শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০ বঙ্গাব্দ

মহামান্য রাষ্ট্রপতির নির্দেশনার পরেও দখলমুক্ত হয়নি গভঃ বয়েজ স্কুলের ছাত্রাবাস 

কিশোরগঞ্জের ১৪১ বছরের ঐতিহ্যবাহী বিদ্যাপীঠ কিশোরগঞ্জ সরকারি বালক উচ্চ বিদ্যালয়ের ছাত্রাবাস ও খেলার মাঠ ১৬ বছরেও দখলমুক্ত হয়নি। এই বিদ্যালয়ের খেলার মাঠে ১৯৭৩ সালে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এসে জনসভা করেছিলেন। বিদ্যালয়ের ছাত্রাবাসের সঙ্গে জড়িয়ে আছে শহীদ বুদ্ধিজীবী ডা. আলীম চৌধুরীর স্মৃতি। এই ছাত্রাবাসে থেকে তিনি বিদ্যালয়টিতে পড়াশোনা করেছিলেন। এই খেলার মাঠ, ছাত্রাবাস, মনোরম পুকুর ও স্টাফ কোয়ার্টার- সবই দখলে রেখেছে বিয়াম ফাউন্ডেশন কর্তৃক পরিচালিত বিয়াম ল্যাবরেটরি স্কুল নামে একটি ইংরেজি মাধ্যম শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। প্রায় দুইশ’ কোটি টাকার এ সম্পত্তি দখলমুক্ত করতে গত ১৬ বছর ধরে আন্দোলন করে আসছেন সরকারি বালক বিদ্যালয়ের প্রাক্তন এবং বর্তমান শিক্ষার্থীসহ অভিভাবক ও স্থানীয় বিশিষ্টজন।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, ১৮৮১ সালে প্রতিষ্ঠিত ঐতিহ্যবাহী এই বিদ্যাপীঠের একমাত্র আবাসিক ছাত্রাবাস ও খেলার মাঠ শহরের আলোরমেলা এলাকায় অবস্থিত। চিরস্থায়ী বন্দোবস্ত পাওয়া প্রায় ৮.১০ একর ভূমি সরকারি বালক উচ্চ বিদ্যালয়ের নিজস্ব সম্পত্তি। কিন্তু ২০০৬ সালে বিএনপি-জামায়াত জোট সরকার আমলে প্রতিষ্ঠানটির আবাসিক ছাত্রাবাসে অবস্থানরত ছাত্র-শিক্ষকদের নির্যাতন চালিয়ে জোরপূর্বক ছাত্রাবাস ত্যাগ করতে বাধ্য করে তৎকালীন প্রশাসন ও সরকারসমর্থিত ছাত্রদলের ক্যাডার বাহিনী। একই বছরের ১৫ নভেম্বর তৎকালীন সমাজকল্যাণ মন্ত্রী যুদ্ধাপরাধের দায়ে মৃত্যুদণ্ড প্রাপ্ত কুখ্যাত রাজাকার আলী আহসান মুজাহিদ ও শিক্ষামন্ত্রী ড. ওসমান ফারুকের উপস্থিতে শহীদ বুদ্ধিজীবী ডা. আলীম চৌধুরীর স্মৃতিবিজড়িত এই ছাত্রাবাস দখলে নিয়ে উদ্বোধন করা হয় বিয়াম ল্যাবরেটরী স্কুল নামের বিতর্কিত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। এর প্রতিবাদে সরকারি বালক উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রাক্তন-বর্তমান ছাত্রসহ জেলার সুশীল সমাজ ও সর্বস্তরের মানুষ রাজপথে আন্দোলনের নামে। তৎকালীন প্রশাসন ছাত্র ও সুশীল সমাজের আন্দোলন স্তব্ধ করতে চালায় ব্যাপক নির্যাতন ও ধরপাকড়। বিগত ১৬ বছর ধরে বিদ্যালয়ের প্রাক্তন-বর্তমান ছাত্ররা তাদের ছাত্রাবাস ও খেলার মাঠ দখলমুক্ত করার দাবিতে নানা কর্মসূচি অব্যাহত রেখেছে। কিন্তু বারবার কিশোরগঞ্জ জেলা প্রশাসনের কাছ থেকে প্রতারণার শিকার হচ্ছেন আন্দোলনরত প্রাক্তন-বর্তমান শিক্ষার্থীরা। দখলমুক্ত করার আশ্বাস দিলেও তা বাস্তবায়ন করেনি প্রশাসন।
জানা গেছে, বিগত তিনমাস আগে মহামান্য রাষ্ট্রপতি আব্দুল হামিদ এ বিষয়ে একটি নির্দেশনাও দিয়েছেন। সরকারি বালক উচ্চ বিদ্যালয়ের ছাত্রাবাস ও খেলার মাঠ থেকে বিয়াম ল্যাবরেটরি স্কুল স্থানান্তরের কঠোর নির্দেশনা দেওয়ার পরেও রহস্যময় কারণে তা বাস্তবায়ন করতে গড়িমসি করছে জেলা প্রশাসন। এ বিষয়টি নিয়ে বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের মাঝে ব্যাপক ক্ষোভ বিরাজ করছে। বিদ্যালয়টির প্রাক্তন শিক্ষার্থীদের সংগঠন এলামনাই এসোসিয়েশনের সদস্যরা আবারও বৃহত্তর ও কঠোর আন্দোলনের কর্মসূচি নিয়ে সংঘটিত হচ্ছেন। এ ব্যাপারে সংগঠনটি অন্যতম সমন্বয়ক শিপন করীম জানান, দেশের কুখ্যাত রাজাকার মুজাহিদের হাত ধরে প্রতিষ্ঠিত বিয়াম স্কুলের প্রতি জেলা প্রশাসনের এ দরদ রহস্যময়। জাতির জনকের স্মৃতিবিজড়িত খেলার মাঠ ও শহীদ বুদ্ধিজীবী ডা. আলম চৌধুরী স্মৃতিবিজড়িত ছাত্রাবাস দখলমুক্ত করতে জেলা প্রশাসনের অনীহা অত্যন্ত দুঃখজনক। মহামান্য রাষ্ট্রপতির নির্দেশনা পরেও ছাত্রাবাস ও খেলার মাঠ দখলমুক্ত নি হওয়াতে কঠোর কর্মসূচি নিয়ে আন্দোলনে নামার হুঁশিয়ারি দিয়েছেন তিনি।
কিশোরগঞ্জ সরকারি বালক উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক একে এম আব্দুল্লাহ জানান, বিদ্যালয়ের মোট ১৫৭৫ জন শিক্ষার্থী ও শিক্ষক শিক্ষিকা রয়েছেন ৫২ জন। বর্তমান নিয়মে ষষ্ঠ শ্রেণীতে লটারির মাধ্যমে ভর্তির ফলে পার্শ্ববর্তী অন্যান্য জেলার ছাত্ররা ভর্তি হয়েছেন। এ অবস্থায় ছাত্রদের জন্য আবাসিক ছাত্রাবাস খুবই জরুরী হয়ে পড়েছে। অনেক শিক্ষার্থী বিভিন্ন মেস ও বাসা ভাড়া নিয়ে থাকতে হিমশিম খেতে হচ্ছে। স্কুলের আবাসিক সংকটের ফলে অনেক শিক্ষার্থীর শিক্ষা কার্যক্রম ব্যাহত হচ্ছে। আমাদের নিজস্ব ছাত্রাবাস খালি করার নোটিশ দেওয়ার পরেও রহস্যময় কারণে বিয়াম ল্যাবরেটরি স্কুল জোরপূর্বক দখলে আছে। এ ব্যাপারে বিদ্যালয়ের প্রাক্তন বর্তমান ছাত্র পরিষদের সাধারণ সম্পাদক সাজ্জাদ হোসেন জানান, দেশের অন্যতম সেরা ও স্বনামধন্য বিদ্যাপীঠের নিজস্ব খেলার মাঠ ও ছাত্রাবাস একটি বিতর্কিত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান দখল করে রাখবে এটি কাম্য নয়। গভঃ বয়েজ স্কুলের গভর্নিং বডির সভাপতি জেলা প্রশাসক অথচ ওনার স্কুলের সম্পত্তি দখল করে রেখেছে বেসরকারী বিয়াম ফাউন্ডেশন এটি হাস্যকর। দখলবাজ বিয়াম ল্যাবরেটরি স্কুলকে রক্ষায় জেলা প্রশাসন নগ্ন চেষ্টা অব্যাহত রেখেছে। আমাদের আবেগ অনুভূতির প্রিয় বিদ্যাপীঠের ছাত্রাবাস ও খেলার মাঠ উদ্ধার করতে সর্বাত্মক আন্দোলনের কোন বিকল্প নেই বলেও জানান তিনি।

মহামান্য রাষ্ট্রপতির নির্দেশনার পরেও দখলমুক্ত হয়নি গভঃ বয়েজ স্কুলের ছাত্রাবাস 

প্রকাশের সময় : ০৩:০৪:১৫ অপরাহ্ন, বুধবার, ৩০ মার্চ ২০২২
কিশোরগঞ্জের ১৪১ বছরের ঐতিহ্যবাহী বিদ্যাপীঠ কিশোরগঞ্জ সরকারি বালক উচ্চ বিদ্যালয়ের ছাত্রাবাস ও খেলার মাঠ ১৬ বছরেও দখলমুক্ত হয়নি। এই বিদ্যালয়ের খেলার মাঠে ১৯৭৩ সালে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এসে জনসভা করেছিলেন। বিদ্যালয়ের ছাত্রাবাসের সঙ্গে জড়িয়ে আছে শহীদ বুদ্ধিজীবী ডা. আলীম চৌধুরীর স্মৃতি। এই ছাত্রাবাসে থেকে তিনি বিদ্যালয়টিতে পড়াশোনা করেছিলেন। এই খেলার মাঠ, ছাত্রাবাস, মনোরম পুকুর ও স্টাফ কোয়ার্টার- সবই দখলে রেখেছে বিয়াম ফাউন্ডেশন কর্তৃক পরিচালিত বিয়াম ল্যাবরেটরি স্কুল নামে একটি ইংরেজি মাধ্যম শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। প্রায় দুইশ’ কোটি টাকার এ সম্পত্তি দখলমুক্ত করতে গত ১৬ বছর ধরে আন্দোলন করে আসছেন সরকারি বালক বিদ্যালয়ের প্রাক্তন এবং বর্তমান শিক্ষার্থীসহ অভিভাবক ও স্থানীয় বিশিষ্টজন।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, ১৮৮১ সালে প্রতিষ্ঠিত ঐতিহ্যবাহী এই বিদ্যাপীঠের একমাত্র আবাসিক ছাত্রাবাস ও খেলার মাঠ শহরের আলোরমেলা এলাকায় অবস্থিত। চিরস্থায়ী বন্দোবস্ত পাওয়া প্রায় ৮.১০ একর ভূমি সরকারি বালক উচ্চ বিদ্যালয়ের নিজস্ব সম্পত্তি। কিন্তু ২০০৬ সালে বিএনপি-জামায়াত জোট সরকার আমলে প্রতিষ্ঠানটির আবাসিক ছাত্রাবাসে অবস্থানরত ছাত্র-শিক্ষকদের নির্যাতন চালিয়ে জোরপূর্বক ছাত্রাবাস ত্যাগ করতে বাধ্য করে তৎকালীন প্রশাসন ও সরকারসমর্থিত ছাত্রদলের ক্যাডার বাহিনী। একই বছরের ১৫ নভেম্বর তৎকালীন সমাজকল্যাণ মন্ত্রী যুদ্ধাপরাধের দায়ে মৃত্যুদণ্ড প্রাপ্ত কুখ্যাত রাজাকার আলী আহসান মুজাহিদ ও শিক্ষামন্ত্রী ড. ওসমান ফারুকের উপস্থিতে শহীদ বুদ্ধিজীবী ডা. আলীম চৌধুরীর স্মৃতিবিজড়িত এই ছাত্রাবাস দখলে নিয়ে উদ্বোধন করা হয় বিয়াম ল্যাবরেটরী স্কুল নামের বিতর্কিত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। এর প্রতিবাদে সরকারি বালক উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রাক্তন-বর্তমান ছাত্রসহ জেলার সুশীল সমাজ ও সর্বস্তরের মানুষ রাজপথে আন্দোলনের নামে। তৎকালীন প্রশাসন ছাত্র ও সুশীল সমাজের আন্দোলন স্তব্ধ করতে চালায় ব্যাপক নির্যাতন ও ধরপাকড়। বিগত ১৬ বছর ধরে বিদ্যালয়ের প্রাক্তন-বর্তমান ছাত্ররা তাদের ছাত্রাবাস ও খেলার মাঠ দখলমুক্ত করার দাবিতে নানা কর্মসূচি অব্যাহত রেখেছে। কিন্তু বারবার কিশোরগঞ্জ জেলা প্রশাসনের কাছ থেকে প্রতারণার শিকার হচ্ছেন আন্দোলনরত প্রাক্তন-বর্তমান শিক্ষার্থীরা। দখলমুক্ত করার আশ্বাস দিলেও তা বাস্তবায়ন করেনি প্রশাসন।
জানা গেছে, বিগত তিনমাস আগে মহামান্য রাষ্ট্রপতি আব্দুল হামিদ এ বিষয়ে একটি নির্দেশনাও দিয়েছেন। সরকারি বালক উচ্চ বিদ্যালয়ের ছাত্রাবাস ও খেলার মাঠ থেকে বিয়াম ল্যাবরেটরি স্কুল স্থানান্তরের কঠোর নির্দেশনা দেওয়ার পরেও রহস্যময় কারণে তা বাস্তবায়ন করতে গড়িমসি করছে জেলা প্রশাসন। এ বিষয়টি নিয়ে বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের মাঝে ব্যাপক ক্ষোভ বিরাজ করছে। বিদ্যালয়টির প্রাক্তন শিক্ষার্থীদের সংগঠন এলামনাই এসোসিয়েশনের সদস্যরা আবারও বৃহত্তর ও কঠোর আন্দোলনের কর্মসূচি নিয়ে সংঘটিত হচ্ছেন। এ ব্যাপারে সংগঠনটি অন্যতম সমন্বয়ক শিপন করীম জানান, দেশের কুখ্যাত রাজাকার মুজাহিদের হাত ধরে প্রতিষ্ঠিত বিয়াম স্কুলের প্রতি জেলা প্রশাসনের এ দরদ রহস্যময়। জাতির জনকের স্মৃতিবিজড়িত খেলার মাঠ ও শহীদ বুদ্ধিজীবী ডা. আলম চৌধুরী স্মৃতিবিজড়িত ছাত্রাবাস দখলমুক্ত করতে জেলা প্রশাসনের অনীহা অত্যন্ত দুঃখজনক। মহামান্য রাষ্ট্রপতির নির্দেশনা পরেও ছাত্রাবাস ও খেলার মাঠ দখলমুক্ত নি হওয়াতে কঠোর কর্মসূচি নিয়ে আন্দোলনে নামার হুঁশিয়ারি দিয়েছেন তিনি।
কিশোরগঞ্জ সরকারি বালক উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক একে এম আব্দুল্লাহ জানান, বিদ্যালয়ের মোট ১৫৭৫ জন শিক্ষার্থী ও শিক্ষক শিক্ষিকা রয়েছেন ৫২ জন। বর্তমান নিয়মে ষষ্ঠ শ্রেণীতে লটারির মাধ্যমে ভর্তির ফলে পার্শ্ববর্তী অন্যান্য জেলার ছাত্ররা ভর্তি হয়েছেন। এ অবস্থায় ছাত্রদের জন্য আবাসিক ছাত্রাবাস খুবই জরুরী হয়ে পড়েছে। অনেক শিক্ষার্থী বিভিন্ন মেস ও বাসা ভাড়া নিয়ে থাকতে হিমশিম খেতে হচ্ছে। স্কুলের আবাসিক সংকটের ফলে অনেক শিক্ষার্থীর শিক্ষা কার্যক্রম ব্যাহত হচ্ছে। আমাদের নিজস্ব ছাত্রাবাস খালি করার নোটিশ দেওয়ার পরেও রহস্যময় কারণে বিয়াম ল্যাবরেটরি স্কুল জোরপূর্বক দখলে আছে। এ ব্যাপারে বিদ্যালয়ের প্রাক্তন বর্তমান ছাত্র পরিষদের সাধারণ সম্পাদক সাজ্জাদ হোসেন জানান, দেশের অন্যতম সেরা ও স্বনামধন্য বিদ্যাপীঠের নিজস্ব খেলার মাঠ ও ছাত্রাবাস একটি বিতর্কিত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান দখল করে রাখবে এটি কাম্য নয়। গভঃ বয়েজ স্কুলের গভর্নিং বডির সভাপতি জেলা প্রশাসক অথচ ওনার স্কুলের সম্পত্তি দখল করে রেখেছে বেসরকারী বিয়াম ফাউন্ডেশন এটি হাস্যকর। দখলবাজ বিয়াম ল্যাবরেটরি স্কুলকে রক্ষায় জেলা প্রশাসন নগ্ন চেষ্টা অব্যাহত রেখেছে। আমাদের আবেগ অনুভূতির প্রিয় বিদ্যাপীঠের ছাত্রাবাস ও খেলার মাঠ উদ্ধার করতে সর্বাত্মক আন্দোলনের কোন বিকল্প নেই বলেও জানান তিনি।