করোনাভাইরাস মহামারিতে বিপর্যস্ত বিশ্ব অর্থনীতি ইউক্রেন-রাশিয়ার যুদ্ধের কারণে আরেক দফা সংকটে পড়তে যাচ্ছে। বিশ্বব্যাপী ব্যাপক খাদ্য ঘাটতি ও মুদ্রাস্ফীতির সম্ভাব্য ঝুঁকি বৃদ্ধি করবে বলে সর্তক করেছে বিশ্ব ব্যাংক।
আন্তর্জাতিক এ আর্থিক সংস্থার প্রেসিডেন্ট ডেভিড ম্যালপাস বলেছেন, উচ্চ মূল্যস্ফীতির সাথে প্রবৃদ্ধির নিম্নগতি অর্থনীতিকে স্থবির করে ফেলছে। আর তাতে ইউরোপ ও পূর্ব এশিয়ার স্বল্পোন্নত দেশগুলো অর্থনৈতিক মন্দার বড় ধরনের ঝুঁকির মধ্যে পড়েছে।
বিশ্ব ব্যাংক আশঙ্কা করছে, এই বছর তেলের দাম ৪২ শতাংশ বাড়বে ও অন্যান্য পণ্যের দাম প্রায় ১৮ শতাংশ বাড়বে। তবে এটি ২০২৩ সালে তেল ও অন্যান্য পণ্যের দাম আট শতাংশ হ্রাসের পূর্বাভাস দিয়েছে।
এই প্রেক্ষাপটে গতকাল মঙ্গলবার (৭ জুন) প্রকাশিত বিশ্ব ব্যাংকের ‘গ্লোবাল ইকোনমিক প্রসপেক্টস’ প্রতিবেদনে এ বছরে বিশ্বের জিডিপি প্রবৃদ্ধির পূর্বাভাস কমিয়ে এক-তৃতীয়াংশ করা হয়েছে।
সংস্থাটি ভবিষ্যদ্বাণী করেছে যে এই বছর বিশ্ব অর্থনীতি দুই দশমিক ৯ শতাংশ প্রসারিত হবে। এটি ২০২১ সালে পাঁচ দশমিক সাত শতাংশ বৈশ্বিক প্রবৃদ্ধি থেকে কম হবে এবং ২০২২ সালের জানুয়ারিতে চার দশমিক এক শতাংশ হতে পারে।
বিশ্বব্যাংকের প্রেসিডেন্ট ম্যালপাস বলেছেন, অনেক দেশের জন্য এ মন্দা এড়ানো কঠিন হবে। সামনের সময়গুলোতে অপুষ্টি ও ক্ষুধা এমনকি দুর্ভিক্ষের তীব্র ঝুঁকি রয়েছে। একটি বিশ্ব মন্দা যদি আমরা এড়াতেও পারি, অর্থনীতির এই স্থবিরতা কয়েক বছর ধরে চলতে পারে, যদি না উৎপাদন আর সরবরাহ বড় আকারে বাড়ানো যায়।
বিশ্ব ব্যাংক জানিয়েছে, ইউরোপের দেশগুলোর মধ্যে সবচেয়ে বেশি ভুগতে হবে যুদ্ধের কেন্দ্রে থাকা ইউক্রেইন ও রাশিয়াকে। যুদ্ধ ও মহামারির কারণে সেই ভোগান্তি হবে দীর্ঘ।
সংস্থাটি ২০২৩-২৪ উভয় বছরের জন্য মাত্র তিন শতাংশ বৈশ্বিক বৃদ্ধির পূর্বাভাস দিয়েছে। উদীয়মান বাজার ও উন্নয়নশীল অর্থনীতির প্রবৃদ্ধি ২০২১ সালের ৬ দশমিক ৬ শতাংশ থেকে হ্রাস করে ৩ দশমিক ৪ শতাংশ করা হয়েছে।
ইউরো কারেন্সি ভাগ করা ১৯ ইউরোপীয় দেশ এই বছর প্রবৃদ্ধির লক্ষ্যমাত্রা ৫ দশমিক ৪ শতাংশ থেকে নামিয়ে ২ দশমিক ৫ শতাংশ করেছে। জানুয়ারিতে যাদের লক্ষমাত্রা ছিল ৪ দশমিক ২ শতাংশ।
বিশ্ব ব্যাংকের প্রসপেক্টস গ্রুপের পরিচালক আয়হান কোস বলেন, জ্বালানির ক্রমবর্ধমান দাম খুব সহজে নিয়ন্ত্রণে আনা কোনো সরকারের জন্যই সহজ নয়। রপ্তানি নিষেধাজ্ঞা দেওয়া, ভর্তুকি বাড়ানো কিংবা বাজার নিয়ন্ত্রণ করা এখন সরকারগুলোর উচিত হবে না। এ ধরনের হস্তক্ষেপ দাম আরো বাড়িয়ে দেবে, তাতে আরো বেশি মূল্য চুকাতে হবে।
বিশ্ব ব্যাংক এসব বিষয়ে এখনই উদ্যোগী হওয়ার তাগিদ দিচ্ছে। ঋণ থেকে মুক্তির পাশাপাশি খাদ্য রপ্তানিতে বিধিনিষেধ না রাখার আহ্বান জানিয়েছে দেশগুলোকে। এছাড়া খাদ্য ও জ্বালানি সরবরাহ বজায় রেখে অস্থিতিশীল বাজার ও দামের ঊর্ধ্বগতি হ্রাসে নীতিনির্ধারকদের একসঙ্গে কাজ করার আহ্বান জানিয়েছে বিশ্ব ব্যাংক। -বিবিসি ও ইউএনবি