শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

ধেয়ে আসছে ঘূর্ণিঝড় ’আসানি’ ঝুঁকিতে উপকূল

ঘূর্ণিঝড় আসানি। ছবি- সংগৃহীত

আন্দামান সাগর ও তার কাছাকাছি এলাকায় শুক্রবার একটি লঘুচাপ সৃষ্টি হতে পারে। দুই দিন পর লঘুচাপটি নিম্নচাপে পরিণত হতে পারে। এই নিম্নচাপ ঘূর্ণিঝড়ে রূপ নিতে পারে। ঘূর্ণঝড় মোকাবেলায় আগাম প্রস্তুতি নিয়েছে সরকার।

আবহাওয়া অধিদপ্তর জানিয়েছে, সম্ভাব্য ঘূর্ণিঝড়টির নাম হবে ‘আসানি’। নামটি শ্রীলঙ্কার দেওয়া।

মের শুরুতেই চোখ রাঙাচ্ছে শক্তিশালী ঘূর্ণিঝড় আসানি। ভারতের পশ্চিমবঙ্গ, উড়িষা ও বাংলাদেশের ওপর দিয়ে বয়ে যেতে পারে এ ঘূর্ণিঝড়।

আবহাওয়াবিদ মো. ওমর ফারুক বলেন, ঘূর্ণিঝড় সৃষ্টি হলে তা ভারতের অন্ধ্রপ্রদেশ, উড়িষ্যা ও পশ্চিমবঙ্গ এবং বাংলাদেশের দিকে আসতে পারে।

ঘূর্ণিঝড়টি বাংলাদেশে প্রবেশ করলে কোন দিকে আঘাত হানতে পারে-এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, এ ব্যাপারে এখনও নির্দিষ্ট করে কিছু বলা যাচ্ছে না।

আবহাওয়া অধিদপ্তরের আবহাওয়াবিদ ড. মো. আবুল কালাম মল্লিক বলেন, বর্তমান তথ্য-উপাত্ত অনুযায়ী শক্তি অর্জন করে এটির ঘূর্ণিঝড় হওয়ার যথেষ্ট কারণ রয়েছে।  বঙ্গোপসাগরে যেসব ঘূর্ণিঝড় তৈরি হয়েছে, সেগুলোর মধ্যে অনেকগুলো সুপার সাইক্লোনে রূপ নিয়েছিল। তবে এটাও সত্য যে, ঘূর্ণিঝড়গুলো উপকূলে আসতে আসতে অনেকটা দুর্বল হয়ে যায়। যেহেতু এখনো ঘূর্ণিঝড়টি তৈরি হয়নি, সেহেতু এর তীব্রতা এই মুহূর্তে বলার সুযোগ নেই। তবে এটি যদি তৈরি হয়, তাহলে এর তীব্রতা বেশি হবে।

তিনি বলেন, আগামী ১০ থেকে ১২ মে ঘূর্ণিঝড়টি উপকূলে আঘাত হানতে পারে। তারপরও ঘূর্ণিঝড়টির দিক ও তার অগ্রসরমান গতির ওপর নির্ভর করবে কবে কোথায় এটি আঘাত হানবে।

কানাডার সাচকাচুন বিশ্ববিদ্যালয়ের আবহাওয়া ও জলবায়ু গবেষক মোস্তফা কামাল পলাশ বলেন, বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট সম্ভব্য ঘূর্ণিঝড়টি ভারতের পরিবর্তে বাংলাদেশের চট্টগ্রাম-নোয়াখালী উপকূলে আঘাত হানার সম্ভাবনার কথা নির্দেশ করছে আমেরিকা ও ইউরোপিয়ান ইউনিয়নের আবহাওয়া পূর্বাভাস মডেল। নিম্নচাপ সৃষ্টি হতে পারে ৭ মে।

তিনি আরও বলেন, ১৩ মে সকাল থেকে ভারত ও বাংলাদেশের সুন্দরবনের ওপর দিয়ে (ইউরোপিয়ান মডেল অনুসারে) ও আমেরিকান মডেল অনুসারে ১৩ মে দুপুরের পর থেকে কক্সবাজার, চট্টগ্রাম ও নোয়াখালী উপকূল দিয়ে স্থলভাগে আঘাত হানতে পারে। ঝড়টির প্রভাব ভালোভাবেই বাংলাদেশের উপকূলীয় এলাকাগুলোর ওপর পড়বে।

ঘূর্ণিঝড়টির স্থলভাগে আঘাত করার সময় বাতাসের সর্বোচ্চ গতিবেগ উঠতে পারে ঘণ্টায় ১০০ থেকে ১৩০ কিলোমিটার।

ইউরোপিয়ান মডেলের পূর্বাভাস সঠিক প্রমাণিত হলে সম্ভব্য ঘূর্ণিঝড়টির প্রভাব বেশি পড়বে খুলনা ও বরিশাল বিভাগের জেলাগুলোতে। অন্যদিকে আমেরিকান মডেলের পূর্বাভাষ সঠিক প্রমাণিত হলে চট্টগ্রাম বিভাগের জেলাগুলোতে প্রভাব বেশি পড়বে।

মোকাবিলায় প্রস্তুত সরকার

ঘূর্ণিঝড় ‘আসানি’ মোকাবিলায় সরকার প্রস্তুত রয়েছে বলে জানিয়েছেন দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ প্রতিমন্ত্রী ডা. মো. এনামুর রহমান।

বৃহস্পতিবার দুপুরে সচিবালয়ে সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেন, আমাদের তিক্ত অভিজ্ঞতা আছে, ঝড়ে লাখ লাখ মানুষ প্রাণ হারিয়েছে। যার জন্য আমরা আজ প্রাথমিক সভা ডেকেছি। এখানে ঘূর্ণিঝড় নিয়ে আলোচনা করেছি। প্রতিটা স্টেপে আমাদের প্রস্তুতি কি, কাদের সংযুক্ত করব, কাদের দায়িত্ব দেবো, কোথায় কীভাবে নির্দেশনা দেবো সেগুলো আমরা আজ ঠিক করেছি। পরে যদি সতর্ক সংকেত দেওয়া হয় তাহলে আমরা একটি আন্তঃমন্ত্রণালয় বৈঠক করে নির্দেশনাগুলো মাঠ পর্যায়ে দেব।

ঘূর্ণিঝড়ের জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা আছে কি না জানতে চাইলে তিনি বলেন, সিপিপি ভলান্টিয়ারদের অবহিত করা, মাঠ পর্যায়ের কর্মকর্তাদের অবহিত করা, যদি গভীর নিম্নচাপ সৃষ্টি হলে সেল্টার সেন্টারগুলো প্রস্তুত করতে হবে। আমাদের প্রায় ৭ হাজার শেল্টার হাউজ আছে, প্রয়োজনে স্কুল-কলেজ ও অন্যান্য ভবন কাজে লাগাব।

তিনি আরও বলেন, ঘূর্ণিঝড়ে প্রস্তুতি কেমন হবে তা সিপিপি ভলান্টিয়ারদের জানিয়ে দেওয়া হয়েছে। তারা উপকূলীয় অঞ্চলে কাজ করছে, আমাদের যে এসওডি আছে সে অনুযায়ী কখন কী করতে হবে জানিয়ে দিয়েছি। সবাই আমরা এখন অ্যালার্ট। পরে ঘূর্ণিঝড়ের অবস্থা অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

ধেয়ে আসছে ঘূর্ণিঝড় ’আসানি’ ঝুঁকিতে উপকূল

প্রকাশের সময় : ০৮:২০:০৪ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ৫ মে ২০২২

আন্দামান সাগর ও তার কাছাকাছি এলাকায় শুক্রবার একটি লঘুচাপ সৃষ্টি হতে পারে। দুই দিন পর লঘুচাপটি নিম্নচাপে পরিণত হতে পারে। এই নিম্নচাপ ঘূর্ণিঝড়ে রূপ নিতে পারে। ঘূর্ণঝড় মোকাবেলায় আগাম প্রস্তুতি নিয়েছে সরকার।

আবহাওয়া অধিদপ্তর জানিয়েছে, সম্ভাব্য ঘূর্ণিঝড়টির নাম হবে ‘আসানি’। নামটি শ্রীলঙ্কার দেওয়া।

মের শুরুতেই চোখ রাঙাচ্ছে শক্তিশালী ঘূর্ণিঝড় আসানি। ভারতের পশ্চিমবঙ্গ, উড়িষা ও বাংলাদেশের ওপর দিয়ে বয়ে যেতে পারে এ ঘূর্ণিঝড়।

আবহাওয়াবিদ মো. ওমর ফারুক বলেন, ঘূর্ণিঝড় সৃষ্টি হলে তা ভারতের অন্ধ্রপ্রদেশ, উড়িষ্যা ও পশ্চিমবঙ্গ এবং বাংলাদেশের দিকে আসতে পারে।

ঘূর্ণিঝড়টি বাংলাদেশে প্রবেশ করলে কোন দিকে আঘাত হানতে পারে-এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, এ ব্যাপারে এখনও নির্দিষ্ট করে কিছু বলা যাচ্ছে না।

আবহাওয়া অধিদপ্তরের আবহাওয়াবিদ ড. মো. আবুল কালাম মল্লিক বলেন, বর্তমান তথ্য-উপাত্ত অনুযায়ী শক্তি অর্জন করে এটির ঘূর্ণিঝড় হওয়ার যথেষ্ট কারণ রয়েছে।  বঙ্গোপসাগরে যেসব ঘূর্ণিঝড় তৈরি হয়েছে, সেগুলোর মধ্যে অনেকগুলো সুপার সাইক্লোনে রূপ নিয়েছিল। তবে এটাও সত্য যে, ঘূর্ণিঝড়গুলো উপকূলে আসতে আসতে অনেকটা দুর্বল হয়ে যায়। যেহেতু এখনো ঘূর্ণিঝড়টি তৈরি হয়নি, সেহেতু এর তীব্রতা এই মুহূর্তে বলার সুযোগ নেই। তবে এটি যদি তৈরি হয়, তাহলে এর তীব্রতা বেশি হবে।

তিনি বলেন, আগামী ১০ থেকে ১২ মে ঘূর্ণিঝড়টি উপকূলে আঘাত হানতে পারে। তারপরও ঘূর্ণিঝড়টির দিক ও তার অগ্রসরমান গতির ওপর নির্ভর করবে কবে কোথায় এটি আঘাত হানবে।

কানাডার সাচকাচুন বিশ্ববিদ্যালয়ের আবহাওয়া ও জলবায়ু গবেষক মোস্তফা কামাল পলাশ বলেন, বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট সম্ভব্য ঘূর্ণিঝড়টি ভারতের পরিবর্তে বাংলাদেশের চট্টগ্রাম-নোয়াখালী উপকূলে আঘাত হানার সম্ভাবনার কথা নির্দেশ করছে আমেরিকা ও ইউরোপিয়ান ইউনিয়নের আবহাওয়া পূর্বাভাস মডেল। নিম্নচাপ সৃষ্টি হতে পারে ৭ মে।

তিনি আরও বলেন, ১৩ মে সকাল থেকে ভারত ও বাংলাদেশের সুন্দরবনের ওপর দিয়ে (ইউরোপিয়ান মডেল অনুসারে) ও আমেরিকান মডেল অনুসারে ১৩ মে দুপুরের পর থেকে কক্সবাজার, চট্টগ্রাম ও নোয়াখালী উপকূল দিয়ে স্থলভাগে আঘাত হানতে পারে। ঝড়টির প্রভাব ভালোভাবেই বাংলাদেশের উপকূলীয় এলাকাগুলোর ওপর পড়বে।

ঘূর্ণিঝড়টির স্থলভাগে আঘাত করার সময় বাতাসের সর্বোচ্চ গতিবেগ উঠতে পারে ঘণ্টায় ১০০ থেকে ১৩০ কিলোমিটার।

ইউরোপিয়ান মডেলের পূর্বাভাস সঠিক প্রমাণিত হলে সম্ভব্য ঘূর্ণিঝড়টির প্রভাব বেশি পড়বে খুলনা ও বরিশাল বিভাগের জেলাগুলোতে। অন্যদিকে আমেরিকান মডেলের পূর্বাভাষ সঠিক প্রমাণিত হলে চট্টগ্রাম বিভাগের জেলাগুলোতে প্রভাব বেশি পড়বে।

মোকাবিলায় প্রস্তুত সরকার

ঘূর্ণিঝড় ‘আসানি’ মোকাবিলায় সরকার প্রস্তুত রয়েছে বলে জানিয়েছেন দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ প্রতিমন্ত্রী ডা. মো. এনামুর রহমান।

বৃহস্পতিবার দুপুরে সচিবালয়ে সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেন, আমাদের তিক্ত অভিজ্ঞতা আছে, ঝড়ে লাখ লাখ মানুষ প্রাণ হারিয়েছে। যার জন্য আমরা আজ প্রাথমিক সভা ডেকেছি। এখানে ঘূর্ণিঝড় নিয়ে আলোচনা করেছি। প্রতিটা স্টেপে আমাদের প্রস্তুতি কি, কাদের সংযুক্ত করব, কাদের দায়িত্ব দেবো, কোথায় কীভাবে নির্দেশনা দেবো সেগুলো আমরা আজ ঠিক করেছি। পরে যদি সতর্ক সংকেত দেওয়া হয় তাহলে আমরা একটি আন্তঃমন্ত্রণালয় বৈঠক করে নির্দেশনাগুলো মাঠ পর্যায়ে দেব।

ঘূর্ণিঝড়ের জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা আছে কি না জানতে চাইলে তিনি বলেন, সিপিপি ভলান্টিয়ারদের অবহিত করা, মাঠ পর্যায়ের কর্মকর্তাদের অবহিত করা, যদি গভীর নিম্নচাপ সৃষ্টি হলে সেল্টার সেন্টারগুলো প্রস্তুত করতে হবে। আমাদের প্রায় ৭ হাজার শেল্টার হাউজ আছে, প্রয়োজনে স্কুল-কলেজ ও অন্যান্য ভবন কাজে লাগাব।

তিনি আরও বলেন, ঘূর্ণিঝড়ে প্রস্তুতি কেমন হবে তা সিপিপি ভলান্টিয়ারদের জানিয়ে দেওয়া হয়েছে। তারা উপকূলীয় অঞ্চলে কাজ করছে, আমাদের যে এসওডি আছে সে অনুযায়ী কখন কী করতে হবে জানিয়ে দিয়েছি। সবাই আমরা এখন অ্যালার্ট। পরে ঘূর্ণিঝড়ের অবস্থা অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।