধ্যপ্রাচ্য হয়ে লাখ লাখ শরণার্থী ইউরোপের উদ্দেশ্যে পাড়ি জমিয়েছিল।

আন্দরজ বাবিস বলেন, ২০১৬ সালের মতো তুরস্কের সঙ্গে চুক্তি করার উপায় আছে। অর্থনৈতিক সহায়তা ও প্রণোদনার বিনিময়ে বহু শরণার্থীকে আটকাতে সম্মত হয়েছিল তুরস্ক। কিন্তু আমি মনে করি না, এটা কোনো ভালো বিকল্প হবে।

বার্তা সংস্থা এএফপি ও বিবিসি এমন খবর দিয়েছে। বাবিস বলেন, সবচেয়ে ভালো সমাধান হচ্ছে শরণার্থীরা আফগানিস্তানে যাতে অবস্থান করতে পারে, সেই ব্যবস্থা করা।

অস্ট্রিয়ান চ্যান্সেলর সেবাস্তিয়ান কুরজ বলেন, আফগানিস্তানের প্রতিবেশী দেশগুলোতে শরণার্থীরা আশ্রয় নিতে চাইলে আমরা এক কোটি ৮০ লাখ ইউরো সহায়তা দিতে রাজি আছি। তিনি বলেন, ইউরোপের দিকে আরেকটি শরণার্থী ঢল না বাড়িয়ে একটি স্থায়ী সমাধান বের করতে হবে।

এদিকে মঙ্গলবার আফগানিস্তানে একটি অন্তবর্তীকালীন সরকার গঠন করেছে তালেবান। এছাড়া দেশটিকে ইসলামি আমিরাতও ঘোষণা করেছে তারা। সরকারপ্রধান করা হয়েছে জাতিসংঘের কালোতালিকাভুক্ত ও তালেবানের অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা মোল্লা মোহাম্মদ হাসান আখুনদকে।

স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী করা হয়েছে মার্কিন তদন্ত সংস্থা এফবিআইয়ের হন্যে হয়ে খোঁজা হাক্কানি নেটওয়ার্কের প্রধান সিরাজউদ্দিন হাক্কানি। গত দুই দশকে তালেবানের সবচেয়ে প্রাণঘাতি হামলাগুলোর জন্য দায়ী করা হচ্ছে হাক্কানি নেটওয়ার্ককে।

যার মধ্যে ২০১৭ সালে একটি ট্রাক বোমা বিস্ফোরণও রয়েছে। ওই হামলায় ১৫০ জনের বেশি মানুষ নিহত হয়েছিলেন। হাক্কানি নেটওয়ার্ককে সন্ত্রাসী গোষ্ঠী ঘোষণা করেছিল যুক্তরাষ্ট্র। আল-কায়েদার সঙ্গেও এই নেটওয়ার্কের ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক রয়েছে।

গেল ১৫ আগস্ট আগের নির্বাচিত সরকারকে উৎখাত করে রাজধানী কাবুলসহ আফগানিস্তানের অধিকাংশ অংশ দখল করে তালেবান।

ভারপ্রাপ্ত মন্ত্রিসভা গঠনের এই ঘোষণা তালেবানের সরকার গঠনের একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ। সরকারকে শরিয়া আইন বাস্তবায়ন করতে বলেছে তালেবানের শীর্ষ নেতা হিবাতুল্লাহ আখুনদজাদা।

এক বিবৃতিতে বলা হয়েছে, পারস্পরিক মর্যাদা ও সংলাপের মাধ্যমে প্রতিবেশীসহ অন্যান্য সব দেশের সঙ্গে জোরালো ও উন্নত সম্পর্ক বজায় রাখতে চায় তালেবান। এতে কেবল শর্ত থাকবে যে ইসলামিক আইন ও জাতীয় মূল্যবোধের সঙ্গে সাংঘর্ষিক না; এমন আন্তর্জাতিক আইন ও চুক্তির প্রতি সম্মান দেখাবে তারা।

এখন পর্যন্ত হেবাতুল্লাহ আখুনজাদাকে প্রকাশ্যে দেখা যায়নি। গত মাসে তালেবান আফগানিস্তানের নিয়ন্ত্রণ নেওয়ার পর এই প্রথম তার কাছ থেকে কোনো বিবৃতি এসেছে।

এর আগে তালেবান বলেছে, তারা একটি অন্তর্ভুক্তিমূলক সরকার গঠন করতে চায়। কিন্তু মঙ্গলবার (৭ আগস্ট) যে সরকার গঠন করা হয়েছে, তাদের সবাই তালেবান নেতা।

মোল্লা হাসান আখুনদ এর আগের ১৯৯৬ থেকে ২০০১ সাল পর্যন্ত তালেবান সরকারের উপ-পররাষ্ট্রমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করেছেন। এফবিআইয়ের পরিচিতি অনুসারে, ২০০৮ সালের জানুয়ারিতে কাবুলের একটি হামলার জন্য জেরা করতে তাকে খোঁজা হচ্ছে। ওই হামলায় এক মার্কিন নাগরিকসহ ছয় বেসামরিক নাগরিক নিহত হয়েছিলেন।

জনপ্রিয়

ভাড়া গাড়ীতে প্রেসের স্টিকার, ১৫ হাজার টাকা জরিমানা

ইউরোপে আফগান শরণার্থীদের কোনো স্হান নেই

প্রকাশের সময় : ০৮:১৬:৩৯ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ৮ সেপ্টেম্বর ২০২১

আন্তর্জাতিক ডেস্ক।। 

চেক প্রধানমন্ত্রী আন্দরেজ বাবিস বলেন, ইউরোপে সত্যিকার অর্থে আফগান শরণার্থীদের জন্য কোনো স্থান নেই। ইউরোপের উচিত এসব শরণার্থীদের নিজ দেশেই থাকার ব্যবস্থা করা।

অস্ট্রিয়ান ও স্লোভাক সমকক্ষের সঙ্গে বৈঠকের পর মঙ্গলবার (৭ সেপ্টেম্বর) তিনি এমন মন্তব্য করেন। তালেবানের হাতে আফগানিস্তানের ক্ষমতার নিয়ন্ত্রণ যাওয়ার পর দেশটির শরণার্থীর সংখ্যা বেড়ে যাওয়া নিয়ে তারা আলোচনা করেন।

এই তিন নেতা বলেন, ২০১৫ সালের মতো শরণার্থী সংকট এড়াতে ইউরোপের সর্বাত্মক চেষ্টা করা উচিত। তখন আফ্রিকা ও মধ্যপ্রাচ্য হয়ে লাখ লাখ শরণার্থী ইউরোপের উদ্দেশ্যে পাড়ি জমিয়েছিল।

আন্দরজ বাবিস বলেন, ২০১৬ সালের মতো তুরস্কের সঙ্গে চুক্তি করার উপায় আছে। অর্থনৈতিক সহায়তা ও প্রণোদনার বিনিময়ে বহু শরণার্থীকে আটকাতে সম্মত হয়েছিল তুরস্ক। কিন্তু আমি মনে করি না, এটা কোনো ভালো বিকল্প হবে।

বার্তা সংস্থা এএফপি ও বিবিসি এমন খবর দিয়েছে। বাবিস বলেন, সবচেয়ে ভালো সমাধান হচ্ছে শরণার্থীরা আফগানিস্তানে যাতে অবস্থান করতে পারে, সেই ব্যবস্থা করা।

অস্ট্রিয়ান চ্যান্সেলর সেবাস্তিয়ান কুরজ বলেন, আফগানিস্তানের প্রতিবেশী দেশগুলোতে শরণার্থীরা আশ্রয় নিতে চাইলে আমরা এক কোটি ৮০ লাখ ইউরো সহায়তা দিতে রাজি আছি। তিনি বলেন, ইউরোপের দিকে আরেকটি শরণার্থী ঢল না বাড়িয়ে একটি স্থায়ী সমাধান বের করতে হবে।

এদিকে মঙ্গলবার আফগানিস্তানে একটি অন্তবর্তীকালীন সরকার গঠন করেছে তালেবান। এছাড়া দেশটিকে ইসলামি আমিরাতও ঘোষণা করেছে তারা। সরকারপ্রধান করা হয়েছে জাতিসংঘের কালোতালিকাভুক্ত ও তালেবানের অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা মোল্লা মোহাম্মদ হাসান আখুনদকে।

স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী করা হয়েছে মার্কিন তদন্ত সংস্থা এফবিআইয়ের হন্যে হয়ে খোঁজা হাক্কানি নেটওয়ার্কের প্রধান সিরাজউদ্দিন হাক্কানি। গত দুই দশকে তালেবানের সবচেয়ে প্রাণঘাতি হামলাগুলোর জন্য দায়ী করা হচ্ছে হাক্কানি নেটওয়ার্ককে।

যার মধ্যে ২০১৭ সালে একটি ট্রাক বোমা বিস্ফোরণও রয়েছে। ওই হামলায় ১৫০ জনের বেশি মানুষ নিহত হয়েছিলেন। হাক্কানি নেটওয়ার্ককে সন্ত্রাসী গোষ্ঠী ঘোষণা করেছিল যুক্তরাষ্ট্র। আল-কায়েদার সঙ্গেও এই নেটওয়ার্কের ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক রয়েছে।

গেল ১৫ আগস্ট আগের নির্বাচিত সরকারকে উৎখাত করে রাজধানী কাবুলসহ আফগানিস্তানের অধিকাংশ অংশ দখল করে তালেবান।

ভারপ্রাপ্ত মন্ত্রিসভা গঠনের এই ঘোষণা তালেবানের সরকার গঠনের একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ। সরকারকে শরিয়া আইন বাস্তবায়ন করতে বলেছে তালেবানের শীর্ষ নেতা হিবাতুল্লাহ আখুনদজাদা।

এক বিবৃতিতে বলা হয়েছে, পারস্পরিক মর্যাদা ও সংলাপের মাধ্যমে প্রতিবেশীসহ অন্যান্য সব দেশের সঙ্গে জোরালো ও উন্নত সম্পর্ক বজায় রাখতে চায় তালেবান। এতে কেবল শর্ত থাকবে যে ইসলামিক আইন ও জাতীয় মূল্যবোধের সঙ্গে সাংঘর্ষিক না; এমন আন্তর্জাতিক আইন ও চুক্তির প্রতি সম্মান দেখাবে তারা।

এখন পর্যন্ত হেবাতুল্লাহ আখুনজাদাকে প্রকাশ্যে দেখা যায়নি। গত মাসে তালেবান আফগানিস্তানের নিয়ন্ত্রণ নেওয়ার পর এই প্রথম তার কাছ থেকে কোনো বিবৃতি এসেছে।

এর আগে তালেবান বলেছে, তারা একটি অন্তর্ভুক্তিমূলক সরকার গঠন করতে চায়। কিন্তু মঙ্গলবার (৭ আগস্ট) যে সরকার গঠন করা হয়েছে, তাদের সবাই তালেবান নেতা।

মোল্লা হাসান আখুনদ এর আগের ১৯৯৬ থেকে ২০০১ সাল পর্যন্ত তালেবান সরকারের উপ-পররাষ্ট্রমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করেছেন। এফবিআইয়ের পরিচিতি অনুসারে, ২০০৮ সালের জানুয়ারিতে কাবুলের একটি হামলার জন্য জেরা করতে তাকে খোঁজা হচ্ছে। ওই হামলায় এক মার্কিন নাগরিকসহ ছয় বেসামরিক নাগরিক নিহত হয়েছিলেন।