বৃহস্পতিবার, ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

নিত্যপণ্যের মূল্যবৃদ্ধির কাছে অসহায় সাধারণ মানুষ

সরকারি সংস্থা ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশ’র (টিসিবি) পণ্যবাহী ট্রাকের পেছনে ছুটছে মানুষ। বিশেষ করে দরিদ্র ও অসহায় মানুষ ভিড় করছেন কমমূল্যে পণ্য কিনতে। পাশাপাশি মধ্যবিত্ত ও নিম্ন-মধ্যবিত্ত মানুষেরও দেখা মিলছে। যদিও নিজেদের আড়াল করে রাখতে চান তারা। না পারেন বাজারে গিয়ে পণ্য কিনতে না পারেন টিসিবির ট্রাকের কাছে লাইনে দাঁড়াতে। আসলে বাজারে নিত্যপণ্যের যা মূল্য তাতে সাধারণ মানুষের পক্ষে সংসার সামলানো কঠিন। দ্রব্যমূল্যের এই উর্ধ্বগতি রোধে কার্যকর ব্যবস্থা নেয়া ছাড়া কোন উপায় নেই। মানুষ যদি দু’বেলা দুমুঠো খেয়েপড়ে বেঁচে থাকতে না পারে তাহলে যত স্বপ্নই দেখানো হোক তাতে কিছুই হবেনা।
সামনে পবিত্র রমজান। নিত্যপণ্যের দাম না কমালে পবিত্র এই মাসটিতে রোজাদার মুসল্লী ও সাধারণ মানুষ বেকায়দায় পড়বেন নিশ্চিতভাবেই।
বাজারে চাল, ডাল, তেলসহ প্রায় সব পণ্যের দাম লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ছে। মানুষের ক্রয়ক্ষমতার বাইরে চলে গেছে নিত্যপণ্যের মূল্য। অসহায় সাধারণ মানুষ। ব্যবসায়ীরা জানালেন, দাম আরো বাড়ার সম্ভাবনা রয়েছে। ভোজ্যতেল, ডিম, দুধ পাউডারসহ অনেক পণ্যের দাম বেড়েছে। সবজি ও মাছ-মাংসের দামও বৃদ্ধির দিকে। দাম বৃদ্ধির তালিকায় এলপিজি (রান্নার) গ্যাসসহ অন্যান্য নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিস। দাম বাড়ার প্রবণতা থাকলে সাধারণ মানুষের জীবনযাপন কষ্টকর হয়ে দাঁড়াবে। এজন্য তারা সিন্ডিকেট নিয়ন্ত্রণ ও কঠোর বাজার তদারকির কথা বলছেন।
নিত্যপণ্যের দাম মানুষের ক্রয়ক্ষমতার মধ্যে না থাকলে নৈরাজ্য সৃষ্টি হবে। মজুতদার ও লোভী ব্যবসায়ীদের পোয়াবারো অবস্থা হবে। অপরদিকে খুচরা ব্যবসায়ী এবং সাধারণ মানুষের কষ্ট দিন দিন বাড়তে থাকবে।
দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতিতে সব থেকে বেশি কষ্টকর পরিস্থিতিতে পড়েছেন নিম্নবিত্ত, নিম্ন স্কেলের সৎ সরকারি/বেসরকারি কর্মচারী, মধ্যবিত্ত, প্রবীণ জনগোষ্ঠী ও নিম্নআয়ের মানুষ।
যেসব চাকরিজীবী সৎভাবে চাকরিজীবন কাটান, তাদের অবস্থা আরও শোচনীয়। প্রবীণ জনগোষ্ঠীসহ নিম্নবিত্ত ও সাধারণ খেটে খাওয়া মানুষের অধিকাংশই মানবেতর জীবনযাপন করছেন। দ্রব্যমূল্যের বাজার ক্রমেই ঊর্ধ্বমুখী হওয়ায় ভোক্তারা দিশেহারা হয়ে পড়েছেন।
অনেক সময় ব্যবসায়ীরা সিন্ডিকেট করে বিভিন্ন অজুহাতে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দাম বাড়িয়ে সাধারণ মানুষকে বিপাকে ফেলছে। একবার যে পণ্যের দাম বাড়ে, তা আর সহজে কমে না।
সরকারি বিভিন্ন সংস্থা এ ব্যাপারে কাজ করলেও দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণে আসছে না। দ্রব্যমূল্য দেখভাল করতে ‘কনজুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ক্যাব)’ নামে একটি সংস্থা রয়েছে। তাদের কার্যক্রমকে গতিশীল করা প্রয়োজন।
সরকার ও সংশ্লিষ্ট দপ্তর চাইলে দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রনে বাড়াতে পারেন নিরবচ্ছিন্ন নজরদারি। সে সাথে বাজারে দ্রব্যসামগ্রীর পর্যাপ্ত সরবরাহ নিশ্চিত করতে হবে। বাজার নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা  নড়বড়ে হলে দ্রব্যমূল্য লাগামহীন হবেই! ক্ষেত্রবিশেষে বাজারে কৃত্রিম সংকট সৃষ্টির অপচেষ্টাও হয়। এসব অনিয়ম কঠোর পদক্ষেপের মাধ্যমে রোধ করতে হবে। সরকারিভাবে ন্যায্যমূল্যে পণ্য বিক্রি করা হলেও তা পর্যাপ্ত নয়। অথবা অপর্যাপ্ত ও নিম্নমানের সামগ্রী বিক্রি কিংবা কার্যকর মনিটরিং এর অভাবে তার সুফল পাওয়া যায় না। সাধারণ মানুষ খুব বেশি উপকৃত হয় না। এজন্য বিতরণ ব্যবস্থায় মনিটরিং ও এর পরিসর বাড়ানো দরকার। তবেই তার সুফল আসতে পারে বলে আমি মনে করি।
বাজার, শপিংমলসহ নিত্যপণ্য বিক্রি হয় এমন সব প্রতিষ্ঠানে দ্রব্যমূল্যের তালিকা প্রদর্শনের বাধ্যবাধকতা নিশ্চিত করতে হবে। অধিক মুনাফাখোর ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নিতে হবে। অন্য যেসব কারণে দ্রব্যমূল্য বাড়ে সেসব কারণ চিহ্নিত করে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে হবে। সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের প্রতি আহবান থাকবে নিত্যপণ্যের দাম ক্রয়ক্ষমতার মধ্যে রেখে সাধারণ মানুষের মাঝে স্বস্তি ফিরিয়ে আনুন।
★ লেখক : শিক্ষক ও কলাম লেখক

নিত্যপণ্যের মূল্যবৃদ্ধির কাছে অসহায় সাধারণ মানুষ

প্রকাশের সময় : ০৬:৩৯:৪৭ অপরাহ্ন, শনিবার, ২৬ ফেব্রুয়ারী ২০২২
সরকারি সংস্থা ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশ’র (টিসিবি) পণ্যবাহী ট্রাকের পেছনে ছুটছে মানুষ। বিশেষ করে দরিদ্র ও অসহায় মানুষ ভিড় করছেন কমমূল্যে পণ্য কিনতে। পাশাপাশি মধ্যবিত্ত ও নিম্ন-মধ্যবিত্ত মানুষেরও দেখা মিলছে। যদিও নিজেদের আড়াল করে রাখতে চান তারা। না পারেন বাজারে গিয়ে পণ্য কিনতে না পারেন টিসিবির ট্রাকের কাছে লাইনে দাঁড়াতে। আসলে বাজারে নিত্যপণ্যের যা মূল্য তাতে সাধারণ মানুষের পক্ষে সংসার সামলানো কঠিন। দ্রব্যমূল্যের এই উর্ধ্বগতি রোধে কার্যকর ব্যবস্থা নেয়া ছাড়া কোন উপায় নেই। মানুষ যদি দু’বেলা দুমুঠো খেয়েপড়ে বেঁচে থাকতে না পারে তাহলে যত স্বপ্নই দেখানো হোক তাতে কিছুই হবেনা।
সামনে পবিত্র রমজান। নিত্যপণ্যের দাম না কমালে পবিত্র এই মাসটিতে রোজাদার মুসল্লী ও সাধারণ মানুষ বেকায়দায় পড়বেন নিশ্চিতভাবেই।
বাজারে চাল, ডাল, তেলসহ প্রায় সব পণ্যের দাম লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ছে। মানুষের ক্রয়ক্ষমতার বাইরে চলে গেছে নিত্যপণ্যের মূল্য। অসহায় সাধারণ মানুষ। ব্যবসায়ীরা জানালেন, দাম আরো বাড়ার সম্ভাবনা রয়েছে। ভোজ্যতেল, ডিম, দুধ পাউডারসহ অনেক পণ্যের দাম বেড়েছে। সবজি ও মাছ-মাংসের দামও বৃদ্ধির দিকে। দাম বৃদ্ধির তালিকায় এলপিজি (রান্নার) গ্যাসসহ অন্যান্য নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিস। দাম বাড়ার প্রবণতা থাকলে সাধারণ মানুষের জীবনযাপন কষ্টকর হয়ে দাঁড়াবে। এজন্য তারা সিন্ডিকেট নিয়ন্ত্রণ ও কঠোর বাজার তদারকির কথা বলছেন।
নিত্যপণ্যের দাম মানুষের ক্রয়ক্ষমতার মধ্যে না থাকলে নৈরাজ্য সৃষ্টি হবে। মজুতদার ও লোভী ব্যবসায়ীদের পোয়াবারো অবস্থা হবে। অপরদিকে খুচরা ব্যবসায়ী এবং সাধারণ মানুষের কষ্ট দিন দিন বাড়তে থাকবে।
দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতিতে সব থেকে বেশি কষ্টকর পরিস্থিতিতে পড়েছেন নিম্নবিত্ত, নিম্ন স্কেলের সৎ সরকারি/বেসরকারি কর্মচারী, মধ্যবিত্ত, প্রবীণ জনগোষ্ঠী ও নিম্নআয়ের মানুষ।
যেসব চাকরিজীবী সৎভাবে চাকরিজীবন কাটান, তাদের অবস্থা আরও শোচনীয়। প্রবীণ জনগোষ্ঠীসহ নিম্নবিত্ত ও সাধারণ খেটে খাওয়া মানুষের অধিকাংশই মানবেতর জীবনযাপন করছেন। দ্রব্যমূল্যের বাজার ক্রমেই ঊর্ধ্বমুখী হওয়ায় ভোক্তারা দিশেহারা হয়ে পড়েছেন।
অনেক সময় ব্যবসায়ীরা সিন্ডিকেট করে বিভিন্ন অজুহাতে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দাম বাড়িয়ে সাধারণ মানুষকে বিপাকে ফেলছে। একবার যে পণ্যের দাম বাড়ে, তা আর সহজে কমে না।
সরকারি বিভিন্ন সংস্থা এ ব্যাপারে কাজ করলেও দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণে আসছে না। দ্রব্যমূল্য দেখভাল করতে ‘কনজুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ক্যাব)’ নামে একটি সংস্থা রয়েছে। তাদের কার্যক্রমকে গতিশীল করা প্রয়োজন।
সরকার ও সংশ্লিষ্ট দপ্তর চাইলে দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রনে বাড়াতে পারেন নিরবচ্ছিন্ন নজরদারি। সে সাথে বাজারে দ্রব্যসামগ্রীর পর্যাপ্ত সরবরাহ নিশ্চিত করতে হবে। বাজার নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা  নড়বড়ে হলে দ্রব্যমূল্য লাগামহীন হবেই! ক্ষেত্রবিশেষে বাজারে কৃত্রিম সংকট সৃষ্টির অপচেষ্টাও হয়। এসব অনিয়ম কঠোর পদক্ষেপের মাধ্যমে রোধ করতে হবে। সরকারিভাবে ন্যায্যমূল্যে পণ্য বিক্রি করা হলেও তা পর্যাপ্ত নয়। অথবা অপর্যাপ্ত ও নিম্নমানের সামগ্রী বিক্রি কিংবা কার্যকর মনিটরিং এর অভাবে তার সুফল পাওয়া যায় না। সাধারণ মানুষ খুব বেশি উপকৃত হয় না। এজন্য বিতরণ ব্যবস্থায় মনিটরিং ও এর পরিসর বাড়ানো দরকার। তবেই তার সুফল আসতে পারে বলে আমি মনে করি।
বাজার, শপিংমলসহ নিত্যপণ্য বিক্রি হয় এমন সব প্রতিষ্ঠানে দ্রব্যমূল্যের তালিকা প্রদর্শনের বাধ্যবাধকতা নিশ্চিত করতে হবে। অধিক মুনাফাখোর ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নিতে হবে। অন্য যেসব কারণে দ্রব্যমূল্য বাড়ে সেসব কারণ চিহ্নিত করে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে হবে। সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের প্রতি আহবান থাকবে নিত্যপণ্যের দাম ক্রয়ক্ষমতার মধ্যে রেখে সাধারণ মানুষের মাঝে স্বস্তি ফিরিয়ে আনুন।
★ লেখক : শিক্ষক ও কলাম লেখক