চট্টগ্রাম ব্যুরো।। কভিডের শুরুতে অর্থাৎ ২০১৯-২০ অর্থবছরের শেষ দিকে বিশ্ব অর্থনীতির গতি শ্লথ হয়ে যায়। আমদানি-রপ্তানি কমে যাওয়ায় বিশ্বের বিভিন্ন দেশের শুল্ক স্টেশনগুলো হারায় রাজস্ব আহরণের লক্ষ্য। বাদ যায়নি বাংলাদেশও। তবে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হওয়া শুরু করলে বাড়তে থাকে রাজস্ব আয়ের মাত্রা। ঠিক একই প্রক্রিয়ার মধ্যে চট্টগ্রাম কাস্টম হাউসও অতিমারির তিন অর্থবছর পার করছে। তবে প্রথম বছর রাজস্ব আদায় প্রায় চার শতাংশ ঋণাত্মক থাকলেও দ্বিতীয় বছর ঘুরে দাঁড়ায়। আর চলতি অর্থবছরে সেনা-সমর্থিত (২০০৭-০৮) অর্থবছর বাদ দিলে গত ২৬ বছরের রেকর্ড ভাঙতে যাচ্ছে দেশের বৃহৎ শুল্ক স্টেশনটি।
২০২১-২২ অর্থবছরের অর্ধেক সময় পার হয়েছে, যদিও দেশের শুল্ক স্টেশনগুলো তাদের রাজস্ব আদায়ের অর্ধবছরের হিসাব শেষ করেছে। এসব হিসাব থেকে দেখা যায়, চট্টগ্রাম কাস্টম হাউস রাজস্ব আদায়ে গত ২৬ বছরের তুলনায় বেশি প্রবৃদ্ধি অর্জন করেছে। অর্থাৎ ২০২১-২২ অর্থবছরের প্রথম ছয় মাস শেষে চট্টগ্রাম কাস্টম হাউস রাজস্ব আদায় করেছে ২৭ হাজার ২৮৪ কোটি টাকা। তবে আদায়ের লক্ষ্য ৩১ হাজার ৫৭০ কোটি টাকা থেকে ১৩ দশমিক ৫৮ শতাংশ পিছিয়ে থাকলেও গত বছরের তুলনায় প্রবৃদ্ধি ছিল ২৫ দশমিক ৯৪ শতাংশ বেশি। অর্থাৎ গত অর্থবছর চট্টগ্রাম কাস্টম হাউস প্রবৃদ্ধি অর্জন করেছিল ২৩ দশমিক ২৩ শতাংশ, যা তার আগের ২৫ বছরের তুলনায় বেশি ছিল।
এছাড়া অতিমারির প্রথম অর্থবছরে রাজস্ব আদায়ের পরিমাণ ছিল ৪১ হাজার ৮৫৩ কোটি টাকা, যা লক্ষ্যমাত্রা থেকে ২৮ দশমিক ২১ শতাংশ পিছিয়ে ছিল। অর্থাৎ ২০১৯-২০ অর্থবছরের চট্টগ্রাম কাস্টম হাউসের রাজস্ব আদায় ছিল তিন দশমিক ৯৬ শতাংশ ঋণাত্মক।
১৯৯৫-৯৬ অর্থবছর থেকে চলতি অর্থবছর পর্যন্ত রাজস্ব আদায়ের চিত্র বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, সেনা-সমর্থিত সরকার পরিচালিত ২০০৭-০৮ অর্থবছর ছাড়া কোনো অর্থবছরেই ২১ শতাংশের বেশি প্রবৃদ্ধি অর্জন করতে পারেনি চট্টগ্রাম কাস্টম হাউস।
ওই অর্থবছরে সেনাবাহিনীর নিয়ন্ত্রণে থাকা বিতর্কিত সরকারের সময়ে চট্টগ্রাম কাস্টম হাউসের রাজস্ব আয়ের পরিমাণ ছিল ১৩ হাজার ৯৪২ কোটি টাকা, যাতে প্রবৃদ্ধির পরিমাণ ছিল ৩০ দশমিক ৪৬ শতাংশ। যদিও তার পরের বছর ওই প্রবৃদ্ধি আর ধরে রাখতে পারেনি চট্টগ্রাম কাস্টমস। অর্থাৎ ২০০৮-০৯ অর্থবছরে এক লাফে সাত শতাংশে নেমে আসে প্রবৃদ্ধি। তবে ১৯৯৫-৯৬ অর্থবছর থেকে চলতি অর্থবছর পর্যন্ত পাঁচ অর্থবছরেই ছিল ঋণাত্মক প্রবৃদ্ধি। এছাড়া আট অর্থবছর এক অঙ্কের ঘরে থাকলেও ১৩ অর্থবছর ছিল দুই অঙ্কের ঘরে। তবে সর্বোচ্চ রাজস্ব আদায় হয়েছে গত অর্থবছরে ৫১ হাজার কোটি টাকা, যা আগের কোনো অর্থবছরে আদায় হয়নি।
চট্টগ্রাম কাস্টমস কমিশনার ফখরুল আলম বলেন, করোনার মধ্যেও এ দুই অর্থবছরে বেশ ভালো প্রবৃদ্ধি অর্জন করেছে চট্টগ্রাম কাস্টমস। আশা করছি, চলতি অর্থবছর গত অর্থবছর তুলনায় প্রবৃদ্ধি বেশি থাকবে। আমরা রাজস্ব আদায় বৃদ্ধির জন্য বেশ কিছু পদক্ষেপ নিয়েছি, সে অনুযায়ী আমাদের কর্মকর্তারা কাজ করছেন। আগের তুলনায় ফাঁকির পরিমাণও কমেছে। তবে আমাদের রাজস্ব আদায়ের পরিমাণ আরও বেশি হতো। কিন্তু সরকারি কিছু সুযোগ-সুবিধার জন্য চট্টগ্রাম কাস্টম হাউস সেই রাজস্ব থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। যেমন আগে যেসব পণ্য চট্টগ্রাম কাস্টমস দিয়ে খালাস হতো, এখন ওইসব পণ্যের মধ্যে বেশিরভাগ কম শুল্কে পায়রা বন্দর ও ঢাকা কমলাপুর আইসিডির মাধ্যমে খালাস হচ্ছে। তবে বিগত অর্থবছরগুলোর প্রবৃদ্ধির তুলনা করলে ২০০৭-০৮ অর্থবছরের সঙ্গে অন্যান্য অর্থবছরের তুলনা করলে সঠিক বিচার করা হবে না। কারণ ওই অর্থবছরটি অন্যান্য বছরের মতো স্বাভাবিক অর্থবছর ছিল না।