আশ্রয় আবেদন নাকচ করে জার্মানি থেকে ফেরত পাঠানো হচ্ছে বাংলাদেশিদের। গত এক বছরে ১১৯ জন বাংলাদেশির আশ্রয় আবেদন বাতিল করার পর জোর করে দেশে পাঠিয়ে দেওয়া হয়। এছাড়া আরও অনেকের আশ্রয় আবেদন বাতিল হওয়ায় স্বেচ্ছায় দেশে ফিরেছেন। জার্মানির স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র সাশা লাওফরে সংবাদমাধ্যমকে এ তথ্য জানান।
গত এক বছরে অনেক বাংলাদেশিই জার্মানি থেকে ফিরতে বাধ্য হয়েছেন। আশ্রয় আবেদন বাতিল হওয়ায় নির্দেশনা মেনে কেউ কেউ স্বেচ্ছায় প্রত্যাবর্তন করেছেন।
আর যারা এই নির্দেশনা মানেননি তাদের অনেককে চার্টার্ড ফ্লাইট ভাড়া করে আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর প্রহরায় জোরপূর্বক ফেরত পাঠিয়েছে দেশটির কর্তৃপক্ষ। ২০২১ সালে প্রত্যাবাসন করা পাঁচজনের সঙ্গে কথা বলেছে অভিবাসীদের নিয়ে কাজ করা সংস্থা ইনফোমাইগ্রেন্টস। যারা সবাই ২০১৫ সালে জার্মানিতে আসেন৷ তাদের কেউ ছিলেন ইরাকে, কেউবা দুবাইতে। উন্নত জীবনের আশায় মধ্যপ্রাচ্য থেকে অনিয়মিত উপায়ে তারা ইউরোপের এই দেশটিতে পাড়ি জমান।
সাত বছর কাটানোর পর গত সেপ্টেম্বরে সবুজ (ছদ্মনাম) জানতে পারেন তার আর জার্মানি থাকা সম্ভব হচ্ছে না। দেশটিতে থাকতে যা যা করণীয় তার সবই করেছেন তিনি। বৈধভাবে বসবাসের অনুমতির জন্য আইনি লড়াই চালিয়েছেন, চাকরি করে সরকারকে কর দিয়েছেন, ভাষা শিখেছেন, পেশাগত দক্ষতা অর্জনে প্রশিক্ষণের প্রস্তুতিও নিচ্ছিলেন। তখনই পেলেন এ দুঃসংবাদটি।
মৌলভীবাজারের কমলগঞ্জের আরেক বাসিন্দা ২০১৫ সালে কাতার থেকে জার্মানি আসেন। এক বছর পরই তার আশ্রয় আবেদন বাতিল করে দেশটি। ২০২১ সালের মাঝামাঝিতে প্রত্যাখ্যাত হয় আপিল আবেদনও।
আশ্রয়প্রার্থীদের স্বেচ্ছা প্রত্যাবর্তনে উৎসাহ দিতে আরইএজি/জিএআরপি নামে জার্মানির সরকারের একটি প্রকল্প রয়েছে। এর অধীনেই আন্তর্জাতিক অভিবাসন সংস্থা-আইওএম প্রত্যাবর্তনকারীদের নানাভাবে সহযোগিতা করে। ফ্লাইট টিকেট, যাত্রাকালীন খরচ হিসেবে ২০০ ইউরো, এমনকি এককালীন নগদ এক হাজার ইউরো অর্থ সহায়তাও বুঝে পান তারা। মনসুরসহ স্বেচ্ছায় ফিরে যাওয়া আরও কয়েকজনও এই সহায়তাগুলো পাওয়ার কথা জানিয়েছেন ইনফোমাইগ্রেন্টসকে। এককালীন টাকা তারা বুঝে পেয়েছেন ফ্লাইটে ওঠার আগে। তবে যাদের জোরপূর্বক ফেরত পাঠানো হয় এই সুবিধাগুলো পান না তারা।
জোরপূর্বক বা স্বেচ্ছায় যেভাবেই আসেন না কেন প্রত্যাবাসনকারীরা বাংলাদেশে নামার পর দুইটি প্রকল্পের মাধ্যমে সহায়তা পেয়ে থাকেন, যা থেকে ফেরত আসার মোট সংখ্যাটিও জানা যায়৷ এরমধ্যে ১৬টি ইইউ দেশের অর্থায়নে পরিচালিত একটি প্রকল্প ইউরোপীয় রিটার্ন অ্যান্ড রিইন্টিগ্রেশন নেটওয়ার্ক বা ইরিন৷ অন্যটি ইউরোপীয় ইউনিয়নের অর্থায়নে আইওএম পরিচালিত ‘প্রত্যাশা’।
তথ্যসূত্র: ইনফোমাইগ্রেন্টস।