ঢাকা ব্যুরো।। সীমান্তের অতন্দ্র প্রহরীর মতো দেশের রাজস্ব সুরক্ষার গার্ড হলো কাস্টমস। এখন কাস্টমস শুধু রাজস্ব সুরক্ষাই দিচ্ছে তা নয়, চোরাচালান প্রতিরোধ, নকল ও ক্ষতিকর পণ্য প্রতিরোধ, নিষিদ্ধ পণ্যের আমদানি প্রতিরোধ, বিপদজ্জনক পণ্য আমদানি-রপ্তানি নিয়ন্ত্রণসহ নানা রকম সুরক্ষাই দিচ্ছে কাস্টমস। আমদানি-রপ্তানির আড়ালে অর্থপাচারে সজাগ কাস্টমস। এছাড়া সেবা তো কাস্টমসের প্রথম উপজীব্য বিষয়। তবে রাজস্ব সুরক্ষা আর সেবা প্রদানে কাস্টমস গতি এনেছে ডিজিটাল অগ্রযাত্রায়। করোনা মহামারির মধ্যে কাস্টমস ডিজিটাল মাধ্যম ব্যবহারে অনেক এগিয়েছে। তবে মহামারির মধ্যেও আমদানি-রপ্তানি সচল রাখতে ২৪ ঘণ্টা সেবা দিয়ে যাচ্ছে কাস্টমস। তাতে করোনা-আক্রান্ত হয়ে কয়েকজন রাজস্ব সৈনিক মৃত্যুবরণও করেছেন। তবে সেবা আর রাজস্ব সুরক্ষার অতন্ত্র প্রহরী কাস্টমস দমে যায়নি।
আজ আন্তর্জাতিক কাস্টমস দিবস। ওয়ার্ল্ড কাস্টমস অরগানাইজেশন (ডব্লিউসিও) সদস্যভুক্ত ১৮৩ দেশ দিবসটি পালন করছে। বাংলাদেশও ডব্লিউসিও’র সদস্যভুক্ত দেশ হিসেবে দিবসটি পালন করছে। এবার কাস্টমস দিবসের প্রতিপাদ্যÑ‘তথ্য সংস্কৃতি বিকাশ এবং তথ্য ইকো সিস্টেম বিনির্মাণের মাধ্যমে ডিজিটাল কাস্টমসের সম্প্রসারণ’। মহামারির কারণে ক্ষতিগ্রস্ত অর্থনীতিকে পুনরুজীবিত করে আমদানি-রপ্তানি নির্বিঘ্ন, সরবরাহ চেইন শক্তিশালী করা, সদস্যভুক্ত দেশগুলোর মধ্যে সহযোগিতা জোরদার ও বিনিয়োগবান্ধব পরিবেশ তৈরি করাই এ বছরের আন্তর্জাতিক কাস্টমস দিবসের মূল লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য।
সম্প্রতিক বছরগুলোয় মিথ্যা ঘোষণার পণ্য জব্দ বেড়েছে। বিশেষ করে শূন্য শুল্কের পণ্য ঘোষণায় আমদানি হচ্ছে উচ্চ শুল্কের পণ্য। এছাড়া কাস্টমস হাউসগুলো আমদানি-রপ্তানির আড়ালে অর্থপাচারের মামলা করছে প্রতিনিয়ত। কাস্টমস সক্রিয় না হলে দেশ থেকে প্রচুর অর্থ পাচার হয়ে যেত। বন্যপ্রাণী যেমন পশু-পাখির চালানও আটক করেছে কাস্টমস। এছাড়া চোরাচালান বিশেষ করে স্বর্ণ জব্দ কাস্টমসের নিত্যদিনের ঘটনা। প্রতিনিয়ত চোরাচালানকারীরা চোরাচালানের যেমন কৌশল পাল্টাচ্ছে, তেমনি কাস্টমস তা শনাক্ত করার জন্য তৎপরতা চালাচ্ছে। আর সবকিছু সুর ক্ষেত্রে কাস্টমস প্রযুক্তির সহায়তা নিচ্ছে।
অন্যদিকে সেবার দিকেও এগিয়ে কাস্টমস। বিমানবন্দর ও স্থলবন্দরে সর্বোচ্চ সেবা প্রদানে কাস্টমস তৎপর। আমদানি-রপ্তানি সেবা সহজীকরণে প্রতিনিয়ত কাস্টমস চেষ্টা করে যাচ্ছে। কম সময়ে ও সহজে আমদানি-রপ্তানি কার্যক্রম পরিচালনার পাশাপাশি দেশের উন্নয়নমূলক কার্যক্রমে বড় অঙ্কের অর্থের জোগানদাতা কাস্টমস বিভাগ। রাজস্বের ২৫ শতাংশের বেশি আদায় হয় কাস্টমস বা শুল্ক আদায়ের মাধ্যমে। অতীতে কাস্টমস ছিল এককভাবে রাজস্ব আহরণকারী খাত। বাণিজ্য উদারীকরণের স্বার্থে শুল্ক-কর কমলেও এখনো কাস্টমস সরকারের আয়ের অন্যতম প্রধান খাত। চলতি অর্থবছরে (২০২১-২২) মোট তিন লাখ ৩০ হাজার টাকার লক্ষ্যমাত্রার মধ্যে কাস্টমসের অংশ ৯৫ হাজার ৬৫২ কোটি টাকা, যা এনবিআরের মোট লক্ষ্যমাত্রার প্রায় ২৯ শতাংশ। রাজস্ব আহরণের পাশাপাশি কাস্টমস প্রকৃতপক্ষে বিনিয়োগ ও কর্মসংস্থান সৃষ্টি এবং জনগণের জীবনমান অনুযায়ী বিভিন্ন স্তরের শুল্ক আরোপ করে বিভিন্ন ক্ষতিকর পণ্যের আমদানিও নিয়ন্ত্রণ করে। সেই বিবেচনায় কাস্টমস সাধারণ জনগণের কল্যাণেও কাজ করে যাচ্ছে।
কাস্টমস কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, কাস্টমস ডিজিটাল পদ্ধতির প্রক্রিয়ায় অ্যাসাইকুডা ওয়ার্ল্ডনির্ভর বিভিন্ন মডেল বাস্তবায়িত হয়েছে। এছাড়া ন্যাশনাল সিঙ্গেল উইন্ডো, পোস্ট ক্লিয়ারেন্স অডিট, এনইপি, ই-পেমেন্ট, বন্ড অটোমেশন ও ঝুঁকি ব্যবস্থাপনায় পৃথক কমিশনারেট গঠনসহ বিভিন্ন ধরনের অটোমেশনের কর্মসূচি বাস্তবায়ন করছে। স্থিতিশীল রাজস্ব কাঠামো বাস্তবায়নে কাস্টমস বিভাগের আধুনিকায়নের আওতায় গৃহীত কর্মপরিকল্পনার বিষয়ে উল্লেখযোগ্য হলোÑইনটার?্যাক্টিভ কাস্টমস ওয়েবসাইট, তথ্যপ্রযুক্তির মাধ্যমে ঝুঁকি ব্যবস্থাপনা, খালাসোত্তর নিরীক্ষার ব্যবস্থা, শুল্ক মূল্যায়ন ব্যবস্থাপনা, ন্যাশনাল ইনকোয়ারি পয়েন্ট (এনইপি) বাস্তবায়ন, মেধাস্বত্ব অধিকার (আইপিআর) সংরক্ষণ, অগ্রিম রুলিং পদ্ধতি প্রবর্তন, কন্টেইনার স্ক্যানার পদ্ধতি প্রবর্তন, ন্যাশনাল সিঙ্গেল উইন্ডো বাস্তবায়ন, বন্ড ম্যানেজমেন্ট অটোমেশন প্রজেক্ট বাস্তবায়ন প্রভৃতি।