সাভারের রানা প্লাজা ট্র্যাজেডির নয় বছর আজ রবিবার (২৪ এপ্রিল)। ২০১৩ সালের এই দিনে ভয়াবহ ওই দুর্ঘটনায় এক হাজারের বেশি শ্রমিকের মৃত্যু হয়। আহত হন কয়েক হাজার শ্রমিক।
ঢাকা-আরিচা মহাসড়কের সাভার বাসস্ট্যান্ডের পাশে অবস্থিত রানা প্লাজায় তিনটি পোশাক কারখানার শ্রমিকরা প্রতিদিনের মতো ওইদিন সকাল ৮টায় হাজির হন কর্মস্থলে। উৎপাদনও শুরু করেন নির্ধারিত সময়ে।
হঠাৎ সাড়ে ৯টার দিকে বিকট শব্দ। কিছু বুঝে ওঠার আগেই কয়েক হাজার শ্রমিক নিয়ে মুহূর্তের মধ্যে ধসে পড়ে ভবনটি। শুরু হয় আহত শ্রমিকদের আহাজারি। উদ্ধারে এগিয়ে আসেন স্থানীয়রা। পরে তাদের সাথে যুক্ত হন সেনাবাহিনী, নৌবাহিনী, ফায়ার সার্ভিস, আনসার, র্যাব ও পুলিশ সদস্যরা। চলে বিরতিহীন উদ্ধার অভিযান।
ধসে পড়া ভবন থেকে ১ হাজার ১১৭ জনকে মৃত উদ্ধার করা হয়। পরে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় আরো ১৯ জন মারা যায়। এখনো নিখোঁজ রয়েছেন অনেকে। আহত হন ২৪৩৮ জন শ্রমিক। আহতদের মধ্যে অনেকেই পঙ্গু হয়ে গেছেন। অনেকে আবার মানসিক রোগী হয়ে আছেন।
রানা প্লাজার প্রথম তলায় ছিল বিভিন্ন দোকান। দ্বিতীয় তলায়ও ছিল দোকান আর বাংক। তৃতীয় তলার নিউ ওয়েভ বটমস লিমিটেড, চতুর্থ ও পঞ্চম তলায় নিউ ওয়েভ স্টাইল লিমিটেডে এবং ফ্যানটম ট্যাক লিমিটেড, ষষ্ঠ ও সপ্তম তলায় ইথারটেক্স লিমিটেড গার্মেন্টস।
ওই ঘটনা শুধু বাংলাদেশকে নয়, পুরো বিশ্বকে নাড়া দেয়। ভয়াবহ ওই দুর্ঘটনার এতদিন পরও দায়ের করা মামলাগুলোর কোনো অগ্রগতি নেই। প্রতি বছরে এই দিনটি এলেই শ্রমিক পরিবারের আহাজারিতে গুমরে গুমরে কাঁদতে থাকে মানবতা। নির্মম পঙ্গুত্ব বরণ করা শ্রমিকরা সুবিচার পাওয়ার আশায় থাকলেও অভিযুক্তদের বিচারে তেমন কোনো অগ্রগতি নেই।
ওই দিনটিকে যথাযোগ্য মর্যাদায় উদযাপনের জন্য আজ সরকারি ও বিভিন্ন বেসরকারি শ্রমিক সংগঠন, নিহত শ্রমিকদের পরিবারের সদস্য এবং আহত শ্রমিকরা রানাপ্লাজার অস্থায়ী বেদীতে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা নিবেদন করবেন। অন্যান্য বছরের মত দেশি-বিদেশি দর্শনাথী, শ্রমিক সংগঠন ও সর্বস্তরের লোকজনও শ্রদ্ধা জানাবেন সেদিনের সেই ট্র্যাজেডিতে প্রাণ হারানো শ্রমিকদের উদ্দেশ্যে। নিহত শ্রমিকদের স্মরণে আজ সকালে রানাপ্লাজার অস্থায়ী বেদীতে সরকারের পক্ষ থেকে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানানো হবে।
এসময় নিহত পরিবারের সদস্যবৃন্দ ও কয়েকটি শ্রমিক সংগঠন শহীদ বেদীতে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানাবেন। এছাড়াও বিভিন্ন সংগঠনের পাশাপাশি সব শ্রেণীর মানুষের উপস্থিত হয় এই বেদীতে।
এছাড়াও সন্ধ্যায় রানাপ্লাজার সামনের অস্থায়ী বেদীতে মোমবাতি প্রজ্জলন করেন বিভিন্ন সংগঠন। এসময় অনেকেই রানা প্লাজার মালিক সোহেল রানার দ্রুত বিচারের দাবি জানান।