শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০ বঙ্গাব্দ

ইউক্রেন- রাশিয়া যুদ্ধ শীঘ্রই বন্ধ হচ্ছে না

ছবি-বিবিসি বাংলা

অস্ত্র ও নাৎসিমুক্ত করার কথা বলে ইউক্রেনে সামরিক অভিযান শুরু করে রাশিয়া। ছয় মাস পার হলেও সেই যুদ্ধ থামার কোনো ইঙ্গিত পাওয়া যাচ্ছে না। রাশিয়া জানিয়েছে, পশ্চিমা সামরিক জোট ন্যাটোতে যোগ দেওয়ার আকাঙ্ক্ষা ইউক্রেন পরিত্যাগের আনুষ্ঠানিক ঘোষণা দিলেও যুদ্ধ বন্ধ করবে না রাশিয়া।

গত ২৬ আগস্ট রাশিয়ার সাবেক প্রেসিডেন্ট দিমিত্রি মেদভেদেভ এমন ইঙ্গিত দিয়েছেন। বর্তমানে তিনি রাশিয়ার নিরাপত্তা পরিষদের ডেপুটি চেয়ারম্যান। মেদভেদেভকে দেশটির প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের ঘনিষ্ঠ সহযোগী মনে করা হয়।

ফ্রান্সের একটি টেলিভিশনকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে তিনি আরও বলেন, কিছু সুনির্দিষ্ট শর্তে ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির জেলেনস্কির সঙ্গে সংলাপে বসতে প্রস্তুত রাশিয়া। তবে যুদ্ধ বন্ধের বিষয়ে তিনি কিছু জানাননি।

পুতিন বলছেন, তিনি ইউক্রেনকে ‘নাৎসিমুক্ত’ করতে চান, তবে কিয়েভ ও পশ্চিমা বিশ্ব এই অভিযোগকে যুদ্ধজয়ের ভিত্তিহীন অভিযোগ বলে মন্তব্য করেছে। যুদ্ধ শুরুর পর রাশিয়া ও ইউক্রেনের মধ্যে কয়েক দফা বৈঠক হয়, তবে এতে তেমন কোনো অগ্রগতি হয়নি। শিগগিরই ওই সংলাপ পুনরায় শুরু হওয়ারও তেমন সম্ভাবনা নেই। মেদভেদেভ বলেন, ‘সামনের ঘটনাপ্রবাহের উপর সংলাপের বিষয়টি নির্ভর করছে। জেলেনস্কির সঙ্গে সাক্ষাতে আমাদের প্রস্তুতি আছে। এখন পর্যন্ত ইউক্রেনকে দেওয়া যুক্তরাষ্ট্রের মাল্টিপল রকেট লঞ্চার হিমার্সের মতো অস্ত্র উল্লেখযোগ্য হুমকি সৃষ্টি করতে পারেনি। তবে এই অবস্থার পরিবর্তন হতে পারে, যদি যুক্তরাষ্ট্রের পাঠানো অস্ত্র এর চেয়ে বেশি দূরত্বে আঘাত হানে। যখন এ ধরনের ক্ষেপণাস্ত্র ৭০ কিলোমিটার দূরে আঘাত হানে, তা এক বিষয়। কিন্তু ৩০০ থেকে ৪০০ কিলোমিটার পাল্লার হলে সেটা আরেক বিষয়। তখন এটি রুশ ফেডারেশনের ভূখণ্ডের প্রতি সরাসরি হুমকি হয়ে দাঁড়াবে।’

যুদ্ধ শুরুর পর থেকে ইতোমধ্যে ইউক্রেনকে এক হাজার ৬০ কোটি ডলারের সামরিক সহায়তা দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। কয়েক দিন আগে আরও ৩০০ কোটি ডলারের অস্ত্র সরবরাহের ঘোষণা দিয়েছে। এর মধ্যে হিমার্স ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবস্থা, জ্যাভলিন ট্যাংকবিধ্বংসী ক্ষেপণাস্ত্র ও আত্মঘাতী ড্রোন- রুশ বাহিনীর অগ্রগতি থামিয়ে দিয়েছে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। পুতিনের কড়া সমালোচক মার্কিন বংশোদ্ভূত ব্রিটিশ অর্থনীতিবিদ ও রাজনৈতিক কর্মী বিল ব্রোডারের দাবি, ইউক্রেন যুদ্ধ ১০ বছর ধরে চলতে পারে। এই যুদ্ধ শেষ হবে না। ইউক্রেনের বিরুদ্ধে এই যুদ্ধ ২৪ ফেব্রুয়ারি শুরু হয়নি; শুরু হয়েছে ২০১৪ সালে। ওই সময়ে ইউক্রেনের কাছ থেকে ক্রিমিয়া কেড়ে নিয়েছে রাশিয়া। পুতিনও এই যুদ্ধ ছেড়ে যাচ্ছেন না, ইউক্রেনও পিছপা হচ্ছে না। একে ইরান-ইরাক যুদ্ধের সঙ্গে তুলনা করা চলে, যা এক দশক চলেছে এবং ১০ লাখ মানুষ নিহত হয়েছে।

ব্রোডার আরও বলেন, ‘পুতিনের সেনাবাহিনী ও অর্থনীতি সঙ্কুচিত হচ্ছে। কিন্তু তিনি এমন হিসাব কখনো করেননি। আমার সন্দেহ পুতিনের পরবর্তী পদক্ষেপ হবে নাটকীয়ভাবে উত্তেজনা বৃদ্ধি করা। এর মধ্য দিয়ে তিনি হয়তো দেখিয়ে দেবেন যে, কত নিষ্ঠুর তিনি। সামরিক উপায়ে বিজয় অসম্ভব, তাহলে তিনি ঝলসে যাওয়া পৃথিবীর নীতি গ্রহণ করতে পারেন। ইউক্রেনজুড়ে মারিওপোল পরিস্থিতির মতো ধ্বংসলীলা চালিয়ে দিতে পারেন। এক্ষেত্রে তিনি ব্যবহার করতে পারেন রাশিয়ার ২০ লাখ রিজার্ভিস্টকে। এমনকি বায়োলজিক্যাল ও রাসায়নিক অস্ত্র ব্যবহার করতে পারেন। পারমাণবিক হামলা চালাতে পারেন।’

ইউক্রেনের কমান্ডার ইন চিফ জেনারেল ভালেরি জালুঝনি বলেছেন, গত ছয় মাসে তাদের প্রায় ৯ হাজার সেনা নিহত হয়েছে। তবে তার এ দাবি নিয়ে সন্দেহের অবকাশ রয়েছে; কারণ নিহতের প্রকৃত সংখ্যা এর অনেক বেশি হতে পারে। রাশিয়ার কতজন সেনা নিহত হয়েছে, তা নিয়ে স্পষ্ট কোনো তথ্য পাওয়া যাচ্ছে না। গত ২৫ মার্চ রাশিয়ার সামরিক বাহিনী জানায়, যুদ্ধের প্রথম মাসে তাদের এক হাজার ৩৫১ জন সেনা প্রাণ হারিয়েছে। তবে মার্কিন কর্মকর্তাদের দাবি, যুদ্ধে ৭০ থেকে ৮০ হাজার রুশ সেনা নিহত হয়েছে। এদিকে করোনা মহামারির ধকল সামলে ওঠার আগেই শুরু হওয়া ইউক্রেন যুদ্ধের ফলে আর্থিক ও খাদ্যসংকটের মুখে পড়েছে বিশ্বের অনেক দেশ।

ইউক্রেন ও রাশিয়া বিশ্বের মোট গম ও বার্লির এক-তৃতীয়াংশের জোগানদাতা। জাতিসংঘ উন্নয়ন কর্মসূচির (ইউএনডিপি) তথ্য অনুযায়ী, যুদ্ধের প্রথম তিন মাসের মধ্যে বিশ্বে খাদ্য ও জ্বালানির যে দাম বেড়েছে, তাতে নতুন করে ৭ কোটি ১০ লাখ মানুষ দরিদ্র হয়েছে।

ইউক্রেন রুশ বাহিনী ও স্থাপনার উপর চোরাগোপ্তা হামলা বাড়িয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে। ব্রিটিশ সাময়িকী ইকোনমিস্ট জানিয়েছে, দক্ষিণ ইউক্রেনের অধিকৃত মেলিতোপোল এখন গেরিলা হামলাকারীদের তৎপরতার ‘সদর দপ্তর’। রুশ সৈন্যদের উপর চোরাগোপ্তা হামলা তো রয়েছেই, তদুপরি রয়েছে রুশ পরিবহন ব্যবস্থা, অস্ত্রের গুদাম, সৈন্য বহনরত গাড়ির উপর বোমা হামলা। একই অবস্থা পার্শ্ববর্তী খেরসনেও। এখানে রুশনিয়ন্ত্রিত বিমান ছাউনিতে কম করে হলেও এক ডজন হামলা হয়েছে। দোনেৎস্ক ও লুহানস্কে অস্ত্রগুদামে অগ্নিকাণ্ডের খবরও এসেছে। এর মধ্যেই গত ২১ আগস্ট ‘পুতিনের মস্তিষ্ক’ খ্যাত দার্শনিক আলেকসান্দর দুগিনের মেয়ে দারিয়া দুগিনাকে (৩০) গাড়িবোমা হামলায় হত্যা করা হয়। বাবার পথ ধরেই নিজেকে উদীয়মান বুদ্ধিজীবী, সাংবাদিক ও বক্তা হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করেছিলেন দুগিনা।

রুশ কর্তৃপক্ষ বলছে, গাড়ির চালকের আসনের নিচে ৪০০ গ্রাম টিএনটি বিস্ফোরক লাগানো ছিল। সম্ভবত টাইমার বা সুইচ টিপে বোমার বিস্ফোরণ ঘটানো হয়েছে। ইতোমধ্যে রুশ গোয়েন্দা সংস্থা এফএসবি এই সন্ত্রাসী হামলার জন্য দায়ী ব্যক্তির নাম প্রকাশ করেছে। রুশ বার্তা সংস্থা তাস বলছে, ইউক্রেনের উগ্রপন্থি সামরিক সংগঠন আজভ ব্যাটালিয়নের সদস্য নাতালিয়া ভোভক নামের ৪৩ বছর বয়সী এক নারী এ ঘটনা ঘটিয়েছেন। হামলার পরপরই তিনি এস্তোনিয়ায় পালিয়ে গেছেন।

রাশিয়ার মনোবলের একটা আভাস পাওয়া যায় আলেকসান্দর দুগিনের মন্তব্যে। মেয়ের মৃত্যুর পর তিনি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে বলেন, ‘রাশিয়ার শত্রুরা আমার কন্যাকে হত্যা করেছে। কিন্তু আমরা, আমাদের জনগণ এ রকম অসহনীয় আঘাতের পরও ভেঙে পড়বে না…আমাদের হৃদয় কেবল প্রতিশোধ চায় না, প্রতিশোধ খুব ছোট হয়ে যায়, অরুশীয় হয়ে যায়। একমাত্র বিজয়ই আমাদের চাহিদা।’

আলেকসান্দর ও দারিয়া- দুজনের নামই ইউক্রেনের এক নব্য নাৎসি ওয়েবসাইটের হিটলিস্টে ছিল। ‘মিরোতভরেৎস’ নামের ওই ওয়েবসাইটে এখন শুধু রুশ নাগরিকরাই হিটলিস্টে নেই, এর সঙ্গে যুক্ত হয়েছে এ যুদ্ধে ইউক্রেন ও পশ্চিমা নীতির সমালোচনাকারী- এমনকি সরকারবিরোধীদের নামও। নাম উল্লেখ করার পর ওই ওয়েবসাইটে ওই ব্যক্তির সব ব্যক্তিগত তথ্য তুলে দেওয়া হয়। ওয়েবসাইটটি পরিচালিত হয় ইউক্রেনের সামরিক গোয়েন্দা সংস্থা ও কট্টর জাতীয়তাবাদীদের মাধ্যমে। তবে এগুলো যে মানবতাবিরোধী কর্মকাণ্ড সে সম্পর্কে পশ্চিমারা নিশ্চুপ।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, আজকের বাস্তবতায় যুদ্ধ অচিরেই থামছে না। তা দীর্ঘস্থায়ী রূপ নিচ্ছে। এতে যুদ্ধ-অর্থনীতি ফুলে-ফেঁপে উঠলেও মানবতার পরাজয় হচ্ছে প্রতিনিয়ত।

ইউক্রেন- রাশিয়া যুদ্ধ শীঘ্রই বন্ধ হচ্ছে না

প্রকাশের সময় : ০১:৪৭:২৭ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ৮ সেপ্টেম্বর ২০২২

অস্ত্র ও নাৎসিমুক্ত করার কথা বলে ইউক্রেনে সামরিক অভিযান শুরু করে রাশিয়া। ছয় মাস পার হলেও সেই যুদ্ধ থামার কোনো ইঙ্গিত পাওয়া যাচ্ছে না। রাশিয়া জানিয়েছে, পশ্চিমা সামরিক জোট ন্যাটোতে যোগ দেওয়ার আকাঙ্ক্ষা ইউক্রেন পরিত্যাগের আনুষ্ঠানিক ঘোষণা দিলেও যুদ্ধ বন্ধ করবে না রাশিয়া।

গত ২৬ আগস্ট রাশিয়ার সাবেক প্রেসিডেন্ট দিমিত্রি মেদভেদেভ এমন ইঙ্গিত দিয়েছেন। বর্তমানে তিনি রাশিয়ার নিরাপত্তা পরিষদের ডেপুটি চেয়ারম্যান। মেদভেদেভকে দেশটির প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের ঘনিষ্ঠ সহযোগী মনে করা হয়।

ফ্রান্সের একটি টেলিভিশনকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে তিনি আরও বলেন, কিছু সুনির্দিষ্ট শর্তে ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির জেলেনস্কির সঙ্গে সংলাপে বসতে প্রস্তুত রাশিয়া। তবে যুদ্ধ বন্ধের বিষয়ে তিনি কিছু জানাননি।

পুতিন বলছেন, তিনি ইউক্রেনকে ‘নাৎসিমুক্ত’ করতে চান, তবে কিয়েভ ও পশ্চিমা বিশ্ব এই অভিযোগকে যুদ্ধজয়ের ভিত্তিহীন অভিযোগ বলে মন্তব্য করেছে। যুদ্ধ শুরুর পর রাশিয়া ও ইউক্রেনের মধ্যে কয়েক দফা বৈঠক হয়, তবে এতে তেমন কোনো অগ্রগতি হয়নি। শিগগিরই ওই সংলাপ পুনরায় শুরু হওয়ারও তেমন সম্ভাবনা নেই। মেদভেদেভ বলেন, ‘সামনের ঘটনাপ্রবাহের উপর সংলাপের বিষয়টি নির্ভর করছে। জেলেনস্কির সঙ্গে সাক্ষাতে আমাদের প্রস্তুতি আছে। এখন পর্যন্ত ইউক্রেনকে দেওয়া যুক্তরাষ্ট্রের মাল্টিপল রকেট লঞ্চার হিমার্সের মতো অস্ত্র উল্লেখযোগ্য হুমকি সৃষ্টি করতে পারেনি। তবে এই অবস্থার পরিবর্তন হতে পারে, যদি যুক্তরাষ্ট্রের পাঠানো অস্ত্র এর চেয়ে বেশি দূরত্বে আঘাত হানে। যখন এ ধরনের ক্ষেপণাস্ত্র ৭০ কিলোমিটার দূরে আঘাত হানে, তা এক বিষয়। কিন্তু ৩০০ থেকে ৪০০ কিলোমিটার পাল্লার হলে সেটা আরেক বিষয়। তখন এটি রুশ ফেডারেশনের ভূখণ্ডের প্রতি সরাসরি হুমকি হয়ে দাঁড়াবে।’

যুদ্ধ শুরুর পর থেকে ইতোমধ্যে ইউক্রেনকে এক হাজার ৬০ কোটি ডলারের সামরিক সহায়তা দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। কয়েক দিন আগে আরও ৩০০ কোটি ডলারের অস্ত্র সরবরাহের ঘোষণা দিয়েছে। এর মধ্যে হিমার্স ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবস্থা, জ্যাভলিন ট্যাংকবিধ্বংসী ক্ষেপণাস্ত্র ও আত্মঘাতী ড্রোন- রুশ বাহিনীর অগ্রগতি থামিয়ে দিয়েছে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। পুতিনের কড়া সমালোচক মার্কিন বংশোদ্ভূত ব্রিটিশ অর্থনীতিবিদ ও রাজনৈতিক কর্মী বিল ব্রোডারের দাবি, ইউক্রেন যুদ্ধ ১০ বছর ধরে চলতে পারে। এই যুদ্ধ শেষ হবে না। ইউক্রেনের বিরুদ্ধে এই যুদ্ধ ২৪ ফেব্রুয়ারি শুরু হয়নি; শুরু হয়েছে ২০১৪ সালে। ওই সময়ে ইউক্রেনের কাছ থেকে ক্রিমিয়া কেড়ে নিয়েছে রাশিয়া। পুতিনও এই যুদ্ধ ছেড়ে যাচ্ছেন না, ইউক্রেনও পিছপা হচ্ছে না। একে ইরান-ইরাক যুদ্ধের সঙ্গে তুলনা করা চলে, যা এক দশক চলেছে এবং ১০ লাখ মানুষ নিহত হয়েছে।

ব্রোডার আরও বলেন, ‘পুতিনের সেনাবাহিনী ও অর্থনীতি সঙ্কুচিত হচ্ছে। কিন্তু তিনি এমন হিসাব কখনো করেননি। আমার সন্দেহ পুতিনের পরবর্তী পদক্ষেপ হবে নাটকীয়ভাবে উত্তেজনা বৃদ্ধি করা। এর মধ্য দিয়ে তিনি হয়তো দেখিয়ে দেবেন যে, কত নিষ্ঠুর তিনি। সামরিক উপায়ে বিজয় অসম্ভব, তাহলে তিনি ঝলসে যাওয়া পৃথিবীর নীতি গ্রহণ করতে পারেন। ইউক্রেনজুড়ে মারিওপোল পরিস্থিতির মতো ধ্বংসলীলা চালিয়ে দিতে পারেন। এক্ষেত্রে তিনি ব্যবহার করতে পারেন রাশিয়ার ২০ লাখ রিজার্ভিস্টকে। এমনকি বায়োলজিক্যাল ও রাসায়নিক অস্ত্র ব্যবহার করতে পারেন। পারমাণবিক হামলা চালাতে পারেন।’

ইউক্রেনের কমান্ডার ইন চিফ জেনারেল ভালেরি জালুঝনি বলেছেন, গত ছয় মাসে তাদের প্রায় ৯ হাজার সেনা নিহত হয়েছে। তবে তার এ দাবি নিয়ে সন্দেহের অবকাশ রয়েছে; কারণ নিহতের প্রকৃত সংখ্যা এর অনেক বেশি হতে পারে। রাশিয়ার কতজন সেনা নিহত হয়েছে, তা নিয়ে স্পষ্ট কোনো তথ্য পাওয়া যাচ্ছে না। গত ২৫ মার্চ রাশিয়ার সামরিক বাহিনী জানায়, যুদ্ধের প্রথম মাসে তাদের এক হাজার ৩৫১ জন সেনা প্রাণ হারিয়েছে। তবে মার্কিন কর্মকর্তাদের দাবি, যুদ্ধে ৭০ থেকে ৮০ হাজার রুশ সেনা নিহত হয়েছে। এদিকে করোনা মহামারির ধকল সামলে ওঠার আগেই শুরু হওয়া ইউক্রেন যুদ্ধের ফলে আর্থিক ও খাদ্যসংকটের মুখে পড়েছে বিশ্বের অনেক দেশ।

ইউক্রেন ও রাশিয়া বিশ্বের মোট গম ও বার্লির এক-তৃতীয়াংশের জোগানদাতা। জাতিসংঘ উন্নয়ন কর্মসূচির (ইউএনডিপি) তথ্য অনুযায়ী, যুদ্ধের প্রথম তিন মাসের মধ্যে বিশ্বে খাদ্য ও জ্বালানির যে দাম বেড়েছে, তাতে নতুন করে ৭ কোটি ১০ লাখ মানুষ দরিদ্র হয়েছে।

ইউক্রেন রুশ বাহিনী ও স্থাপনার উপর চোরাগোপ্তা হামলা বাড়িয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে। ব্রিটিশ সাময়িকী ইকোনমিস্ট জানিয়েছে, দক্ষিণ ইউক্রেনের অধিকৃত মেলিতোপোল এখন গেরিলা হামলাকারীদের তৎপরতার ‘সদর দপ্তর’। রুশ সৈন্যদের উপর চোরাগোপ্তা হামলা তো রয়েছেই, তদুপরি রয়েছে রুশ পরিবহন ব্যবস্থা, অস্ত্রের গুদাম, সৈন্য বহনরত গাড়ির উপর বোমা হামলা। একই অবস্থা পার্শ্ববর্তী খেরসনেও। এখানে রুশনিয়ন্ত্রিত বিমান ছাউনিতে কম করে হলেও এক ডজন হামলা হয়েছে। দোনেৎস্ক ও লুহানস্কে অস্ত্রগুদামে অগ্নিকাণ্ডের খবরও এসেছে। এর মধ্যেই গত ২১ আগস্ট ‘পুতিনের মস্তিষ্ক’ খ্যাত দার্শনিক আলেকসান্দর দুগিনের মেয়ে দারিয়া দুগিনাকে (৩০) গাড়িবোমা হামলায় হত্যা করা হয়। বাবার পথ ধরেই নিজেকে উদীয়মান বুদ্ধিজীবী, সাংবাদিক ও বক্তা হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করেছিলেন দুগিনা।

রুশ কর্তৃপক্ষ বলছে, গাড়ির চালকের আসনের নিচে ৪০০ গ্রাম টিএনটি বিস্ফোরক লাগানো ছিল। সম্ভবত টাইমার বা সুইচ টিপে বোমার বিস্ফোরণ ঘটানো হয়েছে। ইতোমধ্যে রুশ গোয়েন্দা সংস্থা এফএসবি এই সন্ত্রাসী হামলার জন্য দায়ী ব্যক্তির নাম প্রকাশ করেছে। রুশ বার্তা সংস্থা তাস বলছে, ইউক্রেনের উগ্রপন্থি সামরিক সংগঠন আজভ ব্যাটালিয়নের সদস্য নাতালিয়া ভোভক নামের ৪৩ বছর বয়সী এক নারী এ ঘটনা ঘটিয়েছেন। হামলার পরপরই তিনি এস্তোনিয়ায় পালিয়ে গেছেন।

রাশিয়ার মনোবলের একটা আভাস পাওয়া যায় আলেকসান্দর দুগিনের মন্তব্যে। মেয়ের মৃত্যুর পর তিনি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে বলেন, ‘রাশিয়ার শত্রুরা আমার কন্যাকে হত্যা করেছে। কিন্তু আমরা, আমাদের জনগণ এ রকম অসহনীয় আঘাতের পরও ভেঙে পড়বে না…আমাদের হৃদয় কেবল প্রতিশোধ চায় না, প্রতিশোধ খুব ছোট হয়ে যায়, অরুশীয় হয়ে যায়। একমাত্র বিজয়ই আমাদের চাহিদা।’

আলেকসান্দর ও দারিয়া- দুজনের নামই ইউক্রেনের এক নব্য নাৎসি ওয়েবসাইটের হিটলিস্টে ছিল। ‘মিরোতভরেৎস’ নামের ওই ওয়েবসাইটে এখন শুধু রুশ নাগরিকরাই হিটলিস্টে নেই, এর সঙ্গে যুক্ত হয়েছে এ যুদ্ধে ইউক্রেন ও পশ্চিমা নীতির সমালোচনাকারী- এমনকি সরকারবিরোধীদের নামও। নাম উল্লেখ করার পর ওই ওয়েবসাইটে ওই ব্যক্তির সব ব্যক্তিগত তথ্য তুলে দেওয়া হয়। ওয়েবসাইটটি পরিচালিত হয় ইউক্রেনের সামরিক গোয়েন্দা সংস্থা ও কট্টর জাতীয়তাবাদীদের মাধ্যমে। তবে এগুলো যে মানবতাবিরোধী কর্মকাণ্ড সে সম্পর্কে পশ্চিমারা নিশ্চুপ।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, আজকের বাস্তবতায় যুদ্ধ অচিরেই থামছে না। তা দীর্ঘস্থায়ী রূপ নিচ্ছে। এতে যুদ্ধ-অর্থনীতি ফুলে-ফেঁপে উঠলেও মানবতার পরাজয় হচ্ছে প্রতিনিয়ত।