বৃহস্পতিবার, ১৫ মে ২০২৫, ১ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

বেনাপোলে রফতানি পন্যবোঝাই ট্রাকজটে ব্যাহত বাণিজ্য

বেনাপোল প্রতিনিধি ।। 
বেনাপোল বন্দরে রপ্তানি পণ্য বোঝাই ট্রাকজটে ব্যবসা-বাণিজ্য মারাত্মকভাবে ব্যাহত হচ্ছে। দুর্ভোগের শিকার হচ্ছেন বিভিন্ন যানবাহনের যাত্রী ও পথচারীরা।
ঢাকা-কলকাতা মহাসড়কে বেনাপোল বন্দর এলাকায় প্রায় তিন কিলোমিটার এলাকাজুড়ে সৃষ্টি হয়েছে ভয়াবহ যানজট।
বন্দর ব্যবহারকারীদের ভাষ্য, দেশের প্রধান এই স্থলবন্দরে ট্রাকজটের কারণে মারাত্মকভাবে ব্যাহত হচ্ছে আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্য, আমদানিপণ্য সময়মতো পৌঁছে দিতে না পারায় শিল্প-কারখানার উৎপাদন বাধাগ্রস্ত হচ্ছে।
তাদের মতে শুধু বাণিজ্য নয়, সড়কপথে আটকা পড়ে দুর্ভোগের শিকার হচ্ছেন ঢাকা-কলকাতাগামী সরাসরি বাসযাত্রী, পাসপোর্ট যাত্রী ও পথচারীরা। দীর্ঘদিন ধরে এ সমস্যা থাকলেও সংশিষ্ট কর্তৃপক্ষের তেমন কোনো উদ্যোগ দেখা যাচ্ছে না।
তবে বন্দর কর্তৃপক্ষ বলছে, বন্দর এলাকায় যানজট নিরসনে তারা জমি অধিগ্রহণসহ বিভিন্ন পদক্ষেপ হাতে নিয়েছেন। এসব কর্মকাণ্ড শেষ হলে অনেকাংশে যানজট নিরসন হবে।
সরেজমিনে বেনাপোল স্থলবন্দর এলাকা ঘুরে দেখা যায়, বন্দর এলাকায় যশোর-কলকাতা মহাসড়কে দিন-রাত যানজট লেগেই আছে। বন্দর অভ্যন্তরে জায়গা না থাকায় বাংলাদেশ থেকে ভারত রপ্তানি পন্যবোঝাই ট্রাক মহাসড়কে উপরে রাখা হয়েছে। এমনভাবে রপ্তানিপণ্যের ট্রাকগুলো পার্কিং করে রাখা হয়েছে যে অন্য কোনো যানবাহন চলার অবস্থা সেখানে নেই।
বন্দর থেকে আমদানিপণ্য খালাস নিয়ে পণ্যবাহী ট্রাক ও দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে আসা যাত্রীবাহী পরিবহনগুলো যানজটের কারনে ঘণ্টার পর ঘণ্টা আটকে থাকছে। তিন চাকার ছোট যানগুলো ফুটপাতের উপর দিয়ে ঝুঁকি নিয়ে চলছে।
বেনাপোল ট্রান্সপোর্ট এজেন্সি মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক আজিম উদ্দিন গাজী বলেন, রপ্তানির পরিমাণ বেড়ে যাওয়ায় রেকর্ড ট্রাকজটের সৃষ্টি হয়েছে। ঢাকা-কলকাতা মহাসড়কের বেনাপোলে প্রায় তিন কিলোমিটার এলাকাজুড়ে সৃষ্টি হয়েছে যানজটের। আমদানি পন্য নিয়ে আসা খালি ট্রাক ও রপ্তানি পন্যবোঝাই ট্রাক প্রধান সড়কের উপরে যত্রতত্র রাখার কারণে এই যানজট। এতে ঘণ্টার পর ঘণ্টা আটকে থাকছে দূরপাল্লার বাস, পাসপোর্ট যাত্রীসহ অন্যান্য পণ্যবোঝাই ট্রাক।
বেনাপোলের অধিকাংশ স্কুল কলেজ বন্দর ও বাজার কেন্দ্রিক। এ সমস্ত প্রতিষ্ঠানের অভিযোগ বন্দর সড়কে ভয়াবহ যানজটের কারণে ছেলে-মেয়েরা সময়মতো স্কুলে আসতে পারছে না। সড়কে এমন অবস্থায় সারাক্ষণ তাদের নিয়ে দুশ্চিন্তাই থাকতে হয়।
‘শ্যামলী পরিবহনের’ বেনাপোল কাউন্টার ম্যানেজার গিয়াস উদ্দিন বলেন, “বেনাপোল থেকে ঢাকা যেতে সময় লাগে ৬ ঘণ্টা; কিন্তু বেনাপোল চেকপোস্টের স্থলবন্দর বাস টার্মিনাল থেকে বন্দর এলাকা পার হতে এখন সময় লাগছে দুই থেকে তিন ঘণ্টা। এতে যাত্রীরা সময়মতো গন্তব্যে পৌঁছাতে পারছেন না।”
বেনাপোল সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি মফিজুর রহমান সজন বলেন, বেনাপোল বন্দরের পণ্যাগারের ধারণক্ষমতা ৪৪ হাজার মেট্রিক টন; কিন্তু এখানে সার্বক্ষণিক আমদানি পণ্য থাকে দ্বিগুণেরও বেশি। তার পর ও বর্তমানে দেশ থেকে রপ্তানির পরিমাণ বেড়েছে প্রায় দ্বিগুণ। বন্দর এলাকায় এ সমস্ত রপ্তানি বোঝাই পন্যের ট্রাক রাখার কোন টার্মিনাল না থাকায় ট্রাকগুলো দাড়িয়ে থাকে প্রধান সড়কের উপরে। এ কারনেই বেশি যানজটের সৃষ্টি হচ্ছে।
“বন্দরের পণ্যাগারে জায়গা না থাকায় আমদানি ও রপ্তানি পণ্য বোঝাই ট্রাকগুলো খালাসের অপেক্ষায় দিনের পর দিন মহাসড়কের উপরে দাঁড় করিয়ে রাখা হয়। ফলে বন্দর এলাকায় যানজট নিত্য লেগেই থাকে।”
বেনাপোল আমদানি-রফতানি সমিতির সভাপতি মহসিন মিলন বলেন,ভারতীয় পণ্যবোঝাই ট্রাক ও রপ্তানি পন্যবোঝাই ট্রাক বন্দরে আটকে থাকলে আমদানিকারকদের ‘ট্রাক ডেমারেজ’ গুনতে হয়। ফলে আর্থিক ক্ষতির শিকার হয়ে অনেকেই এ পথে আমদানি-রপ্তানি বন্ধ করে দিচ্ছেন, আবার কেউ কেউ অন্য বন্দরে চলে যাচ্ছেন। ব্যবসায়ীদের ক্ষতির পাশাপাশি সরকারের রাজস্ব আয়ের উপরও এর  বিরুপ প্রভাব পড়ে। বন্দরের প্রয়োজনীয় অবকাঠামো উন্নয়ন হলে রাজস্ব আদায় বেড়ে দ্বিগুণ হবে বলে মনে করেন তিনি
বিষয়টি নিয়ে বন্দর ব্যবহারকারী ব্যবসায়ী সংগঠন ও প্রশাসনের সঙ্গে একাধিকবার বৈঠক হয়েছে জানিয়ে বেনাপোল স্থলবন্দরের পরিচালক (ট্রাফিক)আব্দুল জলিল বলেন, যানজট নিরসনে জমি অধিগ্রহণসহ বিভিন্ন পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। অবকাঠামো উন্নয়ন কাজ শেষ হলে অনেকাংশে যানজট নিরসন হবে।
জনপ্রিয়

গণমাধ্যম অভূতপূর্ব স্বাধীনতা ভোগ করছে: প্রেস সচিব

বেনাপোলে রফতানি পন্যবোঝাই ট্রাকজটে ব্যাহত বাণিজ্য

প্রকাশের সময় : ১১:২৫:৫৯ পূর্বাহ্ন, সোমবার, ১৩ সেপ্টেম্বর ২০২১
বেনাপোল প্রতিনিধি ।। 
বেনাপোল বন্দরে রপ্তানি পণ্য বোঝাই ট্রাকজটে ব্যবসা-বাণিজ্য মারাত্মকভাবে ব্যাহত হচ্ছে। দুর্ভোগের শিকার হচ্ছেন বিভিন্ন যানবাহনের যাত্রী ও পথচারীরা।
ঢাকা-কলকাতা মহাসড়কে বেনাপোল বন্দর এলাকায় প্রায় তিন কিলোমিটার এলাকাজুড়ে সৃষ্টি হয়েছে ভয়াবহ যানজট।
বন্দর ব্যবহারকারীদের ভাষ্য, দেশের প্রধান এই স্থলবন্দরে ট্রাকজটের কারণে মারাত্মকভাবে ব্যাহত হচ্ছে আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্য, আমদানিপণ্য সময়মতো পৌঁছে দিতে না পারায় শিল্প-কারখানার উৎপাদন বাধাগ্রস্ত হচ্ছে।
তাদের মতে শুধু বাণিজ্য নয়, সড়কপথে আটকা পড়ে দুর্ভোগের শিকার হচ্ছেন ঢাকা-কলকাতাগামী সরাসরি বাসযাত্রী, পাসপোর্ট যাত্রী ও পথচারীরা। দীর্ঘদিন ধরে এ সমস্যা থাকলেও সংশিষ্ট কর্তৃপক্ষের তেমন কোনো উদ্যোগ দেখা যাচ্ছে না।
তবে বন্দর কর্তৃপক্ষ বলছে, বন্দর এলাকায় যানজট নিরসনে তারা জমি অধিগ্রহণসহ বিভিন্ন পদক্ষেপ হাতে নিয়েছেন। এসব কর্মকাণ্ড শেষ হলে অনেকাংশে যানজট নিরসন হবে।
সরেজমিনে বেনাপোল স্থলবন্দর এলাকা ঘুরে দেখা যায়, বন্দর এলাকায় যশোর-কলকাতা মহাসড়কে দিন-রাত যানজট লেগেই আছে। বন্দর অভ্যন্তরে জায়গা না থাকায় বাংলাদেশ থেকে ভারত রপ্তানি পন্যবোঝাই ট্রাক মহাসড়কে উপরে রাখা হয়েছে। এমনভাবে রপ্তানিপণ্যের ট্রাকগুলো পার্কিং করে রাখা হয়েছে যে অন্য কোনো যানবাহন চলার অবস্থা সেখানে নেই।
বন্দর থেকে আমদানিপণ্য খালাস নিয়ে পণ্যবাহী ট্রাক ও দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে আসা যাত্রীবাহী পরিবহনগুলো যানজটের কারনে ঘণ্টার পর ঘণ্টা আটকে থাকছে। তিন চাকার ছোট যানগুলো ফুটপাতের উপর দিয়ে ঝুঁকি নিয়ে চলছে।
বেনাপোল ট্রান্সপোর্ট এজেন্সি মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক আজিম উদ্দিন গাজী বলেন, রপ্তানির পরিমাণ বেড়ে যাওয়ায় রেকর্ড ট্রাকজটের সৃষ্টি হয়েছে। ঢাকা-কলকাতা মহাসড়কের বেনাপোলে প্রায় তিন কিলোমিটার এলাকাজুড়ে সৃষ্টি হয়েছে যানজটের। আমদানি পন্য নিয়ে আসা খালি ট্রাক ও রপ্তানি পন্যবোঝাই ট্রাক প্রধান সড়কের উপরে যত্রতত্র রাখার কারণে এই যানজট। এতে ঘণ্টার পর ঘণ্টা আটকে থাকছে দূরপাল্লার বাস, পাসপোর্ট যাত্রীসহ অন্যান্য পণ্যবোঝাই ট্রাক।
বেনাপোলের অধিকাংশ স্কুল কলেজ বন্দর ও বাজার কেন্দ্রিক। এ সমস্ত প্রতিষ্ঠানের অভিযোগ বন্দর সড়কে ভয়াবহ যানজটের কারণে ছেলে-মেয়েরা সময়মতো স্কুলে আসতে পারছে না। সড়কে এমন অবস্থায় সারাক্ষণ তাদের নিয়ে দুশ্চিন্তাই থাকতে হয়।
‘শ্যামলী পরিবহনের’ বেনাপোল কাউন্টার ম্যানেজার গিয়াস উদ্দিন বলেন, “বেনাপোল থেকে ঢাকা যেতে সময় লাগে ৬ ঘণ্টা; কিন্তু বেনাপোল চেকপোস্টের স্থলবন্দর বাস টার্মিনাল থেকে বন্দর এলাকা পার হতে এখন সময় লাগছে দুই থেকে তিন ঘণ্টা। এতে যাত্রীরা সময়মতো গন্তব্যে পৌঁছাতে পারছেন না।”
বেনাপোল সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি মফিজুর রহমান সজন বলেন, বেনাপোল বন্দরের পণ্যাগারের ধারণক্ষমতা ৪৪ হাজার মেট্রিক টন; কিন্তু এখানে সার্বক্ষণিক আমদানি পণ্য থাকে দ্বিগুণেরও বেশি। তার পর ও বর্তমানে দেশ থেকে রপ্তানির পরিমাণ বেড়েছে প্রায় দ্বিগুণ। বন্দর এলাকায় এ সমস্ত রপ্তানি বোঝাই পন্যের ট্রাক রাখার কোন টার্মিনাল না থাকায় ট্রাকগুলো দাড়িয়ে থাকে প্রধান সড়কের উপরে। এ কারনেই বেশি যানজটের সৃষ্টি হচ্ছে।
“বন্দরের পণ্যাগারে জায়গা না থাকায় আমদানি ও রপ্তানি পণ্য বোঝাই ট্রাকগুলো খালাসের অপেক্ষায় দিনের পর দিন মহাসড়কের উপরে দাঁড় করিয়ে রাখা হয়। ফলে বন্দর এলাকায় যানজট নিত্য লেগেই থাকে।”
বেনাপোল আমদানি-রফতানি সমিতির সভাপতি মহসিন মিলন বলেন,ভারতীয় পণ্যবোঝাই ট্রাক ও রপ্তানি পন্যবোঝাই ট্রাক বন্দরে আটকে থাকলে আমদানিকারকদের ‘ট্রাক ডেমারেজ’ গুনতে হয়। ফলে আর্থিক ক্ষতির শিকার হয়ে অনেকেই এ পথে আমদানি-রপ্তানি বন্ধ করে দিচ্ছেন, আবার কেউ কেউ অন্য বন্দরে চলে যাচ্ছেন। ব্যবসায়ীদের ক্ষতির পাশাপাশি সরকারের রাজস্ব আয়ের উপরও এর  বিরুপ প্রভাব পড়ে। বন্দরের প্রয়োজনীয় অবকাঠামো উন্নয়ন হলে রাজস্ব আদায় বেড়ে দ্বিগুণ হবে বলে মনে করেন তিনি
বিষয়টি নিয়ে বন্দর ব্যবহারকারী ব্যবসায়ী সংগঠন ও প্রশাসনের সঙ্গে একাধিকবার বৈঠক হয়েছে জানিয়ে বেনাপোল স্থলবন্দরের পরিচালক (ট্রাফিক)আব্দুল জলিল বলেন, যানজট নিরসনে জমি অধিগ্রহণসহ বিভিন্ন পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। অবকাঠামো উন্নয়ন কাজ শেষ হলে অনেকাংশে যানজট নিরসন হবে।