শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০ বঙ্গাব্দ

রাশিয়ার সঙ্গে ‘সামরিক সহযোগিতা’ নিয়ে ভারতকে বার্তা পেন্টাগনের

সংগৃহীত

ইউক্রেনে রুশ আগ্রাসন শুরুর পর ভারসাম্যমূলক কূটনীতির পথ বেছে নিয়েছে ভারত। দিল্লি এখনো রাশিয়ার সামরিক আগ্রাসনের নিন্দা জানায়নি। এমনকি যুক্তরাষ্ট্রসহ পশ্চিমা দেশগুলোর কঠোর নিষেধাজ্ঞার মধ্যে রাশিয়ার কাছ থেকে কম দামে তেল কিনছে ভারত।

যে বিষয়টি ভালোভাবে দেখছে না যুক্তরাষ্ট্র ও তাদের মিত্ররা। এ অবস্থায় ইউক্রেন যুদ্ধ ইস্যুতে ভারতের ওপর চাপ বাড়ছে। শুক্রবার মার্কিন প্রতিরক্ষা দফতর পেন্টাগন ভারতকে সতর্ক করে বলেছে, প্রতিরক্ষার ক্ষেত্রে তাদের রাশিয়া-নির্ভরতা দেখতে চাই না। আমরা এই বিষয়ে স্পষ্ট ভাষায় তাদের নিরুত্সাহিত করছি।

মাত্র একদিন আগেই যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক পররাষ্ট্র হিলারি ক্লিনটন বলেন, রাশিয়া থেকে ভারতের জ্বালানি আমদানির পরিমাণ খুবই অল্প এবং একটি সার্বভৌম জাতি হিসেবে ভারত তার স্বার্থ অনুসারে সিদ্ধান্ত নিবে, তবে নয়াদিল্লির স্পষ্ট এবং আরও দৃঢ়ভাবে বলা উচিত যে, ইউক্রেনের বিরুদ্ধে রাশিয়ার আগ্রাসন একেবারেই খারাপ কাজ।

এদিকে ভারতের অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারমন বলেছেন, ভারত পশ্চিমা বন্ধু রাষ্ট্রের সঙ্গে সুসম্পর্ক রাখতে চায়। তবে সীমান্ত সুরক্ষায় রাশিয়ার সহযোগিতা প্রয়োজন।

গতকাল ভারতের আনন্দবাজার পত্রিকার এক খবরে বলা হয়েছে, রাশিয়ার সঙ্গে প্রতিরক্ষা সমঝোতা ছিন্ন করার ‘বার্তা’ দিয়ে যুক্তরাষ্ট্র এবার ভারতের ‘ভারসাম্যের কূটনীতি’ বন্ধ করতে চাইছে বলে মনে করা হচ্ছে। শুক্রবার পেন্টাগনের মুখপাত্র জন কিরবি বলেছেন, প্রতিরক্ষা ক্ষেত্রে ভারতের সঙ্গে কৌশলগত অংশীদারিত্ব বাড়ানো এবং ভবিষ্যতে সামরিক সহযোগিতার পথ আরও প্রশস্ত করা যুক্তরাষ্ট্রের লক্ষ্য। ভারত মহাসাগরীয় অঞ্চলের নিরাপত্তার ক্ষেত্রে ভারতের ভূমিকাকে বরাবরই গুরুত্ব দেয় যুক্তরাষ্ট্র। তবে ভারতের পাশাপাশি অন্য দেশগুলোকে আমাদের বার্তা-আমরা প্রতিরক্ষার ক্ষেত্রে তাদের রাশিয়া-নির্ভরতা দেখতে চাই না। পেন্টাগন মুখপাত্রের এই বক্তব্যের আড়ালে প্রচ্ছন্ন হুঁশিয়ারি রয়েছে বলেই কূটনৈতিক মহলের একাংশের ধারণা।

খবরে বলা হয়েছে, রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধে এখনও সরাসরি কোনও পক্ষ নেয়নি নয়াদিল্লি। বুচায় রুশ সেনার গণহত্যার নিন্দা করেছেন জাতিসংঘে ভারতের প্রতিনিধি। আবার রাশিয়া নিয়ে জাতিসংঘে পশ্চিমা বিশ্বের নিন্দা প্রস্তাবে ভোটদানে বিরত থেকেছে ভারত।

যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পও রাশিয়া থেকে এস-৪০০ ট্রায়াম্ফ ক্ষেপণাস্ত্র প্রতিরোধী ব্যবস্হা কেনা নিয়ে নরেন্দ্র মোদি সরকারের তত্পরতা দেখে উষ্মা প্রকাশ করেছিলেন। সম্প্রতি মার্কিন পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের আন্ডার সেক্রেটারি ভিক্টোরিয়া নুল্যান্ড ভারত সফরের পর প্রকাশিত একটি রিপোর্টে বলা হয়েছে, রাশিয়া থেকে অস্ত্র এবং সামরিক সরঞ্জাম না-কেনার জন্য নয়াদিল্লির ওপর ধারাবাহিকভাবে চাপ দেওয়া হচ্ছে। কিন্তু ‘বিকল্পের’ মূল্য চড়া হওয়ার কারণেই সেই প্রচেষ্টা ফলপ্রসূ হচ্ছে না।

সীমান্ত রক্ষায় রাশিয়ার সহযোগিতা দরকার: ভারতের অর্থমন্ত্রী

ওয়াশিংটনে মার্কিন সংবাদমাধ্যম ব্লুমবার্গকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে ভারতের অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারমণ বলেছেন, ‘মুক্ত বিশ্বের’ সঙ্গে জোরালো সম্পর্ক চায় ভারত। তবে সীমান্ত রক্ষায় রাশিয়ার সহায়তার প্রয়োজন রয়েছে ভারতের। খবরে বলা হয়েছে, ভারত তার সারমিক সরঞ্জামের বেশির ভাগই রাশিয়া থেকে ক্রয় করে। ইউক্রেন যুদ্ধ শুরুর পর রাশিয়ার সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক সীমিত করতে পশ্চিমারা আহ্বান জানালেও ভারত তা নাকচ করেছে। পশ্চিমা মিত্রদের সমালোচনার মুখে পড়েছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি।

সীতারমণ বলেন, দীর্ঘকাল ধরে পাকিস্তান ও চীনের সঙ্গে সীমান্তে বিরোধ রয়েছে ভারতের। অতীতে এই দুই দেশের সঙ্গে যুদ্ধে জড়িয়েছে ভারত। এই অবস্থায় আমরা নিজেদের আঞ্চলিক স্বার্থ রক্ষার ওপর জোর দিচ্ছি। পাকিস্তান ও চীনের সম্পর্কের কথা পরোক্ষভাবে উল্লেখ করে তিনি বলেন, দুই প্রতিবেশী দেশ হাত মিলিয়েছে, যারা আমাদের বিরুদ্ধে। রাশিডা-ইউক্রেন যুদ্ধের প্রেক্ষাপটে, ঈশ্বর না করুন, যদি জোট তৈরি হয়, ভারতকে নিজেকে রক্ষা করার জন্য যথেষ্ট শক্তিশালী হতে হবে।

তিনি বলেন, ভারত ইউরোপীয় ইউনিয়ন এবং পশ্চিমা বিশ্বের বন্ধু হতে চায়। কিন্তু দুর্বল বন্ধু হিসেবে নয়, যার সহায্য পাওয়ার জন্য ছুটাছুটি করতে হবে। শুক্রবার বিশ্বব্যাংক ও আইএমএফের বৈঠকের ফাঁকে এই সাক্ষাৎকার দেন তিনি।

খবরে বলা হয়েছে, আগে ভারত ও পাকিস্তানের সঙ্গে ভারসাম্যের সম্পর্ক রেখে চলতো যুক্তরাষ্ট্র। কিন্তু সাম্প্রতিক বছরগুলোতে চীনকে ঠেকাতে ভারতের সঙ্গে কৌশলগত সম্পর্ক বাড়িয়েছে যুক্তরাষ্ট্র।

রাজনীতিতে নাম লেখাতে যাচ্ছেন সানিয়া মির্জা

রাশিয়ার সঙ্গে ‘সামরিক সহযোগিতা’ নিয়ে ভারতকে বার্তা পেন্টাগনের

প্রকাশের সময় : ১২:০৬:০১ অপরাহ্ন, রবিবার, ২৪ এপ্রিল ২০২২

ইউক্রেনে রুশ আগ্রাসন শুরুর পর ভারসাম্যমূলক কূটনীতির পথ বেছে নিয়েছে ভারত। দিল্লি এখনো রাশিয়ার সামরিক আগ্রাসনের নিন্দা জানায়নি। এমনকি যুক্তরাষ্ট্রসহ পশ্চিমা দেশগুলোর কঠোর নিষেধাজ্ঞার মধ্যে রাশিয়ার কাছ থেকে কম দামে তেল কিনছে ভারত।

যে বিষয়টি ভালোভাবে দেখছে না যুক্তরাষ্ট্র ও তাদের মিত্ররা। এ অবস্থায় ইউক্রেন যুদ্ধ ইস্যুতে ভারতের ওপর চাপ বাড়ছে। শুক্রবার মার্কিন প্রতিরক্ষা দফতর পেন্টাগন ভারতকে সতর্ক করে বলেছে, প্রতিরক্ষার ক্ষেত্রে তাদের রাশিয়া-নির্ভরতা দেখতে চাই না। আমরা এই বিষয়ে স্পষ্ট ভাষায় তাদের নিরুত্সাহিত করছি।

মাত্র একদিন আগেই যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক পররাষ্ট্র হিলারি ক্লিনটন বলেন, রাশিয়া থেকে ভারতের জ্বালানি আমদানির পরিমাণ খুবই অল্প এবং একটি সার্বভৌম জাতি হিসেবে ভারত তার স্বার্থ অনুসারে সিদ্ধান্ত নিবে, তবে নয়াদিল্লির স্পষ্ট এবং আরও দৃঢ়ভাবে বলা উচিত যে, ইউক্রেনের বিরুদ্ধে রাশিয়ার আগ্রাসন একেবারেই খারাপ কাজ।

এদিকে ভারতের অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারমন বলেছেন, ভারত পশ্চিমা বন্ধু রাষ্ট্রের সঙ্গে সুসম্পর্ক রাখতে চায়। তবে সীমান্ত সুরক্ষায় রাশিয়ার সহযোগিতা প্রয়োজন।

গতকাল ভারতের আনন্দবাজার পত্রিকার এক খবরে বলা হয়েছে, রাশিয়ার সঙ্গে প্রতিরক্ষা সমঝোতা ছিন্ন করার ‘বার্তা’ দিয়ে যুক্তরাষ্ট্র এবার ভারতের ‘ভারসাম্যের কূটনীতি’ বন্ধ করতে চাইছে বলে মনে করা হচ্ছে। শুক্রবার পেন্টাগনের মুখপাত্র জন কিরবি বলেছেন, প্রতিরক্ষা ক্ষেত্রে ভারতের সঙ্গে কৌশলগত অংশীদারিত্ব বাড়ানো এবং ভবিষ্যতে সামরিক সহযোগিতার পথ আরও প্রশস্ত করা যুক্তরাষ্ট্রের লক্ষ্য। ভারত মহাসাগরীয় অঞ্চলের নিরাপত্তার ক্ষেত্রে ভারতের ভূমিকাকে বরাবরই গুরুত্ব দেয় যুক্তরাষ্ট্র। তবে ভারতের পাশাপাশি অন্য দেশগুলোকে আমাদের বার্তা-আমরা প্রতিরক্ষার ক্ষেত্রে তাদের রাশিয়া-নির্ভরতা দেখতে চাই না। পেন্টাগন মুখপাত্রের এই বক্তব্যের আড়ালে প্রচ্ছন্ন হুঁশিয়ারি রয়েছে বলেই কূটনৈতিক মহলের একাংশের ধারণা।

খবরে বলা হয়েছে, রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধে এখনও সরাসরি কোনও পক্ষ নেয়নি নয়াদিল্লি। বুচায় রুশ সেনার গণহত্যার নিন্দা করেছেন জাতিসংঘে ভারতের প্রতিনিধি। আবার রাশিয়া নিয়ে জাতিসংঘে পশ্চিমা বিশ্বের নিন্দা প্রস্তাবে ভোটদানে বিরত থেকেছে ভারত।

যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পও রাশিয়া থেকে এস-৪০০ ট্রায়াম্ফ ক্ষেপণাস্ত্র প্রতিরোধী ব্যবস্হা কেনা নিয়ে নরেন্দ্র মোদি সরকারের তত্পরতা দেখে উষ্মা প্রকাশ করেছিলেন। সম্প্রতি মার্কিন পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের আন্ডার সেক্রেটারি ভিক্টোরিয়া নুল্যান্ড ভারত সফরের পর প্রকাশিত একটি রিপোর্টে বলা হয়েছে, রাশিয়া থেকে অস্ত্র এবং সামরিক সরঞ্জাম না-কেনার জন্য নয়াদিল্লির ওপর ধারাবাহিকভাবে চাপ দেওয়া হচ্ছে। কিন্তু ‘বিকল্পের’ মূল্য চড়া হওয়ার কারণেই সেই প্রচেষ্টা ফলপ্রসূ হচ্ছে না।

সীমান্ত রক্ষায় রাশিয়ার সহযোগিতা দরকার: ভারতের অর্থমন্ত্রী

ওয়াশিংটনে মার্কিন সংবাদমাধ্যম ব্লুমবার্গকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে ভারতের অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারমণ বলেছেন, ‘মুক্ত বিশ্বের’ সঙ্গে জোরালো সম্পর্ক চায় ভারত। তবে সীমান্ত রক্ষায় রাশিয়ার সহায়তার প্রয়োজন রয়েছে ভারতের। খবরে বলা হয়েছে, ভারত তার সারমিক সরঞ্জামের বেশির ভাগই রাশিয়া থেকে ক্রয় করে। ইউক্রেন যুদ্ধ শুরুর পর রাশিয়ার সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক সীমিত করতে পশ্চিমারা আহ্বান জানালেও ভারত তা নাকচ করেছে। পশ্চিমা মিত্রদের সমালোচনার মুখে পড়েছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি।

সীতারমণ বলেন, দীর্ঘকাল ধরে পাকিস্তান ও চীনের সঙ্গে সীমান্তে বিরোধ রয়েছে ভারতের। অতীতে এই দুই দেশের সঙ্গে যুদ্ধে জড়িয়েছে ভারত। এই অবস্থায় আমরা নিজেদের আঞ্চলিক স্বার্থ রক্ষার ওপর জোর দিচ্ছি। পাকিস্তান ও চীনের সম্পর্কের কথা পরোক্ষভাবে উল্লেখ করে তিনি বলেন, দুই প্রতিবেশী দেশ হাত মিলিয়েছে, যারা আমাদের বিরুদ্ধে। রাশিডা-ইউক্রেন যুদ্ধের প্রেক্ষাপটে, ঈশ্বর না করুন, যদি জোট তৈরি হয়, ভারতকে নিজেকে রক্ষা করার জন্য যথেষ্ট শক্তিশালী হতে হবে।

তিনি বলেন, ভারত ইউরোপীয় ইউনিয়ন এবং পশ্চিমা বিশ্বের বন্ধু হতে চায়। কিন্তু দুর্বল বন্ধু হিসেবে নয়, যার সহায্য পাওয়ার জন্য ছুটাছুটি করতে হবে। শুক্রবার বিশ্বব্যাংক ও আইএমএফের বৈঠকের ফাঁকে এই সাক্ষাৎকার দেন তিনি।

খবরে বলা হয়েছে, আগে ভারত ও পাকিস্তানের সঙ্গে ভারসাম্যের সম্পর্ক রেখে চলতো যুক্তরাষ্ট্র। কিন্তু সাম্প্রতিক বছরগুলোতে চীনকে ঠেকাতে ভারতের সঙ্গে কৌশলগত সম্পর্ক বাড়িয়েছে যুক্তরাষ্ট্র।