বৃহস্পতিবার, ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০ বঙ্গাব্দ

মেয়ে মেডিকেলে ছেলে ঢাবিতে, ভ্যানচালক বাবার স্বপ্ন পূরণ

ঠাকুরগাঁওয়ের বালীয়াডাঙ্গী উপজেলার বড় পলাশবাড়ী ইউনিয়নের বেলসাড়া গ্রামের বাসিন্দা আফতাবর রহমান৷ স্ত্রী, এক ছেলে, তিন মেয়ে আর বৃদ্ধা মাকে নিয়ে সাত সদস্যের সংসার নিয়ে বেলসাড়া গ্রামে বসবাস করছেন তিনি। পৈতৃক ভিটেমাটি, একটি ভ্যান, আর অল্প একটু চাষাবাদের জমি ছাড়া আর কিছুই নেই তার৷
একমাত্র ছেলে মুন্না আলী বাংলা বিষয় নিয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে লেখাপড়া করছেন কয়েক বছর যাবত। সে এখন চতুর্থ বর্ষের ছাত্র। এদিকে মঙ্গলবার মেয়ে আলপনা আক্তারের মেডিকেল কলেজ ভর্তি ফলাফল প্রকাশিত হয়। ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালে ভর্তির সুযোগ হয়েছে তার। এছাড়াও বড় মেয়ের বিয়ে দিয়ে পাত্রস্থ করেছেন আর ছোট মেয়ে পড়ছে উচ্চ মাধ্যমিকে। স্কুলের গণ্ডি পেরোনোই তাদের পরিবারে সৌভাগ্যের বিষয়। সেই ভাঙা ঘরে আলো জ্বালিয়েছে তার মেয়ে আলপনা। তিনি এ বছর মেডিকেল ভর্তি পরীক্ষায় ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালে ভর্তির সুযোগ পেয়েছেন।
আলপনা তার পরিবারের সাথে বালিয়াডাঙ্গী উপজেলার বড়পলাশবাড়ী ইউনিয়নের ধারিয়া বেলসাড়া গ্রামে বসবাস করেন।
ময়মনসিংহ মেডিকেলে চান্স পাওয়া শিক্ষার্থী আলপনা আক্তার বালিয়াডাঙ্গী উপজেলার কুশলডাঙ্গী উচ্চ বিদ্যালয় থেকে মাধ্যমিক ও ঠাকুরগাঁও সরকারি কলেজ থেকে উচ্চ মাধ্যমিকে জিপিএ ৫ পেয়ে উত্তীর্ণ হয়েছে।
আলপনা আক্তার বলেন, বাবা অনেক কষ্ট করে পড়ালেখা করাচ্ছেন। চিকিৎসক হয়ে বাবা, মাসহ অসহায় মানুষের সেবায় নিজেকে নিয়োজিত রাখবো। বাবার স্বপ্ন পুরণে সকলের নিকট দোয়া চান তিনি।
তিনি আরো বলেন, লেখাপড়ার ক্ষেত্রে বাবা-মার পরই আমার শিক্ষকদের অবস্থান। যখন আমি স্কুলে পড়তাম তখন ক্লাসে খুব চুপচাপ থাকলেও রেজাল্টের কারণেই আমার প্রতি শিক্ষকদের মনোযোগ ছিল। আমার রেজাল্ট সব সময়ই ভালো ছিল। সেদিক বিবেচনায় শিক্ষকদের বিশেষ নজরে ছিলাম আমি। তারা আমাকে সব সময় সার্বিক দিক দিয়ে প্রেরণা যুগিয়েছে, পাশাপাশি অনুপ্রেরণা দেন যে, আমি পারব৷ সেখান থেকে আমার স্বপ্নটি আরও বেগবান হয়। আমার এই ফলাফলে আমার বাবা মা যে খুশি হয়েছে এটাই আমার বড় স্বার্থকতা। আর আমাদের মত পরিবারের ছেলে মেয়েরা স্বপ্ন দেখতে ভয় পাই। তবে আমি মনে করি দারিদ্র্যতা সফলতার অন্তরায় না৷ স্বপ্ন আর পরিশ্রম একসাথে করলে সফল হওয়া সম্ভব৷
ভ্যান চালক বাবা আফতাবর রহমান জানান, একমাত্র ছেলেকে এতদিন পড়ালেখার খরচ নিয়মিত নিয়ে আসছেন রিক্সা ভ্যান চালিয়ে। এবার মেয়ে মেডিকেলে ভর্তির সুযোগের খবরে খরচের দুশ্চিন্তায় পড়েছেন তিনি। সংসারের খরচ যোগাতে প্রতিদিন রিক্সা ভ্যান চালানো ছাড়া আর কোন পথ নেই বলে জানান তিনি।
ছেলে মুন্না আলীর ঢাবিতে ভর্তির সময় ২৫ শতক আবাদী জমির মধ্যে ৫ শতক জমি বিক্রি করে ভর্তির খরচ বহন করি। পরবর্তীতে তার পড়ালেখা খরচ যোগাতে গিয়ে অবশিষ্ট ২০ শতক জমিও বিক্রি করতে হয়েছে। এছাড়াও প্রতিমাসে পড়ালেখা ৩-৪ হাজার টাকা ঢাকায় ছেলেকে পাঠানো, অন্য দুই মেয়ের পড়ালেখা খরচ এবং সাংসারিক ব্যয় বহনের একমাত্র মাধ্যম আমার ভ্যান গাড়ীটি। একদিন ভ্যানগাড়ী নিয়ে বের না হলে সংসারে চুলায় তার হাড়ি উঠেনা।
তিনি আরও জানান, ডাক্তারি পড়ানো অনেক খরচ। আমি চেষ্টা করব আমার সাধ্যমত। তবে যদি সরকারের পক্ষ থেকে সহায়তা করা হয় তাহলে আমার কষ্টটা কম হবে৷ মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিকে দুই সন্তান পড়াশোনার সময় শিক্ষাবৃত্তি পায় ডাচ বাংলা ব্যাংক থেকে। এ শিক্ষাবৃত্তির টাকা তার পরিবারের কষ্ট অনেকটাই লাঘব করেছে। মেয়েকে ভর্তি করানোর টাকা যোগাড় করতে ইতোমধ্যে তিনি তাঁর নিকট আত্মীয়দের সাথে কথা বলছেন।
আলপনার মা মাজেদা খাতুন বলেন, অভাবের সংসারে ছেলে মেয়ে মানুষ করা খুব কঠিন।আমরা স্বামী-স্ত্রী মিলে স্বপ্ন দেখেছিলাম মেয়েকে ডাক্তার বানাব৷আল্লাহ পাক আমাদের কথা শুনেছেন। তাকে ডাক্তার হওয়ার সুযোগ করে দিয়েছেন। ডাক্তারি পোড়ানো ত অনেক খরচ এই অভাবনীয় সাফল্য অর্জনের জন্য মেয়েকে সহযোগিতা করে যাব ইনশাআল্লাহ। যত কষ্টই হোক না কেন আমরা তোমার খরচ বহন করব। আজকে সে আমাদের আশা পূরুণ করেছে৷ আমাদের কোন অর্থ নেই তবে স্বপ্ন আছে। দেখা যাক আল্লাহ কী করেন৷
সরকারি সুযোগ সুবিধা আলপনা পাবে কি না এ বিষয়ে জানতে চাইলে বালীয়াডাঙ্গী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা যোবায়ের হোসেন বলেন, যদি আলপনার বাবা চান তাহলে তার পড়াশোনার খরচের প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেবে উপজেলা প্রশাসন৷
বার্তা/এন

মেয়ে মেডিকেলে ছেলে ঢাবিতে, ভ্যানচালক বাবার স্বপ্ন পূরণ

প্রকাশের সময় : ০৭:৫৮:৫৪ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ৭ এপ্রিল ২০২২
ঠাকুরগাঁওয়ের বালীয়াডাঙ্গী উপজেলার বড় পলাশবাড়ী ইউনিয়নের বেলসাড়া গ্রামের বাসিন্দা আফতাবর রহমান৷ স্ত্রী, এক ছেলে, তিন মেয়ে আর বৃদ্ধা মাকে নিয়ে সাত সদস্যের সংসার নিয়ে বেলসাড়া গ্রামে বসবাস করছেন তিনি। পৈতৃক ভিটেমাটি, একটি ভ্যান, আর অল্প একটু চাষাবাদের জমি ছাড়া আর কিছুই নেই তার৷
একমাত্র ছেলে মুন্না আলী বাংলা বিষয় নিয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে লেখাপড়া করছেন কয়েক বছর যাবত। সে এখন চতুর্থ বর্ষের ছাত্র। এদিকে মঙ্গলবার মেয়ে আলপনা আক্তারের মেডিকেল কলেজ ভর্তি ফলাফল প্রকাশিত হয়। ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালে ভর্তির সুযোগ হয়েছে তার। এছাড়াও বড় মেয়ের বিয়ে দিয়ে পাত্রস্থ করেছেন আর ছোট মেয়ে পড়ছে উচ্চ মাধ্যমিকে। স্কুলের গণ্ডি পেরোনোই তাদের পরিবারে সৌভাগ্যের বিষয়। সেই ভাঙা ঘরে আলো জ্বালিয়েছে তার মেয়ে আলপনা। তিনি এ বছর মেডিকেল ভর্তি পরীক্ষায় ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালে ভর্তির সুযোগ পেয়েছেন।
আলপনা তার পরিবারের সাথে বালিয়াডাঙ্গী উপজেলার বড়পলাশবাড়ী ইউনিয়নের ধারিয়া বেলসাড়া গ্রামে বসবাস করেন।
ময়মনসিংহ মেডিকেলে চান্স পাওয়া শিক্ষার্থী আলপনা আক্তার বালিয়াডাঙ্গী উপজেলার কুশলডাঙ্গী উচ্চ বিদ্যালয় থেকে মাধ্যমিক ও ঠাকুরগাঁও সরকারি কলেজ থেকে উচ্চ মাধ্যমিকে জিপিএ ৫ পেয়ে উত্তীর্ণ হয়েছে।
আলপনা আক্তার বলেন, বাবা অনেক কষ্ট করে পড়ালেখা করাচ্ছেন। চিকিৎসক হয়ে বাবা, মাসহ অসহায় মানুষের সেবায় নিজেকে নিয়োজিত রাখবো। বাবার স্বপ্ন পুরণে সকলের নিকট দোয়া চান তিনি।
তিনি আরো বলেন, লেখাপড়ার ক্ষেত্রে বাবা-মার পরই আমার শিক্ষকদের অবস্থান। যখন আমি স্কুলে পড়তাম তখন ক্লাসে খুব চুপচাপ থাকলেও রেজাল্টের কারণেই আমার প্রতি শিক্ষকদের মনোযোগ ছিল। আমার রেজাল্ট সব সময়ই ভালো ছিল। সেদিক বিবেচনায় শিক্ষকদের বিশেষ নজরে ছিলাম আমি। তারা আমাকে সব সময় সার্বিক দিক দিয়ে প্রেরণা যুগিয়েছে, পাশাপাশি অনুপ্রেরণা দেন যে, আমি পারব৷ সেখান থেকে আমার স্বপ্নটি আরও বেগবান হয়। আমার এই ফলাফলে আমার বাবা মা যে খুশি হয়েছে এটাই আমার বড় স্বার্থকতা। আর আমাদের মত পরিবারের ছেলে মেয়েরা স্বপ্ন দেখতে ভয় পাই। তবে আমি মনে করি দারিদ্র্যতা সফলতার অন্তরায় না৷ স্বপ্ন আর পরিশ্রম একসাথে করলে সফল হওয়া সম্ভব৷
ভ্যান চালক বাবা আফতাবর রহমান জানান, একমাত্র ছেলেকে এতদিন পড়ালেখার খরচ নিয়মিত নিয়ে আসছেন রিক্সা ভ্যান চালিয়ে। এবার মেয়ে মেডিকেলে ভর্তির সুযোগের খবরে খরচের দুশ্চিন্তায় পড়েছেন তিনি। সংসারের খরচ যোগাতে প্রতিদিন রিক্সা ভ্যান চালানো ছাড়া আর কোন পথ নেই বলে জানান তিনি।
ছেলে মুন্না আলীর ঢাবিতে ভর্তির সময় ২৫ শতক আবাদী জমির মধ্যে ৫ শতক জমি বিক্রি করে ভর্তির খরচ বহন করি। পরবর্তীতে তার পড়ালেখা খরচ যোগাতে গিয়ে অবশিষ্ট ২০ শতক জমিও বিক্রি করতে হয়েছে। এছাড়াও প্রতিমাসে পড়ালেখা ৩-৪ হাজার টাকা ঢাকায় ছেলেকে পাঠানো, অন্য দুই মেয়ের পড়ালেখা খরচ এবং সাংসারিক ব্যয় বহনের একমাত্র মাধ্যম আমার ভ্যান গাড়ীটি। একদিন ভ্যানগাড়ী নিয়ে বের না হলে সংসারে চুলায় তার হাড়ি উঠেনা।
তিনি আরও জানান, ডাক্তারি পড়ানো অনেক খরচ। আমি চেষ্টা করব আমার সাধ্যমত। তবে যদি সরকারের পক্ষ থেকে সহায়তা করা হয় তাহলে আমার কষ্টটা কম হবে৷ মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিকে দুই সন্তান পড়াশোনার সময় শিক্ষাবৃত্তি পায় ডাচ বাংলা ব্যাংক থেকে। এ শিক্ষাবৃত্তির টাকা তার পরিবারের কষ্ট অনেকটাই লাঘব করেছে। মেয়েকে ভর্তি করানোর টাকা যোগাড় করতে ইতোমধ্যে তিনি তাঁর নিকট আত্মীয়দের সাথে কথা বলছেন।
আলপনার মা মাজেদা খাতুন বলেন, অভাবের সংসারে ছেলে মেয়ে মানুষ করা খুব কঠিন।আমরা স্বামী-স্ত্রী মিলে স্বপ্ন দেখেছিলাম মেয়েকে ডাক্তার বানাব৷আল্লাহ পাক আমাদের কথা শুনেছেন। তাকে ডাক্তার হওয়ার সুযোগ করে দিয়েছেন। ডাক্তারি পোড়ানো ত অনেক খরচ এই অভাবনীয় সাফল্য অর্জনের জন্য মেয়েকে সহযোগিতা করে যাব ইনশাআল্লাহ। যত কষ্টই হোক না কেন আমরা তোমার খরচ বহন করব। আজকে সে আমাদের আশা পূরুণ করেছে৷ আমাদের কোন অর্থ নেই তবে স্বপ্ন আছে। দেখা যাক আল্লাহ কী করেন৷
সরকারি সুযোগ সুবিধা আলপনা পাবে কি না এ বিষয়ে জানতে চাইলে বালীয়াডাঙ্গী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা যোবায়ের হোসেন বলেন, যদি আলপনার বাবা চান তাহলে তার পড়াশোনার খরচের প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেবে উপজেলা প্রশাসন৷
বার্তা/এন