শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

চীনের সতর্কবার্তা আমলে নিচ্ছে না যুক্তরাষ্ট্র

প্রতীকী ছবি

চলতি বছরই বাণিজ্য চুক্তি নিয়ে আলোচনায় বসছে যুক্তরাষ্ট্র ও তাইওয়ান। সম্প্রতি এমনটিই ঘোষণা দিয়েছে দুই দেশ। স্বশাসিত দ্বীপটিতে মার্কিন কংগ্রেসের শীর্ষ পর্যায়ের সফরের পরই চীনের ক্ষোভ উদ্রেককারী পদক্ষেপ গ্রহণের ঘোষণা এলো।

বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহৎ অর্থনীতির দেশটির পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র ওয়াং ওয়েনবিন গত ১৮ আগস্ট বলেছেন, চীন সবসময়ই তাইওয়ানের সঙ্গে অর্থনৈতিক ও বাণিজ্য চুক্তি নিয়ে আলোচনা করার বিপক্ষে। তিনি সেদিন আরও বলেছিলেন, যুক্তরাষ্ট্রের এ পদক্ষেপ নেওয়া উচিত নয়। দেশের সার্বভৌমত্ব ও অখণ্ডতা রক্ষায় ‘দৃঢ়তার সঙ্গে’ কাজ করবে চীন। ইউএস-তাইওয়ান ইনিশিয়েটিভ অন টোয়েন্টিফার্স্ট সেঞ্চুরি ট্রেড উদ্যোগ নিয়ে আলোচনার জন্য আদেশপত্রের বিষয়ে দুই দেশ ঐকমত্যে পৌঁছানোর ঘোষণা দেয় গত ১ জুন অফিস অব দ্য ইউএস ট্রেড রিপ্রেজেন্টেটিভ (ইউএসটিআর)।  এর পরই যুক্তরাষ্ট্রের প্রতি এই সতর্কবার্তা এলো চীনের পক্ষ থেকে ওয়াং ওয়েনবিনের বরাত দিয়ে। শরৎকালের শুরুতেই আলোচনার প্রথম পর্ব অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা রয়েছে।

তাইওয়ানের প্রেসিডেন্ট সাই ইং-ওয়েন বলেছেন, আলোচনায় স্থান পাবে কৃষি, ডিজিটাল বাণিজ্যসহ বিভিন্ন শিল্প। যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে বাণিজ্য চুক্তি হলে বিদেশি বিনিয়োগকারীদের আস্থা অর্জনে সমর্থ হবে তাইওয়ান। এটি যুক্তরাষ্ট্র এবং অন্যান্য দেশ থেকে আরও বেশি মূলধন এবং প্রযুক্তি আকর্ষণে সক্ষম হবে তার দেশ। সাইয়ের ভাষ্য, স্থানীয় বাজার ব্যবস্থার উন্নতি অব্যাহত রাখবে তাইওয়ান। এছাড়া কম্প্রিহেনসিভ অ্যান্ড প্রগ্রেসিভ এগ্রিমেন্ট ফর ট্রান্স-প্যাসিফিক পার্টনারশিপ (সিপিটিপিপি) চুক্তিতে যোগদানের পরিকল্পনাকে এগিয়ে নিতে যথাযথ উদ্যোগ নেবে। সিপিটিপিপি জাপান, অস্ট্রেলিয়া, কানাডা, নিউজিল্যান্ডসহ ১১টি দেশের মধ্যে একটি বাণিজ্য চুক্তি। এ চুক্তিতে চীন অন্তর্ভুক্ত নয়। গত সেপ্টেম্বরে সিপিটিপিপি চুক্তিতে অন্তর্ভুক্ত হওয়ার আবেদন করেছিল তাইওয়ান। বিশ্লেষকরা এ বিষয়ে আশাবাদী। তারা চলতি বছরের ২৯ জুলাই অনুষ্ঠিত এক সেমিনারে বলেছেন, তাইওয়ান তার আর্থিক ব্যবস্থাকে আন্তর্জাতিকীকরণ এবং বৈশ্বিক সরবরাহ শৃঙ্খলে নিজের ভূমিকাকে শক্তিশালী করতে সক্ষম হতে পারে।

২০১৮ সালের মাঝামাঝি সময়ে যুক্তরাষ্ট্র ও চীনের মধ্যে বাণিজ্য যুদ্ধ শুরুর পর থেকে দুই দেশের সম্পর্ক আদায়-কাঁচকলায়। ২০২০ সালের জানুয়ারিতে তৎকালীন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প এবং চাইনিজ ভাইস প্রিমিয়ার লিউ হি এক বাণিজ্য চুক্তি করেন। চুক্তির আওতায় পরবর্তী দুই বছরে অতিরিক্ত ২০ হাজার কোটি  ডলার মূল্যের মার্কিন পণ্য কিনতে সম্মত হয় চীন।

ওয়াশিংটনভিত্তিক থিঙ্ক ট্যাঙ্ক পিটারসন ইনস্টিটিউট ফর ইন্টারন্যাশনাল ইকোনমিক্সের তথ্য অনুযায়ী, সেই সময় থেকে চলতি বছরের শুরু পর্যন্ত চুক্তির আওয়ায় প্রতিশ্রুত মার্কিন পণ্যের মাত্র ৫৭ শতংশ কিনেছে চীন। অন্যদিকে বাণিজ্য যুদ্ধের অংশ হিসেবে বিভিন্ন চীনা প্রযুক্তি এবং অন্যান্য কোম্পানির উপর নিষেধাজ্ঞা প্রয়োগ কার্যক্রম অব্যাহত রেখেছে যুক্তরাষ্ট্র।

গত জুনে  যুক্তরাষ্ট্রকে চীনা পণ্যের উপর সমস্ত অতিরিক্ত শুল্ক বাতিল করার আহ্বান জানিয়েছিল চীন। বলেছিল, এ ধরনের পদক্ষেপ যুক্তরাষ্ট্রের মূল্যস্ফীতির হার কমাতে সহায়ক হবে। এছাড়া দুই দেশের অর্থনীতি তো বটেই, উপকৃত হবে বিশ্ব। কিন্তু এখন পর্যন্ত জো বাইডেন প্রশাসন এ বিষয়ে কোনো সিদ্ধান্ত জানায়নি।

এশিয়ার টাইমসে লেখা এক নিবন্ধে সাংবাদিক জেফ পাও জানান, গত ২৮ জুলাই বাণিজ্য ব্যবস্থা নিয়ে দূরালাপনীতে ঘণ্টা দুয়েক আলোচনা করেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন এবং চীনা প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং। দীর্ঘ এ আলোচনার নিট ফল আদপে শূন্য। আর ২-৩ আগস্ট মার্র্কিন হাউস স্পিকার ন্যান্সি পেলোসির তাইওয়ান সফরের পর দুই দেশের সম্পর্কের মারাত্মক অবনতি হয়েছে। পেলোসির তাইওয়ান সফরে প্রতিক্রিয়া জানাতে চীনের পিপলস লিবারেশন আর্মি তখন তাইওয়ানের আশেপাশের ৬টি স্থানে তিন দিনের সামরিক মহড়া দেয় এবং স্বশাসিত দ্বীপটি থেকে ফল এবং হিমায়িত মাছ আমদানি নিষিদ্ধ করে। যুক্তরাষ্ট্র-চীন এবং চীন-তাইওয়ানের বাণিজ্য সম্পর্কের অবনতি ঘটলেও যুক্তরাষ্ট্র এবং তাইওয়ান আরও শক্তিশালী সম্পর্ক গড়ে তুলতে চাইছে। গত বুধবার ইউএটিআর কার্যালয় থেকে জানানো হয়, শরতের শুরুতেই আমেরিকান ইনস্টিটিউট ইন তাইওয়ান (এআইটি) এবং তাইপেই ইকোনমিক অ্যান্ড কালচারাল রিপ্রেজেন্টেটিভ অফিস (টিইসিআরও) আলোচনা শুরু করবে।

ডেপুটি ইউএসটিআর সারা বিয়েনচি বলেছেন, আলোচনায় প্রাধান্য পাবে, বাণিজ্য সহজীকরণ, শক্তিশালী দুর্নীতিবিরোধী মানদণ্ড, দুই দেশের ক্ষুদ্র ও মাঝারি উদ্যোগগুলোর মধ্যে বাণিজ্য বৃদ্ধি, কৃষি বাণিজ্যকে গুরুত্ববহ করে তোলা, বাণিজ্যে বৈষম্যমূলক বাধা অপসারণ, ডিজিটাল বাণিজ্য, শক্তিশালী শ্রম এবং পরিবেশগত মানসহ আরও নানা বিষয়। তাইওয়ানিজ একজিকিউটিভ ইউয়ানস অফিস অব ট্রেড নেগোশিয়েন্স এক বিবৃতিতে সম্প্রতি জানিয়েছে, আলোচনায় বাণিজ্য শুল্কের বিষয়টিতে গুরুত্ব দেওয়া হবে না। এর পরিবর্তে কীভাবে তাইওয়ানের অর্থনৈতিক শক্তি এবং যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্য ও বিনিয়োগ সম্পর্ক মজবুত করা যায়, তা নিয়ে আলোচনা হবে। এছাড়া গুরুত্ব পাবে, তাইওয়ানের বাণিজ্য ব্যবস্থাকে অন্যদের সঙ্গে সংযুক্ত এবং দ্বীপের বাজার-ভিত্তিক ব্যবস্থাকে শক্তিশালী করার বিষয়টি। তাইওয়ানের শীর্ষ বাণিজ্য আলোচক জন ডেং বলেছেন, আসন্ন আলোচনা দুই দেশের প্রতি চীনের ‘অর্থনৈতিক বলপ্রয়োগের’ বিরুদ্ধে পাল্টা ব্যবস্থা আনার পথ তৈরি করবে। ডেং আরও জানিয়েছেন, যুক্তরাষ্ট্রে আনারস, প্রক্রিয়াজাত মাংস এবং অর্কিড বিক্রি করতে আগ্রহী তার দেশ।

অন্যদিকে, চীনা পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র ওয়াং ওয়েনবিন বলেছেন, চীনের তাইওয়ান অঞ্চলের সঙ্গে সার্বভৌম প্রভাব বা বাণিজ্য চুক্তির বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্রের আলোচনা করা উচিত নয়। ওয়াং জানিয়েছেন, যুক্তরাষ্ট্রকে ‘এক চীন’ নীতি এবং তিন চীন-মার্কিন যৌথ ইশতেহারের বিধান অনুসরণ করতে বলা হয়েছে। সেই সঙ্গে বলা হয়েছে, তাইওয়ানের সঙ্গে সব ধরনের আনুষ্ঠানিক যোগাযোগ বন্ধ করতে। চীনের বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র শু ইউটিং বলেছেন, যুক্তরাষ্ট্রের উচিত তাইওয়ানের সঙ্গে বাণিজ্য ও অর্থনৈতিক অংশীদারিত্বকে সতর্কতার সঙ্গে পরিচালনা। সেই সঙ্গে চীনের মূল স্বার্থকে সম্মান করা।

তাইওয়ানের চাইনিজ কালচার ইউনিভার্সিটির কলেজ অব ইন্টারন্যাশনাল স্টাডিজ অ্যান্ড ফরেন ল্যাংগুয়েজেস প্রোগ্রামের গ্লোবাল বিজনেস বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ডু জেনহুয়া চায়নাটাইমস ডটকম ওয়েবসাইটে এক নিবন্ধ লিখেছেন। সেখানে তিনি  ইউএস-তাইওয়ান ইনিশিয়েটিভ অন টোয়েন্টিফার্স্ট সেঞ্চুরি উদ্যোগের সমালোচনা করেছেন। ডু বলেছেন, বাণিজ্য আলোচনা তাইওয়ানের পণ্যের জন্য মার্কিন শুল্ক কমাতে সাহায্য করবে না। কিন্তু দ্বীপের উৎপাদকদের জন্য খরচ বাড়াবে।

সরকারি পরিসংখ্যানে দেখা গেছে, ২০২১ সালে, তাইওয়ানের ২৮ দশমিক ২ শতাংশ পণ্য মূল ভূখণ্ড চীনে রপ্তানি করা হয়। অন্যদিকে যুক্তরাষ্ট্র ও হংকংয়ে রপ্তানি হয়েছিল যথাক্রমে ১৪ দশমিক ৭ শতাংশ এবং ১৪ দশমিক ১ শতাংশ পণ্য।

ফলের চালানে ‘ক্ষতিকর জীবাণুর’ অস্তিত্ব মিলেছে- এই কারণ দেখিয়ে ২০২১ সালের মার্চ মাসে, তাইওয়ান থেকে আনারস আমদানিতে নিষেধাজ্ঞা  আরোপ করে চীন। গত সেপ্টেম্বরে তাইওয়ান থেকে চিনির আপেল (সুগার অ্যাপল) এবং জাভা আপেল আমদানি নিষিদ্ধ করেছিল দেশটি।

চীনের সতর্কবার্তা আমলে নিচ্ছে না যুক্তরাষ্ট্র

প্রকাশের সময় : ১১:৫৫:৫৪ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ৩১ অগাস্ট ২০২২

চলতি বছরই বাণিজ্য চুক্তি নিয়ে আলোচনায় বসছে যুক্তরাষ্ট্র ও তাইওয়ান। সম্প্রতি এমনটিই ঘোষণা দিয়েছে দুই দেশ। স্বশাসিত দ্বীপটিতে মার্কিন কংগ্রেসের শীর্ষ পর্যায়ের সফরের পরই চীনের ক্ষোভ উদ্রেককারী পদক্ষেপ গ্রহণের ঘোষণা এলো।

বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহৎ অর্থনীতির দেশটির পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র ওয়াং ওয়েনবিন গত ১৮ আগস্ট বলেছেন, চীন সবসময়ই তাইওয়ানের সঙ্গে অর্থনৈতিক ও বাণিজ্য চুক্তি নিয়ে আলোচনা করার বিপক্ষে। তিনি সেদিন আরও বলেছিলেন, যুক্তরাষ্ট্রের এ পদক্ষেপ নেওয়া উচিত নয়। দেশের সার্বভৌমত্ব ও অখণ্ডতা রক্ষায় ‘দৃঢ়তার সঙ্গে’ কাজ করবে চীন। ইউএস-তাইওয়ান ইনিশিয়েটিভ অন টোয়েন্টিফার্স্ট সেঞ্চুরি ট্রেড উদ্যোগ নিয়ে আলোচনার জন্য আদেশপত্রের বিষয়ে দুই দেশ ঐকমত্যে পৌঁছানোর ঘোষণা দেয় গত ১ জুন অফিস অব দ্য ইউএস ট্রেড রিপ্রেজেন্টেটিভ (ইউএসটিআর)।  এর পরই যুক্তরাষ্ট্রের প্রতি এই সতর্কবার্তা এলো চীনের পক্ষ থেকে ওয়াং ওয়েনবিনের বরাত দিয়ে। শরৎকালের শুরুতেই আলোচনার প্রথম পর্ব অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা রয়েছে।

তাইওয়ানের প্রেসিডেন্ট সাই ইং-ওয়েন বলেছেন, আলোচনায় স্থান পাবে কৃষি, ডিজিটাল বাণিজ্যসহ বিভিন্ন শিল্প। যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে বাণিজ্য চুক্তি হলে বিদেশি বিনিয়োগকারীদের আস্থা অর্জনে সমর্থ হবে তাইওয়ান। এটি যুক্তরাষ্ট্র এবং অন্যান্য দেশ থেকে আরও বেশি মূলধন এবং প্রযুক্তি আকর্ষণে সক্ষম হবে তার দেশ। সাইয়ের ভাষ্য, স্থানীয় বাজার ব্যবস্থার উন্নতি অব্যাহত রাখবে তাইওয়ান। এছাড়া কম্প্রিহেনসিভ অ্যান্ড প্রগ্রেসিভ এগ্রিমেন্ট ফর ট্রান্স-প্যাসিফিক পার্টনারশিপ (সিপিটিপিপি) চুক্তিতে যোগদানের পরিকল্পনাকে এগিয়ে নিতে যথাযথ উদ্যোগ নেবে। সিপিটিপিপি জাপান, অস্ট্রেলিয়া, কানাডা, নিউজিল্যান্ডসহ ১১টি দেশের মধ্যে একটি বাণিজ্য চুক্তি। এ চুক্তিতে চীন অন্তর্ভুক্ত নয়। গত সেপ্টেম্বরে সিপিটিপিপি চুক্তিতে অন্তর্ভুক্ত হওয়ার আবেদন করেছিল তাইওয়ান। বিশ্লেষকরা এ বিষয়ে আশাবাদী। তারা চলতি বছরের ২৯ জুলাই অনুষ্ঠিত এক সেমিনারে বলেছেন, তাইওয়ান তার আর্থিক ব্যবস্থাকে আন্তর্জাতিকীকরণ এবং বৈশ্বিক সরবরাহ শৃঙ্খলে নিজের ভূমিকাকে শক্তিশালী করতে সক্ষম হতে পারে।

২০১৮ সালের মাঝামাঝি সময়ে যুক্তরাষ্ট্র ও চীনের মধ্যে বাণিজ্য যুদ্ধ শুরুর পর থেকে দুই দেশের সম্পর্ক আদায়-কাঁচকলায়। ২০২০ সালের জানুয়ারিতে তৎকালীন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প এবং চাইনিজ ভাইস প্রিমিয়ার লিউ হি এক বাণিজ্য চুক্তি করেন। চুক্তির আওতায় পরবর্তী দুই বছরে অতিরিক্ত ২০ হাজার কোটি  ডলার মূল্যের মার্কিন পণ্য কিনতে সম্মত হয় চীন।

ওয়াশিংটনভিত্তিক থিঙ্ক ট্যাঙ্ক পিটারসন ইনস্টিটিউট ফর ইন্টারন্যাশনাল ইকোনমিক্সের তথ্য অনুযায়ী, সেই সময় থেকে চলতি বছরের শুরু পর্যন্ত চুক্তির আওয়ায় প্রতিশ্রুত মার্কিন পণ্যের মাত্র ৫৭ শতংশ কিনেছে চীন। অন্যদিকে বাণিজ্য যুদ্ধের অংশ হিসেবে বিভিন্ন চীনা প্রযুক্তি এবং অন্যান্য কোম্পানির উপর নিষেধাজ্ঞা প্রয়োগ কার্যক্রম অব্যাহত রেখেছে যুক্তরাষ্ট্র।

গত জুনে  যুক্তরাষ্ট্রকে চীনা পণ্যের উপর সমস্ত অতিরিক্ত শুল্ক বাতিল করার আহ্বান জানিয়েছিল চীন। বলেছিল, এ ধরনের পদক্ষেপ যুক্তরাষ্ট্রের মূল্যস্ফীতির হার কমাতে সহায়ক হবে। এছাড়া দুই দেশের অর্থনীতি তো বটেই, উপকৃত হবে বিশ্ব। কিন্তু এখন পর্যন্ত জো বাইডেন প্রশাসন এ বিষয়ে কোনো সিদ্ধান্ত জানায়নি।

এশিয়ার টাইমসে লেখা এক নিবন্ধে সাংবাদিক জেফ পাও জানান, গত ২৮ জুলাই বাণিজ্য ব্যবস্থা নিয়ে দূরালাপনীতে ঘণ্টা দুয়েক আলোচনা করেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন এবং চীনা প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং। দীর্ঘ এ আলোচনার নিট ফল আদপে শূন্য। আর ২-৩ আগস্ট মার্র্কিন হাউস স্পিকার ন্যান্সি পেলোসির তাইওয়ান সফরের পর দুই দেশের সম্পর্কের মারাত্মক অবনতি হয়েছে। পেলোসির তাইওয়ান সফরে প্রতিক্রিয়া জানাতে চীনের পিপলস লিবারেশন আর্মি তখন তাইওয়ানের আশেপাশের ৬টি স্থানে তিন দিনের সামরিক মহড়া দেয় এবং স্বশাসিত দ্বীপটি থেকে ফল এবং হিমায়িত মাছ আমদানি নিষিদ্ধ করে। যুক্তরাষ্ট্র-চীন এবং চীন-তাইওয়ানের বাণিজ্য সম্পর্কের অবনতি ঘটলেও যুক্তরাষ্ট্র এবং তাইওয়ান আরও শক্তিশালী সম্পর্ক গড়ে তুলতে চাইছে। গত বুধবার ইউএটিআর কার্যালয় থেকে জানানো হয়, শরতের শুরুতেই আমেরিকান ইনস্টিটিউট ইন তাইওয়ান (এআইটি) এবং তাইপেই ইকোনমিক অ্যান্ড কালচারাল রিপ্রেজেন্টেটিভ অফিস (টিইসিআরও) আলোচনা শুরু করবে।

ডেপুটি ইউএসটিআর সারা বিয়েনচি বলেছেন, আলোচনায় প্রাধান্য পাবে, বাণিজ্য সহজীকরণ, শক্তিশালী দুর্নীতিবিরোধী মানদণ্ড, দুই দেশের ক্ষুদ্র ও মাঝারি উদ্যোগগুলোর মধ্যে বাণিজ্য বৃদ্ধি, কৃষি বাণিজ্যকে গুরুত্ববহ করে তোলা, বাণিজ্যে বৈষম্যমূলক বাধা অপসারণ, ডিজিটাল বাণিজ্য, শক্তিশালী শ্রম এবং পরিবেশগত মানসহ আরও নানা বিষয়। তাইওয়ানিজ একজিকিউটিভ ইউয়ানস অফিস অব ট্রেড নেগোশিয়েন্স এক বিবৃতিতে সম্প্রতি জানিয়েছে, আলোচনায় বাণিজ্য শুল্কের বিষয়টিতে গুরুত্ব দেওয়া হবে না। এর পরিবর্তে কীভাবে তাইওয়ানের অর্থনৈতিক শক্তি এবং যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্য ও বিনিয়োগ সম্পর্ক মজবুত করা যায়, তা নিয়ে আলোচনা হবে। এছাড়া গুরুত্ব পাবে, তাইওয়ানের বাণিজ্য ব্যবস্থাকে অন্যদের সঙ্গে সংযুক্ত এবং দ্বীপের বাজার-ভিত্তিক ব্যবস্থাকে শক্তিশালী করার বিষয়টি। তাইওয়ানের শীর্ষ বাণিজ্য আলোচক জন ডেং বলেছেন, আসন্ন আলোচনা দুই দেশের প্রতি চীনের ‘অর্থনৈতিক বলপ্রয়োগের’ বিরুদ্ধে পাল্টা ব্যবস্থা আনার পথ তৈরি করবে। ডেং আরও জানিয়েছেন, যুক্তরাষ্ট্রে আনারস, প্রক্রিয়াজাত মাংস এবং অর্কিড বিক্রি করতে আগ্রহী তার দেশ।

অন্যদিকে, চীনা পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র ওয়াং ওয়েনবিন বলেছেন, চীনের তাইওয়ান অঞ্চলের সঙ্গে সার্বভৌম প্রভাব বা বাণিজ্য চুক্তির বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্রের আলোচনা করা উচিত নয়। ওয়াং জানিয়েছেন, যুক্তরাষ্ট্রকে ‘এক চীন’ নীতি এবং তিন চীন-মার্কিন যৌথ ইশতেহারের বিধান অনুসরণ করতে বলা হয়েছে। সেই সঙ্গে বলা হয়েছে, তাইওয়ানের সঙ্গে সব ধরনের আনুষ্ঠানিক যোগাযোগ বন্ধ করতে। চীনের বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র শু ইউটিং বলেছেন, যুক্তরাষ্ট্রের উচিত তাইওয়ানের সঙ্গে বাণিজ্য ও অর্থনৈতিক অংশীদারিত্বকে সতর্কতার সঙ্গে পরিচালনা। সেই সঙ্গে চীনের মূল স্বার্থকে সম্মান করা।

তাইওয়ানের চাইনিজ কালচার ইউনিভার্সিটির কলেজ অব ইন্টারন্যাশনাল স্টাডিজ অ্যান্ড ফরেন ল্যাংগুয়েজেস প্রোগ্রামের গ্লোবাল বিজনেস বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ডু জেনহুয়া চায়নাটাইমস ডটকম ওয়েবসাইটে এক নিবন্ধ লিখেছেন। সেখানে তিনি  ইউএস-তাইওয়ান ইনিশিয়েটিভ অন টোয়েন্টিফার্স্ট সেঞ্চুরি উদ্যোগের সমালোচনা করেছেন। ডু বলেছেন, বাণিজ্য আলোচনা তাইওয়ানের পণ্যের জন্য মার্কিন শুল্ক কমাতে সাহায্য করবে না। কিন্তু দ্বীপের উৎপাদকদের জন্য খরচ বাড়াবে।

সরকারি পরিসংখ্যানে দেখা গেছে, ২০২১ সালে, তাইওয়ানের ২৮ দশমিক ২ শতাংশ পণ্য মূল ভূখণ্ড চীনে রপ্তানি করা হয়। অন্যদিকে যুক্তরাষ্ট্র ও হংকংয়ে রপ্তানি হয়েছিল যথাক্রমে ১৪ দশমিক ৭ শতাংশ এবং ১৪ দশমিক ১ শতাংশ পণ্য।

ফলের চালানে ‘ক্ষতিকর জীবাণুর’ অস্তিত্ব মিলেছে- এই কারণ দেখিয়ে ২০২১ সালের মার্চ মাসে, তাইওয়ান থেকে আনারস আমদানিতে নিষেধাজ্ঞা  আরোপ করে চীন। গত সেপ্টেম্বরে তাইওয়ান থেকে চিনির আপেল (সুগার অ্যাপল) এবং জাভা আপেল আমদানি নিষিদ্ধ করেছিল দেশটি।