শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

ঢাবিসহ একাধিক বিশ্ববিদ্যালয়ে সুযোগ পেয়েও অর্থাভাবে ভর্তি হতে পারছেনা হাসিকুল

দরিদ্র ও মেধাবী ছাত্র হাসিকুল ইসলাম ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ একাধিক বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির সুযোগ পেলেও টাকার অভাবে তা অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় ও রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির সুযোগ পেয়েছেন হাসিকুল। তবে তার ইচ্ছা তিনি ঢাবিতে ভর্তি হবেন। এ বছর ঢাবিতে মানবিক বিভাগে ‘খ’ ইউনিটে ২২০৮তম স্থান, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে ‘ক’ ইউনিটে ২০৮ তম স্থান এবং জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে ‘খ’ ইউনিটে ৪৪০ তম স্থান অর্জন করেছেন হাসিকুল। এদিকে গরীব-অসহায় বাবা-মা কিভাবে ছেলেকে বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি ও পড়াশোনার খরচ জোগান দিবেন এমন চিন্তায় হতাশাগ্রস্ত হয়ে পড়েছেন।
অভাব-অনটন হাসিকুলের মেধাশক্তিকে দাবিয়ে রাখতে না পারলেও অর্থের অভাবে উচ্চশিক্ষার জন্য বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির পথ রুদ্ধ হতে বসেছে হাসিকুলের। দরিদ্রতার কাছে শেষ পর্যন্ত হার মেনে নিজের উজ্জ্বল ভবিষ্যৎ ফ্যাকাসে হয়ে পড়বে এমন আশঙ্কায় দিন কাটছে হাসিকুলের।
হাসিকুল ইসলাম ঠাকুরগাঁও জেলার রাণীশংকৈল উপজেলার ৭ নং রাতোর ইউনিয়নের ৯ নং ওয়ার্ড গড়কঁত গাঁও গ্রামের ভ্যানচালক সাবুল আলমের ছেলে। মা কুলসুম আক্তার গৃহিনী। তারা দুই ভাইবোন, তিনি ছোট । বড় বোন রিতা আক্তার তিন বছর আগে বাবা-মা অনেক কষ্টে তাকে বিয়ে দিয়েছেন। বর্তমানে তিনি বাবা-মাসহ তিন সদস্যের সংসার। ছেলের পড়ালেখা ও জীবন বাঁচার তাগিতে ভ্যান চালিয়ে মাঝে মাঝে শ্রমিকের কাজ করছেন হাসিকুলের বাবা।
হাসিকুল ২০১৯ সালে বাংলাগড় দাখিল মাদ্রাসা থেকে বিজ্ঞান বিভাগে এসএসসিতে জিপিএ ৪.৬৭ এবং এইচএসসি পীরগঞ্জ সরকারি কলেজ থেকে ২০২১ সালে মানবিক বিভাগে  জিপিএ ৫ পেয়ে উত্তীর্ণ হন। আত্মীয়-স্বজন ও প্রতিবেশীদের কাছে ধারদেনা করে ঢাকাসহ বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষায় অংশ নেন। এরপর একে একে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় ও রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির সুযোগ পান তিনি।
হাসিকুল জানান, কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তিও সুযোগ পেয়েছি ঠিকই কিন্তু আমার ইচ্ছা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার। তবে এখনও ভর্তির টাকা যোগাড় করতে পারিনি। কিভাবে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তিসহ ঢাকা শহরে থাকা ও পড়াশোনার খরচ যোগাবে তার হতদরিদ্র পরিবার, সেই চিন্তায় উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েছেন হাসিকুল।
নিজের হতাশা আর সীমাবদ্ধতার কথা জানাতে গিয়ে হাসিকুল বলেন, আমার বাবার তেমন কোনও আয় নেই। সামান্য দিন মজুর ও মাঝে মাঝে ভ্যান চালিয়ে সংসার চালান। জানি না বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হতে পারবো কিনা। ভবিষ্যতে প্রশাসনিক কর্মকর্তা হওয়ার ইচ্ছা রয়েছে তার।
হাসিকুলের মা কুলসুম আক্তার বলেন, ঘরে জমানো অর্থ না থাকায় বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে। ভিটাবাড়ি ছাড়া নিজেদের কোনও সম্পদ নেই। অভাবের কারণে ছেলের পড়াশোনা চালাতে পারবো কিনা জানি না।
হাসিকুলের  বাবা সাবুল আলমের সাথে কথা হলে তিনি বলেন, আমার গরিবের সংসার, দিন আনি দিন খাই। ছেলে বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির সুযোগ হয়েছে খুব খুশি হয়েছি কিন্তু যা রোজগার করি তাতে এই টাকায় সংসারই ঠিকমতো চলছে না। ছেলেকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তিসহ তার থাকা খাওয়ার খরচ জোগাড় করা আমার মতো অসহায় গরীব পিতার পক্ষে অসম্ভব। তবুও চেষ্টা করবো ছেলেকে উচ্চ শিক্ষায় শিক্ষিত করার।
এ বিষয়ে রাণীশংকৈল উপজেলা নির্বাহী অফিসার সোহেল সুলতান জুলকারনাইন জানান, হাসিকুলের পরিবারের কেউ উপজেলা প্রশাসনের সঙ্গে এ ব্যাপারে যোগাযোগ করেননি। যদি কেউ যোগাযোগ করেন তাহলে হাসিকুলের ভর্তির বেপারে সহযোগিতা করা হবে।

ঢাবিসহ একাধিক বিশ্ববিদ্যালয়ে সুযোগ পেয়েও অর্থাভাবে ভর্তি হতে পারছেনা হাসিকুল

প্রকাশের সময় : ০৩:০০:১০ অপরাহ্ন, বুধবার, ১৭ অগাস্ট ২০২২
দরিদ্র ও মেধাবী ছাত্র হাসিকুল ইসলাম ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ একাধিক বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির সুযোগ পেলেও টাকার অভাবে তা অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় ও রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির সুযোগ পেয়েছেন হাসিকুল। তবে তার ইচ্ছা তিনি ঢাবিতে ভর্তি হবেন। এ বছর ঢাবিতে মানবিক বিভাগে ‘খ’ ইউনিটে ২২০৮তম স্থান, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে ‘ক’ ইউনিটে ২০৮ তম স্থান এবং জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে ‘খ’ ইউনিটে ৪৪০ তম স্থান অর্জন করেছেন হাসিকুল। এদিকে গরীব-অসহায় বাবা-মা কিভাবে ছেলেকে বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি ও পড়াশোনার খরচ জোগান দিবেন এমন চিন্তায় হতাশাগ্রস্ত হয়ে পড়েছেন।
অভাব-অনটন হাসিকুলের মেধাশক্তিকে দাবিয়ে রাখতে না পারলেও অর্থের অভাবে উচ্চশিক্ষার জন্য বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির পথ রুদ্ধ হতে বসেছে হাসিকুলের। দরিদ্রতার কাছে শেষ পর্যন্ত হার মেনে নিজের উজ্জ্বল ভবিষ্যৎ ফ্যাকাসে হয়ে পড়বে এমন আশঙ্কায় দিন কাটছে হাসিকুলের।
হাসিকুল ইসলাম ঠাকুরগাঁও জেলার রাণীশংকৈল উপজেলার ৭ নং রাতোর ইউনিয়নের ৯ নং ওয়ার্ড গড়কঁত গাঁও গ্রামের ভ্যানচালক সাবুল আলমের ছেলে। মা কুলসুম আক্তার গৃহিনী। তারা দুই ভাইবোন, তিনি ছোট । বড় বোন রিতা আক্তার তিন বছর আগে বাবা-মা অনেক কষ্টে তাকে বিয়ে দিয়েছেন। বর্তমানে তিনি বাবা-মাসহ তিন সদস্যের সংসার। ছেলের পড়ালেখা ও জীবন বাঁচার তাগিতে ভ্যান চালিয়ে মাঝে মাঝে শ্রমিকের কাজ করছেন হাসিকুলের বাবা।
হাসিকুল ২০১৯ সালে বাংলাগড় দাখিল মাদ্রাসা থেকে বিজ্ঞান বিভাগে এসএসসিতে জিপিএ ৪.৬৭ এবং এইচএসসি পীরগঞ্জ সরকারি কলেজ থেকে ২০২১ সালে মানবিক বিভাগে  জিপিএ ৫ পেয়ে উত্তীর্ণ হন। আত্মীয়-স্বজন ও প্রতিবেশীদের কাছে ধারদেনা করে ঢাকাসহ বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষায় অংশ নেন। এরপর একে একে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় ও রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির সুযোগ পান তিনি।
হাসিকুল জানান, কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তিও সুযোগ পেয়েছি ঠিকই কিন্তু আমার ইচ্ছা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার। তবে এখনও ভর্তির টাকা যোগাড় করতে পারিনি। কিভাবে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তিসহ ঢাকা শহরে থাকা ও পড়াশোনার খরচ যোগাবে তার হতদরিদ্র পরিবার, সেই চিন্তায় উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েছেন হাসিকুল।
নিজের হতাশা আর সীমাবদ্ধতার কথা জানাতে গিয়ে হাসিকুল বলেন, আমার বাবার তেমন কোনও আয় নেই। সামান্য দিন মজুর ও মাঝে মাঝে ভ্যান চালিয়ে সংসার চালান। জানি না বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হতে পারবো কিনা। ভবিষ্যতে প্রশাসনিক কর্মকর্তা হওয়ার ইচ্ছা রয়েছে তার।
হাসিকুলের মা কুলসুম আক্তার বলেন, ঘরে জমানো অর্থ না থাকায় বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে। ভিটাবাড়ি ছাড়া নিজেদের কোনও সম্পদ নেই। অভাবের কারণে ছেলের পড়াশোনা চালাতে পারবো কিনা জানি না।
হাসিকুলের  বাবা সাবুল আলমের সাথে কথা হলে তিনি বলেন, আমার গরিবের সংসার, দিন আনি দিন খাই। ছেলে বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির সুযোগ হয়েছে খুব খুশি হয়েছি কিন্তু যা রোজগার করি তাতে এই টাকায় সংসারই ঠিকমতো চলছে না। ছেলেকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তিসহ তার থাকা খাওয়ার খরচ জোগাড় করা আমার মতো অসহায় গরীব পিতার পক্ষে অসম্ভব। তবুও চেষ্টা করবো ছেলেকে উচ্চ শিক্ষায় শিক্ষিত করার।
এ বিষয়ে রাণীশংকৈল উপজেলা নির্বাহী অফিসার সোহেল সুলতান জুলকারনাইন জানান, হাসিকুলের পরিবারের কেউ উপজেলা প্রশাসনের সঙ্গে এ ব্যাপারে যোগাযোগ করেননি। যদি কেউ যোগাযোগ করেন তাহলে হাসিকুলের ভর্তির বেপারে সহযোগিতা করা হবে।