বেনাপোল কাস্টমস চেকপোস্টে যাত্রী সেবার মান বাড়াতে যাত্রীদের জন্য চালু করা হয়েছে নতুন ট্রলি ব্যবস্থা। ফলে যাত্রীরা নিজেদের ব্যাগেজ নিজেরাই ট্রলিতে করে নোমান্সল্যান্ড থেকে কাস্টম চেকপোস্টে প্রবেশ করছেন খুবই স্বাচ্ছন্দে। লেবারদের দিতে হচ্ছে না অতিরিক্ত অর্থ। প্রতিটি যাত্রীর সেফ হচেছ বাড়তি ৫’শ থেকে ১ হাজার টাকা। কাস্টমসও ইমিগ্রেশন থেকে উচ্ছেদ করা হয়েছে প্রায় ২’শ লেবার। সংরক্ষিত এলাকায় অর্থের বিনিময়ে ২০০ লেবার নিয়োগ দিয়েছেন বন্দর কর্তৃপক্ষ।
যাত্রীদের জন্য আনা প্রায় ১০০ টি ট্রলি দীর্ঘদীন চালু করা সম্ভব হয়নি লেবারদের প্রতিবন্ধকতার কারণে। ধীর্ঘদিন পর সদ্য যোগদানকারী কাস্টমস এর যুগ্ন কমিশনার আ: রশিদ মিয়া যোগদানের পর নানা প্রতিবন্ধকতার মধ্যে ঝুকি নিয়ে প্রথমবারের মত যাত্রীদের ব্যাগেজ ক্যারি করার জন্য ১’শ ট্রলির ব্যবস্থা করেছেন। ইতিমধ্যে কাস্টমস ও ইমিগ্রেশন থেকে উচ্ছেদ করা হয়েছে শতাধিক লেবার।
কাস্টমস কমিশনার মো: আজিজুর রহমানের নির্দেশে বেনাপোল কাস্টমস হাউসের ডেপুট্ িকমিশনার মো: আব্দুল কাইউম ও ডেপুটি কমিশনার অনুপম চাকমা যাত্রীরা যাতে হয়রানির শিকার না হন সেজন্য সার্বক্ষনিক তদারকি করছেন। লেবার ও বহিরাগত দালালদের গতিবিধির ওপর সার্বক্ষনিক নজরদারি করতে কাস্টমস চেকপোস্টকে সম্পূর্ণ সিসি টিভি ক্যামেরার আওতায় আনা হয়েছে।
স্বাধীনতার পর কাস্টমস এর কোন কর্মকর্তারা কাস্টমস চেকপোস্ট কে লেবার ও বহিরাগত দালাল মুক্ত করতে সাহস করেনি কেউ। কিন্ত বর্তমান কমিশনার মো: আজিজুর রহমান ও যুগ্ন কমিশনার আ: রশিদ মিয়া ঝুকি নিয়ে সাহসিকতার সাথে বহিরাগত দালাল ও লেবার উচ্ছেদ সফলভাবে সম্পন্ন করেছেন।
ভারত যাতায়তকারী পাসপোর্ট যাত্রী ছাড়া কোন ব্যাক্তিকে কাস্টমস ও ইমিগ্রেশন টার্মিনালে প্রবেশ করতে দেয়া হচ্ছে না।
কাস্টমস ও ইমিগ্রেশনকে দালালমুক্ত করতে প্যাসেঞ্জার টার্মিনালেই বসানো হয়েছে অত্যাধুনিক স্ক্যানিং মেশিন ও সিসি ক্যামেরা। সশস্ত্র আনসার দিয়ে জোরদার করা হয়েছে যাত্রীদের নিরাপত্তা ব্যবস্থা। প্যাসেঞ্জার টার্মিনালের প্রধান ফটকে বন্দরের নিরাপত্তা কর্মী, আনসার সদস্য ও কাস্টমস কর্মকর্তাদের সার্বনিক নজরদারিতে রহিরাগতরা কেউ প্রবেশ করতে পারছে না। কাস্টমস কর্তৃপ তাদের সেবার মান বৃদ্ধি করায় যাত্রীরা দ্রুত ও সুশৃঙ্খলভাবে সব ধরনের আনুষ্ঠানিকতা সম্পন্ন করছেন নিজেরাই। সারাদেশ থেকে আসা পাসপোর্ট যাত্রীরা খুবই খুশী নতুন ধরনের এই উদ্যোগ গ্রহন করায়।
আজ সোমবার সকালে ভারত ফেরত যাত্রী সোহরাব হোসেন জানান, জানান, বেনাপোল চেকপোষ্টে এসে কাস্টমস এর সেবার মান দেখে মনে হচ্ছে বিমান বন্দরে আছি। লেবার ও দালালদের লাগেজ টানা হেচড়ার কোন ঝামেলা নেই। ট্রলিতে করে খুব সহজেই মালামাল বহন করতে পারছি। বাড়তি কোন টাকা পয়সা দিতে হচ্ছে না কাউকে। বর্তমানে কাস্টমস চেকপোস্টের পরিবেশ খুবই ভালো। আমরা এ ধরনের পরিবেশে খুবই খুশী।
কাস্টমস সুত্র জানায়, দীর্ঘদিন ধরে বেনাপোল চেকপোস্টে এক শ্রেণীর বহিরাগত লোকজন দূরদূরাšত থেকে আসা পাসপোর্ট যাত্রীদের নানাভাবে হয়রানি করে আসছিল। সিরিয়াল ছাড়া তাদের পাসপোর্ট দ্রুত করে দেয়ার নাম করে টাকা হাতিয়ে নিচ্ছিল ঐ চক্রটি।
অন্যদিকে ঢাকা-কোলকাতা বাস সার্ভিস চালু হওয়ায় সর্বচ্চ সেবা দিচ্ছেন কাস্টমস কর্তৃপক্ষ। তার দ্রæত কোন ঝামেলা ছাড়াই ভারতে যেতে পারছেন।
বেনাপোল কাস্টম হাউজের যুগ্ম কমিশনার আব্দুর রশীদ মিয়া জানান, বর্তমানে আন্তর্জাতিক কাস্টমস চেকপোস্টে যাত্রী সেবার মান বাড়াতে নতুন ট্রলির ব্যবস্থা করা হয়েছে। যাত্রীদের বাড়তি খরচ বাচাতে সাচ্ছন্দে যাতায়াত করতে লেবারও দালাল উচ্ছেদ করা হয়েছে। তবে যাত্রীদের সেবার মান বাড়াতে ট্রলি ব্যবস্থা চালু করতে সুন্দর পরিবেশ ফিরিয়ে আনতে যথেষ্ট চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন হতে হয়েছে। বর্তমানে কোনো প্রকার হয়রানি ছাড়া নিরাপদে যাত্রীরা ট্রলি ব্যবহার করে ভারতে আসা যাওয়া করছেন।যাত্রীদের বাড়তি খরচও বেচে গেছে। বর্তমানে পুরো বিষয়টি জাতীয় রাজস্ব বোর্ডকে অবহিত করা হয়েছে। রাজস্ব বোর্ড বিষয়টি তদারকি করছেন।
বেনাপোল কাস্টমস হাউসের কমিশনার মো: আজিজুর রহমান জানান, বেনাপোল আন্তর্জাতিক কাস্টমস চেকপোস্ট দিয়ে প্রতিদিন ১০ হাজার যাত্রী যাতায়াত করছেন । প্রতিবছর প্রায় ৩০ লাখ যাত্রী ভারত-বাংলাদেশের মধ্যে যাতায়াত করে থাকে। করোনা সংক্রমন কমে আসায় যাত্রী যাতায়াত বৃদ্ধি পেয়েছে। গত ১৮ দিনে বেনাপোল চেকপোস্ট দিয়ে ভারতে যাতায়াত করেছে ১ লাখ ৪১ হাজার ২১০ জন পাসপোর্টযাত্রী। যাত্রীদের সেবার মান বাড়াতে নতুন ট্রলি ব্যবস্থা চালু, লেবা ও দালালমুক্ত পরিবেশ সৃস্টি করতে অনেকটা চ্য ালেঞ্জের সম্মুখীন হতে হয়েছে।