রবিবার, ০২ এপ্রিল ২০২৩, ১৯ চৈত্র ১৪২৯ বঙ্গাব্দ

সাহাবাদের কুরবানী ও বদর যুদ্ধ জয়

হাফেজ মাওঃ মেহেদী হাসান।। 

ইসলামের প্রাথমিক যুগে সাহাবায়ে কেরামের উপর যে অবর্ণনীয় নির্যাতনের স্টিমরোলার চালানো হয়েছে, যে অগ্নিমূল্যে তাদেরকে ঈমানের পরীক্ষা দিতে হয়েছে, তার হাজার ভাগের এক ভাগও আমাদের উপর আসেনি। কিন্তু আল্লাহ পাকের ঘোষণা অনুযায়ী তারা যখন ঈমান-আমল ঠিক করে নিয়েছেন, তখন তাদের বিজয়ধারা অব্যাহতভাবে শুরু হয়েছে। আবু জাহল ও আবু লাহাবের মত ইসলামের শত্রুরা পর্যন্ত পালাবার পথ পায়নি। বদরের যুদ্ধের কথা আজো ইতিহাসের পাতায় স্বর্ণাক্ষরে লিখিত আছে। কেবলমাত্র তিনশত তেরজন অস্ত্রহীন, বর্মহীন, ক্ষুৎপিপাসা কাতর সাহাবায়ে কেরাম এক হাজার প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত ও সমরাস্ত্রে সুসজ্জিত কাফেরের বিরুদ্ধে লড়াই করে যে ঐতিহাসিক দৃষ্টান্ত অর্জন করেছিলেন, তা আজো ইতিহাসের এক মহাবিস্ময়।

ইমাম আবু হানীফা, মালেক ও আহমাদ রহ. এর কুরবানী

ইতিহাসের পাতা উল্টালে আমরা এই উম্মতের মাঝে আরো দৃষ্টান্ত খুঁজে পাই। উসমানিয়া ও আব্বাসিয়া খেলাফত যুগেও মুসলমানদের উপর কম অত্যাচার চালানো হয়নি। তৎকালীণ উলামা সমাজ ও মসজিদ-মাদরাসার বিরুদ্ধে তারা হয়ে উঠেছিল খড়গহস্ত। ইমাম আবু হানীফা, ইমাম মালেক ইমাম আহমাদ ইবনে হাম্বলের মত মহামনীষীরা পর্যন্ত তাদের সেসব নির্যাতন ও নিপীড়ন থেকে রেহাই পাননি। কিন্তু শেষ পর্যন্ত আল্লাহ তা‘আলা হককেই বিজয়ী করেছেন। বাতিল সম্পূর্ণরূপে নিশ্চিহ্ন হয়ে গেছে। আজও ইমাম আবু হানিফা, মালেক ও আহমাদ রহ. তাদের দীনী কীর্তির কারণে অমর হয়ে আছেন!

সত্যের বিজয় নিশ্চিত

ভারতবর্ষে ইংরেজরা তাদের প্রায় ২০০ বছরের শাসনামলে মুসলমানদের উপর কম নির্যাতন করেনি। হাজার হাজার আলেমকে ফাসিকাষ্ঠে ঝুলানো হয়েছে। কুরআনের লক্ষ লক্ষ কপি জ্বালিয়ে দেয়া হয়েছে। এত কিছুর পরও আল্লাহ হককে ঠিকই বাকি রেখেছেন। আর বাতিলকে সমূলে উৎপাটিত করেছেন। পূর্বযুগের নমরূদ, ফিরআউন, কারূন, হামানরা আজ সকলেই ঘৃণিত ও অভিশপ্ত। নিকট অতীতের মীর জাফর, রায়দুর্লভ আর ঘসেটি বেগমরাও ধিকৃত হয়েছে একইভাবে। কিন্তু ইসলাম ও মুসলমানদেরকে তারা ধ্বংস করতে পারেনি। ইসলামের ধারা নিজস্ব গতিতে সম্মুখপানে অগ্রসর হয়েছে। আর আগামী  দিনেও ইসলামের এ ধারা নিজস্ব গতিতেই চলতে থাকবে ইনশাআল্লাহ। তাই আসুন আমরা নিজেদের ঈমান আরো বেশি শক্তিশালী করে তুলি, তাহলে বিজয় আমাদেরই।

সমগ্র বিশ্বের মুসলমানরা আজ যে চরম ক্রান্তিকাল অতিক্রম করছে, তা বর্ণনাতীত। আজ এ দেশের মুসলমান ঈমান-আমলের ইসলাহ করে পাকা ঈমানদার ও আমলদার হলেই মহান আল্লাহর নুসরত ও মদদ নেমে আসবে এদেশে। দেশের মানুষ শান্তি ও সুখের প্রাচুর্য নিয়ে কালাতিপাত করবে। ইসলাম হবে বিজয়ী ও সুপ্রতিষ্ঠিত।

সারকথা

এ প্রেক্ষিতে আলোচ্য আয়াত আমাদের সামনে আশার দিগন্ত উম্মোচন করে দিয়েছে। অভয় দিয়ে দীপ্ত কণ্ঠে ঘোষণা করছে ‘তোমরা নিরাশ হয়ো না’। কারণ বাতিলের এ উত্থান সাময়িক, পানির উপর ভাসমান খড়কুটার মত হকের প্রবল স্রোত যখন প্রবাহিত হবে, তখন সকল বাতিলকে ভাসিয়ে নিয়ে যাবে। বাতিলের কোন অস্তিত্ব তখন খুঁজে পাওয়া যাবে না। তবে নিজেদের ঈমান-আমলের দুর্বলতার কারণে আল্লাহ পাকের হুকুম-আহকাম পালনে শিথিলতা প্রদর্শনের দরুণ সাময়িক পরীক্ষার সম্মুখীন অবশ্যই হতে হবে। এই পরীক্ষা পূর্বের উম্মতদের উপরও এসেছিল। তাই নিরাশ না হয়ে নিজেদের ঈমান-আমল মজবুতির কাজে আত্মনিয়োগ করতে হবে। পাশাপাশি ইসলামের পরিচিত সমগ্র বিশ্বের দরবারে পেশ করার জন্য সময় বের করে ময়দানে নামতে হবে। এছাড়া দ্বীনী শিক্ষার ব্যপক প্রচার-প্রসার করতে হবে। এর জন্য প্রতিটি গ্রামে-মহল্লায় আদর্শ নূরানী মক্তব প্রতিষ্ঠিত করতে হবে এবং এটাই হবে ইসলামী সমাজ ব্যবস্থা কায়েমের জন্য সর্বোত্তম প্রস্তুতি মূলক পদক্ষেপ।

জনপ্রিয়

সাহাবাদের কুরবানী ও বদর যুদ্ধ জয়

প্রকাশের সময় : ০৮:৫৩:১৫ অপরাহ্ন, সোমবার, ২০ সেপ্টেম্বর ২০২১

হাফেজ মাওঃ মেহেদী হাসান।। 

ইসলামের প্রাথমিক যুগে সাহাবায়ে কেরামের উপর যে অবর্ণনীয় নির্যাতনের স্টিমরোলার চালানো হয়েছে, যে অগ্নিমূল্যে তাদেরকে ঈমানের পরীক্ষা দিতে হয়েছে, তার হাজার ভাগের এক ভাগও আমাদের উপর আসেনি। কিন্তু আল্লাহ পাকের ঘোষণা অনুযায়ী তারা যখন ঈমান-আমল ঠিক করে নিয়েছেন, তখন তাদের বিজয়ধারা অব্যাহতভাবে শুরু হয়েছে। আবু জাহল ও আবু লাহাবের মত ইসলামের শত্রুরা পর্যন্ত পালাবার পথ পায়নি। বদরের যুদ্ধের কথা আজো ইতিহাসের পাতায় স্বর্ণাক্ষরে লিখিত আছে। কেবলমাত্র তিনশত তেরজন অস্ত্রহীন, বর্মহীন, ক্ষুৎপিপাসা কাতর সাহাবায়ে কেরাম এক হাজার প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত ও সমরাস্ত্রে সুসজ্জিত কাফেরের বিরুদ্ধে লড়াই করে যে ঐতিহাসিক দৃষ্টান্ত অর্জন করেছিলেন, তা আজো ইতিহাসের এক মহাবিস্ময়।

ইমাম আবু হানীফা, মালেক ও আহমাদ রহ. এর কুরবানী

ইতিহাসের পাতা উল্টালে আমরা এই উম্মতের মাঝে আরো দৃষ্টান্ত খুঁজে পাই। উসমানিয়া ও আব্বাসিয়া খেলাফত যুগেও মুসলমানদের উপর কম অত্যাচার চালানো হয়নি। তৎকালীণ উলামা সমাজ ও মসজিদ-মাদরাসার বিরুদ্ধে তারা হয়ে উঠেছিল খড়গহস্ত। ইমাম আবু হানীফা, ইমাম মালেক ইমাম আহমাদ ইবনে হাম্বলের মত মহামনীষীরা পর্যন্ত তাদের সেসব নির্যাতন ও নিপীড়ন থেকে রেহাই পাননি। কিন্তু শেষ পর্যন্ত আল্লাহ তা‘আলা হককেই বিজয়ী করেছেন। বাতিল সম্পূর্ণরূপে নিশ্চিহ্ন হয়ে গেছে। আজও ইমাম আবু হানিফা, মালেক ও আহমাদ রহ. তাদের দীনী কীর্তির কারণে অমর হয়ে আছেন!

সত্যের বিজয় নিশ্চিত

ভারতবর্ষে ইংরেজরা তাদের প্রায় ২০০ বছরের শাসনামলে মুসলমানদের উপর কম নির্যাতন করেনি। হাজার হাজার আলেমকে ফাসিকাষ্ঠে ঝুলানো হয়েছে। কুরআনের লক্ষ লক্ষ কপি জ্বালিয়ে দেয়া হয়েছে। এত কিছুর পরও আল্লাহ হককে ঠিকই বাকি রেখেছেন। আর বাতিলকে সমূলে উৎপাটিত করেছেন। পূর্বযুগের নমরূদ, ফিরআউন, কারূন, হামানরা আজ সকলেই ঘৃণিত ও অভিশপ্ত। নিকট অতীতের মীর জাফর, রায়দুর্লভ আর ঘসেটি বেগমরাও ধিকৃত হয়েছে একইভাবে। কিন্তু ইসলাম ও মুসলমানদেরকে তারা ধ্বংস করতে পারেনি। ইসলামের ধারা নিজস্ব গতিতে সম্মুখপানে অগ্রসর হয়েছে। আর আগামী  দিনেও ইসলামের এ ধারা নিজস্ব গতিতেই চলতে থাকবে ইনশাআল্লাহ। তাই আসুন আমরা নিজেদের ঈমান আরো বেশি শক্তিশালী করে তুলি, তাহলে বিজয় আমাদেরই।

সমগ্র বিশ্বের মুসলমানরা আজ যে চরম ক্রান্তিকাল অতিক্রম করছে, তা বর্ণনাতীত। আজ এ দেশের মুসলমান ঈমান-আমলের ইসলাহ করে পাকা ঈমানদার ও আমলদার হলেই মহান আল্লাহর নুসরত ও মদদ নেমে আসবে এদেশে। দেশের মানুষ শান্তি ও সুখের প্রাচুর্য নিয়ে কালাতিপাত করবে। ইসলাম হবে বিজয়ী ও সুপ্রতিষ্ঠিত।

সারকথা

এ প্রেক্ষিতে আলোচ্য আয়াত আমাদের সামনে আশার দিগন্ত উম্মোচন করে দিয়েছে। অভয় দিয়ে দীপ্ত কণ্ঠে ঘোষণা করছে ‘তোমরা নিরাশ হয়ো না’। কারণ বাতিলের এ উত্থান সাময়িক, পানির উপর ভাসমান খড়কুটার মত হকের প্রবল স্রোত যখন প্রবাহিত হবে, তখন সকল বাতিলকে ভাসিয়ে নিয়ে যাবে। বাতিলের কোন অস্তিত্ব তখন খুঁজে পাওয়া যাবে না। তবে নিজেদের ঈমান-আমলের দুর্বলতার কারণে আল্লাহ পাকের হুকুম-আহকাম পালনে শিথিলতা প্রদর্শনের দরুণ সাময়িক পরীক্ষার সম্মুখীন অবশ্যই হতে হবে। এই পরীক্ষা পূর্বের উম্মতদের উপরও এসেছিল। তাই নিরাশ না হয়ে নিজেদের ঈমান-আমল মজবুতির কাজে আত্মনিয়োগ করতে হবে। পাশাপাশি ইসলামের পরিচিত সমগ্র বিশ্বের দরবারে পেশ করার জন্য সময় বের করে ময়দানে নামতে হবে। এছাড়া দ্বীনী শিক্ষার ব্যপক প্রচার-প্রসার করতে হবে। এর জন্য প্রতিটি গ্রামে-মহল্লায় আদর্শ নূরানী মক্তব প্রতিষ্ঠিত করতে হবে এবং এটাই হবে ইসলামী সমাজ ব্যবস্থা কায়েমের জন্য সর্বোত্তম প্রস্তুতি মূলক পদক্ষেপ।