শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

প্রতি সোমবার সঃ প্রাঃ বিদ্যালয়টিতে পাঠদানের বদলে বসানো হয় প্রভাবশালীদের গরুর হাট

সাজ্জাদ হোসেন হৃদয়, কিশোরগঞ্জ।। 

কিশোরগঞ্জের পাকুন্দিয়ায় প্রভাবশালীদের কারণে একটি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষা কার্যক্রম প্রতি সপ্তাহে সোমবার বন্ধ থাকে। অস্বাভাবিক হলেও এটিই সত্য। প্রতি সপ্তাহে সোমবার ও শুক্রবার এ দুইদিন বিদ্যালয়ের মাঠ ও পার্শ্ববর্তী সড়ক দখল করে গরুর হাট বসিয়েছেন স্থানীয় প্রভাবশালীরা। ফলে দীর্ঘদিন ধরেই এ বিদ্যালয়ের পাঠদান কার্যক্রমে ও সড়ক দিয়ে চলাচলে ব্যাঘাত সৃষ্টি হচ্ছে।
স্থানীয়রা জানান, উপজেলার পাটুয়াভাঙ্গা ইউনিয়নের কলাদিয়া বাজারে সড়ক যোগাযোগ ব্যবস্থা ভাল থাকার প্রতি সোমবার আশপাশের কয়েকটি জেলার ব্যবসায়ীরা কয়েক হাজার গরু ক্রয়-বিক্রয় করতে নিয়ে আসেন। প্রতি সোমবারের সাপ্তাহিক এ গরুর হাটে ৫-৭ শত গরু বিক্রি হয়। বাজারের নিজস্ব জায়গা না থাকায় ও স্থানীয় প্রভাবশালীরা বেশি মুনাফার আশায় স্কুল কর্তৃপক্ষের প্রত্যক্ষ যোগসাজশে ৬৩নং কলাদিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের মাঠসহ সরকারি সড়ক দখল করে গরুর হাট বসিয়েছেন। ফলে কয়েক বছর ধরেই প্রতি সোমবার এ প্রাথমিক বিদ্যালয়টি বন্ধ থাকে ও কলাদিয়া বাজারের সড়ক দিয়ে সাধারণ মানুষ ও স্কুল কলেজ পড়ুয়া ছাত্র ছাত্রীদের চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। এমনকি রোগী নিয়ে হাসপাতাল যাওয়া যায় না। এতে করে প্রতি সোমবার অসহনীয় ভোগান্তির শিকার সাধারণ মানুষ।
সরজমিনে দেখা যায়, সোমবার সকালে বিদ্যালয়ের নেই কোন স্বাভাবিক কার্যক্রম। বিদ্যালয়ের ছাত্র-ছাত্রী ও শিক্ষকদের পরিবর্তে ভবনের গ্রীল, শহীদ মিনার, খেলার মাঠে বসানো বাঁশের খুঁটিতে শতাধিক গরু বেঁধে রাখা হয়েছে। বিদ্যালয়ের বারান্দায় চেয়ার-টেবিলে বসিয়ে বাজার বণিক সমিতির লোকজন গরু ক্রয় বিক্রয়ের হাসিল টাকার বিনিময়ে দিচ্ছেন রশিদ। খবর নেয়ার পর জানা গেল বিদ্যালয় দপ্তরি সকালে এসে জাতীয় পতাকা টানিয়ে চলে গিয়েছেন ও স্বাভাবিক শিক্ষা কার্যক্রম কাল শুরু হবে। আরও জানা গেল বিদ্যালয় মাঠে বাঁশের খুঁটি স্থায়ীভাবে বসানো হয়েছে ও গরুর মলমূত্র পরিষ্কার করা হয় না। ফলে বিদ্যালয়ের কোমলমতি ছাত্র ছাত্রীরা মাঠে কয়েক বছর ধরেই খেলাধুলা করতে পারে না। এ নিয়ে অভিভাবক ও স্থানীয় এলাকাবাসীর মধ্যে বিরাজ করছে চরম ক্ষোভ কিন্তু প্রভাবশালীরা সরকারি দলের নেতা হওয়ার কারণে সাধারণ মানুষ প্রতিবাদ করা তো দূরের কথা মুখ খুলতেই ভয় পায়।
এ ব্যাপারে বিদ্যালয়ের পরিচালনা কমিটির সভাপতি শওকত আলী জানান, বিগত কয়েক বছর ধরেই প্রতি সোমবার বিদ্যালয়ের স্বাভাবিক শিক্ষা কার্যক্রম বন্ধ করে মাঠে সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত বসানো হচ্ছে গরুর হাট। এ বিষয়টি একাধিকবার প্রধান শিক্ষিকা ও প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তাকে মৌখিকভাবে জানিয়েছি কিন্তু কোন প্রতিকার পাওয়া যায়নি। কলাদিয়া বাজারের বণিক সমিতির সভাপতি সুন্দর আলী জানান, আমি সমিতির সভাপতি নির্বাচিত হওয়ার পর থেকে সমিতির সকল কার্যক্রম আমাকে ছাড়াই পরিচালনা করা হচ্ছে। প্রতি সপ্তাহে সোমবার বিদ্যালয়ের শিক্ষা কার্যক্রম বন্ধ রেখে কিভাবে ও কেন গরু ক্রয় বিক্রয়ের হাট বসে এ বিষয়টি ইজারাদার আবু হেনা মাসুম বলতে পারবে। জানা গেছে, ইজারাদার আবু হেনা মাসুম ক্ষমতাসীন দল স্থানীয় আওয়ামী লীগের প্রভাবশালী নেতা। এ ব্যাপারে জানতে চাইলে তিনি বিষয়টি অস্বীকার করেন।
এ ব্যাপারে উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা সিরাজুল ইসলাম বলেন, বিষয়ে আমার জানা নেই, অভিযোগ পেলে অবশ্যই ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা শুব্রত কুমার বণিক এ বিষয়ে বিস্তারিত শুনে তাৎক্ষণিক উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার সিরাজুল ইসলামকে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার সাথে যোগাযোগ করে বিধি মোতাবেক ব্যবস্থা গ্রহণের নির্দেশ দেন।

প্রতি সোমবার সঃ প্রাঃ বিদ্যালয়টিতে পাঠদানের বদলে বসানো হয় প্রভাবশালীদের গরুর হাট

প্রকাশের সময় : ১২:১৩:৪৩ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ১২ জানুয়ারী ২০২২

সাজ্জাদ হোসেন হৃদয়, কিশোরগঞ্জ।। 

কিশোরগঞ্জের পাকুন্দিয়ায় প্রভাবশালীদের কারণে একটি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষা কার্যক্রম প্রতি সপ্তাহে সোমবার বন্ধ থাকে। অস্বাভাবিক হলেও এটিই সত্য। প্রতি সপ্তাহে সোমবার ও শুক্রবার এ দুইদিন বিদ্যালয়ের মাঠ ও পার্শ্ববর্তী সড়ক দখল করে গরুর হাট বসিয়েছেন স্থানীয় প্রভাবশালীরা। ফলে দীর্ঘদিন ধরেই এ বিদ্যালয়ের পাঠদান কার্যক্রমে ও সড়ক দিয়ে চলাচলে ব্যাঘাত সৃষ্টি হচ্ছে।
স্থানীয়রা জানান, উপজেলার পাটুয়াভাঙ্গা ইউনিয়নের কলাদিয়া বাজারে সড়ক যোগাযোগ ব্যবস্থা ভাল থাকার প্রতি সোমবার আশপাশের কয়েকটি জেলার ব্যবসায়ীরা কয়েক হাজার গরু ক্রয়-বিক্রয় করতে নিয়ে আসেন। প্রতি সোমবারের সাপ্তাহিক এ গরুর হাটে ৫-৭ শত গরু বিক্রি হয়। বাজারের নিজস্ব জায়গা না থাকায় ও স্থানীয় প্রভাবশালীরা বেশি মুনাফার আশায় স্কুল কর্তৃপক্ষের প্রত্যক্ষ যোগসাজশে ৬৩নং কলাদিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের মাঠসহ সরকারি সড়ক দখল করে গরুর হাট বসিয়েছেন। ফলে কয়েক বছর ধরেই প্রতি সোমবার এ প্রাথমিক বিদ্যালয়টি বন্ধ থাকে ও কলাদিয়া বাজারের সড়ক দিয়ে সাধারণ মানুষ ও স্কুল কলেজ পড়ুয়া ছাত্র ছাত্রীদের চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। এমনকি রোগী নিয়ে হাসপাতাল যাওয়া যায় না। এতে করে প্রতি সোমবার অসহনীয় ভোগান্তির শিকার সাধারণ মানুষ।
সরজমিনে দেখা যায়, সোমবার সকালে বিদ্যালয়ের নেই কোন স্বাভাবিক কার্যক্রম। বিদ্যালয়ের ছাত্র-ছাত্রী ও শিক্ষকদের পরিবর্তে ভবনের গ্রীল, শহীদ মিনার, খেলার মাঠে বসানো বাঁশের খুঁটিতে শতাধিক গরু বেঁধে রাখা হয়েছে। বিদ্যালয়ের বারান্দায় চেয়ার-টেবিলে বসিয়ে বাজার বণিক সমিতির লোকজন গরু ক্রয় বিক্রয়ের হাসিল টাকার বিনিময়ে দিচ্ছেন রশিদ। খবর নেয়ার পর জানা গেল বিদ্যালয় দপ্তরি সকালে এসে জাতীয় পতাকা টানিয়ে চলে গিয়েছেন ও স্বাভাবিক শিক্ষা কার্যক্রম কাল শুরু হবে। আরও জানা গেল বিদ্যালয় মাঠে বাঁশের খুঁটি স্থায়ীভাবে বসানো হয়েছে ও গরুর মলমূত্র পরিষ্কার করা হয় না। ফলে বিদ্যালয়ের কোমলমতি ছাত্র ছাত্রীরা মাঠে কয়েক বছর ধরেই খেলাধুলা করতে পারে না। এ নিয়ে অভিভাবক ও স্থানীয় এলাকাবাসীর মধ্যে বিরাজ করছে চরম ক্ষোভ কিন্তু প্রভাবশালীরা সরকারি দলের নেতা হওয়ার কারণে সাধারণ মানুষ প্রতিবাদ করা তো দূরের কথা মুখ খুলতেই ভয় পায়।
এ ব্যাপারে বিদ্যালয়ের পরিচালনা কমিটির সভাপতি শওকত আলী জানান, বিগত কয়েক বছর ধরেই প্রতি সোমবার বিদ্যালয়ের স্বাভাবিক শিক্ষা কার্যক্রম বন্ধ করে মাঠে সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত বসানো হচ্ছে গরুর হাট। এ বিষয়টি একাধিকবার প্রধান শিক্ষিকা ও প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তাকে মৌখিকভাবে জানিয়েছি কিন্তু কোন প্রতিকার পাওয়া যায়নি। কলাদিয়া বাজারের বণিক সমিতির সভাপতি সুন্দর আলী জানান, আমি সমিতির সভাপতি নির্বাচিত হওয়ার পর থেকে সমিতির সকল কার্যক্রম আমাকে ছাড়াই পরিচালনা করা হচ্ছে। প্রতি সপ্তাহে সোমবার বিদ্যালয়ের শিক্ষা কার্যক্রম বন্ধ রেখে কিভাবে ও কেন গরু ক্রয় বিক্রয়ের হাট বসে এ বিষয়টি ইজারাদার আবু হেনা মাসুম বলতে পারবে। জানা গেছে, ইজারাদার আবু হেনা মাসুম ক্ষমতাসীন দল স্থানীয় আওয়ামী লীগের প্রভাবশালী নেতা। এ ব্যাপারে জানতে চাইলে তিনি বিষয়টি অস্বীকার করেন।
এ ব্যাপারে উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা সিরাজুল ইসলাম বলেন, বিষয়ে আমার জানা নেই, অভিযোগ পেলে অবশ্যই ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা শুব্রত কুমার বণিক এ বিষয়ে বিস্তারিত শুনে তাৎক্ষণিক উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার সিরাজুল ইসলামকে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার সাথে যোগাযোগ করে বিধি মোতাবেক ব্যবস্থা গ্রহণের নির্দেশ দেন।