ভোক্তা অধিকার অধিদপ্তর ভেজাল বিরোধী অভিযানে যেতে পারলে পরিবেশ রক্ষায় পরিবেশ অধিদপ্তর অভিযানে যেতে পারে না কেন জানতে চেয়েছেন আওয়ামী লীগের বন ও পরিবেশ সম্পাদক দেলোয়ার হোসেন।
শনিবার ঢাকার সিরডাপ মিলনায়তনে গ্রীণ এনভায়রনমেন্ট মুভমেন্ট সংগঠনের আয়োজনে বিশ্ব পরিবেশ দিবস ২০২২ উপলক্ষে প্রকৃতির ঐক্যতানে টেকসই জীবন বাংলাদেশ প্রেক্ষিত শীর্ষক সেমিনারে এসব কথা বলেন তিনি।
দেলোয়ার হোসেন বলেন, পরিবেশ রক্ষা না করে পরিবেশকে ধ্বংসের পথে নিয়ে মানুষ যদি মনে করে আমরাই পৃথিবীতে বাস করবো তবে মানুষ এক সময় ডায়ানোসরের মত বিলুপ্ত হয়ে যাবে। নদী, মাটি, বায়ু শব্দসহ সব ক্ষেত্রই পরিবেশ দূষিত হচ্ছে, আমাদের দেশে এই পরিবেশ রক্ষায় একটি মন্ত্রনালয়ও আছে, কিন্তু দীর্ঘদিন ধরে এই মন্ত্রনালয় এবং অধিদপ্তরের কোন কর্মকান্ড আমাদের চোখে পড়েনি। শিল্প কারখানার বজ্র , ইটভাটার মাধ্যমে দুষন হচ্ছে অহরহ। আমাদের দেশে ভেজাল বিরোধী অভিযান করছে ভোক্তা অধিকার অধিদপ্তর অথচ নিষিদ্ধ পলিথিন গ্রামে গঞ্জে, শহরে মানুষের হাতে হাতে, কিন্তু কোন অভিযান নাই। শিল্প কারখানা, ইটভাটা প্রতিনিয়ত পরিবেশের ক্ষতি করছে, কিন্তু আমাদের পরিবেশ মন্ত্রী, পরিবেশ মন্ত্রনালয়, এমনকি পরিবেশ অধিদপ্তরের কোন দৃশ্যমান পদক্ষেপ নাই।
দেলোয়ার হোসেন বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পরিবেশের উপর চ্যাম্পিয়নস অব আর্থ পুরস্কার পেয়েছেন, আর আমাদের পরিবেশ মন্ত্রনালয় ও পরিবেশ অধিদপ্তর কি করছে। বছরে দুই তিনটি গাছ লাগিয়ে দায় সারেন পরিবেশ মন্ত্রী। পরিবেশ রক্ষায় মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে সবাইকে এগিয়ে আসতে হবে, এক জননেত্রী শেখ হাসিনার দিকে তাকিয়ে থাকলে চলবে না। দেশের প্রতেকটি অঞ্চলের গ্রীপ এনভায়রনমেন্ট মুভমেন্ট এর সদস্যদের এগিয়ে আসতে হবে। শেখ হাসিনার নেতৃত্বে পরিবেশ রক্ষায় যুদ্ধে নামতে হবে।
সেমিনারে উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ – উপাচার্য অধ্যাপক মাহবুবা নাসরীন বলেন, নিজের বাড়ি নিজের আঙ্গিনার আশপাশের গাছগুলো যেন যত্ন করি। এই গাছগুলো যেন কেটে না ফেলি। একটি গাছ কাটার আগে ভাবতে হবে আর কয়টা গাছ লাগানো যায়, গাছ কাটার আগে পরিকল্পনা করতে হবে। সবাইকে গাছ কাটা থেকে বিরত থাকতে হবে। তাহলেই আমাদের পরিবেশ রক্ষা হবে।
অনুষ্ঠানে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের জীববিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক মিহির লাল সাহা বলেন, গাছের প্রতি মানুষের প্রেম যত বৃদ্ধি পাবে আমরা তত ভালো থাকবো। আমরাই পারি প্রকৃতির সঙ্গে ঐক্যতান করতে আমরাই পারি প্রকৃতির ঐক্যতানে টেকসই জীবন গড়তে পারি, এর কোন বিকল্প নেই।
জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূগোল ও পরিবেশ বিজ্ঞানের অধ্যাপক মল্লিক আকরাম বলেন, আমাদের এই বাংলাদেশে পরিবেশের ধ্বংসাত্মক অবস্থা চলতে থাকলে মানুষও একদিন বিলিন হয়ে যাবে। ইতোমধ্যে ৫ টি জীব বৈচিত্র হারিয়ে গেছে, মানুষ নিজে অন্য বৈচিত্রের উপর নির্যাতন করে একদিন মানুষও হারিয়ে যাবে। আমাদের নিজেদের স্বার্থে পরিবেশ রক্ষা করতে হবে।
প্রকৃতির ঐক্যতানে টেকসই জীবন বাংলাদেশ প্রেক্ষিত শীর্ষক আলোচনার মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন গোপালগঞ্জ বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক একিউএম মাহবুব।
অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য রাখেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শান্তি ও সংঘর্ষ বিভাগের অধ্যাপক মোঃ রফিকুল ইসলাম , স্টামফোর্ট বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবেশ বিজ্ঞানের অধ্যাপক ড. আহমাদ কামরুজ্জামান মজুমদার, ঢাবি ট্যুরিজম এন্ড হসপিটালিটি ম্যানেজমেন্ট বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক সামশাদ নওরীণ , পরিবেশ ও মানবাধিকার কর্মী ফারজানা মাহমুদ, ঢাবি সমাজকল্যাণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের সহকারি অধ্যাপক তৌহিদুল হক।
পরিবেশ নিয়ে বাংলাদেশের বিভিন্ন জেলায় কাজ করা ও গাছ লাগানোর স্বীকৃতি হিসেবে পুরস্কার পেয়েছেন সংগঠনের পাঁচ জেলা কমিটি। যেখানে প্রথম স্থান অর্জন করেছেন কক্সবাজার জেলা গ্রীণ এনভায়রনমেন্ট মুভমেন্ট ইউনিট, দ্বিতীয় হয়েছে মানিকগঞ্জ জেলা ইউনিট, তৃতীয় হয়েছেন গাজীপুর জেলা ইউনিট। আর বিশেষ পুরস্কার হিসেবে ময়মনসিংহ মহানগর এ দোহার উপজেলা ইউনিট পুষ্কার পেয়েছেন। বিজয়ী প্রত্যেক ইউনিটকে একটি গাছ, ক্রেস্ট ও নগদ অর্থ দেয়া হয়েছে। আওয়ামী লীগের বন ও পরিবেশ সম্পাদক ও গ্রীণ এনভায়রনমেন্ট মুভমেন্ট এর সভাপতি দেলোয়ার হোসেনের সভাপতিত্বে সঞ্চালনা করেন সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক জগন্নাথ বিশাবিদ্যালয়ের ভূগোল ও পরিবেশ বিজ্ঞানের সহকারি অধ্যাপক মোঃ মহিউদ্দিন মাহী।