শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

বেচা-কেনা ও লেন-দেন

সংগৃহীত

হাফেজ মাওঃ মেহেদী হাসান ।।
হারাম সম্পদ দিয়ে গঠিত শরীর দোযখে যাবে
হযরত জাবের রাযি. বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম কা’ব ইবনে উজরা রাযি. কে বলেছেন, হে কা‘ব ইবনে উজরা! যে দেহের গোশত হারাম মালে গঠিত, তা বেহেশতে প্রবেশ করবে না। হারাম মালে গঠিত দেহের জন্য দোযখই সমীচীন।
যে সুদ খায় এবং যে সুদ দেয় উভয়েই গুনাহগার
হযরত জাবের রাযি. থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম লা’নত করেছেন যে সুদ খায় তার প্রতি, যে সুদ দেয় তার প্রতি, যে সুদের দলীল লেখে তার প্রতি, যে দু’জন সুদের সাক্ষী হয় তাদের প্রতি। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এটাও বলেছেন, গুনাহগার সাব্যস্ত হওয়ার ব্যাপারে সকলেই সমান।
একই বস্তু পরিমাপে কম-বেশি করা যাবে না
হযরত আবূ সাঈদ খুদরী রাযি. থেকে বর্ণিত, একদা হযরত বেলাল রাযি. রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের কাছে বরনী (এক প্রকার খুরমা) নিয়ে এলেন। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তাঁকে জিজ্ঞাসা করলেন, এই প্রকার খুরমা কোত্থেকে পেলে? তিনি বললেন, আমার কাছে নিম্নমানের খুরমা ছিলো। আমি দুই সা’ (প্রায় আট সের) নিম্নমানের খুরমা এক সা’ (প্রায় চার সের) ভালো খুরমার বিনিময়ে বিক্রি করেছি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে খাওয়ানোর জন্য। একথা শুনে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন, আহা! এ তো সুদী লেনদেন হয়ে গেল। আহা! এ তো সুদী লেনদেন হয়ে গেল। এমনটি করো না। বরং তুমি এই মন্দ খুরমা পরিমাণে বেশি দিয়ে কম পরিমাণে উত্তম খুরমা লাভ করতে চাইলে মুদ্রার বিনিময়ে মন্দ খুরমা ভিন্নভাবে বিক্রি করবে অর্থাৎ সম্পূর্ণ পৃথক দু‘টি বেচা-কেনা করবে। এরপর সেই মুদ্রা দিয়ে উত্তম খুরমা কিনবে।
ঋণগ্রহীতার কোন সুযোগ-সুবিধা ঋণদাতা নিতে পারবে না
হযরত আনাস রাযি. থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, তোমাদের কেউ যদি কোন ব্যক্তিকে ধার দেয়, এরপর ধারগ্রহীতা ধারদাতাকে কোন হাদিয়া বা উপহার দেয়, তবে তা গ্রহণ করবে না। অথবা যদি গ্রহীতা ধারদাতাকে যানবাহনের উপর বসাতে চায়, তবে তার উপর বসবে না। অবশ্য যদি ধার নেয়ার পূর্ব থেকে তাদের মধ্যে এরূপ আচরণ প্রচলিত থাকে, তবে তা স্বতন্ত্র কথা।
ফল গাছে থাকতে বিক্রি নিষেধ
হযরত ইবনে উমর রাযি. বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম মুযাবানার সূরতে ক্রয়-বিক্রয় থেকে নিষেধ করেছেন। মুযাবানা খেজুরের মধ্যে এভাবে করা হয় যে, বাগানের গাছে খেজুর রয়েছে। অনুমান করা যে, বৃক্ষ থেকে ছিন্ন করে শুকালে এতে কী পরিমাণ খুরমা হবে? ঐ পরিমাণ খুরমা প্রদান করে তার বিনিময়ে বৃক্ষের খেজুর বৃক্ষে রেখে ক্রয় করা। মুযাবানা আঙ্গুরের মধ্যে এভাবে করা হয় যে, গাছে আঙ্গুর রয়েছে। অনুমান করা যে, শুকালে কী পরিমাণ কিশমিশ হতে পারে? সে মতে মেপে ঐ পরিমাণ কিশমিশের বিনিময়ে গাছের আঙ্গুর ক্রয় করা। আর শস্যের মধ্যে এভাবে হয় যে, ক্ষেতে শস্য আছে। অনুমান করা যে, এতে খাদ্য কী পরিমাণ আছে? মেপে সে পরিমাণে ঐ জাতীয় খাদ্য প্রদান করে ক্ষেতের শস্য ক্রয় করা। এসব হতে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম নিষেধ করেছেন।
গাছের ফল খাওয়ার উপযোগী না হলে বিক্রি করা নিষেধ
হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে উমর রাযি. থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম গাছের ফল উপযোগী হওয়ার আগে তা ক্রয়-বিক্রয় করতে নিষেধ করেছেন। এ নিষেধাজ্ঞা বিক্রেতা ও ক্রেতা উভয়ের জন্য প্রযোজ্য।
সহীহ মুসলিমের এক বর্ণনায় আছে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম নিষেধ করেছেন খেজুর বিক্রি করতে যতক্ষণ না তাতে লাল বা হলুদ রং আসে এবং গম-যব ইত্যাদি শিষ জাতীয় বস্তু যতক্ষণ পূর্ণ পেকে সাদা রংধারী না হয়ে যায় অর্থাৎ কোন প্রকার দুর্যোগে বিনষ্ট হওয়ার সময় অতিক্রান্ত হয়ে যাওয়ার পর বিক্রি করবে।
গাছের ফল লাল হওয়ার আগে বিক্রি নিষেধ
হযরত আনাস রাযি. থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম নিষেধ করেছেন ফল লাল হওয়ার আগে বিক্রি করতে। তিনি বলেছেন, ফল পাকার আগে বিক্রি করার পর আল্লাহ তা‘আলার সৃষ্ট কোন দুর্যোগে যদি ফল বিনষ্ট হয়ে যায়, তবে মুসলমান বিক্রেতা কিসের বিনিময়ে ক্রেতা থেকে টাকা আদায় করবে?
গাছের ফল অগ্রিম বিক্রি করা নিষেধ
হযরত জাবের রা, থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম কয়েক বছরের জন্য অগ্রিম ফল বিক্রি করা থেকে নিষেধ করেছেন এবং তিনি পরামর্শ দিয়েছেন আহরণের আগে যা বিনষ্ট হয় তার মূল্য কর্তন করতে।
অনিশ্চিত বস্তুর ক্রয়-বিক্রয় নিষেধ
হযরত আবূ হুরাইরা রাযি. বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম নিষেধ করেছেন বাই‘য়ে হাসাত (কাঁকর নিক্ষেপ করার মাধ্যমে ক্রয়-বিক্রয়) করা থেকে এবং বাই‘য়ে গারার (অনিশ্চিত বস্তুর ক্রয়-বিক্রয়) থেকে (যেমন পানির মধ্যে মাছ বিক্রি করা)।
যে বস্তু দখলে নেই তা বিক্রি করা নিষেধ
হযরত হাকীম ইবনে হিযাম রাযি. বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আমাকে নিষেধ করেছেন ঐ বস্তু বিক্রি করতে যা আমার দখলে বা মালিকানায় নেই।
ত্রুটিপূর্ণ বস্তুর ত্রুটি গোপন রেখে বিক্রি নিষেধ
হযরত ওয়াসেলা ইবনে আসকা’ রাযি. বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে বলতে শুনেছি, যে ব্যক্তি কোন ত্রুটিপূর্ণ বস্তুর ত্রুটি না জানিয়ে বিক্রি করবে, সে সর্বদা আল্লাহ তা‘আলার অসন্তুষ্টিতে নিমজ্জিত থাকবে এবং ফেরেশতাগণ তার প্রতি লা’নত এবং অভিশাপ দিবেন।
তিনটি উপায়ে উপার্জন ঘৃণিত
হযরত রাফে’ ইবনে খাদীজ রাযি. থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, কুকুর বিক্রির মূল্য ঘৃণিত বস্তু, ব্যভিচারের বিনিময়ও অতি জঘন্য, রক্ত ব্যবসাও জঘন্য।
মদের বিষয়ে দশজনের প্রতি লা’নত
হযরত আনাস রাযি. বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম মদ সংশ্লিষ্ট দশজনের প্রতি লা’নত করেছেন। ১. যে মদ তৈরি করে, ২. যে মদ তৈরির ফরমায়েশ দেয়, ৩. যে মদ পান করে, ৪. যে মদ বহন করে, ৫. যার প্রতি মদ বহন করা হয়, ৬. যে মদ পান করায়, ৭. যে মদ বিক্রি করে, ৮. যে সেটার মূল্য ভোগ করে, ৯. যে মদ কেনে, ১০. যার জন্য মদ কেনা হয়।
ব্যবসার মধ্যে ক্রেতার প্রতি সহানুভূতি থাকলে মুক্তি লাভ হয়
হযরত হুযাইফা রাযি. বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, তোমাদের পূর্ববর্তী উম্মতের এক ব্যক্তির কাছে মালাকুল মউত রূহ কবজ করার জন্য উপস্থিত হলেন। তাকে জিজ্ঞাসা করা হলো, তুমি কি কোনো বিশেষ নেক আমল করেছ? সে বললো, আমার মনে নেই। বলা হলো, চিন্তা কর। সে বললো, এমন কোন কাজই মনে আসে না একটি কাজ ব্যতীত যে, দুনিয়ার জীবনে আমি আমার লোকদেরকে ক্রেতার প্রতি সহানুভূতি দেখাতে নির্দেশ দিতাম। আমার ক্রেতা ধনী হলেও তাকে সময় দিতাম। আর যদি সে গরীব হত, তাকে আমার প্রাপ্য মাফ করে দিতাম। এই আমলের বদৌলতে আল্লাহ তা‘আলা ঐ ব্যক্তিকে বেহেশত দান করেছেন।
কসম করে মাল বিক্রি করলে বরকত কমে যায়
হযরত আবূ হুরাইরা রাযি. বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে বলতে শুনেছি, তিনি বলেছেন, অধিক কসম খাওয়ায় মালের কাটতি বাড়ে। তবে বরকত দূর হয়ে যায়।
আমানতদার ও সৎ ব্যবসায়ীগণ নবী ও সিদ্দীকগণের দলভুক্ত
হযরত আবূ সাঈদ খুদরী রাযি. বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, সত্যবাদী, আমানতদার, বিশ্বাসী ব্যবসায়ী কিয়ামতের দিন নবী, সিদ্দীক ও শহীদগণের সাথে থাকবেন।

বেচা-কেনা ও লেন-দেন

প্রকাশের সময় : ০৭:০৬:৫৪ অপরাহ্ন, বুধবার, ৬ অক্টোবর ২০২১
হাফেজ মাওঃ মেহেদী হাসান ।।
হারাম সম্পদ দিয়ে গঠিত শরীর দোযখে যাবে
হযরত জাবের রাযি. বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম কা’ব ইবনে উজরা রাযি. কে বলেছেন, হে কা‘ব ইবনে উজরা! যে দেহের গোশত হারাম মালে গঠিত, তা বেহেশতে প্রবেশ করবে না। হারাম মালে গঠিত দেহের জন্য দোযখই সমীচীন।
যে সুদ খায় এবং যে সুদ দেয় উভয়েই গুনাহগার
হযরত জাবের রাযি. থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম লা’নত করেছেন যে সুদ খায় তার প্রতি, যে সুদ দেয় তার প্রতি, যে সুদের দলীল লেখে তার প্রতি, যে দু’জন সুদের সাক্ষী হয় তাদের প্রতি। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এটাও বলেছেন, গুনাহগার সাব্যস্ত হওয়ার ব্যাপারে সকলেই সমান।
একই বস্তু পরিমাপে কম-বেশি করা যাবে না
হযরত আবূ সাঈদ খুদরী রাযি. থেকে বর্ণিত, একদা হযরত বেলাল রাযি. রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের কাছে বরনী (এক প্রকার খুরমা) নিয়ে এলেন। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তাঁকে জিজ্ঞাসা করলেন, এই প্রকার খুরমা কোত্থেকে পেলে? তিনি বললেন, আমার কাছে নিম্নমানের খুরমা ছিলো। আমি দুই সা’ (প্রায় আট সের) নিম্নমানের খুরমা এক সা’ (প্রায় চার সের) ভালো খুরমার বিনিময়ে বিক্রি করেছি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে খাওয়ানোর জন্য। একথা শুনে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন, আহা! এ তো সুদী লেনদেন হয়ে গেল। আহা! এ তো সুদী লেনদেন হয়ে গেল। এমনটি করো না। বরং তুমি এই মন্দ খুরমা পরিমাণে বেশি দিয়ে কম পরিমাণে উত্তম খুরমা লাভ করতে চাইলে মুদ্রার বিনিময়ে মন্দ খুরমা ভিন্নভাবে বিক্রি করবে অর্থাৎ সম্পূর্ণ পৃথক দু‘টি বেচা-কেনা করবে। এরপর সেই মুদ্রা দিয়ে উত্তম খুরমা কিনবে।
ঋণগ্রহীতার কোন সুযোগ-সুবিধা ঋণদাতা নিতে পারবে না
হযরত আনাস রাযি. থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, তোমাদের কেউ যদি কোন ব্যক্তিকে ধার দেয়, এরপর ধারগ্রহীতা ধারদাতাকে কোন হাদিয়া বা উপহার দেয়, তবে তা গ্রহণ করবে না। অথবা যদি গ্রহীতা ধারদাতাকে যানবাহনের উপর বসাতে চায়, তবে তার উপর বসবে না। অবশ্য যদি ধার নেয়ার পূর্ব থেকে তাদের মধ্যে এরূপ আচরণ প্রচলিত থাকে, তবে তা স্বতন্ত্র কথা।
ফল গাছে থাকতে বিক্রি নিষেধ
হযরত ইবনে উমর রাযি. বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম মুযাবানার সূরতে ক্রয়-বিক্রয় থেকে নিষেধ করেছেন। মুযাবানা খেজুরের মধ্যে এভাবে করা হয় যে, বাগানের গাছে খেজুর রয়েছে। অনুমান করা যে, বৃক্ষ থেকে ছিন্ন করে শুকালে এতে কী পরিমাণ খুরমা হবে? ঐ পরিমাণ খুরমা প্রদান করে তার বিনিময়ে বৃক্ষের খেজুর বৃক্ষে রেখে ক্রয় করা। মুযাবানা আঙ্গুরের মধ্যে এভাবে করা হয় যে, গাছে আঙ্গুর রয়েছে। অনুমান করা যে, শুকালে কী পরিমাণ কিশমিশ হতে পারে? সে মতে মেপে ঐ পরিমাণ কিশমিশের বিনিময়ে গাছের আঙ্গুর ক্রয় করা। আর শস্যের মধ্যে এভাবে হয় যে, ক্ষেতে শস্য আছে। অনুমান করা যে, এতে খাদ্য কী পরিমাণ আছে? মেপে সে পরিমাণে ঐ জাতীয় খাদ্য প্রদান করে ক্ষেতের শস্য ক্রয় করা। এসব হতে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম নিষেধ করেছেন।
গাছের ফল খাওয়ার উপযোগী না হলে বিক্রি করা নিষেধ
হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে উমর রাযি. থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম গাছের ফল উপযোগী হওয়ার আগে তা ক্রয়-বিক্রয় করতে নিষেধ করেছেন। এ নিষেধাজ্ঞা বিক্রেতা ও ক্রেতা উভয়ের জন্য প্রযোজ্য।
সহীহ মুসলিমের এক বর্ণনায় আছে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম নিষেধ করেছেন খেজুর বিক্রি করতে যতক্ষণ না তাতে লাল বা হলুদ রং আসে এবং গম-যব ইত্যাদি শিষ জাতীয় বস্তু যতক্ষণ পূর্ণ পেকে সাদা রংধারী না হয়ে যায় অর্থাৎ কোন প্রকার দুর্যোগে বিনষ্ট হওয়ার সময় অতিক্রান্ত হয়ে যাওয়ার পর বিক্রি করবে।
গাছের ফল লাল হওয়ার আগে বিক্রি নিষেধ
হযরত আনাস রাযি. থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম নিষেধ করেছেন ফল লাল হওয়ার আগে বিক্রি করতে। তিনি বলেছেন, ফল পাকার আগে বিক্রি করার পর আল্লাহ তা‘আলার সৃষ্ট কোন দুর্যোগে যদি ফল বিনষ্ট হয়ে যায়, তবে মুসলমান বিক্রেতা কিসের বিনিময়ে ক্রেতা থেকে টাকা আদায় করবে?
গাছের ফল অগ্রিম বিক্রি করা নিষেধ
হযরত জাবের রা, থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম কয়েক বছরের জন্য অগ্রিম ফল বিক্রি করা থেকে নিষেধ করেছেন এবং তিনি পরামর্শ দিয়েছেন আহরণের আগে যা বিনষ্ট হয় তার মূল্য কর্তন করতে।
অনিশ্চিত বস্তুর ক্রয়-বিক্রয় নিষেধ
হযরত আবূ হুরাইরা রাযি. বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম নিষেধ করেছেন বাই‘য়ে হাসাত (কাঁকর নিক্ষেপ করার মাধ্যমে ক্রয়-বিক্রয়) করা থেকে এবং বাই‘য়ে গারার (অনিশ্চিত বস্তুর ক্রয়-বিক্রয়) থেকে (যেমন পানির মধ্যে মাছ বিক্রি করা)।
যে বস্তু দখলে নেই তা বিক্রি করা নিষেধ
হযরত হাকীম ইবনে হিযাম রাযি. বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আমাকে নিষেধ করেছেন ঐ বস্তু বিক্রি করতে যা আমার দখলে বা মালিকানায় নেই।
ত্রুটিপূর্ণ বস্তুর ত্রুটি গোপন রেখে বিক্রি নিষেধ
হযরত ওয়াসেলা ইবনে আসকা’ রাযি. বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে বলতে শুনেছি, যে ব্যক্তি কোন ত্রুটিপূর্ণ বস্তুর ত্রুটি না জানিয়ে বিক্রি করবে, সে সর্বদা আল্লাহ তা‘আলার অসন্তুষ্টিতে নিমজ্জিত থাকবে এবং ফেরেশতাগণ তার প্রতি লা’নত এবং অভিশাপ দিবেন।
তিনটি উপায়ে উপার্জন ঘৃণিত
হযরত রাফে’ ইবনে খাদীজ রাযি. থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, কুকুর বিক্রির মূল্য ঘৃণিত বস্তু, ব্যভিচারের বিনিময়ও অতি জঘন্য, রক্ত ব্যবসাও জঘন্য।
মদের বিষয়ে দশজনের প্রতি লা’নত
হযরত আনাস রাযি. বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম মদ সংশ্লিষ্ট দশজনের প্রতি লা’নত করেছেন। ১. যে মদ তৈরি করে, ২. যে মদ তৈরির ফরমায়েশ দেয়, ৩. যে মদ পান করে, ৪. যে মদ বহন করে, ৫. যার প্রতি মদ বহন করা হয়, ৬. যে মদ পান করায়, ৭. যে মদ বিক্রি করে, ৮. যে সেটার মূল্য ভোগ করে, ৯. যে মদ কেনে, ১০. যার জন্য মদ কেনা হয়।
ব্যবসার মধ্যে ক্রেতার প্রতি সহানুভূতি থাকলে মুক্তি লাভ হয়
হযরত হুযাইফা রাযি. বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, তোমাদের পূর্ববর্তী উম্মতের এক ব্যক্তির কাছে মালাকুল মউত রূহ কবজ করার জন্য উপস্থিত হলেন। তাকে জিজ্ঞাসা করা হলো, তুমি কি কোনো বিশেষ নেক আমল করেছ? সে বললো, আমার মনে নেই। বলা হলো, চিন্তা কর। সে বললো, এমন কোন কাজই মনে আসে না একটি কাজ ব্যতীত যে, দুনিয়ার জীবনে আমি আমার লোকদেরকে ক্রেতার প্রতি সহানুভূতি দেখাতে নির্দেশ দিতাম। আমার ক্রেতা ধনী হলেও তাকে সময় দিতাম। আর যদি সে গরীব হত, তাকে আমার প্রাপ্য মাফ করে দিতাম। এই আমলের বদৌলতে আল্লাহ তা‘আলা ঐ ব্যক্তিকে বেহেশত দান করেছেন।
কসম করে মাল বিক্রি করলে বরকত কমে যায়
হযরত আবূ হুরাইরা রাযি. বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে বলতে শুনেছি, তিনি বলেছেন, অধিক কসম খাওয়ায় মালের কাটতি বাড়ে। তবে বরকত দূর হয়ে যায়।
আমানতদার ও সৎ ব্যবসায়ীগণ নবী ও সিদ্দীকগণের দলভুক্ত
হযরত আবূ সাঈদ খুদরী রাযি. বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, সত্যবাদী, আমানতদার, বিশ্বাসী ব্যবসায়ী কিয়ামতের দিন নবী, সিদ্দীক ও শহীদগণের সাথে থাকবেন।