প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সুপ্ত প্রতিভা বিকশিত করার সুযোগ প্রদানের মাধ্যমে অটিজমে আক্রান্ত শিশুসহ বিশেষ চাহিদা সম্পন্ন সব শিশুকে সমাজের মূলধারায় নিয়ে আসার ওপর গুরুত্বারোপ করেছেন।
অবহেলা না করে অটিস্টিক ব্যক্তিদের আপনজন ভেবে তাদের প্রতি দায়িত্ব ও কর্তব্য পালনের আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, আমি বিশ্বাস করি, সবার সম্মিলিত প্রচেষ্টা ও আমাদের বহুমুখী প্রচেষ্টায় আমরা অটিজম সিনড্রোমে আক্রান্ত ব্যক্তিদের জাতীয় জীবনের মূলধারায় অন্তর্ভুক্ত করতে সক্ষম হবো।
আজ শনিবার (২ এপ্রিল) বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে (বিআইসিসি) সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয় আয়োজিত ১৫তম বিশ্ব অটিজম সচেতনতা দিবস উপলক্ষে আয়োজিত অনুষ্ঠানে এসব কথা বলেন তিনি। প্রধানমন্ত্রী তার সরকারি বাসভবন গণভবন থেকে ভার্চুয়ালি এ অনুষ্ঠানে যোগ দেন।
এ বছর দিবসটির প্রতিপাদ্য হলো- এমন বিশ্ব গড়ি অটিজম বৈশিষ্ট্যসম্পন্ন ব্যক্তির প্রতিভা বিকশিত করি।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, অটিজম সিনড্রোমে আক্রান্ত শিশুদের বিভিন্ন ধরনের সুপ্ত প্রতিভা রয়েছে। তাদের সুযোগ দেয়ার মাধ্যমে সেই প্রতিভাগুলো বিকশিত করতে হবে। বিশেষ চাহিদা সম্পন্ন শিশুদের সহযোগিতা করতে হবে যাতে তারা তাদের সুপ্ত প্রতিভা বিকশিত করতে পারে এবং সমাজে অবদান রাখতে পারে।
মা-বাবা ও অভিভাবকদের মৃত্যুর পর অটিজম আক্রান্ত ব্যক্তিদের জন্য প্রশিক্ষণ সুবিধাসহ বাসস্থানের ব্যবস্থা করার দাবি প্রসঙ্গে শেখ হাসিনা বলেন, সরকার তা করবে। প্রাথমিকভাবে আমরা বিভাগীয় সদরদপ্তরে প্রশিক্ষণ সুবিধাসহ আবাসনের ব্যবস্থা করবো এবং ধীরে ধীরে নিউরো ডেভেলপমেন্টাল প্রতিবন্ধী সুরক্ষা ট্রাস্টের মাধ্যমে তা সব জেলায় করা হবে। এ লক্ষ্যে সমাজকল্যাণমন্ত্রীকে একটি প্রকল্প নিতে বলা হয়েছে।
নানা ধরনের প্রতিবন্ধীদের কল্যাণে আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন সরকারের নেওয়া পদক্ষেপ তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, সেই সময় অটিজম সম্পর্কে সচেতনতাটা আমাদের ছিল না। কিন্তু আমরা তখন ব্যবস্থা নেই এবং ১৯৯৯ সালে জাতীয় প্রতিবন্ধী উন্নয়ন ফাউন্ডেশনও প্রতিষ্ঠা করি এবং তা পরিচালনার জন্য সিড মানিও আমি দিয়েছিলাম।
মেয়ে সায়মা ওয়াজেদ পুতুলের প্রচেষ্টায় দেশে-বিদেশে অটিজম নিয়ে সচেতনতা বেড়েছে বলেও অনুষ্ঠানে জানান তিনি। সায়মা নিউরো ডেভেলপমেন্টাল ডিজঅর্ডার এ্যান্ড অটিজম বিষয়ক জাতীয় উপদেষ্টা কমিটির সভাপতি।
শেখ হাসিনা বলেন, পুতুল তার অক্লান্ত প্রচেষ্টায় দেশে ও বিদেশ অটিজমের গুরুত্ব, সচেতনতা বৃদ্ধি পেয়েছে। মূলত তার কাছ থেকেই এটা শিখেছি ও জেনেছি। সে যখন বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনা করত, তখন আমি যেতাম এবং সেই সময় থেকেই এই সম্পর্কে কিছু ধারণা পাই।
তিনি আরো বলেন, ২০১৪ সালে নিউরো ডেভমেন্টাল প্রতিবন্ধী সুরক্ষা ট্রাস্ট প্রতিষ্ঠা করি। এই ট্রাস্ট প্রতিষ্ঠার পর থেকে দেশে অটিজমসহ নিউরো ডেভেলপমেন্টাল প্রতিবন্ধী (এনডিডি) ব্যক্তিদের জীবনমান উন্নয়নে বিভিন্ন কার্যক্রমও আমরা গ্রহণ করি। আমরা এই ট্রাস্টকে ১৪৩ কোটি টাকা অনুদান প্রদান করেছি। এই ট্রাস্ট থেকে ২০১৭ সাল থেকে এই পর্যন্ত ৫ হাজার ৭০১ জনকে ৪ কোটি ৬৯ লাখ টাকা অনুদান দেয়া হয়েছে।
সমাজকল্যাণমন্ত্রী নুরুজ্জামান আহমেদ, প্রতিমন্ত্রী আশরাফ আলী খান খসরু ও সচিব মাহফুজা আক্তার এ অনুষ্ঠানে বক্তব্য দেন। অটিজম সিনড্রোমে আক্রান্ত বিশেষ শিশুদের পক্ষে বিশেষ শিশু ইসাবা হাফিজ সুষমি অনুষ্ঠানে বক্তব্য দেয়।
পরে প্রধানমন্ত্রী শারীরিক প্রতিবন্ধী শিশুদের পরিবেশিত বর্ণাঢ্য সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান উপভোগ করেন। এর আগে প্রধানমন্ত্রীর পক্ষে সমাজকল্যাণ মন্ত্রী নুরুজ্জামান আহমেদ সফল অটিজম আক্রান্ত শিশুদের এবং এ ধরনের শিশুদের উন্নয়নে কাজ করা ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের মধ্যে পুরস্কার বিতরণ করেন।
অনুষ্ঠানে অটিজমের ওপর একটি ডকুমেন্টারি প্রদর্শিত হয়। শেখ হাসিনা ‘বলতে চাই’ ও ‘স্মার্ট অটিজম বার্তা’ নামে দুটি অ্যাপসেরও উদ্বোধন করেন।