শুক্রবার, ২৪ মার্চ ২০২৩, ১০ চৈত্র ১৪২৯ বঙ্গাব্দ

পিসে কিনে কেজিতে বিক্রি, ৫০ টাকার তরমুজ বাজারে ৫০০ টাকা

চলছে রোজার মাস, সেই সঙ্গে বৈশাখের কাঠফাটা গরম। আর গরমে রোজার দিনে পানিজাতীয় ফলের প্রতি মানুষের আগ্রহ থাকে বেশি। এ সময় অনেকেরই পছন্দ তরমুজ। শরীর ঠাণ্ডা করে আবার গলাও ভেজায় এই ফল। রোজায় ব্যাপক চাহিদা বেড়েছে রসালো ফল তরমুজের।

বিভিন্ন জেলায় উৎপাদিত হওয়া এই মৌসুমী ফলটি দেশের বিভিন্ন প্রান্তে যাচ্ছে। কখনও কখনও কৃষক নিজেই ক্ষেত থেকে তরমুজ সংগ্রহ করে দেশের বিভিন্ন এলাকায় বিক্রি করে। আবার কখনও তরমুজ ব্যবসায়ীরা কৃষকের কাছ থেকে ক্রয় করে দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে সরবরাহ করে। এরইমাঝে কিছু অসৎ ব্যবসায়ী শক্তিশালী সিন্ডিকেট গড়ে তুলে বেশি মুনাফার আশায় তরমুজের উৎপাদন খরচের চেয়ে কয়েকগুণ বেশি লাভে বিক্রি করছে ভোক্তার কাছে।

তরমুজ চাষি ও ব্যবসায়ীদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, প্রতিটি তরমুজ ছোট-বড় সাইজ অনুযায়ী গড়ে চাষিদের উৎপাদন খরচ হচ্ছে ৪০ থেকে ৫০ টাকা। সাইজ অনুযায়ী চাষীরা দ্বিগুণ অথবা তিনগুণ লাভে ১০০ থেকে ১৫০ টাকা দরে বিক্রি করে পাইকারদের নিকট। দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে সেই তরমুজ সরবরাহ করতে পাইকারদের খরচ হচ্ছে আরও ২০ থেকে ৪০ টাকা পর্যন্ত। পাইকররা সেই তরমুজ খুচরা বিক্রেতাদের নিকট আকার ভেদে ১৫০ থেকে ২৯০ টাকা পর্যন্ত বিক্রি করেন। এদিকে খুচরা বিক্রেতারা সেই তরমুজ দ্বিগুণ দামে বিক্রি করেন। খুচরা বিক্রেতারা ২০০ টাকার তরমুজ (আড়ৎ ও পরিবহন খরচ সংযুক্ত) বিক্রি করে ৩৫০ টাকা থেকে ৪শ’ টাকায় আর ৩০০ টাকার তরমুজ (আড়ৎ ও পরিবহন খরচ সংযুক্ত) কিনে সেটি বিক্রি করে ৫০০ থেকে ৬০০ টাকায়। এভাবেই চাষী থেকে ভোক্তা পর্যন্ত পৌছতে প্রতিটি তরমুজের দাম বেড়ে যায় প্রায় ৮ থেকে ১০ গুণ।

আজ রবিবার (১৭ এপ্রিল) সরেজমিনে ঝিকরগাছা বাজার ঘুরে–

যশোরের রুপদিয়ায় তরমুজ বিক্রি করতে আসা পাইকার আনোয়ার হোসেন জানান, আমার ভাই এ বছর ৩ বিঘা জমিতে তরমুজ চাষ করেছে। এতে সব মিলিয়ে তার খরচ হয়েছে প্রায় ৬০ হাজার টাকা। এবছর ফলন একটু কম হয়েছে, তাতে দেড় হাজারের বেশি তরমুজ হয়েছে। প্রতিটি তরমুজের উৎপাদন খরচ ৩৫ থেকে ৫০ টাকা পর্যন্ত হয়। সেই তরমুজ আমি দেড়লাখ টাকায় কিনে পাইকারি বিক্রি করতে নিয়ে এসেছি। ছোট তরমুজ ৮০-৯০ টাকা, মাঝারি তরমুজ ১৪০-১৮০ টাকা ও বড় তরমুজ ২৪০-২৮০ টাকা পিছ হিসেবে বিক্রি করি। তবে খুচরা বিক্রেতারা আমাদের কাছ থেকে পাইকারি দামে কিনে নিয়ে ডাবল দামে বিক্রি করে। খুচরা বিক্রেতারা একটু বেশি লাভ করে। এজন্য ভোক্তা পর্যন্ত পৌছাতে পৌাছাতে তরমুজের দামি এত বেড়ে যায়।

ঝিকরগাছা বাসস্ট্যান্ড এলাকার ফল পট্টিতে তরমুজ কিনতে আসা ভ্যানচালক হোসেন আলী নামের এক ব্যক্তি বলেন, বাজারে তরমুজের দাম অনেক বেশি। বাড়তি দামে তরমুজ কেনার সামর্থ্য নেই। অতিরিক্ত দামের কারণে ইচ্ছে থাকলেও এ বছর এখনো সন্তানদের তরমুজ খাওয়াতে পারিনি।

শান্তি নামের আরেক ক্রেতা বলেন, এই গরমে রোজা রেখে ইফতারের সময় তরমুজ খেতে ভালো লাগে। পরিবারের লোকজনও তরমুজ খেতে ভালোবাসে। তাই দাম বেশি হলেও বাধ্য হয়েই তরমুজ কিনতে হচ্ছে। দুই মহিলাকে একটি তরমুজ কিনে দু’ভাগ করে নিতে দেখা গেল।

অতিরিক্ত দামে এবং কেজি দরে তরমুজ বিক্রির কারণ জানতে চাইলে একাধিক খুচরা ব্যবসায়ী বলেন, তরমুজ পচনশীল ফল। বেশীদিন সংরক্ষণ করে রাখা যায়না। পাইকারী ব্যবসায়ীরা বড় তরমুজের ভেতর ছোট তরমুজ ঢুকিয়ে দিয়ে বেশী দামে বিক্রি করে। এছাড়া আড়ৎদারদের কমিশন ও পরিবহন খরচতো আছেই। সেই দাম ওঠাতে গিয়ে তরমুজ একটু বেশি দামে বিক্রি করতে হয়।

অধিকাংশ মানুষই মনে করে, কেজি দরে তরমুজ বিক্রি করে জনগনকে ঠকানো হচ্ছে। এব্যাপারে তারা ভোক্তা অধিকার অথবা প্রশাসনের কড়া পদক্ষেপ কামনা করেন।

জনপ্রিয়

পিসে কিনে কেজিতে বিক্রি, ৫০ টাকার তরমুজ বাজারে ৫০০ টাকা

প্রকাশের সময় : ০২:২১:৫৭ অপরাহ্ন, রবিবার, ১৭ এপ্রিল ২০২২

চলছে রোজার মাস, সেই সঙ্গে বৈশাখের কাঠফাটা গরম। আর গরমে রোজার দিনে পানিজাতীয় ফলের প্রতি মানুষের আগ্রহ থাকে বেশি। এ সময় অনেকেরই পছন্দ তরমুজ। শরীর ঠাণ্ডা করে আবার গলাও ভেজায় এই ফল। রোজায় ব্যাপক চাহিদা বেড়েছে রসালো ফল তরমুজের।

বিভিন্ন জেলায় উৎপাদিত হওয়া এই মৌসুমী ফলটি দেশের বিভিন্ন প্রান্তে যাচ্ছে। কখনও কখনও কৃষক নিজেই ক্ষেত থেকে তরমুজ সংগ্রহ করে দেশের বিভিন্ন এলাকায় বিক্রি করে। আবার কখনও তরমুজ ব্যবসায়ীরা কৃষকের কাছ থেকে ক্রয় করে দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে সরবরাহ করে। এরইমাঝে কিছু অসৎ ব্যবসায়ী শক্তিশালী সিন্ডিকেট গড়ে তুলে বেশি মুনাফার আশায় তরমুজের উৎপাদন খরচের চেয়ে কয়েকগুণ বেশি লাভে বিক্রি করছে ভোক্তার কাছে।

তরমুজ চাষি ও ব্যবসায়ীদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, প্রতিটি তরমুজ ছোট-বড় সাইজ অনুযায়ী গড়ে চাষিদের উৎপাদন খরচ হচ্ছে ৪০ থেকে ৫০ টাকা। সাইজ অনুযায়ী চাষীরা দ্বিগুণ অথবা তিনগুণ লাভে ১০০ থেকে ১৫০ টাকা দরে বিক্রি করে পাইকারদের নিকট। দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে সেই তরমুজ সরবরাহ করতে পাইকারদের খরচ হচ্ছে আরও ২০ থেকে ৪০ টাকা পর্যন্ত। পাইকররা সেই তরমুজ খুচরা বিক্রেতাদের নিকট আকার ভেদে ১৫০ থেকে ২৯০ টাকা পর্যন্ত বিক্রি করেন। এদিকে খুচরা বিক্রেতারা সেই তরমুজ দ্বিগুণ দামে বিক্রি করেন। খুচরা বিক্রেতারা ২০০ টাকার তরমুজ (আড়ৎ ও পরিবহন খরচ সংযুক্ত) বিক্রি করে ৩৫০ টাকা থেকে ৪শ’ টাকায় আর ৩০০ টাকার তরমুজ (আড়ৎ ও পরিবহন খরচ সংযুক্ত) কিনে সেটি বিক্রি করে ৫০০ থেকে ৬০০ টাকায়। এভাবেই চাষী থেকে ভোক্তা পর্যন্ত পৌছতে প্রতিটি তরমুজের দাম বেড়ে যায় প্রায় ৮ থেকে ১০ গুণ।

আজ রবিবার (১৭ এপ্রিল) সরেজমিনে ঝিকরগাছা বাজার ঘুরে–

যশোরের রুপদিয়ায় তরমুজ বিক্রি করতে আসা পাইকার আনোয়ার হোসেন জানান, আমার ভাই এ বছর ৩ বিঘা জমিতে তরমুজ চাষ করেছে। এতে সব মিলিয়ে তার খরচ হয়েছে প্রায় ৬০ হাজার টাকা। এবছর ফলন একটু কম হয়েছে, তাতে দেড় হাজারের বেশি তরমুজ হয়েছে। প্রতিটি তরমুজের উৎপাদন খরচ ৩৫ থেকে ৫০ টাকা পর্যন্ত হয়। সেই তরমুজ আমি দেড়লাখ টাকায় কিনে পাইকারি বিক্রি করতে নিয়ে এসেছি। ছোট তরমুজ ৮০-৯০ টাকা, মাঝারি তরমুজ ১৪০-১৮০ টাকা ও বড় তরমুজ ২৪০-২৮০ টাকা পিছ হিসেবে বিক্রি করি। তবে খুচরা বিক্রেতারা আমাদের কাছ থেকে পাইকারি দামে কিনে নিয়ে ডাবল দামে বিক্রি করে। খুচরা বিক্রেতারা একটু বেশি লাভ করে। এজন্য ভোক্তা পর্যন্ত পৌছাতে পৌাছাতে তরমুজের দামি এত বেড়ে যায়।

ঝিকরগাছা বাসস্ট্যান্ড এলাকার ফল পট্টিতে তরমুজ কিনতে আসা ভ্যানচালক হোসেন আলী নামের এক ব্যক্তি বলেন, বাজারে তরমুজের দাম অনেক বেশি। বাড়তি দামে তরমুজ কেনার সামর্থ্য নেই। অতিরিক্ত দামের কারণে ইচ্ছে থাকলেও এ বছর এখনো সন্তানদের তরমুজ খাওয়াতে পারিনি।

শান্তি নামের আরেক ক্রেতা বলেন, এই গরমে রোজা রেখে ইফতারের সময় তরমুজ খেতে ভালো লাগে। পরিবারের লোকজনও তরমুজ খেতে ভালোবাসে। তাই দাম বেশি হলেও বাধ্য হয়েই তরমুজ কিনতে হচ্ছে। দুই মহিলাকে একটি তরমুজ কিনে দু’ভাগ করে নিতে দেখা গেল।

অতিরিক্ত দামে এবং কেজি দরে তরমুজ বিক্রির কারণ জানতে চাইলে একাধিক খুচরা ব্যবসায়ী বলেন, তরমুজ পচনশীল ফল। বেশীদিন সংরক্ষণ করে রাখা যায়না। পাইকারী ব্যবসায়ীরা বড় তরমুজের ভেতর ছোট তরমুজ ঢুকিয়ে দিয়ে বেশী দামে বিক্রি করে। এছাড়া আড়ৎদারদের কমিশন ও পরিবহন খরচতো আছেই। সেই দাম ওঠাতে গিয়ে তরমুজ একটু বেশি দামে বিক্রি করতে হয়।

অধিকাংশ মানুষই মনে করে, কেজি দরে তরমুজ বিক্রি করে জনগনকে ঠকানো হচ্ছে। এব্যাপারে তারা ভোক্তা অধিকার অথবা প্রশাসনের কড়া পদক্ষেপ কামনা করেন।