দেশের প্রায় ২১ জেলার ওপর দিয়ে বইছে শৈত্যপ্রবাহ। এ ছাড়া আরও ৯ জেলার তাপমাত্রা ১০ ডিগ্রি সেলসিয়াসের মধ্যেই আছে। এই অবস্থা আরও একদিন অব্যাহত থাকবে। এরপর তাপমাত্রা বাড়তে পারে বলে জানিয়েছে আবহাওয়া অধিদপ্তর।
রবিবার (৩০ জানুয়ারি) টাঙ্গাইল, গোপালগঞ্জ, ফরিদপুর, মাদারীপুর, রাঙ্গামাটি, ফেনী, মৌলভীবাজার, সীতাকুণ্ড উপজেলাসহ রংপুর এবং রাজশাহী বিভাগের ওপর দিয়ে মৃদু থেকে মাঝারি ধরনের শৈত্যপ্রবাহ বয়ে যাচ্ছে এবং তা অব্যাহত থাকতে পারে।
আবহাওয়াবিদ ওমর ফারুক বলেন, এই তাপমাত্রা আরও একদিন থাকতে পারে। আগামীকাল থেকে তাপমাত্রা কিছুটা বাড়তে পারে। অনেক এলাকায় কমে আসবে শৈত্যপ্রবাহ।তবে রাতের তাপমাত্রা আগের মতোই কম থাকতে পারে।
রবিবার (৩০ জানুয়ারি) ১০ ডিগ্রি সেলসিয়াসের নিচে আছে টাঙ্গাইল, গোপালগঞ্জ, ফরিদপুর, মাদারীপুর, রাঙ্গামাটি, চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ড, মৌলভীবাজারের শ্রীমঙ্গল, রাজশাহী, পাবনার ঈশ্বরদী, বগুড়া, নওগাঁর বদলগাছি, রংপুর, দিনাজপুর, নীলফামারীর সৈয়দপুর ও ডিমলা, পঞ্চগড়ের তেতুলিয়া, কুড়িগ্রামের রাজারহাট, যশোর, চুয়াডাঙ্গা, কুষ্টিয়ার কুমারখালী ও বরিশাল। এছাড়া ১০ ডিগ্রির মধ্যে আছে চট্টগ্রামের সন্দ্বীপ, কুমিল্লা, ফেনী, সিরাজগঞ্জের তাড়াশ, সাতক্ষীরা, পটুয়াখালী, পটুয়াখালীর খেপুপাড়া ও ভোলায়।
দেশের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে পঞ্চগড়ের তেঁতুলিয়ায় ৬ দশমিক ৮, যা গতকাল ছিল তেঁতুলিয়া ও রাজারহাটে ৭। এছাড়া বিভাগীয় শহরগুলোর মধ্যে ঢাকার সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ছিল ১২ দশমিক ৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস, আজ কিছুটা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১৩; ময়মনসিংহে ছিল ৯ দশমিক ৫, আজ ২ ডিগ্রি বেড়ে ১১ দশমিক ২; চট্টগ্রামে ছিল ১৪ দশমিক ৮, আজ ২ ডিগ্রি কমে ১২ দশমিক ৫; সিলেটে ছিল ১০, আজ কিছুটা বেড়ে ১১ দশমিক ৯, রাজশাহীতে ছিল ৮ দশমিক ৯, আজ প্রায় একই রকম রেকর্ড করা হয়েছে ৮ দশমিক ৬; রংপুরে ছিল ৯ দশমিক ২, আজ তা অপরিবর্তিত রয়েছে; খুলনায় ছিল ১০ দশমিক ৮, আজ কিছুটা বেড়ে ১১ ডিগ্রি এবং বরিশালে ছিল ৯ দশমিক ৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস, আজও তা অপরিবর্তিত রেকর্ড করা হয়েছে।
এদিকে আবহাওয়া অধিদপ্তর জানিয়েছেন, উপ-মহাদেশীয় উচ্চচাপ বলয়ের বর্ধিতাংশ পশ্চিমবঙ্গ এবং বাংলাদেশের পশ্চিমাঞ্চল পর্যন্ত বিস্তৃত। মৌসুমের স্বাভাবিক লঘুচাপ দক্ষিণ বঙ্গোপসাগরে অবস্থান করছে। পূর্বাভাসে বলা হয়, অস্থায়ীভাবে আংশিক মেঘলা আকাশসহ সারাদেশের আবহাওয়া শুষ্ক থাকতে পারে।
মধ্যরাত থেকে সকাল পর্যন্ত দেশের উত্তর-পশ্চিমাঞ্চল ও নদী অববাহিকায় মাঝারি থেকে ঘন কুয়াশা এবং অন্য এলাকায় হালকা থেকে মাঝারি ধরনের কুয়াশা পড়তে পারে।
বাড়ছে ঠাণ্ডাজনিত রোগ
এদিকে, উত্তরের জেলাগুলিতে মাঝারি শৈত্যপ্রবাহের প্রভাবে তীব্র ঠান্ডায় বেড়েছে জনদুর্ভোগ। ব্যাহত হচ্ছে স্বাভাবিক জীবনযাত্রা। কনকনে শীত আর ঘন কুয়াশার কারণে কাজে বের হতে পারছেন না খেটে খাওয়া মানুষ। প্রতিদিন হাসপাতালে বাড়ছে শীতজনিত রোগের আক্রান্ত রোগী। এদের মধ্যে শিশু ও বয়স্কের রোগীর সংখ্যা বেশি।
দিনাজপুর আঞ্চলিক আবহাওয়া অফিসের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা তোফাজ্জল হোসেন জানান, গত দুদিন ধরেই (শুক্র ও শনিবার) দিনাজপুরে সর্বনিম্ন তাপমাত্রা বিরাজ করছে ৮ দশমিক ৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস। আগামী ২-১ দিনের মধ্যে চলমান শৈত্যপ্রবাহ কিছুটা প্রশমিত হতে পারে এবং তাপমাত্রা ক্রমান্বয়ে কিছুটা বাড়তে পারে। এদিকে অব্যাহত হাড় কাঁপানো শীতে বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে এ জেলার মানুষের স্বাভাবিক জীবনযাত্রা।
যমুনা তীরবর্তী শেরপুর জেলায় শনিবার নাগাদ কুয়াশার ঘনত্ব অনেকটা কমে গেলেও হালকা বৃষ্টির মতো ঝরে পড়ছে শিশির। সকালে সূর্যের দেখা মিললেও উত্তাপ নেই। বিকালের আগেই মিলিয়ে যাচ্ছে সূর্যের আলো। ঠাণ্ডা বাতাসে হাড় কাঁপানো শীতে জনজীবনে দুর্ভোগ চলছে।
ফরিদপুর জেলার চরাঞ্চলে গত তিন দিনের শৈত্যপ্রবাহে বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে জনজীবন। বাড়ছে শীতজনিত ভাইরাস জ্বর, সর্দিজ্বর, ঠাণ্ডাকাশি ও হাঁপানি রোগের প্রাদুর্ভাব। সেই সঙ্গে শিশু ও বৃদ্ধদের মাঝে দেখা দিয়েছে কোল্ড ডায়েরিয়া রোগের ছড়াছড়ি। চরাঞ্চল, নদীর পাড়, বিভিন্ন বেড়িবাঁধ ও উন্মুক্ত মাঠে বসবাসকারীরা তীব্র শীতে কাবু হয়ে পড়েছেন। চরভদ্রাসন উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের চিকিৎসক ডা. জাহিদ হোসেন জানান, ‘গত কয়েক দিন ধরে অধিকাংশ রোগী শীতজনিত রোগে আক্রান্ত হয়ে চিকিৎসা নিতে এসেছেন।