বৃহস্পতিবার, ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

পর্দার ব্যাপারে কুরআনের বিধান

হাফেজ মাওঃ মেহেদী হাসান।।

(১) আল্লাহ তা‘আলা ইরশাদ করেন-

উক্ত আয়াতের বিধানের সারমর্ম এই যে, বেগানা মহিলাদের নিকট থেকে পর পুরুষদের কোন ব্যবহারিক বস্তু, পাত্র ইত্যাদি নেয়া জরুরী হলে পুরুষগণ সামনে এসে নেবে না; বরং পর্দার আড়াল থেকে চাইবে। আরও বলা হয়েছে যে, পর্দার এই বিধান পুরুষ ও নারী উভয়ের অন্তরকে শয়তানের কু-মন্ত্রণা থেকে পবিত্র রাখার উদ্দেশ্যে দেয়া হয়েছে। (সূরা আহযাব-৫৩)

এ আয়াতের শানে নুযূলের বর্ণনায় বিশেষভাবে নবীপত্নীগণের উল্লেখ থাকলেও এ বিধান সমগ্র উম্মতের জন্যে নাযিল হয়েছে। (মা‘আরিফুল কুরআন-৭/১৩১)

এখানে প্রাণীধানযোগ্য বিষয় এই যে, উক্ত আয়াতে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লামের পুণ্যাত্মা পত্মীগণকে পর্দার বিধান দেয়া হয়েছে, যাদের অন্তরকে পাক-সাফ রাখার দায়িত্ব আল্লাহ তা‘আলা স্বয়ং গ্রহণ করেছেন। যেমন ইরশাদ হয়েছে-

অর্থ:আল্লাহ তা‘আলা তো কেবল তোমাদের থেকে অপবিত্রতা দূর করতে এবং তোমাদেরকে পূর্ণরূপে পূত-পবিত্র রাখতে চান। (সূরা আহযাব, ৩৩)

অপরদিকে যে সব পুরুষকে সম্বোধন করে এই বিধান দেয়া হয়েছে, তারা হলেন রাসূলে কারীম সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লামের সাহাবায়ে কিরাম, যাদের মর্যাদা নবীগণের (আ.) পরে সকলের ঊর্ধ্বে। সকল মুসলমান, গাওস, কুতুব ও আবদালের মর্তবা একজন সর্বনিম্ন সাহাবীর সমান হতে পারে না, এ কথার উপর উম্মতের ইজমা হয়ে গেছে; কিন্তু এতদসত্বেও তাঁদের আন্তরিক পবিত্রতা রক্ষা এবং শয়তানের কু-মন্ত্রণা থেকে বাঁচার জন্যে পুরুষ ও নারী সাহাবা রা.গণের মধ্যে পর্দার ব্যবস্থা করা জরুরী ঘোষণা করা হয়েছে।

আজ এমন কোন পুরুষ আছে, যে তার মনকে সাহাবায়ে কিরামের মন অপেক্ষা এবং এমন কোন মহিলা আছে যে, তার মনকে পুণ্যাত্মা নবী পত্মীগণের মন অপেক্ষা অধিক পবিত্র হওয়ার দাবী করতে পারে? আর এটা কিভাবে হতে পারে যে, নারীদের সাথে তাদের মেলামেশা কোন অনিষ্টের কারণ হবে না? (মা‘আরিফুল কুরআন-৭/২০০)

(২) আরো ইরশাদ হয়েছে-

অর্থ:(হে মুমিন মহিলাগণ!) তোমরা নিজ গৃহে অবস্থান করবে এবং পূর্বের জাহিলী যুগের ন্যায় নিজেদেরকে প্রদশন করে বের হবে না। (সূরা আহযাব-৩৩)

উক্ত আয়াতে পর্দা সম্পর্কিত আসল হুকুম এই যে, নারীগণ গৃহেই অবস্থান করবে। অর্থাৎ, জরুরী প্রয়োজনে শর‘ঈ অনুমতি ব্যতীত তারা বাইরে বের হবে না। সাথে সাথে একথাও বলা হয়েছে যে, যেভাবে ইসলামপূর্ব অজ্ঞ ও অন্ধ যুগে নারীরা প্রকাশ্যভাবে বেপর্দায় চলাফেরা করত, তোমরা কখনো সে রকম চলাফেরা করো না।

বর্ণিত আয়াতে পর্দা সম্পৃক্ত দু’টি বিষয় জানা গেলঃ

প্রথমত: প্রকৃতপক্ষে আল্লাহ তা‘আলার নিকট নারীদের বাড়ী থেকে বের না হওয়াই কাম্য। গৃহকর্ম তথা গৃহের আভ্যন্তরীণ কর্ম সম্পন্ন করার উদ্দেশ্যেই তাদেরকে সৃষ্টি করা হয়েছে। এতেই তারা পুরোপুরি আত্মনিয়োগ করবে। যেমন স্বামীর সেবা যত্ন, সন্তানদের দ্বীনী ও কুরআনী তা‘লীম, স্বামীর সংসার ও সম্পদের সংরক্ষণ, মহিলা মহলে দ্বীনের দাওয়াত ও তা‘লীম এবং নিজের ইবাদত বন্দেগীই তার জীবনের মূল লক্ষ্য।

দ্বিতীয়ত: শর‘ঈ প্রয়োজনের তাকীদে যদি নারীকে বাড়ী থেকে বের হতেই হয়, তাহলে তার বের হওয়া জায়েয আছে বটে, তবে শর্ত হল যেন সৌন্দর্য প্রদর্শন না করে বের হয়। বরং চেহারাসহ গোটা শরীর আবৃত করে ফেলে, এমন বোরকা অথবা এমন বড় আকারের চাদর ব্যবহার করে বের হবে। (মা‘আরিফুল কুরআন, ৭/১৩৩)

(৩) কুরআন শরীফে আরো ইরশাদ হয়েছে-

হে নবী পত্নীগণ! (উদ্দেশ্য উম্মতের সকল মহিলা) (মা‘আরিফুল কুরআন,৭/১৩১)

তোমরা অন্য নারীদের মত নও। যদি তোমরা আল্লাহকে ভয় কর, তাহলে পরপুরুষের সাথে এমন কোমল ও আকর্ষণীয় ভঙ্গিতে কথা বলো না, যার ফলে যে ব্যক্তির অন্তরে ব্যাধি রয়েছে সে কু-বাসনা করবে। আর তোমরা সঙ্গত কথাবার্তা বলবে। (সূরা আহযাব, ৩২)

উক্ত আয়াতটিও নারীদের পর্দা সম্পর্কিত, তাদের কণ্ঠ ও বাক্যালাপ নিয়ন্ত্রণ সংক্রান্ত আয়াতে, এর ব্যাখ্যা হচ্ছে যদি, পরপুরুষের সাথে পর্দার অন্তরাল থেকে কথা বলার প্রয়োজনীয়তা দেখা দেয়, তাহলে বাক্যালাপের সময় নারী কণ্ঠের স্বভাবসুলভ কোমলতা ও নাজুকতা কৃত্রিমভাবে পরিহার করবে। অর্থাৎ, এমন কোমলতা যা শ্রোতার মনে অবাঞ্ছিত কামনা সঞ্চার করে, তার কোন সুযোগ দিবে না। যেমন এর পরে ইরশাদ হয়েছে, অর্থাৎ, এরূপ কোমল কণ্ঠে বাক্যালাপ করেনা, যা ব্যাধিগ্রস্ত অন্তর বিশিষ্ট লোকের মনে কু-লালসা ও আকর্ষণ সৃষ্টি করে।

ঘুমন্ত স্বামীর গোপনাঙ্গ কেটে সন্তান রেখেই পালালেন স্ত্রী

পর্দার ব্যাপারে কুরআনের বিধান

প্রকাশের সময় : ০৪:৩৯:০৮ অপরাহ্ন, সোমবার, ২৭ সেপ্টেম্বর ২০২১

হাফেজ মাওঃ মেহেদী হাসান।।

(১) আল্লাহ তা‘আলা ইরশাদ করেন-

উক্ত আয়াতের বিধানের সারমর্ম এই যে, বেগানা মহিলাদের নিকট থেকে পর পুরুষদের কোন ব্যবহারিক বস্তু, পাত্র ইত্যাদি নেয়া জরুরী হলে পুরুষগণ সামনে এসে নেবে না; বরং পর্দার আড়াল থেকে চাইবে। আরও বলা হয়েছে যে, পর্দার এই বিধান পুরুষ ও নারী উভয়ের অন্তরকে শয়তানের কু-মন্ত্রণা থেকে পবিত্র রাখার উদ্দেশ্যে দেয়া হয়েছে। (সূরা আহযাব-৫৩)

এ আয়াতের শানে নুযূলের বর্ণনায় বিশেষভাবে নবীপত্নীগণের উল্লেখ থাকলেও এ বিধান সমগ্র উম্মতের জন্যে নাযিল হয়েছে। (মা‘আরিফুল কুরআন-৭/১৩১)

এখানে প্রাণীধানযোগ্য বিষয় এই যে, উক্ত আয়াতে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লামের পুণ্যাত্মা পত্মীগণকে পর্দার বিধান দেয়া হয়েছে, যাদের অন্তরকে পাক-সাফ রাখার দায়িত্ব আল্লাহ তা‘আলা স্বয়ং গ্রহণ করেছেন। যেমন ইরশাদ হয়েছে-

অর্থ:আল্লাহ তা‘আলা তো কেবল তোমাদের থেকে অপবিত্রতা দূর করতে এবং তোমাদেরকে পূর্ণরূপে পূত-পবিত্র রাখতে চান। (সূরা আহযাব, ৩৩)

অপরদিকে যে সব পুরুষকে সম্বোধন করে এই বিধান দেয়া হয়েছে, তারা হলেন রাসূলে কারীম সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লামের সাহাবায়ে কিরাম, যাদের মর্যাদা নবীগণের (আ.) পরে সকলের ঊর্ধ্বে। সকল মুসলমান, গাওস, কুতুব ও আবদালের মর্তবা একজন সর্বনিম্ন সাহাবীর সমান হতে পারে না, এ কথার উপর উম্মতের ইজমা হয়ে গেছে; কিন্তু এতদসত্বেও তাঁদের আন্তরিক পবিত্রতা রক্ষা এবং শয়তানের কু-মন্ত্রণা থেকে বাঁচার জন্যে পুরুষ ও নারী সাহাবা রা.গণের মধ্যে পর্দার ব্যবস্থা করা জরুরী ঘোষণা করা হয়েছে।

আজ এমন কোন পুরুষ আছে, যে তার মনকে সাহাবায়ে কিরামের মন অপেক্ষা এবং এমন কোন মহিলা আছে যে, তার মনকে পুণ্যাত্মা নবী পত্মীগণের মন অপেক্ষা অধিক পবিত্র হওয়ার দাবী করতে পারে? আর এটা কিভাবে হতে পারে যে, নারীদের সাথে তাদের মেলামেশা কোন অনিষ্টের কারণ হবে না? (মা‘আরিফুল কুরআন-৭/২০০)

(২) আরো ইরশাদ হয়েছে-

অর্থ:(হে মুমিন মহিলাগণ!) তোমরা নিজ গৃহে অবস্থান করবে এবং পূর্বের জাহিলী যুগের ন্যায় নিজেদেরকে প্রদশন করে বের হবে না। (সূরা আহযাব-৩৩)

উক্ত আয়াতে পর্দা সম্পর্কিত আসল হুকুম এই যে, নারীগণ গৃহেই অবস্থান করবে। অর্থাৎ, জরুরী প্রয়োজনে শর‘ঈ অনুমতি ব্যতীত তারা বাইরে বের হবে না। সাথে সাথে একথাও বলা হয়েছে যে, যেভাবে ইসলামপূর্ব অজ্ঞ ও অন্ধ যুগে নারীরা প্রকাশ্যভাবে বেপর্দায় চলাফেরা করত, তোমরা কখনো সে রকম চলাফেরা করো না।

বর্ণিত আয়াতে পর্দা সম্পৃক্ত দু’টি বিষয় জানা গেলঃ

প্রথমত: প্রকৃতপক্ষে আল্লাহ তা‘আলার নিকট নারীদের বাড়ী থেকে বের না হওয়াই কাম্য। গৃহকর্ম তথা গৃহের আভ্যন্তরীণ কর্ম সম্পন্ন করার উদ্দেশ্যেই তাদেরকে সৃষ্টি করা হয়েছে। এতেই তারা পুরোপুরি আত্মনিয়োগ করবে। যেমন স্বামীর সেবা যত্ন, সন্তানদের দ্বীনী ও কুরআনী তা‘লীম, স্বামীর সংসার ও সম্পদের সংরক্ষণ, মহিলা মহলে দ্বীনের দাওয়াত ও তা‘লীম এবং নিজের ইবাদত বন্দেগীই তার জীবনের মূল লক্ষ্য।

দ্বিতীয়ত: শর‘ঈ প্রয়োজনের তাকীদে যদি নারীকে বাড়ী থেকে বের হতেই হয়, তাহলে তার বের হওয়া জায়েয আছে বটে, তবে শর্ত হল যেন সৌন্দর্য প্রদর্শন না করে বের হয়। বরং চেহারাসহ গোটা শরীর আবৃত করে ফেলে, এমন বোরকা অথবা এমন বড় আকারের চাদর ব্যবহার করে বের হবে। (মা‘আরিফুল কুরআন, ৭/১৩৩)

(৩) কুরআন শরীফে আরো ইরশাদ হয়েছে-

হে নবী পত্নীগণ! (উদ্দেশ্য উম্মতের সকল মহিলা) (মা‘আরিফুল কুরআন,৭/১৩১)

তোমরা অন্য নারীদের মত নও। যদি তোমরা আল্লাহকে ভয় কর, তাহলে পরপুরুষের সাথে এমন কোমল ও আকর্ষণীয় ভঙ্গিতে কথা বলো না, যার ফলে যে ব্যক্তির অন্তরে ব্যাধি রয়েছে সে কু-বাসনা করবে। আর তোমরা সঙ্গত কথাবার্তা বলবে। (সূরা আহযাব, ৩২)

উক্ত আয়াতটিও নারীদের পর্দা সম্পর্কিত, তাদের কণ্ঠ ও বাক্যালাপ নিয়ন্ত্রণ সংক্রান্ত আয়াতে, এর ব্যাখ্যা হচ্ছে যদি, পরপুরুষের সাথে পর্দার অন্তরাল থেকে কথা বলার প্রয়োজনীয়তা দেখা দেয়, তাহলে বাক্যালাপের সময় নারী কণ্ঠের স্বভাবসুলভ কোমলতা ও নাজুকতা কৃত্রিমভাবে পরিহার করবে। অর্থাৎ, এমন কোমলতা যা শ্রোতার মনে অবাঞ্ছিত কামনা সঞ্চার করে, তার কোন সুযোগ দিবে না। যেমন এর পরে ইরশাদ হয়েছে, অর্থাৎ, এরূপ কোমল কণ্ঠে বাক্যালাপ করেনা, যা ব্যাধিগ্রস্ত অন্তর বিশিষ্ট লোকের মনে কু-লালসা ও আকর্ষণ সৃষ্টি করে।